সুমিতা সরকার ঘোষ
আজও মা গভীর রাতে স্নান শয্যায় যান গঙ্গায়,
মাঝি দেখেছেন কেউ কেউ, মায়ের পা থাকে ভাসমান কচুপাতায়।
ভোরবেলায় মা থাকেন শান্ত, দর্শনে করুন মন পবিত্র,
বেলা বাড়ার সাথে সাথেই তপ্ত রৌদ্রে তিনি হন চঞ্চলা তেজসিক্ত।
কিছু দূরেই নকুলেশ্বর মন্দিরে আছেন মহেশ্বর প্রতীক্ষায়,
যে কোন মানসিকে দু জায়গাতেই দিন পুজো, অঞ্জলি, ফল পাবেন ঈশ্বর সহায়তায়।
মাটির গহ্বরের বিশেষ ঘরে পাথরের পাঁচ আঙ্গুল বর্তমান,
বহু অতীতে, যে সতী দেহ ৫১ খন্ডে টুকরো হয়, এই আঙ্গুলই তারই প্রমাণ।
অপরূপ তার জ্যোতি, বহুযুগ ধরে পরিণত হয়েছে প্রস্তরীভূত শিলায়,
পৃথিবী পৃষ্ঠে পতিত সতীর অঙ্গ বিশেষ যা পরবর্তী কালে ৫১ সতীপীঠে পরিবর্তিত রূপ পায়।
স্নানযাত্রার দিনে ধূপ, দ্বীপ, আতর,ফুল, ফল, গঙ্গাজল আর চন্দনে,
বিশেষ ভাবে করা হয় পুজো বেলপাতা, দূর্বো, শাঁখ, আর মন্ত্রের বন্ধনে।
অবিশ্বাস দেখিয়েছিল ইংরেজ সাহেব,
বলেছিল তোমাদের মা পাথরের প্রতিমা, নেই এর মাঝে কোন প্রাণ,
লোহার এক পাঁঠা তৈরী করে খড়্গাঘাতে বলি দিয়ে নিতে হবে তার জান।
বলির সময় রক্তস্রোতে পাঁঠা #মা বলে ওঠে ডেকে,
মাথা নোয়ায় সাহেব, করজোড়ে বিশেষ পুজো প্রদান করে দেখে।
আজ মায়ের জিভ হয়েছে সোনার মূর্তির রদবদল হয়েছে কিছু পরিবর্তনে,
ভক্তি ভরে শ্রদ্ধা অর্পণে মা কালিকার আজও সাড়া পাবেন অচৈতন্য মনে।
কখনও কখনও ঈশ্বর পুজো সমাপ্তে নেমে এসে অন্তর্হিত থাকেন #জবা, #বেলপাতা, #শালপাতায় #মোড়া #প্রসাদে।
যে করেনি মন্দির দর্শন, আসেনি মায়ের সামনে, তার জীবন বরবাদে।
এই কলিযুগেও সামান্য #পেঁড়া, #ধূপ #দ্বীপ, #লাল #জবা সহযোগে,
অন্তরের পবিত্রতা, শ্রদ্ধায়, মন্ত্রোচ্চারণে, পাথর মূর্তিতেও প্রান জাগে।
করবেন নাকি চাক্ষুষ দর্শন ভোর ছটার মধ্যে আসুন,
সামান্য উপাচার, দান, দক্ষিণা, আর কল্পনা, ভক্তি, মায়ের স্বপ্নে একটু ভাসুন।
সামনে হয়ত পাবেন না দেখা, পুণ্য করেননি এত,
কিন্তু হৃদয়ে সাড়া মিলবে, বুঝবেন সন্দেহের সাথে প্রমাণ ও শতশত।
ঈশ্বর অলক্ষ্যে কখন এসে করেছেন আশীর্বাদ,
বলেছেন সৎ ইচ্ছে পূর্ণ হবে তোর, মনঃষ্কামের প্রতিবাদ।
বিচ্ছিন্ন সব কিছুতে সংযোগ স্থাপন এই কালীঘাটের উদ্দেশ্য,
শুভ কাজে নিন আশীর্বাদ, পুণ্য হবেই হবে যুক্তি সহযোগে ব্যখ্যা পারি দিতে,
কারণ মা নিজেই সব শক্তির উৎস।
জপ, তপ, তুলসী, রুদ্রাক্ষ, নিশ্বাসে, বিশ্বাসে প্রাণ,
দূ্র্বো, বেলপাতা, সিঁদূর, শঙ্খ, উলুধ্বনি, প্রদক্ষিণ, আর মায়ের কন্ঠে পবিত্র মাল্যদান।
ভরে যাবে জীবন, কায়, মন ও বাক্যে যদি ডাকতে পারেন অন্তর নিবেদনে,
মা আজও সাড়া অবশ্যই দেন, ভক্তিতে পাথরেও হয় প্রাণ প্রতিষ্ঠা, যদি বিশ্বাস থাকে মনে।
#কালী_কালী_মহাকালী_কালিকে_পাপহারিণী,
#ধর্মার্থ_মোক্ষদে_দেবী_নারায়নী_নমস্তুতে………..
পাপাচারে ভরেছে পৃথিবী, কর্মফলে ভুগছে সবাই,
কোথায় দেবতার দোষ?? সংহারে অনতিদূরেই আসছেন দেবী কালিকা, সমাপ্তিতে জানাই।
কলি যুগে একথাই শুধু বলি, যারা বলেন কালী তন্ত্রসাধনা ও শক্তির দেবী,
লাভ হয়না পুজো করে??
