হাসনাইন সাজ্জাদী
১৯৮৮ খ্রিস্টাব্দের ২২ ডিসেম্বর, পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়া জেলার বনকাটি
নামের একটি প্রত্যন্ত গ্রামে চন্দন বাঙ্গালের জন্ম। বাবা- নেপালচন্দ্র
বাঙ্গাল, মা-আঙ্গুর বাঙ্গাল। অত্যন্ত অল্প বয়সে কবিতার উপর গবেষণা করে বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন।
বর্তমানে ড. চন্দন বাঙ্গাল একটি সরকারি কলেজে অধ্যাপনা পেশার সঙ্গে যুক্ত।
পশ্চিমবঙ্গের সাহিত্য-সংস্কৃতি চর্চায় ড. চন্দন বাঙ্গাল একটি অত্যন্ত পরিচিত ও প্রতিষ্ঠিত মুখ। প্রায় দু’দশক ধরে তিনি বাংলা কবিতা চর্চার
সঙ্গে যুক্ত। এছাড়াও ভাষা, কবিতা, নাটক, গল্প, উপন্যাস, লোকসংস্কৃতি, পুরাতত্ত্ব, নৃতত্ত্ব ইত্যাদি বিষয়েও চন্দন সমান আগ্রহী। কবিতা ও প্রবন্ধ
মিলিয়ে বর্তমানে চন্দনের গ্রন্থসংখ্যা প্রায় এক ডজন। কবিতায় বিজ্ঞানবাদ বিষয়টি নিয়েও তিনি গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
পশ্চিমবঙ্গের প্রায় সমস্ত প্রথম সারির সংবাদপত্রে তাঁর লেখা একাধিকবার কভারস্টোরি হিসেবে প্রকাশিত হয়েছে। ভাষা, শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি
ইত্যাদি বিষয় নিয়ে চন্দনের একাধিক সাক্ষাৎকার সম্প্রচারিত হয়েছে বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলে।
অল্প বয়সে তাঁর পাণ্ডিত্য, পড়াশোনা ও গবেষণার বিষয়গুলো সত্যিই অবাক করার মতো। হাসনাইন সাজ্জাদী প্রবর্তিত বিজ্ঞান কবিতা আন্দোলনের
তিনি ইন্টারন্যাশনাল এ্যাম্বেসেডর।
স্মিত এই যুবক ভালোবাসেন পড়াশোনা, গবেষণা ও রান্না করতে। ‘বাংলা বানানের ইতি-গতি ও সম্প্রতি’ গ্রন্থটি প্রকাশ করেছে ‘পূর্বাপর’ প্রকাশনা।
মনের ভাব প্রকাশ থেকে ভাষার উৎপত্তি। ভাষাকে পরিশুদ্ধ করতে এসেছে ব্যাকরণ।
ব্যাকরণ গড়েছে বানানরীতি। বাংলা ভাষার উৎপত্তি ও বিকাশ নিয়ে রয়েছে নানা মত। তবে স্বীকৃত হচ্ছে নবম-দশম শতাব্দীতে মাগধী অপভ্রংশ থেকে বাংলা ভাষার উৎপত্তি ঘটেছে। মাগধী অপভ্রংশ ছাড়াও সে সময় শৌরসেনী অপভ্রংশের তখন অস্তিত্ব ছিল। তার পূর্বটা ছিল সংস্কৃতকাল। খ্রিষ্ঠপূর্ব
৬০০ অব্দ থেকে ১০০০ খ্রিষ্ঠাব্দ পর্যন্ত ছিল সংস্কৃতের রাজত্বকাল। বাংলা ভাষার উৎপত্তি পূর্বেকার লোকায়ত বাংলা ভাষার রূপ সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানার সুযোগ নেই। নবসৃজমান বাংলা ভাষার বানানরীতি সম্পর্কেও তাই জানার সুযোগ আরো কম। পশ্চিম বঙ্গের বাংলা ভাষা ও
সাহিত্যের গবেষক এবং বিজ্ঞান কবিতা আন্দোলনের ইন্টারন্যাশনাল এম্বেসেডর ড. চন্দন বাঙ্গাল। ভাষা ও সাহিত্য নিয়ে তার সাধনা নিরন্তর।
তার সাম্প্রতিক গবেষণাগ্রন্থ ‘বাংলা বানানের ইতি-গতি ও সম্প্রতি’। গ্রন্থটি কঠোর পরিশ্রমলব্দ ও জ্ঞানগর্ব। বলতে গেলে এটি বাংলা ভাষা
বিজ্ঞানের জন্য মাইলফলক হবে।বাংলা বানানের ভুল এবং বিভ্রান্তি দু’টোই হালে বেশ পীড়াদায়ক অবস্থানে
পৌঁছেছে। ভুল হয় না জানার কারণে কিংবা ভুল বশত:। কিন্তু বিভ্রান্তি ইচ্ছাকৃত এবং অনেকটা পণ্ডিতদের মধ্যে ভাষা বিষয়ে অনৈক্যের কারণে।
বিভিন্ন একাডেমি বা প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব বানানরীতি ও অভিধানে একটির সাথে অন্যটির মিল নেই। মিল নেই একই প্রতিষ্ঠান কিংবা একাডেমির একটির সঙ্গে অপরটির, প্রত্যেকটির সঙ্গেই অপরটির রয়েছে ভিন্নমত। তাতে ভাষারীতি ও বানান কৌশলে তৈরি হয়েছে বিভ্রান্তি। এ বিভ্রান্তি দূর করার কার্যত কোন উদ্যোগ কারো মধ্যেই নেই। একাডেমির বাইরেও অনেকের রয়েছে নিজস্ব মতামত ও বানানরীতি। পশ্চিম বঙ্গে এ বিষয়ে অনেকেরই গবেষণা রয়েছে। বাংলাদেশে শুদ্ধতার কবি খ্যাত শ্রদ্ধেয় অসীম সাহা নিজস্ব চিন্তা থেকে বানান রীতিতে অভিধান লিখেছেন। এ ধারায় যুক্ত হল ড. চন্দন বাঙ্গালের ‘বাংলা বানানের ইতি-গতি ও সম্প্রতি’ গ্রন্থটি। পণ্ডিতদের উদ্ধৃতি ছাড়াও নিজস্ব মতামত এখানে স্থান পেয়েছে। বাংলা বানানের ভুল এড়ানোর কলাকৌশল তিনি বলেছে বিশেষ যত্ন সহকারে। রয়েছে বিবর্তনকালের ইতিহাস। পুরোনো একটি সমস্যাকে গবেষণা ও মতামত দিয়ে ড. চন্দন বাঙ্গাল নতুনরূপে উপস্থাপন করেছেন। আধুনিক ভাষাবিজ্ঞানও নৃবিজ্ঞানের দৃষ্টিভঙ্গি ও প্রয়োগপদ্ধতির সহায়তায় বিরাজমান জটিলতাকে সহজ সমাধান দিয়েছেন তিনি। ভাষা বিজ্ঞানে যা চন্দন বাঙ্গালের বানানতত্ত্ব বলেও আলাদাভাবে চেনা সহজ হবে। বাংলা ভাষাকে করবে প্রাণবন্ত। তার অনুসন্ধান, পর্যবেক্ষণ, দৃষ্টিভঙ্গি ও তথ্য
পর্যালোচনা বিজ্ঞানমনষ্ক। গ্রন্থটি বাংলা ভাষা বিজ্ঞানে বিশেষ গুরুত্ব ও অবদান রাখবে।
Leave a Reply