লোকমান হোসেন পলা।
আজ ১৩ জানুয়ারি বুধবার উপজেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) হাছিবা খান, কসবা উপজেলার তিনলাখ পিরের কসবা ব্রিকসের মালিক ইসমাইল মিয়া এবং সৈয়দাবাদের বিজনা ব্রিকসের মালিক আবু ইউসুফকে, ইট প্রস্তুত এবং ভাটা স্থাপন ( নিয়ন্ত্রণ) আইন,২০১৩( সংশোধিত ২০১৯) লংঘন করায়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এর নিকট এ হওয়ায় পরিবেশ এর ছাড়পত্র এবং ইট পোড়ানোর লাইসেন্স না থাকায় যথাক্রমে দুই লক্ষ এবং চার লক্ষ টাকা অর্থদণ্ড দেয়া হয়েছে।
কি আছে আইনে?
পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ও অনুমোদন ছাড়া কোনো ব্যক্তি ইট তৈরির জন্য কৃষিজমি, পাহাড়, টিলা, মজা পুকুর, খাল, বিল, খাঁড়ি, দিঘি, নদ-নদী, বা পতিত জায়গা থেকে মাটি কাটা নিষিদ্ধ ছাড়াও স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর কর্তৃক নির্মিত উপজেলা, ইউনিয়ন বা গ্রামীণ সড়ক ব্যবহার করে, ভারি যানবাহন দ্বারা ইট বা ইটের কাঁচামাল পরিবহন না করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ হিসেবে উল্লেখ আছে (৫ ধারা)। কিন্তু বাস্তবেতো আমার দেখি অধিকাংশ ইট ভাটার জন্যই কৃষিজমি, পাহাড়, টিলা, মজা পুকুর, খাল, বিল, খাঁড়ি, দিঘি, নদ-নদী, বা পতিত জায়গা থেকে মাটি কাটা হয়। এসব জায়গা থেকে মাটি তুলেই তৈরি হয় ইট। জলাশয় ভরাট করে তৈরি হয় ইট ভাটা।
এছাড়া ৫(৩) ধারায় ইটের প্রস্তুত প্রণালীও বর্ণনা করা হয়েছে। আইনে বলা আছে, ইটের কাঁচামাল হিসাবে মাটির ব্যবহার হ্রাস করার জন্য আধুনিক প্রযুক্তির ইট ভাটায় কমপক্ষে ৫০ (পঞ্চাশ) শতাংশ ফাঁপা ইট (Hollow Brick) প্রস্তুত করতে হবে। কিন্তু আইনের এ বিধান কে মেনে চলছে?
আইনানুযায়ী স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্মিত উপজেলা বা ইউনিয়ন বা গ্রামীণ সড়ক ব্যবহার করে ইটভাটায় চলাচলের জন্য কোনো ভারি যানবাহন চলাচল করতে পারবেনা। কিন্তু ইট আনা নেয়ার জন্য সরকার ও স্থানীয় সরকারের নির্মিত এসব সড়ক বা পথ দিয়েই চলাচল করছে এসব ভারি যানবাহন। দেশের অনেক উপসড়ক ও রাস্তার বেহাল দশা হওয়ার অন্যতম কারণ এসব যানবাহন। কেউ কেউ হয়তো নিজস্ব সড়ক নির্মান করছে। কিন্তু তা অতি নগন্য।
শুধু ইটই নয়, ইটের তৈরির কাচামালও আনা নেয়া করা হয় এসব সড়ক দিয়ে। সব কাজই হচ্ছে বিদ্যমান সড়ক ব্যহার করে। এতে সাধারণ মানুষের চলাচল মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে।
ইট ভাটার জ্বালানি হিসেবে কী ব্যবহার হবে আইনে তাও বলা আছে। কিন্তু আইনের প্রতি কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। ৬ ধারায় বলা হয়েছ, কোনো ব্যক্তি ইট ভাটায় ইট পোড়ানোর কাজে জ্বালানি হিসেবে কোনো জ্বালানি কাঠ ব্যবহার করতে পারবেনা। কিন্তু দেশের কয়টি কারখানায় এ বিধান মেনে ইট তৈরি হয়।
আইনানুযায়ী আবাসিক, সংরক্ষিত বা বাণিজ্যেক এলাকা, সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা বা উপজেলা সদর, সরকারি বা ব্যক্তি মালিকানাধীন বন, অভয়ারণ্য, বাগান বা জলাভূমি. কৃষি জমি ও প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকায় কোনো ইট ভাটা স্থাপন করা যাবেনা। কিন্তু এ বিধানের কি পুরোপুরি প্রয়োগ হচ্ছে? বন, অভয়ারণ্য, বাগান বা কৃষি জমিতে দেখা যাবে গড়ে উঠেছে কোনো কোনো ইট ভাটা।
যদি কোনো আইন লংঘন করে জেলা প্রশাসকের অনুমতি ছাড়া ইটভাটায় ইট প্রস্তুত করেন তাহলে তিনি সর্বোচ্চ ১ বছরের কারাদণ্ড বা ১ লক্ষ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডে বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে পারেন। এছাড়া আইনে অননুমোদিত স্থানে ইট ভাটা স্থাপন করলে দুই লক্ষ টাকা জরিমানা ও দুই বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড পেতে পারেন। কিন্তু আইনের যথাযথ প্রয়োগ না হওয়াতে ইট ভাটার ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা যাচ্ছে না। এভাবে ইট ভাটা স্থাপনের ফলে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে আমাদের পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য যার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাব অনেক।
ইট ভাটা নিষেধ করা সম্ভব নয়, এর প্রয়োজনও নেই। প্রয়োজন পরিবেশ বান্ধব পদ্ধতিতে ইট তৈরিকে উদ্বুদ্ধ ও বাধ্যতামুলক করা। পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর পদ্ধতিতে ইট তৈরিকে নিয়ন্ত্রণ ও বন্ধ করতে হবে। আইনানুযায়ীই ইট ভাটা স্থাপন ও পরিচালনা করতে হবে।
Leave a Reply