ছবিঃ সংগৃহীত
কুমিল্লা জেলার নানুয়ার দিঘিরপাড়ের পূজামণ্ডপে পবিত্র কোরআন শরিফ রাখার ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত ইকবাল হোসেনকে নিয়ে অভিযান চালিয়ে হনুমানের মূর্তির হাত থেকে নেওয়া গদাটি উদ্ধার করেছে পুলিশ। রোববার (২৫ অক্টোবর) রাত সাড়ে ১১টায় জেলা পুলিশের একটি টিম নগরীর দারোগাবাড়ি মাজারের পাশের একটি ঝোপ থেকে গদাটি উদ্ধার করা হয়।
কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) এম তানভীর আহমেদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এম তানভীর আহমেদ জানান, রিমান্ডে ইকবালের দেওয়া তথ্যে পুলিশ তাকে নিয়ে অভিযানে যায়। দারোগাবাড়ি মাজার সংলগ্ন এলাকার একটি জঙ্গল থেকে গদাটি উদ্ধার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে বলেছিল গদাটি পুকুরে ফেলেছে। তবে তাকে নিয়ে ঘটনাস্থলে গেলে সে জানায় পুকুরের ফেলার পর গদাটি ভেসে উঠায় সেটি তুলে এনে পাশের একটি ঝোপে লুকিয়ে রাখা হয়।
এর আগে সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, ইকবাল হোসেন গদাটি নিয়ে নানুয়াদিঘী পশ্চিমপাড় দিয়ে হেঁটে দারোগাবাড়ি মাজারের সড়কে ঢুকে পড়ে। এর প্রায় এক ঘণ্টা আগে তাকে মসজিদ থেকে একটি কোরআন নিয়ে বের হতে দেখা যায়।
এদিকে কোরআন অবমাননার ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলাটি সিআইডিতে হস্তান্তর করা হয়েছে। কুমিল্লা কোতোয়ালি থানায় করা এই মামলার বাদী পুলিশ। হস্তান্তরের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) এম তানভীর আহমেদ।
শনিবার (২৩ অক্টোবর) দুপুরে কুমিল্লার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মিথিলা জাহান নিপার আদালতে ইকবালসহ চারজনকে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড চায় পুলিশ। শুনানির শেষে আদালত তাদের প্রত্যেকের সাতদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
গত ২১ অক্টোবর রাত সাড়ে ১০টার দিকে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত এলাকার সুগন্ধা পয়েন্ট থেকে ইকবালকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরদিন ২২ অক্টোবর দুপুরে তাকে কুমিল্লা পুলিশ লাইনে আনা হয়। সেখানে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ইকবাল কোরআন রাখার কথা স্বীকার করে।
উল্লেখ্য, শারদীয় দুর্গাপূজার মহা অষ্টমীর দিন গত ১৩ অক্টোবর ভোরে কুমিল্লা শহরের নানুয়া দীঘির উত্তর পাড়ে একটি অস্থায়ী পূজামণ্ডপে পবিত্র কোরআন শরিফ দেখা যায়। এরপর কোরআন শরিফ অবমাননার অভিযোগ তুলে ওই মণ্ডপে হামলা চালায় একদল লোক। সেখানে ব্যাপক ভাঙচুর চালানো হয়।
এর জেরে ধরে ওই দিন চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে হিন্দুদের ওপর হামলা করতে যাওয়া একদল ব্যক্তির সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। সেখানে নিহত হন পাঁচজন। পরদিন নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে হিন্দুদের মন্দির, মণ্ডপ ও দোকানপাটে হামলা–ভাঙচুর চালানো হয়। সেখানে হামলায় দুজন নিহত হন। এরপর রংপুরের পীরগঞ্জে হিন্দু বসতিতে হামলা করে ভাঙচুর, লুটপাট ও ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়। দেশের আরও অনেক এলাকায় হিন্দুদের মন্দির, মণ্ডপসহ বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা করা হয়। সর্বশেষ নানুয়ার দিঘির পাড়ের অস্থায়ী পূজামণ্ডপে পবিত্র কোরআন শরিফ রাখার ঘটনায় সহিংসতায় আহত দর্শনার্থী দিলীপ দাস (৬২) চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার (২১ অক্টোবর) রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে মারা গেছেন।
এ ঘটনায় কুমিল্লার বিভিন্ন থানায় ৯ মামলায় ৭৯১ জনকে আসামি করা হয়। এর মধ্যে কোতোয়ালি মডেল থানায় পাঁচটি, কুমিল্লা সদর দক্ষিণ মডেল থানায় দুটি এবং দাউদকান্দি ও দেবীদ্বার থানায় একটি করে মামলা হয়েছে। ৯১ জনের নাম উল্লেখ করে মামলায় ৭০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।
Leave a Reply