এস এম শাহনূর।।
জাতীয় জীবনে কখনো কখনে এমন কিছু মুহূর্ত আসে যা জাতিকে উদ্বেলিত করে।দেশের জনগণকে আনন্দের ফোয়ারায় ভাসায়। ২০২১ সালের ২৬ শে মার্চ বাঙালি জাতির জন্য এমনই একটি দিন। এ বছর বাঙালি জাতি তাঁর জনকের শততম জন্মজয়ন্তী পালনের পাশাপাশি বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের ৫০তম জন্মবার্ষিকী ‘স্বাধীননতার সুবর্ণজয়ন্তী’ উদযাপন করছে।এমন একটি মাহেন্দ্রক্ষণ উপভোগ করার সৌভাগ্য সবার হয়না। আমি স্বাধীনতার যুদ্ধ দেখিনি।বাংলা মায়ের জন্ম দেখিনি। তবে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী দেখছি দুচোঁখ ভরে।
১৯৭১ সালে ভূমিষ্ট হওয়া বাংলাদেশ ১৯৯০-এর পর সার্বিকভাবে প্রবৃদ্ধিতে উন্নয়নশীল দেশের গড় হারের তুলনায় অনেক এগিয়েছে। দারিদ্র্যের হার অর্ধেক হয়ে গেছে। মেয়েদের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে অবদানের হার দ্রুত বেড়েছে, জনসংখ্যা, গড় আয়ু, শিশুমৃত্যুর হার, মেয়েদের স্কুলে পড়ার হার, সক্ষম দম্পতিদের জন্মনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা গ্রহণের হার ইত্যাদি সামাজিক সূচকে বাংলাদেশ সমপর্যায়ের উন্নয়নশীল অন্যান্য দেশ, এমনকি প্রতিবেশী ভারতকে পেছনে ফেলতে সমর্থ হয়েছে।
➤নোবেলজয়ী বাঙালি অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক অমর্ত্য সেন তাঁর সর্বশেষ প্রকাশিত অ্যান আনসারটেইন গ্লোরি, ইন্ডিয়া অ্যান্ড ইটস কনট্রাডিকশন্স বইয়ে বাংলাদেশ নিয়ে আলাদা একটি অধ্যায় রেখেছেন।এতে অনেক ক্ষেত্রেই ভারতের তুলনায় বাংলাদেশের সাফল্যের কথা তুলে ধরা হয়েছে।
➤দেশ স্বাধীনের পরই সোনার বাংলা গড়ার কাজ শুরু করেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এদিকে পঁচাত্তরে সপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তাতে হোঁচট লাগে। তবে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার ২০০৯ সালে দায়িত্ব নেয়ার পর দেশের বৃহৎ অবকাঠামো উন্নয়নে সরকারের ব্যাপক বিনিয়োগ বাংলাদেশকে নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছে।
➤বিশ্বব্যাংক ২০১৫ সালেই আমাদের নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।
➤স্বাধীনতার ৫০ বছরে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে শামিল হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে। বাংলাদেশের এই অর্জনের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার পাশাপাশি ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত রাষ্ট্রের মর্যাদায় পৌঁছাতে একটি ভিশন দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পদ্মা সেতু নিজেদের টাকায় বাস্তবায়নে বাংলাদেশের মর্যাদা দেশে এবং বিদেশে অনেক উচ্চতায় উঠেছে।
বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তোরণ ঘটেছে। জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন নীতি সংক্রান্ত কমিটি (সিডিপি) চলতি বছরের ১৫ মার্চ এলডিসি থেকে বাংলাদেশের উত্তরণের যোগ্যতা অর্জনের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়।
এলডিসি ক্যাটাগরি থেকে উত্তরণের জন্য মাথাপিছু আয়, মানব সম্পদ সূচক এবং অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা সূচক এ তিনটি সূচকের যে কোন দুটি অর্জনের শর্ত থাকলেও বাংলাদেশ তিনটি সূচকের মানদন্ডেই উন্নীত হয়েছে।বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ১৬১০ মার্কিন ডলার। মানবসম্পদ সূচকে বাংলাদেশ অর্জন করেছে ৭২ দশমিক ৯। অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা সূচক বাংলাদেশের রয়েছে ২৪ দশমিক ৮ ভাগ।‘
➤টেকসই বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে কয়লাভিত্তিক সুপারক্রিটিক্যাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে। সঞ্চালন লাইনবিহীন প্রত্যন্ত অঞ্চলে ৫ দশমিক ৫ মিলিয়ন সোলার প্যানেল স্থাপনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে।