আমি বলব একবার দেখুনই না বিশ্বাসে বস্তু মিলাতেও তো পারে??
এই মন্দিরেই মা ছিলেন, আছেন, থাকবেন যুগ, যুগ, শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে,
শুধু মনে থাকতেই হবে অটুট বিশ্বাস
দেখা দেবে না মানে?? আসতেই হবে ভক্তের ঘরে??
#আমি_মন্ত্র_তন্ত্র_কিছুই_জানি_নে_মা
#শুধু_যা_জেনেছি_সেটুক_হলো_এই,
#তোকে_ডাকার_মত_ডাকতে_যদি_পারি_আসবিনে_তোর_এমন_সাধ্য_কই??
শুনেছি মানুষের নানা পাপাচারে আজ আর কোন মন্দিরেই ঈশ্বর নেই, অন্তর্হিত হয়েছেন পাথরের বিগ্রহ মাঝে, একমাত্র তিনটি জায়গায় তিনি আজও বিরাজ করেন সূক্ষ্ম প্রাণ রূপে,
(১). #কাশী_বিশ্বনাথ_মন্দির
(২). #পুরীর_মন্দির
(৩). #কালীঘাট_মন্দির
তথ্যঃ #ভোরবেলায় একমাত্র মা আপনাকে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে দর্শন করতে দেবেন নাহলে বেলা বাড়ার সাথে সাথে মা চঞ্চলা হয়ে ওঠেন আর তারই অলৌকিক ইচ্ছেতে পান্ডারা মায়ের সামনে থেকে আপনাকে ধাক্কা মেরে সরিয়ে দেবে। তাছাড়া ঐ জ্যোতিলিঙ্গের ( পাঁচ আঙ্গুলের প্রস্তরীভূত শিলা) এত তেজ আর আলো যে আপনিই সহ্য করে মায়ের দিকে বেশীক্ষন তাকিয়ে থাকতে পারবেন না।
এবার আসা যাক অন্য তথ্যেঃ
কালীঘাট একটা বহু প্রাচীন কালীক্ষেত্র। কোন কোন গবেষক মনে করেন কালীঘাট থেকে #কলকাতা নামটির উদ্ভব। বর্তমান মন্দিরটি ৯০ ফুট উঁচু , নির্মাণ করতে সময় লেগেছিল ৮ বৎসর এবং খরচ হয়েছিল ৩০,০০০ টাকা। মন্দির সংলগ্ন জমিটির মোট আয়তন ১ বিঘে ১১ কাঠা ৩ ছটাক। বঙ্গীয় আটচালা স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত মূল মন্দিরটির আয়তন অবশ্য মাত্র ৮ কাঠা। মা কালীর মন্দির ছাড়াও মন্দির সংলগ্ন অনেকগুলি ছোট ছোট রাধা- কৃষ্ণের মন্দির, শিব- নকুলেশ্বরের মন্দির বর্তমান।
সত্যযুগে দক্ষ প্রজাপতি স্বগৃহে মহাযজ্ঞের আয়োজনে দেবতা, মুনি, ঋষি, যক্ষ, কিন্নর, সকলকে নিমন্ত্রণ করলেও দক্ষ আপন কন্যা সতী ও জামাতা শিবকে নিমন্ত্রণ জানাননি। বিনা আমন্ত্রণে সতী ও শিব সেখানে উপস্থিত হলে যক্ষ সতীর সামনেই শিবের নিন্দে শুরু করেন। পতি নিন্দা সহ্য করতে না পেরে তৎক্ষনাৎ যজ্ঞকুন্ডে আত্মবিসর্জন দেন সতী। শিব ক্রুদ্ধ হয়ে সতীর শবদেহ কাঁধে নিয়ে বিশ্ব ধ্বংসের উদ্দেশ্যে তান্ডব নৃত্য শুরু করে দেন। তাকে শান্ত করার জন্য বিষ্ণু সুদর্শন চক্র দিয়ে সতীর দেহ খন্ড বিখন্ড করে দেন।
দেহের সেই টুকরো গুলো পৃথিবীর নানা স্থানে পতিত হয়েছিল। পৃথিবীতে পড়ামাত্রই এগুলি প্রস্তর খন্ডে পরিনত হয়। সতীর ডান পায়ের পাঁচটি আঙ্গুল পড়েছিল এই কালীঘাটে। সেই থেকেই সতী পীঠ হিসেবে আখ্যায়িত কালীঘাট।
(১) কালীঘাটের বর্তমান মন্দির ২০০ বছরের বেশী পুরোনো নয়, হাটখোলার দত্ত পরিবারের কালীপ্রসাদ দত্ত এবং বড়িশার সাবর্ণ রায়চৌধুরী পরিবারের সন্তোষ রায়চৌধুরী এই মন্দির নির্মাণ করেন।
(২) কালীঘাট তীর্থের উল্লেখ আছে ১৫ শতকের মনসা ভাসানের গানে। কবিকঙ্কণ চন্ডীতেও এর উল্লেখ আছে। অতীতে এটি একটি পর্ণকুটির ছিল। ১৬ শতকে রাজা মানসিংহ প্রথম একটি পাকা মন্দির নির্মাণ করেন।
(৩) কালীঘাটকে সতীর একান্নপীঠ অন্যতম পীঠ ধরা হয়। সে দিক থেকে দেখলে এর প্রাচীনত্ব আরও বেশী।
(৪) কালীঘাটের মাতৃমূর্তির সঙ্গে অন্য কোন কালীমূর্তির মিল নেই। এই মূর্তি অনন্য।
(৫) একান্ন পীঠ বলে পরিচিত তীর্থগুলোর প্রতিটি তীর্থেই কোন না কোন প্রস্তরকে দেবীরূপে পুজো করা হয়। সেদিক থেকে কালীঘাটের কালীমাতাও শিলাস্বরূপ।
