শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ০২:৩৩ অপরাহ্ন

শিরোনাম :
কসবায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে দুজনের মৃত্যু কসবায় কালবেলা সাংবাদিকের ওপর হামলা, মোবাইল ও ক্যামেরা ভাংচুরের অভিযোগ কসবায় বাস ট্রাক মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত-২ সৌদি আরবের সড়ক দুর্ঘটনায় কসবার ইসহাক নিহত কসবায় ঈদ পুনর্মিলন নবীন বরণ ও কৃতি শিক্ষার্থী সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত হয়েছে কসবায় ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ঢাকায় আহত ২জন পেলেন সরকারী আর্থিক অনুদান হাসিনার মত এত বড় দুর্ধর্ষ এত জুলুমকারী হতে পারবে না – হাসনাত আবদুল্লাহ দেশ বরেণ্য আলেম আল্লামা মুফতি অধ্যক্ষ মো. আবদুল মতিন (র) এর ইন্তেকাল স্বদেশ কাঁপানো প্রমত্ত হুংকারে কসবায় বিজিবি’র খাদলা বিওপির অপারেশনাল কার্যক্রম শুরু
আপোষহীন স্বাধীনতা সংগ্রামী নেতাজি সুভাষ

আপোষহীন স্বাধীনতা সংগ্রামী নেতাজি সুভাষ

পাভেল আমান।।
ভারতে স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে এক যুগান্তকারী, বহু আলোচিত, আপোষহীন, রাজনৈতিক দূরদর্শী, প্রাজ্ঞ, সত্যনিষ্ঠ, বর্ণময় ব্যক্তিত্বের মূর্ত প্রতীক ছিলেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু। আমৃত্যু স্বপ্ন দেখেছিলেন এক শোষণ মুক্ত, আত্মনির্ভরশীল, জাতি ধর্ম নির্বিশেষে বৈচিত্রের ঐক্যকে নিয়ে, বহুত্বের পীঠস্থান তথা মিলন তীর্থ রূপে ভারতবর্ষকে সর্বসম্মুখে উপস্থাপন তথা তুলে ধরা যেখানে সবাই মিলেমিশে একাকার হয়ে ভারতীয় হিসাবে সুখে দুঃখে বাস করবে। তাদের একটাই পরিচয় ভারতীয় হিসেবে। এই চিরায়ত স্বপ্নটাকেই আজীবন সুভাষ সযত্নে বুকের মাঝে চারিয়েছিলেন। এই আদর্শ, লক্ষ্য থেকে কখনো তিনি বিচ্যুত হননি। সর্বোপরি বাঙালি জাতিসত্তা, মানসিকতা, লড়াকু চেতনাকে এক অনুকরণীয় পর্যায়ে উন্নত করেছিলেন যা পরবর্তীতে বাঙালিকে সর্ব ভারতীয় আঙিনায় সামনের সারিতে নিয়ে এসেছিল তৎকালীন সময়ে।
নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু নামের মধ্যেই জড়িয়ে রয়েছে এক বুক চাপা আবেগ। সাহসী এই বঙ্গসন্তানকে ঘিরে যে সমস্ত অধ্যায় লেখা হয়েছে তার একাংশে যেমন যুদ্ধের দামামার শব্দ রয়েছে, তেমনই তার অন্য অংশে রয়েছে রহস্যের মেঘ। এই দুইয়ের মিশেলে নেতাজি বাঙালি তথা ভারতবাসীর কাছে এক যুগ পুরুষের নাম হয়ে উঠেছেন। যাঁর জীবনের বিভিন্ন দিক চলার পথের প্রত্যেকটি দিনের অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছে। সুভাষ চন্দ্র বসু ছিলেন ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের একজন কিংবদন্তি নেতা, যুগে যুগে বাঙালিদের জন্য সর্বত্র যিনি অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থেকেছেন।শুধুমাত্র দেশের স্বাধীনতা নয় , স্বাধীন দেশে স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকার গুরুত্বও বারবার তুলে ধরেছেন নেতাজি। আর সেই মর্মেই তিনি বলেছেন, ‘স্বাধীনতা দেওয়া হয়না, ছিনিয়ে নিতে হয়।’ আর দেশের সংগ্রামের নিরিখে তাঁর বার্তা ছিল, ‘তোমরা আমাকে রক্ত দাও, আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেব’।ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে একটা অন্য ধারার প্রবক্তা সুভাষচন্দ্র বসু শুধু স্বাধীনতা সংগ্রামী ছিলেন না। কলকাতা পৌরসভার মেয়র থেকে জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি সব ক্ষেত্রেই তিনি কম বয়সে তার নিজস্ব চিন্তাধারার প্রমাণ রেখেছিলেন। তিনি ছিলেন একেবারে মনুষ্যত্বের ছাঁচে গড়া দেশমাতৃকার প্রতি নিবেদিতপ্রাণ এক ভারতীয় জননায়ক তথা জননেতা। কলকাতা কর্পোরেশনের প্রধান কার্যনির্বাহক পদে আসীন হয়ে তিনি মুসলিমদের জন্য চাকরিতে সংরক্ষণের মত বৈপ্লবিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।
স্বামীবিবেকানন্দের ভাবাদর্শ তাঁকে ভীষণভাবে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন। ছাত্রাবস্থা থেকে তিনি তাঁর দেশপ্রেমিক সত্তার জন্য ছোট-বড় সবার কাছে গ্রহণীয় ছিলেন।নিজেকে ভারতমাতার সৈনিক বলে মনে করতেন সুভাষ। তাই তিনি বিশ্বাস করতেন যে জন্মের পর থেকেই তিনি জাতির জন্য আত্মবলিদানে দীপ্ত। সেই কারণে তাঁর মধ্যে ভয়-ডর বলে কিছুই ছিল না। যতক্ষণ বেঁচে থাকবেন দেশমাতৃকার সেবা এবং ভারতবাসীকে পরাধীনতার গ্লানি থেকে মুক্ত করার কাজেই নিয়োজিত ছিলেন সুভাষ।
আগাগোড়া সততার রাস্তায় চলা, নির্ভীক জীবনযাপনে অভ্যস্ত নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু বহুবার বলেছেন, ‘মনে রাখতে হবে যে সবচেয়ে বড় অপরাধ হল অন্যায়ের সঙ্গে আপোষ।বিশ বছরের রাজনৈতিক জীবনে সুভাষ চন্দ্র ১১ বার গ্রেফতার হয়েছিলেন। ইংরেজ সরকারের কাছে নেতাজী ছিলেন মূর্তিমান আতঙ্ক।’ভারতের স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নাৎসী জার্মানি ও সাম্রাজ্যবাদী জাপানি শক্তির সাথে হাত মেলানোর যে কৌশল সুভাষ বসু অবলম্বন করেছিলেন তা নিয়ে বিতর্ক থাকলেও তাঁর গভীর দেশপ্রেম ও ত্যাগ তাঁকে অগণিত বাঙালির হৃদয়ে বীরের আসনে বসিয়েছে।তবে কালের গভীরে হারিয়ে যাওয়া এই নেতা আর ফিরে আসেননি। তাঁর মৃত্যু রহস্যের জট খুলতে গঠিত হয়েছিলো শাহনওয়াজ কমিশন, খোসলা কমিশন এবং মুখোপাধ্যায় কমিশন। কিন্তু কেউই সঠিক কূল কিনারা করে উঠতে পারেনি। তবে জাপানের সাথে যোগ দেওয়ায় কংগ্রসের অনেক নেতাই তার উপর ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন, তবে অনেকে আবার আশায় বুক বেঁধেছিলেন সুভাষ হয়তো তার নেতৃত্বের ঝলকানিতে অন্ধকার ভারতে আলো নিয়েই ফিরবেন। কিন্তু সুভাষের আর ঘরে ফেরা হয়নি, ‘নেতাজী’ হয়েই চিরকাল বেঁচে রইলেন ভারতের সাধারণ মানুষের অন্তরের মণিকোঠায়। কিন্তু তার দেখানো সংগ্রামী পথে হেঁটেই ভারত ব্রিটিশ শাসনের নাগপাশ ছিঁড়ে বেরিয়ে এসেছে। যুগে যুগে বিপ্লবীদের প্রেরণা হয়ে তাই আজও বেঁচে আছেন ‘নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু’।
ভারতের জাতীয় রাজনীতিতে নতুন যুগের সূচনা হয়েছিল তাঁর হাত ধরেই। কিন্তু দেশের স্বাধীনতার লাভের ৭২ বছর পরও তাঁর মৃত্যু নিয়ে রহস্যের জট কাটানো যায়নি। অন্তর্ধান না মৃত্যু— এই প্রশ্নের উত্তর আজও মেলেনি সঠিক ভাবে। এখনও তাকে নিয়ে ঘনীভূত হয় রহস্যের বেড়াজাল।নেতাজি মানে শুধু একটা মানুষ নয়, একটা দর্শন। এমন এক মানুষের দর্শন যার অন্তর্ধানকে আজও মেনে নিতে পারেনি কোটি কোটি মানুষ। তাইহোকু বিমান দুর্ঘটনা বিতর্কের পরও বর্তমান সময়ের মানুষ তাঁকে খুঁজে-ফেরে।তাই নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু আজও লক্ষ লক্ষ ভারতীয়দের কাছে ‘মৃত্যুঞ্জয়ী’, অক্ষয়ী এক বীর সংগ্রামী। দেশনায়ক সুভাষচন্দ্র বসুর ১২৫তম জন্মদিবসে একজন বাঙালি হিসেবে তাকে জানাই শত কোটি প্রণাম,শ্রদ্ধা ও ভক্তি।
