সরাইলে দাফনের ৯৬ দিনপর আদালতের নির্দেশে স্কুল ছাত্র শিশু বায়েজিদের (০৮) লাশ কবর খুঁড়ে উত্তোলন করা হয়েছে। দাফনের ৭৯ দিনপর শিশুর পিতা হেলাল মিয়া প্রতিবেশী মাসুক (৪২) ও তার পরিবারের আরো ৯ জনের বিরূদ্ধে করেছেন হত্যা মামলা। তাই গতকাল রোববার সকালে উপজেলার নোয়াগাঁও ইউনিয়নের আইরল (পূর্ব পাড়া) গ্রামের কবরস্থান থেকে নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট ফারজানা প্রিয়াংকার উপস্থিতিতে পুলিশ ওই লাশ উত্তোলন করে মর্গে পাঠিয়েছে। শিশুর পিতা হেলাল মিয়া হত্যা কান্ড দাবী করলেও অভিযুক্তরা বলছেন এটি গভীর ষড়যন্ত্র। অনেকে বলছেন ছাঁদ থেকে পড়ে ব্যাথা পেয়েছিল বায়েজিদ। বিষয়টি সমগ্র উপজেলায় বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে।
পুুলিশ, মামলা ও স্থানীয় সূত্র জানায়, পুলিশ, আইরল গ্রামের পূর্বপাড়ার বাসিন্ধা খলিল মিয়ার ছেলে হেলাল (৩২) ও মাজু মিয়ার ছেলে মাসুক মিয়া। ছোট বাচ্চাদের খেলাধূলা ও বনের কুঞ্জিতে আগুন দেওয়ার ঘটনাকে করে উভয় পরিবারের মধ্যে বিরোধ জন্মায়। হেলালের ছেলে বায়েজিদ আইরল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালরে প্রথম শ্রেণির ছাত্র। গত ১৩ মে সকালে বায়েজিদ হাত মুখ ধূঁইতে মাসুকদের বাড়ির পুকুরে যায়। টাকার আশায় তাদের নির্মাণ কাজের ইট বহন করতে থাকে। ছেলেকে খঁজতে মা বাবা মাসুুকদের বাড়িতে যায়। পুকুর ঘাটের সিঁড়িতে অজ্ঞান অবস্থায় পড়ে থাকা শিশুটিকে শুশ্রষা করছে লোকজন। বায়েজিদকে জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কিছুক্ষণ পরই মারা যায়। তখন ছিল করোনার দাফট। দ্রƒত শিশুর লাশটি দাফন করা হয়। দাফনের ৭৯ দিন পর গত ১৯ জুলাই হেলাল আদালতে তার শিশু পুত্রকে হত্যার অভিযোগে মামলা দায়ের করেন। আদালতের নির্দেশে ৩১ জুলাই সরাইল থানা মামলাটি নথিভূক্ত করে। আদালত ময়না তদন্তের জন্য কবর খুঁড়ে শিশু বায়েজিদের লাশ উত্তোলনের আদেশ দেয়। সোমবার দুপুরে সহকারি কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট ফারজানা প্রিয়াংকার উপস্থিতিতে উপজেলার আইরল গ্রামে কবর খুঁড়ে শিশুর লাশ উত্তোলন করে চুরতহাল রিপোর্ট করেন পুলিশ। এ সময় পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. শফিকুল ইসলাস উপস্থিত ছিলেন। পরে বায়েজিদের লাশটি জেলা সদর হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। সরজমিনে গেলে বায়েজিদের মা হানিছা আক্তার (৩৫) বলেন, তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে আগেই মাজু মিয়া বায়েজিদকে পুড়িয়ে ফেলার কথা বলেছিল। তারাই হত্যা করেছে। চিকিৎসার সময় আমাদেরকে বায়েজিদের কাছে যেতে দেয়নি। তারাই সবকিছু করেছে। করোনার ভয় দেখিয়ে দ্রƒত দাফন করে ফেলেছে। মাসুকের ভাতিজা শিশু ইব্রাহিমই বলেছে, তার চাচা বায়েজিদকে গাই দিয়ে মেরেছে। তবে ঘটনার সময় ওই বাড়িতে কর্মরত মিস্ত্রি সোহেল মিয়া (৩৫), স্থানীয় তাজু মিয়া (৪৮), শহিদ মিয়া (৪৭) ও জিল্লু মিয়া (৪৬) সহ আরো অনেকে বলেন, মাসুকের বাড়ির ছাদের উপর থেকে পড়ে বায়েজিদ মারা গেছে। ছাঁদ থেকে নিচে পড়ে মুখে ও শরীর তো জখম হতেই পারে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ব্যক্তি জানান, পাখির বাচ্চা ধরতে বায়েজিদ মাসুকদের ছাদে ওঠেছিল। পা পিছলে নিচে পড়ে ব্যাথা পেয়েছে। আঘাতের কোন চিহ্ন দেখিনি। নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট ফারজানা প্রিয়াংকা বলেন, লাশটিতে পঁচন ধরলেও শরীরের সব জায়গায় মাংশ আছে। ফরেনসিক নিরীক্ষায় সঠিক ফলাফলই আসবে। স্বাক্ষীরা বলছেন মুখের এক পাশে জখমের চিহ্ন রয়েছে। ময়না তদন্তের পরই পুরো বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাবে।
Leave a Reply