ফুডফরগুড প্রকল্পের ২০০ দিনের মাইলফলক:
চাই মানবিক ভালোবাসা, চাই ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত পৃথিবী। এই সুন্দর স্বপ্ন লালন করেই ২০১৫ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক মেহেদী হাসান গড়ে তুলেন মানবিক সংগঠন Universal Amity. আর সেই থেকে গেয়ে যাচ্ছেন মানবিকতার জয়গান। আর তার সাথে সুর মিলাচ্ছে একদল মানবিক সহযোদ্ধা। যেখানেই মানবতা ভূলুন্ঠিত কিংবা স্বাধীনতা পরাভূত সেখানেই ছুটে যাচ্ছে ইউনিভার্সাল এমিটি। কখনো ক্ষুধার্ত মানুষের হাতে তুলে দিচ্ছে আহার, কখনো বা শীতার্ত মানুষকে কম্বল দিয়ে জড়িয়ে নিয়ে ছড়াচ্ছে ভালোবাসার উষ্ণতা। লকডাউনে ঘরবন্দি মানুষগুলো যখন মৃত্যু শংকায় কম্পমান তখনো কিছু মানবিক কোমল হৃদয়ের মানুষ নিজেকে সেরা সৃষ্টি প্রমাণ করতে ঘরের বাহির হয়েছে। করোনার মৃত্যুকে তুচ্ছজ্ঞান করে তারা ক্ষুধিতের যন্ত্রণায় হয়েছে কাতর। সেই কাতরতা তাদেরকে করেছে মানবিক, করেছে আরও বেশি উজ্জ্বল। অনেক অনিশ্চয়তা আর উৎকণ্ঠার মাঝেই গত ৭ জুন ইউনিভার্সাল এমিটি শুরু করেছিল ফুডফরগুড প্রকল্প যার মাধ্যমে প্রতিদিন একবেলা আহার যুগিয়েছে ঢাকায় খোলা আকাশের নিচে বাস করা প্রায় শ’ খানেক ছিন্নমূল মানুষের জন্য। আজ এই প্রকল্পের ২০০ তম দিন। লক্ষ্য প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে মহান স্বাধীনতা। যে স্বপ্ন নিয়ে দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানেরা এনেছিল একটি স্বাধীন মানচিত্র সেই মানচিত্রে ক্ষুধা আর দারিদ্র্য থাকতে পারে না। এই দেশপ্রেমের মহিমায় আচ্ছাদিত ইউনিভার্সাল এমিটি ৪৯ তম বিজয় দিবসও পালন করেছে ভিন্নভাবে। নিজ হাতে খাবার রান্না করে ১৬ ডিসেম্বরের রাত ১২ টা ১ মিনিটে খুলনা শহরের ভাসমান অসহায় ১০০ মানুষের হাতে তুলে দিয়েছে খাবার আর ভালোবাসার উষ্ণতা জড়ানো কম্বল দিয়ে হেসেছে বিজয়ের হাসি।
এর আগে গত নভেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে উইন্টারকেয়ার প্রকল্পের মাধ্যমে উত্তরবঙ্গের তিন জেলা পঞ্চগড়, কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাটে দুঃস্থ অসহায় প্রায় ২০০০ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে ভারী কম্বল। তার পরের সপ্তাহে খুলনার পাইকগাছায় দেয়া হয় ৮০০ কম্বল। ডিসেম্বরের ১১ তারিখ এ প্রকল্পের আওতায় কম্বল বিতরণ করা হয় ঢাকার শতাধিক ছিন্নমূল মানুষের মাঝে। সর্বশেষ খুলনার কয়রা ও সাতক্ষীরার আশাশুনিতে আম্ফান ঝড়ে সর্বস্ব হারানো প্রায় ১০০০ শীতার্ত মানুষের কাছে কম্বল পৌঁছে দিয়েছে মানবিক এই সংগঠনটি। আগামী সপ্তাহে গাইবান্ধা, রংপুর ও নীলফামারীতে আরও সহস্রাধিক কম্বল বিতরণের উদ্যোগ নিয়েছে তারা। এছাড়াও Income Aid প্রকল্পের মাধ্যমে কুড়িগ্রামের অসহায় প্রায় ১০০ পরিবারের কাছে তুলে দেয়া হয়েছে গবাদি পশু (গরু- ছাগল), সেলাই মেশিন সহ অন্যান্য সামগ্রী। আম্ফান ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত কিছু মানুষকে ঘর নির্মাণ করে দিয়েছে ইউনিভার্সাল এমিটি। Lifeline প্রকল্পের আওতায় ২০ টা টিউবওয়েল স্থাপণ করে প্রায় ১৫০ টি পরিবারের সুপেয় ও নিরাপদ পানির ব্যবস্থা করে দেয়া হয়েছে। অসহায় ও দরিদ্র ২০ জন শিক্ষার্থীর স্নাতকোত্তর পর্যন্ত শিক্ষার দায়িত্ব নিয়েছে Universal Amity. দরিদ্র মুসল্লিরা যেন নির্বিঘ্নে নামাজ আদায় করতে পারে সেজন্য আম্ফান দূর্গতদের অঞ্চলে চলছে মসজিদ নির্মাণের মত মহতি কাজ। ফিজিক্যাল চেলেঞ্জ যাদের জীবন স্তব্ধ করেছে তাদের মাঝে হুইল চেয়ার বিতরণ করেছে বেশ কয়েকটি। সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতার সাথে কথা বলে জানা যায় সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক এই মানবিক সংগঠনটির লক্ষ্য হলো ছোট ছোট দানগুলোকে একত্রিত করে প্রকৃত অসহায় ও দুঃস্থ মানুষগুলোর পাশে দাঁড়ানো। দেশ বিদেশের অসংখ্য মানবিক মানুষ এই সংগঠনে অর্থ ও সাহায্য পাঠিয়ে পাশে দাঁড়ায় অসহায় মানুষ। সৃষ্টিকর্তা আমাদের শ্রেষ্ঠ জীব করে পাঠিয়েছেন এই ক্ষণস্থায়ী পৃথিবীর বুকে। কিন্তু শ্রেষ্ঠ মানুষ তারাই যারা জীবসত্তাকে মানবসত্তায় উন্নীত করতে পারে। মানবিক হবার এই সুন্দর প্রচেষ্টায় সকলে মিলে ইউনিভার্সাল এমিটির সাথেই থাকুন। মানবিক আন্দোলন নিয়ে এই সংগঠনটির যে পথচলা শুরু হয়েছিল ভবিষ্যতেও এই যাত্রা অব্যাহত থাকবে ইনশাআল্লাহ।
Leave a Reply