শনিবার, ২৭ Jul ২০২৪, ১১:২০ পূর্বাহ্ন

শিরোনাম :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ (কসবা-আখাউড়া) আসনে আইন মন্ত্রী আনিসুল হক বে-সরকারি ভাবে নির্বাচিত কসবায় ভোট দিয়ে বাড়ি ফেরার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ১ আহত-৪ কসবায় এলজিইডি’র শ্রেষ্ঠ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান আগরতলায় স্রোত আয়োজিত লোকসংস্কৃতি উৎসব কসবা প্রেসক্লাব সভাপতি’র উপর হামলার প্রতিবাদে মানবন্ধন ও প্রতিবাদ সভা কসবায় চকচন্দ্রপুর হাফেজিয়া মাদ্রাসার বার্ষিক ফলাফল ঘোষণা, পুরস্কার বিতরণ ও ছবক প্রদান শ্রী অরবিন্দ কলেজের প্রথম নবীনবরণ অনুষ্ঠান আজ বছরের দীর্ঘতম রাত, আকাশে থাকবে চাঁদ বিএনপি-জামাত বিদেশীদের সাথে আঁতাত করেছে-কসবায় আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ১৩ দিনের জন্য ভোটের মাঠে নামছে সশস্ত্র বাহিনী
জামালপুর হাসপাতালে ডাক্তার লাঞ্ছিত ঘটনায় বর্হিবিভাগে চিকিৎসা সেবা বন্ধ: রোগীদের দুর্ভোগ

জামালপুর হাসপাতালে ডাক্তার লাঞ্ছিত ঘটনায় বর্হিবিভাগে চিকিৎসা সেবা বন্ধ: রোগীদের দুর্ভোগ

আবু সায়েম মোহাম্মদ সা’-আদাত উল করীম:

