সোমবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ০৬:০৪ পূর্বাহ্ন

আমাদের হাতে চকচকে নোট ছিলো না

আমাদের হাতে চকচকে নোট ছিলো না

নূর কামরুন নাহার

আজকাল মাঝে মাঝেই
বেলালের আইসক্রীমের কথা মনে পড়ে
স্কুল মাঠের বিশাল তেতুল গাছের নীচে
বেলাল আইসক্রীম বিক্রি করতো।
কলালা আইসক্রীম আটআনা, নরকেলি চারআনা।
টিফিনে একটা আধুলি তখন স্বপ্নের মতো ছিলো।
কোনো কোনো দিন আম্মা হাতে স্বপ্ন গুঁজে দিতেন।
একটা আধুলির মালিক হলে
মনে হতো অর্ধেক জমিদারী আমার হাতে।

খুব ভালো দিন আসতো বছরে মাত্র কয়েকটা
সেদিন আম্মা টিফিনে একটাকার চকচকে নোট দিতেন ।
সেদিন মন কেমন উড়– উড়– হয়ে যেন।
মনে হত পুরোটা জমিদারী আমার।
তখন আসলে জমিদারীও ভালো বুঝতাম না ।
আমাদের পাড়ায় কোনো জমিদার ছিলো না।
আম্মার কাছে গল্প শুনতাম কবেকার জমিদারী
সেইসব দিন গত হয়েছে কত আগে।

আমরা সবাই এক প্রাইমারী স্কুলের ছাত্রী ছিলাম
কবিতা, রুমা, সাথী, বীথি, বুড়ি, ডলি, বেলী
আমরা একসাথে স্কুল যেতাম মার্চপাস্টের মতো।
শ্রেণি এক ছিলো না। কেউ ওপরের শ্রেণিতে, কেউ নিচের।
আমরা কেউ ছিলাম ভাড়াটিয়া, কেউ বাড়িওয়ালা
আমাদের মধ্যে এইসব বিভেদের কোনো চিহ্ন ছিলো না।
আমরা এক পাড়ার, সবাই এক ¯কুলে পড়ি
একসাথে হাঁটি, সবার স্কুল ড্রেস এক।

এইসব দিনে গত হয়েছে সেইসব দিন।
নোটের ব্যবধানে শিশুরা এখন নানা স্কুল পড়ে
কেউ গাড়িতে যায়, কেউ ভ্যানে।
ওদের স্কুল ড্রেস আলাদা,
ওরা জানে না একসাথে পায়ে পায়ে মার্চপাস্ট
জমিদারী ফিরে এসেছে অন্য ধারায়।
তুড়ি মারা নোটের তোড়ায়।

সেইসব দিনে এতো ভরা বৈষম্য ছিলো না
আমাদের হাতে তখন আধুলি ছিলো
কারো হাতেই চকচকে নোট ছিলো না।

এই সংবাদটি শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




raytahost-demo
© All rights reserved © 2019
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: Jp Host BD