ডেস্ক রিপোর্ট।।।
ফাইল ছবি
জ্বালানি তেলের দাম বাড়াতে রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ে মৌখিক প্রস্তাব দিয়েছে। সরকার নির্ধারিত আগের দামে ডিজেল বিক্রি করতে গিয়ে বিপিসিকে প্রতি লিটারে ১৩ থেকে ১৪ টাকা লোকসান দিতে হচ্ছে। এই লোকসানের হার কমাতে বিপিসি জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের কাছে ডিজেলের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে বলে জানা গেছে।
বৃহস্পতিবার (২৮ অক্টোবর) অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সাংবাদিকদের সঙ্গে আলোচনাকালে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর বিষয়টি তুলে ধরেন। পরে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) একজন কর্মকর্তা প্রস্তাব পাঠানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
এরই মধ্যে জ্বালানি তেলের দাম বাড়াতে বেশ কয়েকটি সভাও অনুষ্ঠিত হয়েছে জানিয়ে ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘এসব সভায় আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার কারণে আমদানী খরচ বেড়ে যাওয়ায় দেশের বাজারে লোকসানে তেল বিক্রি করতে হচ্ছে। এই অবস্থায় সব পক্ষই জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর পক্ষে মতামত দিয়েছে।’
সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সাংবাদিকদের জানান, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ছে। দেশের বাজারে মূল্য সমন্বয় করতে যদি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে নির্দিষ্ট প্রস্তাব আসে তাহলে তা বিবেচনা করা হবে। এ বিষয়ে এরই মধ্যে তিনটি বৈঠক করা হয়েছে।
জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো প্রসঙ্গে বিপিসির চেয়ারম্যান এ বি এম আজাদ বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম অনেক বেড়েছে। ফলে আমাদের অনেক লোকসান গুনতে হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে তেলের দামে সমন্বয় করতে হবে।’
তিনি জানান, বিশ্ব বাজারে তেলের দাম বাড়ায় এখন দৈনিক ২০ কোটি টাকার বেশি লোকসান গুনতে হচ্ছে। যা মাসে ৬০০ কোটিতে গিয়ে দাঁড়ায়। বিশেষ করে ডিজেল ও ফার্নেস অয়েলের ক্ষেত্রে লোকসান হচ্ছে সবচেয়ে বেশি।
বিপিসির সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, গত ২০ অক্টোবর প্লাটসের দর অনুযায়ী আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম ব্যারেল প্রতি ৯৫ ডলার পর্যন্ত উঠেছে। যা গত ৭/৮ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।
বিশ্ববাজারে ব্যারেল প্রতি ৭০ ডলারের মধ্যে থাকলে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ৬৫ টাকা লিটার ডিজেল বিক্রি করলে আয়-ব্যয়ে সমান থাকা যায়। এর চেয়ে কম হলে লাভ হয়। আর এর চেয়ে বেশি হলে লোকসান গুনতে হয়। গত তিন মাস থেকে বিপিসি ব্যাপক লোকসান করছে বলে জানান ওই কর্মকর্তা।
জ্বালানি তেলের লোকসান কমাতে এরই মধ্যে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়কে মৌখিকভাবে জানানো হয়েছে। এখন দাম বাড়ানোর প্রস্তাব তৈরি করার কাজ চলছে। শিগগির এই প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।
বিপিসি সূত্র জানায়, দেশের চাহিদা পূরণে প্রতিবছর ৪০ লাখ টন ডিজেল আমদানি করতে হয়। অকটেন আমদানি করা হয় ১ লাখ থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টন। প্রায় সমপরিমাণ পেট্রোল দেশীয় উৎস থেকে উৎপাদন করা হয়। বাংলাদেশে ৭৩ শতাংশের বেশি ডিজেল ব্যবহার করা হয়। সড়ক ও নৌপরিবহন, কৃষির সেচ পাম্প এবং বেশ কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ নানা ক্ষেত্রে ডিজেলের ব্যবহার রয়েছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে বিপিসি ৫৫ লাখ ৩ হাজার টন জ্বালানি তেল বিক্রি করেছে। এর মধ্যে ডিজেলের পরিমাণ ৪০ লাখ ২৩ হাজার টন।
এরই মধ্যে ২০২২ সালের চাহিদা মেটাতে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ের জন্য জি-টু-জি ভিত্তিতে বিভিন্ন উৎস থেকে ৫৮ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন বিভিন্ন ধরনের জ্বালানি তেল আমদানির উদ্যোগ নিয়েছে।
Leave a Reply