বুধবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:০৪ পূর্বাহ্ন

শিরোনাম :
কসবায় সবুজ সংঘের শিক্ষাবৃত্তি ও মানবিক সহায়তা প্রদান বাংলাদেশের জনগণ কারও দাদাগিরি একদম পছন্দ করে না: গোলাম পরওয়ার ভারতের গণমাধ্যমগুলো যে ভূমিকা নিয়েছে তা দুদেশের মধ্যে স্বাভাবিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠায় সহায়ক নয় -পররাষ্ট্র উপদেষ্টা কসবা প্রেসক্লাব কার্যালয়ের জানালার গ্রীল ভেঙে দিয়েছে দুবৃত্তরা, প্রকৃত রহস্য উদঘাটনের দাবি সাংবাদিকদের ইমাম প্রি-ক্যাডেট স্কুলের ১৪০ শিক্ষার্থীর পবিত্র কুরআন সবক গ্রহণ কসবায় জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আহত ও শহিদদের স্মরণে স্মরণসভা খালেদা জিয়াকে আনতে পেরে আমরা গর্বিত-ড. ইউনূস আজ আল্লামা গোলাম সারোয়ার সাঈদী (র) এর ৫ম ওফাত দিবস কসবায় ১০ হাজার ৬শ ৫০জন প্রান্তিক কৃষকের মাঝে বীজ ও সার বিতরণ শিশু মুনতাহার মরদেহ মিলল পুকুরে
কৃষ্ণনগরে বাংলায় প্রথম গির্জা-স্থাপত্যে মিশেছে বিভিন্ন ঐতিহ্যের স্রোত

কৃষ্ণনগরে বাংলায় প্রথম গির্জা-স্থাপত্যে মিশেছে বিভিন্ন ঐতিহ্যের স্রোত

লোকমান হোসেন পলা।।

রঙিন আলো, ক্রিসমাস ট্রি, লাল টুপির সান্টা। জমজমাট চার্চ প্রাঙ্গণ। সাদা চাদরের মতো গাঢ় কুয়াশার মধ্যে সবার নজর টানে ক্যাথলিক গির্জার মাথায় অনেক উঁচুতে যিশুর একটি মায়াময় মূর্তির দিকে।

এই মূর্তি, আঠারো শতকের মধ্যভাগে নির্মিত এই গির্জা বা তার পরে তৈরি হওয়া নদিয়ার বিভিন্ন ছোট-বড় গির্জা জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে এমন বহু নিদর্শন যা আসলে স্থাপত্য ও ভাস্কর্যে ইউরোপীয় ও ভারতীয় শৈলীর মেলবন্ধনের ফসল। কৃষ্ণনগরের ক্যাথলিক চার্চের শীর্ষের এই যিশু মূর্তিটির নির্মাতা সুবিখ্যাত শিল্পী বীরেন পাল। জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত শিল্পী বীরেনবাবুর বিশেষ খ্যাতিই ছিল যিশুর মূর্তি নির্মাণে। নদিয়া জেলা শুধু নয়, সারা দেশ জুড়ে বহু গির্জায় ছড়ানো রয়েছে তাঁর হাতের তৈরি যিশু। সেখানে ইউরোপের বলিষ্ঠ শরীরের সঙ্গে মিশেছে ভারতীয় ঘরানার কমনীয় মুখ মণ্ডল, গভীর চোখ।
দুই শৈলীর এই মিশেল দেখা যাবে গির্জার নির্মাণ শৈলীতেও। পরিবেশ, আবহাওয়া র উপকরণএই তিনের পরিবর্তনের কারণে বাংলার বেশিরভাগ গির্জাতেই নির্মাণগত রদবদল ঘটেছে। তবে তাতে ইউরোপীয় গির্জার নির্মাণ-দর্শন কোথাও বাধাপ্রাপ্ত হয়নি বলেই মনে করেন বিভিন্ন গির্জার যাজক ও ভক্ত থেকে শুরু করে প্রায় সকলেই।