জামালপুর সদর হাসপাতালে (২৫০শয্যা বিশিষ্ট) একজন নারী রোগীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে জরুরি বিভাগে বহিরাগতদের হামলা, তিনটি কক্ষ ভাংচুর ও একজন চিকিৎসা কর্মকর্তাকে মারধর এবং বহিরাগত ও ইন্টার্ন চিকিৎসকদের সংঘর্ষের সময় পুলিশের হাতে একজন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা নির্যাতনের ঘটনায় সাত সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
অন্যদিকে চিকিৎসকের ওপর হামলার ঘটনার বিচার না হওয়া পর্যন্ত স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ ২৭ ডিসেম্বর রবিবার থেকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগ ও ওয়ার্ড ব্যতীত বহির্বিভাগ ও বাইরের বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে রোগী দেখা থেকে বিরত থাকার ঘোষণা দিয়েছেন। ফলে জেলায় চিকিৎসাসেবা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। হাসপাতালের বর্হিবিভাগে চিকিৎসা সেবা না পেয়ে দূর দূরান্তর রোগীর দুর্ভোগ বেড়েছে।
২৬ ডিসেম্বর বিকেলে জামালপুর সিভিল সার্জন কার্যালয়ে জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, স্বাস্থ্য বিভাগ, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, শেখ হাসিনা মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ ও জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের এক জরুরি বৈঠকে হাসপাতালে হামলার ঘটনা তদন্তে কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
২৫ ডিসেম্বর দুপুরে সদর হাসপাতালে হামলার ঘটনা ঘটে। হাসপাতালের জরুরি বিভাগে বহিরাগতদের হামলায় চিকিৎসা কর্মকর্তা চিকিৎসক চিরঞ্জীব সরকারসহ চারজন ইন্টার্ন চিকিৎসক গুরুতর আহত হন। ওই ঘটনার পর দ্বিতীয় দফা সংঘর্ষের পরিস্থিতি শামাল দিতে আসা সদর থানা পুলিশের হাতে নির্মম নির্যাতনের শিকার হন সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা চিকিৎসক মো. লুৎফর রহমান। পুলিশের কিলঘুঁষিতে চিকিৎসক লুৎফর রহমান তার একটি চোখে মারাত্মক আঘাত পেয়েছেন। চোখের চিকিৎসার জন্য তিনি ঢাকায় গিয়েছেন।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, ২৬ ডিসেম্বর বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে সন্ধ্যা সোয়া ৫টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত জরুরি বৈঠক চলাকালে ২৫ ডিসেম্বরের হামলার ঘটনা নিয়ে আলোচনা, পর্যালোচনা, সিসিটিভি ফুটেজ প্রদর্শন ও বিশ্লেষণ এবং ভুক্তভোগী চিকিৎসক ও ইন্টার্ন চিকিৎসকদের অভিযোগ শোনা হয়। তবে হামলার ঘটনার সাথে জড়িত বহিরাগতদের পক্ষের কেউ জরুরি বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন না।বৈঠকে স্থানীয় সরকার বিভাগ জামালপুরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ কবীর উদ্দিন, শেখ হাসিনা মেডিক্যাল কলেজ জামালপুরের অধ্যক্ষ প্রফেসর চিকিৎসক শ্যামল কুমার সাহা, পুলিশ সুপার মো. দেলোয়ার হোসেন, সিভিল সার্জন প্রণয় কান্তি দাস, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আইনজীবী মুহাম্মদ বাকী বিল্লাহ, সাধারণ সম্পাদক ফারুক আহাম্মেদ চৌধুরী ও সাংগঠনিক সম্পাদক মো. ছানোয়ার হোসেন, সদর হাসপাতালের সহকারী পরিচালক চিকিৎসক মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান, ইন্টার্ন চিকিৎসক রিয়াদ মাহমুদ বক্তব্য রাখেন। বৈঠকে হামলার ঘটনা খতিয়ে দেখতে জেলা প্রশাসনের উপ-সচিব পদমর্যাদার একজনকে সভাপতি করে সাত সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ওই তদন্ত কমিটি আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে সার্বিক বিষয় তদন্ত করে তাদের প্রতিবেদন তৈরি করবেন। সেই তদন্ত প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতেই ঘটনার সাথে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও সভায় সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
অন্যদিকে ওই জরুরি বৈঠক শেষে ২৬ ডিসেম্বর সন্ধ্যার পর স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ জেলা শাখার উদ্যোগে স্বাস্থ্যবিভাগের সকল চিকিৎসকরা একই স্থানে পুনরায় রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন। সেই বৈঠকে ২৫ ডিসেম্বরের হামলার উপযুক্ত বিচার না হওয়া পর্যন্ত শুধুমাত্র জামালপুর সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগ ও ওয়ার্ডে রোগীদের জরুরি চিকিৎসাসেবা চালু রাখা এবং বহির্বিভাগে কোন রোগী না দেখার সিদ্ধান্ত হয়। এছাড়া জেলার কোন বেসরকারি হাসপাতাল বা ক্লিনিকে প্রাইভেট রোগী দেখা থেকে বিরত থাকবেন বলেও চিকিৎসকরা সিদ্ধান্ত নেন। ফলে ২৭ ডিসেম্বর থেকে সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
জামালপুর সদর হাসপাতালের সহকারী পরিচালক চিকিৎসক মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, হাসপাতালে হামলার ঘটনায় থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে। এ ব্যাপারে মামলাও দায়ের করবো। একই সাথে ২৬ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত জরুরি বৈঠকে সাত সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। দু’জন চিকিৎসককে নির্যাতন করার প্রতিবাদে এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার না হওয়া পর্যন্ত চিকিৎসকদের দায়িত্ব পালন থেকে বিরত থাকা প্রসঙ্গে সহকারী পরিচালক বলেন, হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম যাতে স্বাভাবিক হয়ে আসে তা নিয়ে চিকিৎসকদের সাথে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি। সর্বশেষ পরিস্থিতি জরুরি বিভাগ ও অভ্যন্তরীণ চিকিৎসা সেবা স্বাভাবিক অবস্থা বিরাজ করলেও ২৭ ডিসেম্বর বর্হিবিভাগ চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম এই রির্পোট লেখা পর্যন্ত সময় বন্ধ রয়েছে।
স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ জামালপুর জেলা শাখার আহবায়ক ও স্বাস্থ্য বিভাগের পরিচালক ডা. মো. মোশায়ের উল ইসলাম জানান, হামলা, ভাংচুর ও ডাক্তারদের উপর নির্যাতনের ঘটনায় দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত, তাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত হাসপাতালের জরুরি সেবা ছাড়া বহির্বিভাগ এবং প্রাইভেট ক্লিনিকের সকল চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম বন্ধ থাকবে।
উল্লেখ্য,২৫ ডিসেম্বর শুক্রবার বিকেলে জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে একজন নারী রোগীর মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে রোগীর স্বজনের সাথে ডাক্তার ও ইন্টার্ন ডাক্তারদের মধ্যে সংঘর্ষ, হাসপাতাল ভাংচুরের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে ডাক্তার, রোগীর স্বজনসহ অন্তত ১০ জন আহত হয়।

এই সংবাদটি শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




raytahost-demo
© All rights reserved © 2019
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: Jp Host BD