লিয়াকত মাসুদ।।
নাদের আলী আমি আর কতো বড় হবো/ তবে তুমি আমাকে তিনপ্রহরের বিল দেখাতে নিয়ে যাবে/যেখানে পদ্মফুলের মাথায় সাপ আর ভ্রমর খেলা করে/নাদের আলি আমি আর কতো বড়ো হবো/
নান্দনিক কবি ও কথা সাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপধ্যায় তার প্রখ্যাত কেউ কথা রাখেনি কবিতায় বলেছিলেন ঠিক। তবে সুনীলের নাদের আলী তেত্রিশ বছর কথা না রাখলেও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার গোসাস্হল বিলে ফুটে থাকা অযুত অযুত পদ্মফুল সেই কথা রেখেছে দর্শনার্থীদের কাছে। তবে রূপ-অপরূপ সেইসব পদ্নের মাথায় সাপ আর ভ্রমর খেলা করেনা। খেলা করে শরতের আলো আধাঁরির আকাশের আলো।
কসবা উপজেলা শহর থেকে গোপীনাথপুর চন্ডী দোয়ার বাড়াই হয়ে সিনজি অটোরিকশা যোগে যেথে হয় গোসাইস্হল পদ্নাবিল । খানিক দূরে কারো নজর এড়ায়না গোসাইস্হল বিলের জলে ফুটে থাকা লাল নীল আনাবিল পদ্মফুল। রৌদ্রের আলোতে যেনো হেসে হেসে স্বাগত জানাচ্ছে।
সারাৎবছর জুড়ে বিলে পদ্মফুল ফুটে থাকলেও ঋতুর রানী শরৎকালেই ফুটে ওঠা পদ্মফুলগুলো যেনো তার সমস্ত সৌন্দর্য্য উজাড় করে দিয়ে প্রকৃতি প্রেমীদের চোখকে সার্থক করে তোলে।
বিলের জলে নৌকা চড়ে গেলে যে কোন দর্শনাথীই মুগ্ধ হয়ে যায়। মাথার ওপরে শরতের নীল আকাশ সাদা মেঘের ভেলা আর নিচে মুদৃমন্দ দখিনা বাতাসের সাথে দোল খায় পদ্মফুল। আর পদ্মফুলের বাহারীরূপে তাদের সাথি হতে দেখা যায় ভ্রমর-মৌমাছি-ডাহুক আর সাদা বকদের।
কসবা উপজেলার গোসাইস্হল বিলের মাঝে শতাধিক একর জমিতে দীর্ঘ বছর ধরে প্রকৃতিগতভাবেই পদ্মফুল ফুটে থাকে। পদ্মবিলের চারদিকে ছোট বড় পাহাড় বেষ্টিত একটি বিল। দক্ষিনে ছিনাই নদী। দেখলে মনে হয় পাহাড় বিলটিকে কোলে নিয়ে বসে আছে। এখানে জমিগুলোতে ধান জন্মালেও পদ্মফুল ফুটে জমিগুলোতে ছয় মাসই জমে থাকে জল। যেখানে ছয় মাসই যন্ত্রের লাঙ্গলের চাষ অকার্যকর। ফলে শস্য উৎপাদন ব্যহত হয়। তাই কৃষকরা নিরুপায় হয়ে পদ্মফুলের সৌন্দয্যেই সস্তুষ্ঠ থাকেন।
গোসাইস্হল পদ্মবিলের ঘুরতে আসে করিম খান জানায়, বিলের মাঝে পানি জমে থাকে। ছোট ছোট মাছেরও দেখা মেলে এই বিলে। সন্ধ্যা ঘনাতেই উড়ে আসে পাখিসব শামুককাচা, ডাহুক, সাদা বক। ওরা আসে খাবারে খোঁজে অর্থাৎ বিলের জলের ছোট মাছ শিকারে। মুখরিত করে তোলে বিলের চারধার। সেই এক শ্রবণমধুর কিচিরমিচির সুর।
পদ্মফুলের সুন্দর দেখতে আসে। কখনও কখনও পদ্ম তুলে নিয়ে যায় বাড়িতে। সন্ধ্যায় ভিড় করা পাখিসব খুব সকালে ঝাঁকে ঝাকেঁ সীমান্ত পেরিয়ে বনের দিকে চলে যায়।
তবে সঠিক পরিচর্যা পেলে আরো বেশি পদ্মের ফলন বৃদ্ধি করা যায়। পাশাপাশি সঠিক তথ্য পরিচর্যা পেলে পদ্মফুলকে অর্থকরী হিসেবে উৎপাদন করতে পারবে।
শুধুমাত্র সঠিক তথ্য না জানার কারণে অযত্মে গড়ে উঠা শ্বেতশুভ্র নীলাভ্র পদ্মগুলো জমির পানিতে ঝরে যায়। ছিঁড়ে তুলে নিয়ে যায় নানা ধরণের দর্শনার্থীরা ও কৌতুহলীরা।
গোসাইস্হল পদ্মবিলের স্মৃতি দীর্ঘদিবস দীর্ঘরজনী আমার হয়ে থাকবে। থাকবে দৃষ্টির সীমানায় হাজারো সুন্দর দৃশ্যবলীর মাঝে আরেকটি মনোমুগ্ধকর দ্যুতিময় দৃশ্যস্মৃতি। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাসুদুল আলম জানান, ব্রাহ্মণবাড়িয়া আসলে দেখার অনেক কিছু আছে। গোসাইস্হল বিল নামে একটি বিল আছে যেখানে পদ্ম ফোটে। সবাই মিলে বিলটি দেখে আসব। প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে উঠা পদ্মফুলের উৎপাদন বাড়িয়ে বিলটাকে আরও সৌন্দর্যমণ্ডিত করা হবে। সেই সঙ্গে জেলার ব্যান্ডিং সংস্করণে অন্তর্ভুক্ত করে গোসাইস্হল বিলটি পর্যটকদের কাছে আরও আকর্ষণীয় হিসেবে গড়ে তোলা হবে।
Leave a Reply