(৬) মাতৃমূর্তিটি বর্তমান রূপটি দান করেন ব্রহ্মানন্দ গিরি ও আত্মারাম গিরি নামের দুই সন্ন্যাসী।
(৭) কলকাতা অঞ্চলে প্রাচীন নাথ ধর্মের বিশেষ প্রতিপত্তি ছিল বলে অনেকে মনে করেন। চৌরঙ্গী নামটির সঙ্গে জড়িয়ে আছে অনেক কিংবদন্তী।
(৮) কালীঘাটের কালীর ভৈরব হলেন নকুলেশ্বর মহাদেব। তার মন্দির কালীমন্দিরের কাছেই। আগে এই স্থান গভীর জঙ্গলে আকীর্ণ ছিল।
(৯) কালীঘাট মন্দিরের সংলগ্ন ১০ কাঠার একটা পুকুর রয়েছে। কথিত আছে এই পুকুর থেকেই সতী অঙ্ আবিষ্কৃত হয়েছিল। পুকুরের নাম কুন্ড পুকুর বা কুন্ডু পুকুর। এর জলকে গঙ্গাজলের তুল্য পবিত্র ধরা হয়।
ইংরেজ আমলে কালীঘাটের অন্য প্রতিপত্তি বাড়ে। এক একটা বড় কারণ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শ্বেতাঙ্গ কর্মচারীরা এই মন্দিরে নিয়মিত আসতেন। একপ্রকার বিশ্বাস থেকে পুজোও দিতেন। এইভাবে তাদের মধ্যে আগ্রহ নিয়মিত হয়ে ওঠে।
#কালীঘাটে_ গুপ্ত_ধনের_সন্ধানঃ
কালীঘাট মন্দিরের মোট ধনসম্পত্তি কত? সেই রহস্য উন্মোচনে কেন্দ্রীয় আয়কর দপ্তর মন্দিরের যাবতীয় ধন সম্পত্তির হিসেব দাখিল করতে চলেছে মন্দির কমিটি।
মোট ধনসম্পত্তি কত?? সোনা, রূপোর পরিমাণই বা কত?? এ যাবৎ মন্দিরে কত টাকার প্রণামী জমা পড়েছে?? তার মধ্যে কত টাকা মন্দিরের উন্নয়নের খাতে খরচ হয়েছে?? পরিচালন কমিটির কথা বার্তাও এ ব্যপারে এতদিন অন্ধকারে ছিল।
এই প্রথম কেন্দ্রীয় আয়কর দপ্তরের কাছে মন্দিরের যাবতীয় ধন সম্পত্তির হিসেব দাখিল করা হবে। জানা যাবে কালিঘাট মন্দির কত টাকার মালিক??
পরিচালন কমিটির কোষাধ্যক্ষ কল্যাণ হালদার বলেন, মন্দিরের পরিচালনার স্বচ্ছতা বজায় রাখতে নামী সংস্থাকে দিয়ে আয় ব্যায়ের অডিট করানো হচ্ছে। মন্দিরের টাকা, পয়সা, সোনা, যেন কেউ নয়ছয় করতে না পারেন। সম্পত্তি রক্ষা ও আয় ব্যায়ের পুরো দায়িত্ব কোষাধ্যক্ষের কাছেই।
মন্দির সূত্রে জানা গিয়েছে বর্তমানে মন্দিরের নামে কয়েক শো ভরি সোনা ও রূপোর অলংকার রয়েছে। সবটাই আছে ব্যাঙ্কের ভল্টে। খুব সামান্যই বিগ্রহের অঙ্গে পরানো রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে বিগ্রহের সোনার জিভ, দাঁতের পাটি, মুকুট, কয়েক গোছা বালা, নথ, চুড়ি, মুন্ডমালা, মায়ের খড়্গটিও সোনা দিয়ে বানানো। এটি দান করেছেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর ছেলে চন্দন বসু। মায়ের হাত সোনার তৈরী। ব্রিটেনে বসবাসকারী এক অনাবাসী ভারতীয় সোনার হাত গুলো দান করেন। যার মূল্য কয়েক কোটি টাকা।
মন্দির তৈরীর পর থেকে এই বিপুল ধনসম্পত্তি যাতে বেহাত না হয় তাই মন্দির কমিটি আয়কর দপ্তরের কাছে নথিভুক্ত করাতে চাইছে।
আদালতের নির্দেশ মেনে কোন ভক্ত মাকে স্বর্ণালংকার বা রূপোর গয়না দিতে চাইলে প্রথমে মন্দির কমিটির কাছে আবেদন করতে হয়। তার বিনিময়ে একটা ছাপানো রসিদ দেয় মন্দির কর্তৃপক্ষ। তাতে তিনি কত ভরি সোনা বা রূপো দিলেন সেটা লিখে রাখা হয়। চার পাঁচ মাস অন্তর সেই সোনা, রূপো, জেলা আদালতের তিনজন প্রতিনিধির উপস্থিতিতে মাপ করে ট্রাঙ্কে ভরা হয়। তারপর সিল করে পাঠিয়ে দেওয়া হয় কালীঘাট স্টেট ব্যাঙ্কে। মন্দির কিভাবে পরিচালিত হবে সেটা সুপ্রীম কোর্ট ঠিক করে দেন। ১১ জন সদস্য নিয়ে গঠিত মন্দির পরিচালন কমিটি। এর মাথায় রয়েছেন ডিস্ট্রিক্ট জজ। কমিটির সদস্যদের মধ্যে পাঁচজন মন্দিরের সেবাইত, তারা সবাই মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা সাবর্ণ রায়চৌধুরী পরিবারের বংশধর অথবা আত্মীয়-স্বজন। বাকী ছয়জনকে আদালত আদালত ঠিক করে দেন। তাদের মধ্যে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, কলকাতা পুরসভা, ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘ, সংস্কৃত কলেজের একজন করে প্রতিনিধি।