পরিশেষে স্বামী বিবেকানন্দ, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, অরবিন্দ ঘোষের মতো বাঙালির আবেগ কাছে টানার জন্যই নেতাজি নিয়ে এতটা তৎপর গেরুয়া শিবির। বিধানসভা ভোটের দামামা বেজে উঠতেই নেতাজি এবার বেশি গুরুত্ব পাচ্ছেন রাজ্য রাজনীতিতে৷ গোবলয়ের দল হিসেবে বিজেপির যে পরিচিতি, সেটা মুছতেই বিজেপির এই উদ্যোগ। শুধুমাত্র গোবলয়ের রাজনৈতিক দলের তকমা ঘোচাতে, আপামর বাঙালি আবেগকে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে এক লহমায় কব্জা করতে, সর্বোপরি নেতাজী সুভাষের জাতীয়তাবাদী ভাবধারা দর্শন কি ক্ষুদ্র রাজনৈতিক স্বার্থে আত্মসাৎ করতে উগ্র সাম্প্রদায়িক হিন্দুত্ববাদী রাজনৈতিক দল বিজেপি উঠে পড়ে লেগেছে। বিধানসভা ভোটের নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে তারা বাংলার মনীষীদের আপন রাজনৈতিক স্বার্থে কাজে লাগাতে ব্যবহার করতে প্রচন্ড তৎপর হয়ে উঠেছে। যার সাম্প্রতিক নিদর্শন ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের আপোষহীন মূর্ত প্রতীক, বিপ্লবী নায়ক নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু। ১২৫ তম জন্মবা জন্মবার্ষিকী পালন করতে কেন্দ্রীয় সরকার ইতিমধ্যে তার জন্ম দিবসকে পরাক্রম দিবস হিসেবে পালন করার আহ্বান জারি করেছে শুধুমাত্র উগ্র জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক কর্মসূচিকে ভারতীয়দের মধ্যে আবারো পৌঁছে দিতে। যার পরতে পরতে ভেদাভেদ, বিদেশ সাম্প্রদায়িক রাজনীতির পরাক্রমতা।পরিশেষে নির্লজ্জ রাজনীতিকরণ নিয়ে আপামর বাঙালির দিন সোচ্চার হতে হবে। একটা দক্ষিণপন্থী পুরোদস্তুর সাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক দল শুধুমাত্র বাঙালি আবেগকে করে বিধানসভা ভোটের জয় লাভের জন্য বাঙালি মনীষীদের নিজেদের রাজনীতির রঙে রাঙিয়ে ভোট প্রচারে প্রেমে পড়েছে। আমাদের মনে রাখতে হবে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর আপোষহীন সংগ্রামী মনোভাব চেতনা জাতীয়তাবাদ ধর্মনিরপেক্ষ জীবনদর্শন কখনো যেন হিন্দুত্ববাদী সাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক দর্শনের বেড়াজালে আবদ্ধ না হয়ে যায়। দ্ব্যর্থহীন ভাবে আবারো ব্যক্ত করি রাজনৈতিক নেতাজির মত মহান দেশপ্রেমিকের জীবন দর্শন, জাতীয়তাবাদকে রাজনীতি স্বার্থ পূরণে কাজে লাগানো বন্ধ করতে হবে। নেতাজির জন্মজয়ন্তী উদযাপন ওপালনের মধ্যে দিয়ে এটাই হোক আমাদের সমস্ত বাঙ্গালীদের অঙ্গীকার আমরা এই মহান ভারত মাতার বীর সন্তান নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু কি রাজনীতির পঙ্কিলতায় আবদ্ধ হতে দেবনা। এই সংকল্পটাই আমরা এবার নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর জন্মদিনে প্রতিমুহূর্ত স্মরণ করি।

পাভেল আমান-শিক্ষক ও প্রাবন্ধিক হরিহরপাড়া-মুর্শিদাবাদ

এই সংবাদটি শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




raytahost-demo
© All rights reserved © 2019
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: Jp Host BD