মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫, ০৩:০১ পূর্বাহ্ন

মাদ্রাসা শিক্ষার্থী নির্যাতন ও কিছু কথা

মাদ্রাসা শিক্ষার্থী নির্যাতন ও কিছু কথা

মো.সাইদুর রাহমান খান

সমসাময়িক সবচেয়ে বেশি আলোচিত ও উদ্বেগের বিষয় তা হচ্ছে মাদ্রাসার শিক্ষক কর্তৃক এক নাবালক ও নিস্পাপ শিশু শিক্ষার্থীকে বেদম প্রহার করা। এই প্রহারের কারণ ও কওমি মাদ্রাসার কিছু শিক্ষকের যোগ্যতা নিয়ে আজকের আমার ব্যক্তিগত কিছু মতামত উপস্থাপন। একজন সুস্থ মানুষ কখনও সুস্থ মস্তিষ্কে অন্য কাউকে বেপরোয়া প্রহার করতে পারে না। কোন জ্ঞানী শিক্ষকের বেলায় এটা কখনো হতে পারে না। কিন্তু ওই শিক্ষক কেন করেছে সেই বিষয়গুলো আমাদের উদ্বেগ ও ভাবনার বিষয়। এ বিষয়ের সংক্ষেপে আলোচনা করে শেষ করা যাবে না। তারপরও আমি আমার ব্যক্তিগত দু-একটি মতামত তুলে ধরছি। আজকের আলোচনাটি সাধারণত মাদ্রাসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কেন্দ্রিক। যে সমস্যার কারণে শিক্ষকরা বাচ্চাদেরকে শাসন করে থাকে তার ভিতরে অন্যতম কয়েকটি কারণ আমি উল্লেখ করলাম।

১। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মাদ্রাসায় যে শিক্ষকরা শিক্ষকতা করেন তারা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নন বা তাদের প্রশিক্ষণের অভাব রয়েছে। প্রশিক্ষণ ছাড়া কেউ কখনো শিক্ষক হয়ে উঠতে পারে না অথবা শিক্ষকদের দায়িত্ব নিতে পারেনা। কারণ দু,চার ক্লাস পাশ করলেই জ্ঞানী হওয়া যায় না। তেমনি শিক্ষকতা চাকরিতে যোগদান করলেই কাউকে যোগ্য শিক্ষক ভাবা ঠিক না।
২। মাদ্রাসার পরিচালনা কমিটি এবং প্রধান শিক্ষক/ মুহতামিম মহোদয়গণ শিক্ষকদের সাথে এক ধরনের তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য ব্যবহার করেন। বেতন নিয়ে খুবই ঝামেলা করেন এবং যে সামান্য বেতন শিক্ষকদের দেওয়া হয় তাও নিয়মিত দেওয়া হয় না। এ সকল কারণে শিক্ষকদের মর্জি মেজাজ খারাপ থাকে।
৩। প্রত্যেক পিতা-মাতা চায় তার ছেলে হাফেজ বা বড় মাওলানা হবে। কিন্তু আমাদের প্রধান বা মুহতামিম কোনো কিছু না বুঝেই গার্ডিয়ানদের ওয়াদা করে দেয় যে আপনার ছেলে অবশ্যই হাফেজ হবে বা বড় মাওলানা হবে । হাফেজ বানাবার দায়িত্ব আমাদের। এক বছরের মধ্যে হাফেজ বানিয়ে দেব। ছয় মাসের ভিতরে কোরআন শরীফ পড়া শেষ করব ইত্যাদি নানা ধরনের ওয়াদা করে থাকে। অথচ প্রধানগণ কখনো ওই শিক্ষার্থীর মেধা যাচাই করে দেখে নাই। দেখা যায় দুর্বল থাকা সত্ত্বেও এক প্রকার জোর করে ওই শিক্ষার্থীকে কঠিন একটা জায়গায় দেওয়া হয়। যে কারণে তার দুর্বল মেধাশক্তি দ্বারা পড়া ওই ছাত্রের পক্ষে সম্ভব হয় না। অন্যদিকে গার্ডিয়ান নিয়মিত খোঁজ নিতে থাকে তার ছেলের কতো পড়া মুখস্ত হল। মুহতামিম সাহেব নিয়মিত খোঁজ নেয় এখনো হেফজ কমপ্লিট হইল না কেন। আপনার কিন্তু চাকরি থাকবে না। এই ধরণের মানসিক প্রেসার যখন একজন শিক্ষকের উপর চলে আসে তখন দেখা যায় ওই শিক্ষক বিকৃত মস্তিষ্ক নিয়ে ওই শিক্ষার্থীকে প্রহার করে। বিভিন্ন বিষয় থেকে মানসিক চাপের কারণে অনভিজ্ঞ শিক্ষকরা এই সমস্যাগুলো সমাধান করতে পারে না। যার ফলাফল শিক্ষার্থী অমানুষিক নির্যাতন ।

সরকারি স্কুলের শিক্ষকরা অধিকাংশ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। তাই সেখানে এই সমস্যাগুলো কম হয়। কিন্তু বেসরকারি প্রতিষ্ঠান গুলোতে এই সমস্যাগুলো তুলনামূলক বেশি হয়ে যাচ্ছে। এদেরকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ এবং যোগ্য করে তুলতে পারলে এই সমস্যা থেকে উতরে উঠা যাবে বলে আমার ধারণা। তাছাড়া একটা বিষয় খেয়াল রাখতে হবে যে যে কোন শিক্ষকতা পেশায় অনভিজ্ঞ লোক নিয়োগ দেওয়া যাবে না। অবশ্যই তাকে প্রথমে ট্রেনিং করাতে হবে। তারপর শিক্ষকতার মহান দায়িত্ব তার হাতে দিতে হবে। যার ফলে শিক্ষার্থীরা সুরক্ষিত থাকবে। আর যে সমস্ত মুহতামিম/ প্রিন্সিপাল আছেন তাদেরকে যোগ্য হতে হবে। তাদেরকে পূর্বের অভিজ্ঞতা ও প্রশিক্ষণ ছাড়া সরাসরি মুহতামিম পদে দায়িত্ব দেওয়া ঠিক না। পরিচালনা কমিটিকে আরও দায়িত্বশীল হতে হবে। মাদ্রাসা পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা যদি তৎপর থাকতেন তাহলে আর আমার ছোট্ট ছোট্ট শিক্ষার্থীরা এমন অমানবিক নির্যাতনের শিকার হতো না। শুধু মাদ্রাসা শিক্ষককে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হলেই কেবল সব কিছুর সমাধান হয়ে যাবে না। মাদ্রাসা পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদেরও আইনের আওতায় আনতে হবে তাহলে ই নিস্পাপ শিশু শিক্ষার্থী নির্যাতন বন্ধ হবে।

এই সংবাদটি শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




raytahost-demo
© All rights reserved © 2019
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: Jp Host BD