মন্দির প্রশাসনের কাজ দেখে কমিটি। কোন সেবায়েত মারা গেলে তাঁর জায়গায় কে আসবেন সেটা তারাই ঠিক করে। মন্দির পরিচালনার ক্ষেত্রে কমিটি মূখ্য ভূমিকা পালন করে।
কালীঘাট মন্দির কলকাতার আদি গঙ্গার তীরে একটা প্রসিদ্ধ কালীমন্দির এবং ৫১ শক্তি পীঠের এক শক্তি পীঠ। বর্তমান মন্দিরটি সাবর্ণ রায়চৌধুরী পরিবারের আনুকূল্যে এবং এই পরিবারই মন্দিরকে ৫৯৫ বিঘা জমি দেবত্র হিসেবে দান করে।
আদি গঙ্গার তীরে বর্তমান মন্দিরটি নির্মিত। মন্দিরের কিছু কিছু পোড়ামাটির কাজ নষ্ট হয়ে গেলে সন্তোষ রায়চৌধুরী সেগুলি সংস্কার করে দেন। মন্দিরটি ৯০ ফুট উঁচু, নির্মাণ করতে সময় লেগেছিল ৮ বছর। খরচ হয়েছিল ৩০, ০০০ টাকা। মন্দির সংলগ্ন জমিটির মোট আয়তন ১ বিঘে ১১ কাঠা ৩ ছটাক। মূল মন্দির ৮ কাঠা। মন্দির সংলগ্ন অনেকগুলি ছোট ছোট মন্দিরে রাধা – কৃষ্ণ, শিব, বগলামুখী, ভুবনেশ্বরী প্রভৃতি দেবতা পূজিত হন।
কালীমন্দিরের কষ্টিপাথরের কালী মূর্তিটি অভিনব রীতিতে নির্মিত। মূর্তিটির জিভ, দাঁত, মুকুট, সোনার হাত, মুন্ডমালাটিও সোনার। মন্দিরের মধ্যে একটা সিন্দুকে সতীর প্রস্তরীভূত অঙ্গটি রক্ষিত আছে। এটা কারো সম্মুখে বের করা হয় না। প্রতি বছর পয়লা বৈশাখ, দুর্গা পুজো ও দীপান্বিতা কালীপুজোর দিন মন্দিরে প্রচুর ভক্ত ও পুণ্যার্থীর সমাগম ঘটে।
প্রতি বছর কালী পুজোর দিন শুধু লক্ষী রূপে পুজোই নয় ভোগের আয়োজন ও লক্ষী পুজোর মতনই করা হয়। লক্ষী পুজোয় যা যা নিবেদন করা হয় সেসবই এদিন কালীঘাটের দক্ষিণেশ্বরী মাকে নিবেদন করা হয়। দীপান্বিতা অমাবস্যা তিথিতে মাকে দূপুরে ভোগ হিসেবে নিবেদন করা হয়
(১) সাদা ভাত,
(২) শুক্তো,
(৩) পোলাও,
(৪) পাঁচ রকম ভাজা,
(৫) পাঁচ রকম মাছ,
(৬) পাঁঠার মাংস,
(৭) চাটনি,
(৮) পায়েস,
(৯) মিষ্টি।
সন্ধ্যে থেকেই ভোগের আয়োজনে ঘটে পরিবর্তন। সন্ধ্যায় মাকে
(১) গাওয়া ঘি তে ভাজা ফুলকো লুচি,
(২) পাঁচ রকম ভাজা
(৩) মিষ্টি সহযোগে ভোগ দেওয়া হয়। এই ভোগের সঙ্গে সংযোজন করা হয়
(৪) নারকেল নাড়ু
(৫) গুড় মাখানো খই
(৬) কদমা
(৭) বাতাসা
(৮) তিলের নাড়ু।
১৮৮৭ সালে ব্রহ্মানন্দ যখনই মা কে দর্শন করতে চাইতেন তখনই মা কন্যারূপে আসতেন। মা আর সন্তানের বাৎসল্যের লীলাখেলা চলত। একদা মা কালী একটি বাগদী মেয়ের রূপ ধরে পুজোতে বিঘ্ন উৎপন্ন করে খিল খিল করে হাসছিলেন। রাগে ব্রহ্মানন্দ বলে উঠলেন #হতচ্ছাড়ি_মেয়ে_দূর_হ_মন্দির_থেকে।
মা ব্রহ্মানন্দের কাছে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ছিলেন, যতদিন না তিনি তাড়াবেন মা তাঁর কাছ থেকে দূরে যাবেন না। তাই মা স্বরূপে এসে বললেন
#ব্রম্মানন্দ_তুমি_আমাকে_চলে_যেতে_বললে_আমি_তোমার_থেকে_চলে_গেলাম_আর_কন্যা_রূপে_দর্শন_দেব_না।
এই হোল কালীঘাটে মায়ের স্থাপন কাহিনী, পুজো শুরু হলো কিন্তু ভৈরব পাওয়া গেল না। ভৈরব ছাড়া পুজো কিভাবে সার্থক হবে??