➤দেশের ৯০ শতাংশ জনগণ বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ শুরুর মাধ্যমে আমরা পারমাণবিক শক্তির নিরাপদ ব্যবহার যুগে প্রবেশ করেছি। বর্তমান সরকারের শাসন আমলেই কোনো রকম যুদ্ধ-সংঘাত বা বৈরিতা ছাড়াই দুই প্রতিবেশী ভারত ও মিয়ানমারের বিপক্ষে সমুদ্র বিজয় নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ। বঙ্গোপসাগরে এক লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটারের বেশি টেরিটরিয়াল সমুদ্র, ২০০ নটিক্যাল মাইল এলাকায় একচ্ছত্র অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং চট্টগ্রাম উপকূল থেকে ৩৫৪ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত মহীসোপান এলাকার প্রাণিজ ও অপ্রাণিজ সম্পদের ওপর সার্বভৌম অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
➤বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় উঠে আসে জন্মের ৫০ বছরেরও কম সময়ের মধ্যে কীভাবে বাংলাদেশ দ্রুতগতিসম্পন্ন বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণের মতো সফলতা দেখাতে যাচ্ছে।
➤বর্তমানে বিশ্বের ১৫৭টি দেশে বাংলাদেশের ৮৬ লক্ষেরও অধিক শ্রমিক কর্মরত আছে। বিদেশে শ্রমিক প্রেরণ প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশ স্থাপন করেছে অনন্য দৃষ্টান্ত।
➤১৯৮৮ সালে বাংলাদেশ জাতিসংঘ শান্তি মিশনে যোগদানের পর এ পর্যন্ত বিশ্বের ৩৯টি দেশের ৬৪ শান্তি মিশনে খ্যাতি ও সফলতার সাথে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করেছে। এ যাবৎকালে জাতিসংঘ শান্তি মিশনে বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশগ্রহণকারী ১১৫টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান সর্বাগ্রে।
➤মন্দার প্রকোপে বৈশ্বিক অর্থনীতি যখন বিপর্যস্ত ছিল বাংলাদেশ তখন বিভিন্ন উপযু্ক্ত প্রণোদনা প্যাকেজ ও নীতি সহায়তার মাধ্যমে মন্দা মোকাবেলায় সক্ষমই শুধু হয়নি, জাতীয় প্রবৃদ্ধির হার গড়ে ৬ শতাংশের বেশি বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছে। বেড়েছে রেমিট্যান্সের পরিমাণ। ঋণ পরিশোধে সক্ষমতার মানদণ্ডে ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া ও ভিয়েতনামের সমকক্ষতা অর্জিত হয়েছে।
➤এ ছাড়া স্বাধীনতার পরপর ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে যে স্থল সীমান্ত চুক্তি হয়েছিল তা বাস্তবায়নের মাধ্যমে ছিটমহল সমস্যার সমাধান করা বাংলাদেশের বড় অর্জন বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। সর্বশেষ রোহিঙ্গা ইস্যুতেও আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসা পেয়েছে বাংলাদেশ। জাতিসংঘসহ বিশ্বের প্রায় সকল দেশ ও সংস্থা এই ইস্যুতে বাংলাদেশের ভূয়সী প্রশংসা করে পাশে রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পেয়েছেন মাদার অফ হিউম্যানিটি উপাধি। তলাহীন ঝুড়ির বাংলাদেশ আজ ১০ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেয়ার পাশাপাশি খাদ্য, বস্ত্র-চিকিৎসার দায়িত্বও পালন করে যাচ্ছে।
➤দেশের ৯০ শতাংশ জনগণ বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ শুরুর মাধ্যমে আমরা পারমাণবিক শক্তির নিরাপদ ব্যবহার যুগে প্রবেশ করেছি। বর্তমান সরকারের শাসন আমলেই কোনো রকম যুদ্ধ-সংঘাত বা বৈরিতা ছাড়াই দুই প্রতিবেশী ভারত ও মিয়ানমারের বিপক্ষে সমুদ্র বিজয় নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ। বঙ্গোপসাগরে এক লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটারের বেশি টেরিটরিয়াল সমুদ্র, ২০০ নটিক্যাল মাইল এলাকায় একচ্ছত্র অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং চট্টগ্রাম উপকূল থেকে ৩৫৪ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত মহীসোপান এলাকার প্রাণিজ ও অপ্রাণিজ সম্পদের ওপর সার্বভৌম অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
➤বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় উঠে আসে জন্মের ৫০ বছরেরও কম সময়ের মধ্যে কীভাবে বাংলাদেশ দ্রুতগতিসম্পন্ন বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণের মতো সফলতা দেখাতে যাচ্ছে।
