সুনীল কুমার দাস
“বাবু রাম সাপুরে কোথা যাস বাপুরে
আয় বাবা দেখে যা দু’টো সাপ রেখে যা।”
…..কবিতাটি সবারই পরিচিত। কবিতার কবিও পরিচিত। কিন্তু কবির জন্মস্থান কবির পৈত্রিক বাড়ী যেখানে কবি কৈশোরে বিচরণ করেছেন তার বর্তমান অবস্থা সেসবের খবর খুব কমজনেই জানেন। কবির নাম সুকুমার রায়। পিতা উপেন্দ্র কিশোর রায়। উপেন্দ্র কিশোর ছিলেন দত্তক পুত্র। তিনি সংগীত চর্চায় খুব মনোযোগী ছিলেন। উপেন্দ্র কিশোর রায় ময়মনসিংহের জিলা স্কুল থেকে এন্ট্রান্স পাশ কারার পর তিনি চলেযান কলকতায় এবং সেখানেই উচ্চশিক্ষা নেন। একসময় তিনি ব্রাহ্মমতবাদে বিশ্বাসী হয়ে হিন্দুধর্ম ত্যাগ করে ব্রাহ্মধর্ম গ্রহণ করেন।
কিশোরগঞ্জ জেলার কটিয়াদি উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রাম মসুয়া। এখানেই কবি সুকুমার রায় এর পরিবারের জমিদারী ছিল। সুকুমার রায় সন্মেছিলেন কলকাতার ১৩ নং কর্ণওয়ালিশ ষ্টীটে ৩০ অক্টোবর ১৮৮৭ সনে। তিনি ছিলেন ভাইবোনদের মধ্যে দ্বিতীয়। সুকুমার রায় ১৯১১ সনে ফিজিক্স ও কেমিষ্ট্রিতে ডাবল অনার্স নিয়ে বিএসসি পাশ করেন এবং গুরু প্রসন্ন বৃত্তি লাভ করেন।
আলোকচিত্র ও মুদ্রন প্রকৌশল বিষয়ে উচ্চশিক্ষালাভের জন্য তিনি লন্ডন গমন করেন। লন্ডন থেকে ১৯১৩ সনে ফিরে এসে তিনি সাহিত্য সাধনায় মনোনিবেশ করেন।তার পিতার প্রতিষ্ঠিত ছাপাখানা U. Roy & Sons এর উন্নতি সাধন করেন। ঐ ছাপাখানা থেকেই শিশু সাহিত্যের “সন্দেশ” পত্রিকা প্রকাশ করা হতো।
সুকুমার রায় ঢাকার সনামধন্য সমাজ সেবক কালি নারায়ন গুপ্তের দৌহিত্রী সুপ্রভা দেবীর সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। ১৯২১ সনে তাদের একমাত্র পুত্র সত্যজিত রায়ের জন্ম হয়। সুকুমার রায় জমিদারী দেখাশুনার জন্য একবার গ্রামে এলে তিনি কালাজ্বরে আক্রান্ত হন এবং প্রায় আড়াই বৎসর রোগভোগের পর ১৯২৪ সনের ৯ই সেপ্টম্বর মৃত্যুবরন করেন।
জমিদারী প্রথা বিলুপ্তির পর সুকুমার রায়ের পরিজনরা আর গ্রামের বাড়ী মসুয়ায় ফিরে আসেননি। তাদের বাড়ীঘর দেখাশুনা করার কেউ থাকল না। ফলে যা হবার তাই হলো। বাড়ীঘর সামনে-পিছনের পুকুরঘাট সব বেদখল। দালানকোটা ভেঙ্গে যারযেমন খুশি করা। স্মৃতিচিহ্ন বুকেধরে রয়েগেছে শুধু ধ্বংসপ্রায় পূজোমন্ডপ আর সামনের চারটি দেবদারু গাছ। ভিতরে স্থাপন করা হয়েছে ইউনিয়ন ভূমি অফিস স্থাপিত হয়েছে । আছে একটি সাইন বোর্ড যাতে লিখা “অস্কার বিজয়ী সত্যজিত রায়ের পৈত্রিক বাড়ী”। পাশেই সংস্কৃতি মন্ত্রনালয়ের দ্বীতল অতিথিশালা নির্মিত হয়েছে কিন্তু দুঃখের বিয়ষ সেটি নাকি আজো উদ্বোধনই হয়নি।
উপস্থিত বয়োবৃদ্ধ লোকজনের সঙ্গে কথাবলে জানাগেল মসুয়ার জমিদাররা খুব প্রজাবৎসল ছিলেন। সুকুমার রায় আর সত্যজিত রায় মসুয়ার গর্ব তাঁদের প্রতি এলাকাবাসীর অসীম শ্রদ্ধা আর ভালবাসার কথা জানাগেল। কিন্তু এলাকাবাসীর মনের ক্ষোভ, কোন সরকারই আন্তরিকভাবে এসব স্মৃতি সংরক্ষনে এগিয়ে আসেনি।
Leave a Reply