শুরু হোল ভৈরব খোঁজা। শক্তিপীঠের পাশেই ভৈরব থাকেন। একদিন ভোরবেলায় সাধক ব্রহ্মানন্দ পুজোর জন্য ফুল তুলছিলেন হঠাৎ দেখলেন এক স্থানে একটা গাভী দুধ দিচ্ছে। মাটি সরাতেই শিবলিঙ্গ উঠে এলে আত্মারাম ও ব্রহ্মানন্দ বুঝলেন ইনিই মায়ের ভৈরব নকুলেশ্বর শিব।
গঙ্গার ধারে হোগলা পাতা আর বাঁশ দিয়ে মন্দির বানিয়ে পুজো শুরু হলো যেখানে মা সতীর চরণাঙ্গুলি পড়েছিল সেই পুকুরের ধারে এক ব্রাহ্মণ আর তার বৌ কালী সাধনা করতে এসেছিলেন। জৈষ্ঠ্যমাসের শুক্লা চতুর্দশীর রাতে ব্রাহ্মণী দেখল পুকুরের জলে কি একটা বস্তু ভেসে বেড়াচ্ছে। ব্রাহ্মণী চেঁচিয়ে স্বামীকে জানাল দুজনের চিৎকারে আত্মারাম আর ব্রহ্মানন্দ সেখানে ছুটে গিয়ে জল থেকে চকচকে বস্তু তুললেন, বুঝলেন সেটি সতী মায়ের আঙ্গুল। দুজনে মিলে মায়ের বেদীর সামনে সেটা প্রতিষ্ঠা করলেন। পুরোনো রীতি মেনে এখনও সুগন্ধী তেল, মধু, চন্দন, ঘৃত, ডাবের জল, ধূপ, ধুনো, কর্পূর, গঙ্গাজল দিয়ে সেই পবিত্র সতী অঙ্গ স্নান করানো হয়, তবে এটা গুপ্ত রূপে।
১৮৫৫ সালে নকুলেশ্বর মন্দির তৈরী হয়। এক ব্যবসায়ী তারা সিং অতি ধার্মিক ছিলেন। তিনি কাশীধামে নৌকাে নিয়ে যাত্রা শুরু করেন। কিন্তু আশ্চর্য, কাশীধামের ঘাটে নৌকাে আর আসতেই চায় না, মাঝি- মাল্লারা অনেক চেষ্টা করেও নৌকো ঘাটে আনতে পারলেন না। নৌকো আপন গতিতে তাঁর ইচ্ছেয় ভেসে চলল। তারা সিং মাঝিদের বললেন দেখা যাক নৌকো কোনদিকে যায়। নৌকো এসে ঠিক আপনা আপনি কালীঘাটে ভিড়ল। তারা সিং দেখলেন মায়ের মন্দির থাকলেও সপখানে ভৈরবের মন্দির নেই। তিনি সেখানে ভৈরব মন্দির নির্মাণ করালেন। মা কালী, নকুলেশ্বর মন্দির, সাথে সাথে রাধা- কৃষ্ণের মন্দির ও তৈরী হলো। এই হলো কালীঘাটের বর্ণনা।
কোন এক সময়ে এখানে নরবলি হতো। পশুবলিও দেওয়া হতো এখানে বিশেষ তিথিতে।
সভ্যতার উন্নয়নের সাথে সাথে মন্দিরে লোক সমাগম বাড়তে থাকে। পুজো অর্চ্চনাও শুরু হয়। রাজা মানসিংহ ষোড়শ শতাব্দীতে এই মন্দির তৈরী করে দেন। বয়স বাড়ার সাথে সাথে মন্দির জরাজীর্ণ হতে থাকে। ১৮০৯ সালে কলকাতার সাবর্ণ রায়চৌধুরী পরিবার আজকের মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেন। তাছাড়া এই মন্দিরের আরও অংশ আছে, যা বিভিন্ন জমিদার এবং ধনাঢ্য ব্যক্তির অনুদানে নির্মিত। এই মন্দিরে রয়েছে নাট মন্দির, ষষ্ঠীতলা, কাককুন্ড, হাঁড়কাঠ তলা, এখানে নকুলেশ্বর মন্দির রয়েছে, #নকুলেশ্বর_দর্শন_না_করলে_দেবী_প্রসন্ন_হন_না।
(২) একজন পাঞ্জাবী সৈনিকের শেষ ইচ্ছে রাখতে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি মন্দির সংলগ্ন আদি গঙ্গার ঘাটটি বাঁধিয়ে দিয়েছিল। ⛪ মন্দিরটির সংস্কার সাধন হয় বড়িশার জমিদার সন্তোষ রায়চৌধুরীর উদ্যোগে।
(৩) আন্দুলের জমিদার কাশীনাথ রায় কালীঘাট মন্দিরের নাটমন্দিরটি তৈরী করে দিয়েছিলেন।
(৪) খিদিরপুরের গোকুল চন্দ্র ঘোষাল কালী মায়ের চার হাত রূপোর তৈরী করে সেই হাত পরে সোনায় তৈরী করে দেন কালীচরণ মল্লিক।