লন্ডনের ট্রাফলগার স্কোয়ারের বিখ্যাত গির্জা সেন্ট মার্টিন ইন দ্য ফিল্ডস-এর আদলে গড়া হয়েছিল কলকাতার সেন্ট জনস চার্চ। সেন্ট মার্টিন ইন দ্য ফিল্ড রোমানদের আমলে প্রথম তৈরি বলে মনে করা হয়। তারপরে ১৫৪২ সালে তা পুনর্নির্মাণ করেন ইংল্যান্ডের অষ্টম হেনরি। তারপরেও বেশ কয়েকবার এই গির্জার সংস্কার করা হয়েছে। সেন্ট জনস চার্চকে বলা হয় বাংলার বা ভারতের প্রথম ক্যাথিড্রাল। সংরক্ষণবিদ স্থপতি মনীশ চক্রবর্তী বলেন, “এই সেন্ট জনস অষ্টাদশ শতকের আশির দশকে তৈরি হয়। ওই গির্জার আদর্শেই তৈরি করা হয় বাংলার অধিকাংশ গির্জা। তবে ট্রাফলগার স্কোয়ারের সেন্ট মার্টিন গির্জার সঙ্গে সেন্ট জনস গির্জার কিন্তু পার্থক্য রয়েছে। সেই একই ভাবে সেন্ট জনসের সঙ্গে পার্থক্য রয়েছে বাংলার গির্জাগুলোরও। তার কারণ কোথাও স্থানাভাব, কোথাও অর্থাভাব, কোথাও বা অন্য কিছু।”
এই পার্থক্যগুলি ঠিক কী কী? মনীশবাবু জানান, আবহাওয়াজনিত কারণেই বাংলার বিভিন্ন গির্জার গাড়ি বারান্দায় খড়খড়ি ব্যবহার করা হয়েছে। সুউচ্চ পিলারের শীর্ষদেশেও খড়খড়ি দেখা যায়। সূর্যের আলো থেকে বাঁচতেই এই কাজ করা হয়েছে। ইউরোপীয় ঘরানায় এমনটি প্রচলিত নয়। আবার উপকরণের ক্ষেত্রেও পার্থক্য রয়েছে। ইউরোপের গির্জা তৈরি হয়েছে পাথর দিয়ে। ইতালির মার্বেল পাথরের বহুল ব্যবহার সেখানে। এখানে কিন্তু পাথরের কাজ করা হয়েছে ইট, চুন আর সুড়কি দিয়ে। নকশা সেই একই রয়েছে। বদলে গিয়েছে নির্মাণের উপকরণ। আবার ইউরোপের গির্জায় পাথরের দেওয়াল, তাই পলেস্তারার কোনও ব্যবহার নেই। এখানে সমস্ত গির্জায় চুনের প্লাস্টার। এভাবেই মিশ্রণ ঘটে শৈলীর। তবে তাতে পরিবেশের কোনও হেরফের ঘটেনি বলেই মনে করেন তিনি ও চার্চের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা।
গির্জা নির্মাণ শৈলীর এই মিশ্রনের কথা বলেন কৃষ্ণনগর ডায়াসেসের যুব পরিচালক ফাজার অংশু গাইন। তাঁর কথায়, “মূর্তি বলুন বা নির্মাণ শৈলী, বিভিন্ন ঘরানার মিশ্রন তো হয়েইছে। কৃষ্ণনগর ক্যাথলিক চার্চকে মহাগির্জা বলা হয়। এখানে বেশ কিছু মূর্তি রয়েছে, তার বেশ কিছু খোদ ইতালি থেকে আনা। আবার কৃষ্ণনগরের নামী শিল্পীদের তৈরি মূর্তিও রয়েছে। আর সেক্ষেত্রে শিল্পধারার মিশ্রণ তো হয়েইছে।” ফাদার অংশুর কথায়, “ভক্তদের কাছে দেবতাকে কাছের করাটা জরুরি। তাই ইজরায়েলের মা মেরিকে এখানে আপনি শাড়ি পরিহিতা দেখবেন। তাতে উপাসনার কোনও অসুবিধা তো নেই।”

ওই ডায়াসেসের জনসংযোগ আধিকারিক সমীর স্টিফেন লাহিড়ি বলেন, “চার্চের অন্যতম বৈশিষ্ট্য ঘণ্টাঘর। প্রতিটি চার্চের নিজস্ব নকশাকে অপরিবর্তিত রেখে ঘণ্টাঘর তৈরি করার সময়ে যে কারিগর তৈরি করছেন, তাঁর নিজস্ব কিছু বৈশিষ্ট্যও থেকে যায় সেই নির্মাণে। তা সে মূর্তি হোক বা স্থাপত্য।” কৃষ্ণনগর মহাগির্জার খ্রিস্টমন্দির ইতালির যাজক লুচিয়ানো কালোসিসের স্বপ্নের ফসল। ২০০৯ সালে শেষ হয় তার নির্মাণ। তার কিছুকাল পরেই তিনি মারা যান। কৃষ্ণনগরের বাসিন্দা মিহির এ লুইস বলেন, “স্থানীয় স্থপতি কারিগরেরাই এই খ্রিস্টমন্দির তৈরি করেছেন। লুচিয়ানো শেষ পর্যন্ত এই দেশকে এমন ভালবেসে ফেলেছিলেন যে, তিনি ভারতীয় নাগরিকত্বও নিয়ে নেন। আবার গির্জার ভিতরে যিশুর জীবনের নানা সময়ের ৩৫টি কাঠের মূর্তি ইতালিতেই তৈরি। এখন যদি দেখেন, ইতালির মূর্তি ও স্থানীয় শিল্পীদের তৈরি মূর্তি মিলেমিশে একাকার হয়ে গিয়েছে।”
(লেখা ও দেখা সহযোগীতায় চিত্রনির্মাতা শ্রী উত্তম)

এই সংবাদটি শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




raytahost-demo
© All rights reserved © 2019
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: Jp Host BD