সৈয়দ মুন্তাছির রিমন-(প্যারিস) ফ্রান্স থেকে:
শীতের আগমনী বার্তায় পরিবেশে বৈচিত্র্য রুপ দেখা দেয়। এই বৈচিত্র্যতায় প্রাণীকুলের মাঝে এক পরিবর্তন আসে। এই পরিবর্তনে সবচেয়ে বেশি প্রতিক্রিয়া তৈরি হয় পাখি প্রজাতির মাঝে। অবাক হলেও সত্য পাখিরা অভিবাসিত হয়। এই প্রজাতিরা প্রতিটি বছর প্রকৃতির বিরূপ আচরণে খাদ্যের সন্ধানে লক্ষ লক্ষ মাইল দূরে উড়ে যায়। আবার কখনো আগ্নীগিরির অগ্নিপাত, মানব যুদ্ধে রকেট, বোমা ও পারমাণবিকের বিষ্ফোরণে স্থানান্তরিত হয়। মানুষের মাঝে দেশান্তরিত হওয়ার প্রবণতার মতো পাখিদের মাঝে আচরণ দেখাযায়।
পাখিরা প্রকৃতির সবচেয়ে সুন্দর প্রাণী। আর মায়াবী পোষার যোগ্য। পৃথিবীর চক্রাকার, বৈশিষ্ট্য ও ঋতুর পালাবদলে প্রতিটি দেশে পাখিদের বিচরণ ঘটে। শীতকালে শীতের হাত থেকে বাঁচতে যে সব পাখি নিজ দেশের চেয়ে অপেক্ষাকৃত উষ্ণ অঞ্চলে চলে আসে, তাদেরকে বলা হয় অতিথি পাখি বা পরিযায়ী পাখি।
আমাদের বাংলাদেশে মোট পাখি আছে প্রায় ৬২৮ প্রজাতির। আর ২৪৪ প্রজাতির পাখিই স্থায়ীভাবে বাংলাদেশে বাস করে না। তারা বাংলাদেশের পরিযায়ী পাখি বা অতিথি পাখি। শীত আসার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের বাংলাদেশে চলে যায়। আবার মার্চ থেকে এপ্রিলের দিক বরফ গলতে শুরু করলে ফিরে যেতে থাকে নিজেদের দেশে।
আর প্রকৃতির পালাবদলে ফ্রান্সেও পরিযায়ী পাখি বা অতিথি পাখির আগমন ঘটে। এই পরিযায়ী পাখিদের আবাসস্থল হলো রাশিয়ার সাইবেরিয়া অঞ্চল। ফ্রান্সে প্রতিবছর জুলাই থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত অতিথি পাখি বা পরিযায়ী পাখিদের বিচরণ দেখাযায়। পাখিরা খাল, বিল, ডোবা, পাহাড়ি জলাশয়সহ বিভিন্ন স্থানে অবাধে বিচরণ করে। ডিসেম্বরে আবার অতিথি পাখিরা চলে যায় আপন ঠিকানা সাইবেরিয়া।
জানাযায় চলতি বছর এখানে সবচেয়ে বেশি অতিথি পাখির আগমন ঘটেছে। অতিথি পাখিদের ফ্রান্সের দক্ষিণ পশ্চিমের ফ্রান্স-স্পেন সীমান্তের কাছে ফ্রান্সের লারাউ অঞ্চলে দেখাযায়। লারাউ অঞ্চলে ফরাসি পাখি প্রেমীরা দূরবীন নিয়ে ভিড় জমিয়েছে। তারা আকাশে ও দূর এলাকায় অবস্থান করা পাখিদের কিচিরমিচির শব্দে ডানা ঝাপটে উড়ার মুহুর্ত গুলো প্রত্যক্ষ করছে। এর ফলে পাখি আর মানুষের মাঝে এক নিবির সম্পর্ক ঘটে উঠে। তবে ফ্রান্সে অতিথি পাখি শিকার করা নিষিদ্ধ । অতিথি পাখিরা প্রতিবছর ফ্রান্সে বায়োডাইভারসিটির জন্য ভালো লক্ষণ বলে মনে করেন ফরাসি পাখি বিশেষজ্ঞরা।
পরিসংখ্যানে দেখাযায় পাখিদের শ্রেণীবিন্যাসকরণ প্রথম ঘটে ফ্রান্সিস উইলোবি ও জন রের হাত ধরে। ১৭৫৮ সালে শ্রেণীবিন্যাসবিদ্যার জনক ক্যারোলাস লিনিয়াস শ্রেণীবিন্যাসবিদ্যার উন্নয়ন ঘটান ও দ্বিপদ নামকরণের প্রবর্তন করেন যা এখন পর্যন্ত বহাল রয়েছে। ১৭শ শতক থেকে আজ পর্যন্ত মানুষের বিভিন্ন কার্যকলাপে ১২০ থেকে ১৩০টি পাখি প্রজাতি দুনিয়া থেকে চিরতরে হারিয়ে গেছে। তারও আগে আরও একশটির মত প্রজাতি একই ভাগ্য বরণ করেছে। মানুষের নিষ্টুরতার শিকার হয়ে বর্তমানে প্রায় বারোশর মত প্রজাতি বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে অবস্থান করছে। সাম্প্রতিক সময়ে সারাবিশ্বে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি সংরক্ষণের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।
Leave a Reply