(৫) বহু মানুষ মন্দিরে দান ধ্যানও করেছেন। রাজা নবকৃষ্ণ ১৭৬৫ সালে সোনার মুন্ড মালা দান করেন, সঙ্গে লক্ষাধিক টাকা। মায়ের রূপোর হাত সোনার করে দিয়েছিলেন কালীচরণ মল্লিক। দেবী মায়ের সোনার জিভ গড়িয়ে দিয়েছিলেন পাইক পাড়ার রাজা ইন্দ্রচন্দ্র সিংহ, পাতিয়ালার মহারাজ সোনার মুন্ডমালা দান করেন, দেবীর মাথায় সোনার ছাতা দান করেছিলেন নেপালের সেনাপতি জঙ্গ বাহাদুর।
শুধু দেবীকে সাজিয়ে দেওয়া নয় গোটা মন্দির ও মন্দির চত্বর গড়ে উঠেছে মানুষের দানে, শ্রদ্ধা, ও ভক্তিতে।
প্রতি মাসে ৫০০ জন মুসলমান এখানে পুজো দিয়ে যেতেন।
(৭) হুগলী নদীর তীরে জলকাতা শহরের প্রায় ২০ কিমি উত্তরে দেবী কালীর কালীঘাট মন্দির অবস্থিত। ১৮৪৭ সালে স্থাপিত হয়। কালীঘাট মন্দির প্রায় ২০০ বছরের পুরোনো। কলকাতার কালীঘাট মন্দির পূর্ব ভারতের হিন্দুদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় স্থান। বহু পর্যটক ও তীর্থ যাত্রীরা পরিদর্শনে আসেন।
(৮) এই একই প্রাঙ্গনে ভগবান শিব ও রাধা- কৃষ্ণকে উৎসর্গীকৃত কিছু মন্দির রয়েছে। পুজোর জন্য প্রয়োজনীয় মালা, ফুল, মিষ্টি, এবং বাসনপত্র মন্দির এলাকায় পাওয়া যায়। কলকাতার কালীঘাট মন্দিরে জুতো পরে প্রবেশ নিষেধ। সারা বছর হাজার হাজার ভক্ত এই পবিত্র স্থানে ঘুরতে আসে।
(৯) মন্দির সকাল ৮ টা থেকে রাত্রি ৯টা পর্যন্ত খোলা থাকে। তবে মন্দির পরিদর্শনের আদর্শ সময় হোল খুব সকাল নয়তো বিকেল বা সন্ধ্যের দিকে, বিশেষ করে ৩ টে থেকে ৫ টার মধ্যে। মন্দির প্রাঙ্গনে কোন প্রবেশ মূল্য নেই। মন্দিরের ভিতরে ছবি তোলার অনুমতি নেই।
(১০) শোনা যায় বহু প্রাচীন কাল থেকেই এই কালীঘাটের কালী মা সকাল ও সন্ধ্যায় খুব শান্ত থাকেন, বেলা বাড়ার সাথে সাথে মধ্যাহ্নে মা তপ্ত রৌদ্রে চঞ্চলা হয়ে ওঠেন। আপনি তখন বেশীক্ষণ মায়ের দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে পারবেন না। অলক্ষ্যে আশ্চর্যজনক ভাবে পান্ডাদের মাধ্যমে মা নিজেই আপনাকে সামনে থেকে সরিয়ে দেবেন। সেই কারনে পুজো বা দর্শনের মূল সময় হোল ভোর অথবা গোধূলি। এটা কোন গল্প কথা নয় ধ্রুব সত্য। চাইলে আপনি নিজেও একবার পরীক্ষা করে দেখতে পারেন।
(১১) মন্দির সবে সবে নির্মিত হয়েছে তখন কয়েকজন ইংরেজ সাহেব বলেছিলেন তোমাদের মা কেমন জাগ্রত দেখি?? সেই ইংরেজ সাহেবদের নির্দ্দেশে তৈরী করা হোল এক লোহার বিশালকায় পাঁঠা। সাহেব বলেছিলেন এই পাঁঠা মায়ের সামনে বলি দিতে হবে। বলি দেবার সময় লোহার পাঁঠা যদি মা বলে ডেকে ওঠে আর সেই পাঁঠার শরীর থেকে যদি রক্তক্ষরণ হয়, তবে বুঝব তোমাদের মা ডাকলে সাড়া দেয়। নাহলে উহা পাথরের প্রতিমূর্তি। সেই মত যথাসময়ে পাঁঠা তৈরী করে তাকে স্নান করিয়ে মায়ের সামনে উপস্থিত করানো হয়। পাঁঠার গলায় খড়্গের কোপ বসাতেই মা বলে ডেকে ওঠে আর বলি প্রাঙ্গন রক্তে ভেসে যায়। সাহেব বর্গ একবাক্যে স্বীকার করে নেয় এই মন্দিরে মা অবশ্যই রয়েছে। তারপর থেকেই সাহেবরা বিভিন্ন মামলায় জেতার জন্য পুজো দিয়ে যেতেন। তখনকার দিনে সাহেবদের হাতে ৩০০০ টাকার পুজো পর্যন্ত পড়েছিল।
(১২) সেকালেও অনেক পুণ্যাত্মা মানুষ মাকে চাক্ষুষ দর্শন করেছেন, কেউ বা তারপরও বেঁচে ছিলেন, আবার কেউ কেউ দেখামাত্রই দেহ রেখেছেন। আজও অনেকেই মাকে সত্যি, সশরীরে উপলব্ধি করতে পেরেছেন। আপনিও পারবেন অবশ্যই মনে যদি বিশ্বাস থাকে। বর্তমান এই পরিস্থিতিতেও কাশী বিশ্বনাথ, পুরীর জগন্নাথ দেবের মন্দির আর এই কালীঘাট মন্দিরে দেবী সশরীরে প্রাণ যোগে বর্তমান, শুধু মনে থাকতে হবে বিশ্বাস, দেখা দেবে না মানে?? দিতেই হবে।