➤বর্তমানে বিশ্বের ১৫৭টি দেশে বাংলাদেশের ৮৬ লক্ষেরও অধিক শ্রমিক কর্মরত আছে। বিদেশে শ্রমিক প্রেরণ প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশ স্থাপন করেছে অনন্য দৃষ্টান্ত।
➤১৯৮৮ সালে বাংলাদেশ জাতিসংঘ শান্তি মিশনে যোগদানের পর এ পর্যন্ত বিশ্বের ৩৯টি দেশের ৬৪ শান্তি মিশনে খ্যাতি ও সফলতার সাথে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করেছে। এ যাবৎকালে জাতিসংঘ শান্তি মিশনে বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশগ্রহণকারী ১১৫টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান সর্বাগ্রে।
➤মন্দার প্রকোপে বৈশ্বিক অর্থনীতি যখন বিপর্যস্ত ছিল বাংলাদেশ তখন বিভিন্ন উপযু্ক্ত প্রণোদনা প্যাকেজ ও নীতি সহায়তার মাধ্যমে মন্দা মোকাবেলায় সক্ষমই শুধু হয়নি, জাতীয় প্রবৃদ্ধির হার গড়ে ৬ শতাংশের বেশি বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছে। বেড়েছে রেমিট্যান্সের পরিমাণ। ঋণ পরিশোধে সক্ষমতার মানদণ্ডে ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া ও ভিয়েতনামের সমকক্ষতা অর্জিত হয়েছে।
➤এ ছাড়া স্বাধীনতার পরপর ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে যে স্থল সীমান্ত চুক্তি হয়েছিল তা বাস্তবায়নের মাধ্যমে ছিটমহল সমস্যার সমাধান করা বাংলাদেশের বড় অর্জন বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। সর্বশেষ রোহিঙ্গা ইস্যুতেও আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসা পেয়েছে বাংলাদেশ। জাতিসংঘসহ বিশ্বের প্রায় সকল দেশ ও সংস্থা এই ইস্যুতে বাংলাদেশের ভূয়সী প্রশংসা করে পাশে রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পেয়েছেন মাদার অফ হিউম্যানিটি উপাধি। তলাহীন ঝুড়ির বাংলাদেশ আজ ১০ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেয়ার পাশাপাশি খাদ্য, বস্ত্র-চিকিৎসার দায়িত্বও পালন করে যাচ্ছে।
➤পিপলস অ্যান্ড পলিটিকস, বিশ্বের পাঁচজন সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানকে চিহ্নিত করেছেন যাদের দুর্নীতি স্পর্শ করেনি, বিদেশে কোনো ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নেই, উল্লেখ করার মতো কোনো সম্পদও নেই। বিশ্বের সবচেয়ে সৎ এই পাঁচজন সরকার প্রধানের তালিকায় তৃতীয় স্থানে আছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ছাড়াও কাজের অবদানের জন্য তাকে নানা পুরস্কারে ভূষিত করা হয় আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার পক্ষ থেকে। ২০১৪ সালে ইউনেস্কো তাকে ‘শান্তির বৃক্ষ’ ও ২০১৫ সালে ওমেন ইন পার্লামেন্টস গ্লোবাল ফোরাম নারীর ক্ষমতায়নের জন্য তাকে রিজিওনাল লিডারশিপ পুরস্কার এবং গ্লোবাল সাউথ-সাউথ ডেভলপমেন্ট এক্সপো-২০১৪ ভিশনারি পুরস্কারে ভূষিত করে।
➤বাংলাদেশের কৃষির উন্নয়নে অব্যাহত সমর্থন, খাদ্য উৎপাদনে সয়ম্ভরতা অর্জন এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নয়নে অবদানের জন্য আমেরিকার কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয় ২০১৫ সালে তাকে সম্মাননা সনদ প্রদান করে। জাতিসংঘ পরিবেশ উন্নয়ন কর্মসূচি দেশে এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পরিবেশ এবং টেকসই উন্নয়নে অসামান্য অবদান রাখার জন্য লিডারশিপ ক্যাটাগরিতে শেখ হাসিনাকে তাদের সর্বোচ্চ পুরস্কার চ্যাম্পিয়ন অব দ্যা আর্থ-২০১৫ পুরস্কারে ভূষিত করেছে।
➤টাইম ম্যাগাজিনের বিবেচনায় বিশ্বের প্রভাবশালী ১০ নারী নেত্রীর একজন মনোনীত হয়েছিলেন শেখ হাসিনা। একজন জাতীয়তাবাদী নেতা হিসেবে শেখ হাসিনা সবসময় নিজেকে প্রমাণ করেছেন। মধ্যপ্রাচ্যের শীর্ষস্থানীয় দৈনিক খালিজ টাইমস রোহিঙ্গাদের সঙ্কট মোকাবিলায় শেখ হাসিনার মানবিক দৃষ্টিভঙ্গির জন্য তাকে নিউ স্টার অব দ্য ইস্ট হিসেবে আখ্যায়িত করে স্বাধীনতার পর গরিব জাতি হিসেবে আমরা অনেক বদনাম সহ্য করেছি। বাংলাদেশের তখনকার আর এখনকার অবস্থা আসমান-পাতাল।
উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের স্বীকৃতি পাওয়ায় এটা প্রমাণিত হয়েছে যে আমরাও পারি।
লেখক: এস এম শাহনূর
কবি ও আঞ্চলিক ইতিহাস গবেষক
Leave a Reply