এসো হে বৈশাখ, এসো এসো।
শুভ বাংলা নববর্ষ ১৪২৯।
চৈত্রের প্রখর উত্তাপের অবসান ঘটিয়ে বছর ঘুরে ফিরে এলো পহেলা বৈশাখ। বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন। সারা বছরের সমস্ত গ্লানি মুছে দিয়ে পাওয়া না পাওয়ার হিসেব চুকিয়ে মঙ্গলের বার্তা নিয়ে আসে পহেলা বৈশাখ। তাই বিশ্ব কবির লেখনীতে ফুটে উঠে গান-
“মুছে যাক গ্লানি ঘুচে যাক ঝরা
অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা।”
“পহেলা বৈশাখ” বাঙালি জাতির প্রাণের উৎসব। এটি একটি ধর্মনিরপেক্ষ বাঙালি উৎসব। তাই নববর্ষকে আগমন জানাতে নানা ভাবে প্রস্তুত হয় পুরো দেশ। সকলের মাঝে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করে। বৈশাখের প্রথম সূর্যোদয়ের মাধ্যমে নতুন বছরকে বরণ করতে রমনার বটমূলে “ছায়ানট”-এর নেতৃত্বে পরিবেশিত হয় আগমনী গান। কন্ঠে কন্ঠে উচ্চারিত হয় ” এসো হে বৈশাখ, এসো এসো।”
নববর্ষকে বরণ করে নেওয়ার আরেক ভিন্নধর্মী আয়োজন হলো মঙ্গল শোভাযাত্রা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের নেতৃত্বে বের হয় “মঙ্গল শোভাযাত্রা”। মঙ্গল শোভাযাত্রায় মঙ্গলের প্রতীক স্বরূপ শিল্পীরা রং তুলির আঁচড়ে ফুটিয়ে তুলেন হাতির,ঘোড়া,পাখি সহ নানান রকমের রঙিন মুখোশ। নানা রকম বাঙালি পোশাক, লাল পাড়ের শাড়ী,লাল-সাদা পাঞ্জাবী পড়ে এই শোভা যাত্রায় সব বয়সী বাঙলীরা অংশগ্রহণ করে। বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের আবেদনক্রমে ২০১৬ খ্রিস্টাব্দের ৩০শে নভেম্বর বাংলাদেশের ‘‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’’ জাতিসংঘ সংস্থা ইউনেস্কোর মানবতার অধরা বা অস্পর্শনীয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় স্থান লাভ করে।”পান্তা-ইলিশ” পহেলা বৈশাখের একটি আকর্ষণীয় খাবার।
পথে,মাঠে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আঁকা হয় আলপনা। বাচ্চা ও কোমলমতি শিশুদের গালে ঢাক-ঠোল আর বেশাখী ছন্দের তুলির আঁচড় দেখা যায়।এছাড়াও শহরের মতো গ্রামের বিভিন্ন স্থানে বসে “বৈশাখী মেলা”। উপজাতিরা বিজু,বৈসুব ও সাংগ্রাই নামে উৎসবের মাধ্যমে নববর্ষকে উদযাপন করে থাকে। গ্রামে গ্রামে শুরু হয় হালখাতা,গ্রামীণ খেলা সহ নানা আয়োজন।
“পহেলা বৈশাখ”বাঙালিদের সাংস্কৃতিক উৎসব। ” পহেলা বৈশাখ” আমাদের অসাম্প্রদায়িক চেতনার মূর্তি প্রতীক।
“পহেলা বৈশাখ” আসুক মঙ্গলের বার্তা বাহক হিসেবে। নব উদ্যোমে উদিত হউক বছরের প্রথম লাল সূর্য। অনাবিল আনন্দে সকলের জীবন ভরে উঠুক। সকলকে “বাংলা-১৪২৯” সনের শুভেচ্ছা। এসো হে বৈশাখ, এসো এসো।
জহিরুল ইসলাম
উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগ,
সরকারি তিতুমীর কলেজ, ঢাকা।
Leave a Reply