বহু মাঝি মাল্লারা আদি গঙ্গায় মাকে মাঝরাতে নিশি প্রহরে স্নানে যেতে দেখেছেন। একবার এক মাঝি পাড়ের কাছে নৌকাে বেঁধে মাঝরাতে নৌকােয় বসে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। কাছে ধারে কাউকে না দেখে মা স্বয়ং তাকে মেয়ের রূপ ধরে বললেন আমায় ঐ পাড়ে নিয়ে যাবে, রাত অনেক, তায় আবার একা নারী, নানান চিন্তা করে মাঝি রাজী হলেন না। পাশেই ছিল জলা জঙ্গল, কচু গাছের বন। মা আর দেরী না করে একটা কচু পাতা ছিঁড়ে তৎক্ষনাৎ জলের ওপর ফেলে তার ওপরে পা রেখে নদী পার হয়ে গেলেন। সব কিছু বুঝতে পেরে মাঝি জোড় হাতে মায়ের কাছে ক্ষমা চাইলেন। মা অভয় দিলেন দূর থেকে তাকে। আজও না ঠিক তেমন ভাবেই অন্তঃসলিলা গঙ্গায় স্নানে আসেন সবার চক্ষের অলক্ষ্যে।
(১৩) কালীঘাট পৌঁছানোর জন্য স্থানীয় বাস, ট্যাক্সি উপলব্ধ রয়েছে। নিকটবর্তী স্টেশন হলো কালীঘাট মেট্রো স্টেশন। এই প্রাচীন মন্দিরটি কলকাতা শহরের এক প্রধান পর্যটন স্থল সুতরাং যদি আপনি কলকাতা ঘুরতে যান তবে কলকাতার এই পবিত্র কালীঘাট মন্দির দর্শন করতে ভুলবেন না।
(১৪) সাধক ব্রহ্মানন্দ মায়ের আদেশ পেয়েছিলেন। মাকে ছাড়তে তার মন চাইল না। আগেই বলেছি মা স্বপ্নে দর্শন দিয়ে বলেছিলেন কন্যারূপে তোমার কাছেই থাকব, কিন্তু যেদিন তুমি আমাকে বিদায় দেবে সেদিনই আমি চলে যাব, এখন তোমরা সত্ত্বর এই স্থান পরিত্যাগ করো, কারণ অতি অল্প কাল পরেই এই স্থান গভীর সমুদ্রে বিলীন হবে। কথিত আছে এরপর মা কালী চোখের নিমেষে তাদের সুদূর নীলগিরি থেকে কালীঘাটে নিয়ে আসেন। যাই হোক তারা দেবীর মূর্তি নির্মাণ করার চেষ্টা করলো কিন্তু পারল না। অবশেষে মায়ের আদেশে দেবশিল্পী বিশ্বকর্মা প্রকট হয়ে মা কালীর মূর্তি নির্মাণ করলেন ব্রহ্ম শিলার ওপরে।
(১৫) ১৮০৯ সালে বড়িশার সাবর্ণ রায়চৌধুরী বংশের জমিদার শিবদাস চৌধুরী ও তাঁর পুত্র রামলাল ও ভ্রাতুষ্পুত্র লক্ষীকান্তর উদ্যোগে বর্তমান মন্দিরটি নির্মিত হয়।
মন্দিরের কিছু পোড়ামাটির কাজ নষ্ট হয়ে গেলে সন্তোষ রায়চৌধুরী সেগুলি সংস্কার করেন, ৯০ ফুট উঁচু মন্দিরটি নির্মাণ করতে ৮ বছর সময় লেগেছিল। তখনকার দিনে খরচ হয়েছিল ৩০,০০০ টাকা। বঙ্গীয় আটচালার আদলে স্থাপত্য ও ভাষ্কর্যে নির্মিত মূল মন্দিরটি রয়েছে ৮ কাঠা জায়গার ওপরে। মন্দির সংলগ্ন অনেকগুলি ছোট ছোট মন্দির রয়েছে। সেখানে রাধা- কৃষ্ণ ও শিব পূজিত হন।
(১৬) কালীঘাট কালীমন্দিরের কষ্টিপাথরের কালীমূর্তিটি অভিনব রীতিতে নির্মিত। মূর্তির জিভ, দাঁত, মুকুট, হাত, মুন্ডমালাটিও সোনার। মন্দিরের মধ্যে সিন্দুকে সতীর প্রস্তরীভূত অঙ্গটি রক্ষিত আছে। কারও সম্মুখে এগুলি বের করা হয় না।
নকুলেশ্বর শিব মন্দিরটি ১৮৫৪ সালে তারা সিং নির্মাণ করিয়ে দেন। দীপান্বিতা অমাবস্যার বিশেষ দিনে ভক্ত সমাগমে জমজমাট হয়ে ওঠে এই মন্দির।
(১৭) এই দেবী মূর্তি বঙ্গের উপাস্য শ্যামা কালীর মূর্তি থেকে একেবারেই আলাদা। টানা বড় বড় তিনটি চোখের দিকে যেন একনাগাড়ে তাকিয়ে থাকা যায় না, মোহময়ী সেই রূপ, রক্ত মাখা কপাল, আর কয়েক হাত লম্বা জিহ্বা, মা কালী চতুর্ভূজা। তাঁর দু হাতে অভয় মুদ্রা আর বরদ মুদ্রা। অন্য দু হাতে খড়্গ, এবং অসুরের ছিন্ন মুন্ড। কথিত আছে এই মুন্ড নাকি অসুররাজ শুম্ভ-র।
(১৮) একটা মামলা জেতার জন্য একজন সাহেব মন্দিরে মানত করে গিয়েছিলেন। মামলা জেতার পর মন্দিরে এসে ৩,০০০ টাকার পুজো দিয়ে যান। পাঞ্জাব – বার্মা দখলের পর ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির পক্ষ থেকে মন্দিরে ষোড়শপচারে পুজো দেওয়া হয়।
(১৯) রাতে পুজো শেষে বিশেষ ভোগ দেওয়া হয় পোলাও, ঘি ভাত, পাঁচ রকম ভাজা, চচ্চড়ি, মাছ, পাঁঠার মাংস, মিষ্টি, ইত্যাদি। কালীঘাট মন্দিরের সেবায়েতরা জানান এখানে দুর্গাপূজাের সময়ও মাকে নয় দিন ধরে দুর্গারূপে পুজো করা হয়। মহালয়া থেকেই শুরু হয় সেই পুজো। নয় দিন ধরে চলা এই পুজোয় ফুল, আলতা, সিঁদুর, লালপলা, প্ীভৃতি যা যা নিবেদন করা হয় মাকে, তা মন্দির থেকে বাইরে বের করা হয় না। দশমীর দিন কলা বউয়ের সঙ্গে ঐ সকল ফুল, বেলপাতা, এবং অন্যান্য সামগ্রী আদি গঙ্গায় ভাসিয়ে দেওয়াই রূতি। আর কালীপুজোর রাতে লক্ষীরূপে পুজো করাও শাস্ত্রীয় বিধি।
কালীঘাট শ্মশান বা কেওড়াতলা মহাশ্মশানঃ ১৮৬২ সালে শবদাহের জন্য মন্দিরের অদূরে নির্মিত হয় কেওড়াতলা মহাশ্মশান। বাংলার বহু বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বের শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে এই শ্মশানে। এখানকার শ্মশানকালী পুজো বিখ্যাত। কালীঘাট মন্দিরের অদূরে আদি গঙ্গার বাম তীরে এই শ্মশান অবস্থিত। সেই সময় এখানে ঘন কেওড়া গাছের জঙ্গল ছিল। তাই এর নাম কেওড়াতলা। আগে গঙ্গা তীরে যে যেখানে খুশী শবদাহ করতো। এমনকি বহু সতীদাহ ও হয়েছে এখানে। যেখানে সেখানে শবদাহ বন্ধ করতে গঙ্গা নারায়ন হালদারের স্ত্রী বিশ্বময়ী দেবী ১৮৬২ সালে তার নিজস্ব জমিতে গড়ে তোলেন এই মহাশ্মশান শশীভূষণ বসুও এই শ্মশানের জন্য অনেক কিছু করেন। তার পিতার স্মৃতিতে শ্মশানে একটি বিরাট বাড়ি নির্মাণ করে দেন। রাতে শবদাহের সুবিধার জন্য গ্যাসের আলোর ব্যবস্থা করেন। তদানীন্তন মুখ্যমন্ত্রী ডঃ বিধান চন্দ্র রায় শ্মশানের আধুনিকীকরণে উদ্দ্যোগী হন। সমগ্র শ্মশানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে নানা ছোটো, বড়ো স্মৃতিফলক ও স্মৃতিসৌধ। বহু বিশিষ্ট ব্যাক্তির শেষকৃত্য এখানে সম্পন্ন হয়েছে। এখানকার শ্মশান কালী পুজো বিখ্যাত।
এই হোল কালীঘাটের আখ্যায়িত বিবরণ………
অদ্ভুত যোগসূত্রঃ অদ্ভুত ভাবে ঘুম ভেঙ্গে যাওয়ায় এই লেখা ভোর ৩ টে ৩০ মিনিটে লেখা, আর দেবী কালিকাও ভোরবেলাতেই জাগ্রত থাকেন। লেখার কথা ছিল সর্বপ্রথম তারাপীঠ, কিন্তু আশ্চর্য ভাবে প্রথমে লেখা হয়, দক্ষিণেশ্বর, তারপর এই কালীঘাট, আর তারাপীঠ আজও লিখে উঠতে পারিনি। লেখার সময়ে নানা অলৌকিক কান্ড ঘটেছে।
তান্ত্রিকদের মতে তারাপীঠের দেবী তারা, মারণ, উচাটন, আর বিশেষতঃ তন্ত্র ক্রিয়ার দেবী। আর কালীঘাটের মা কালী ও ভৈরব নকুলেশ্বর বিচ্ছিন্ন বা ভেঙ্গে যাওয়া সমস্ত সম্পর্ক নাকি জুড়ে দেন, অর্থাৎ মা কালীকা গঠনমূলক দেবী…….
Leave a Reply