কসবা (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি:
কসবা উপজেলার নয়নপুর গ্রামে লতিফ মিয়া নামক এক পোনা চাষীকে ভিটেমাটি ও সরকার থেকে বন্দোবস্ত পাওয়া ভূমি থেকে উচ্ছেদ করতে মরিয়া পার্শ্ববর্তী ফরিদ ও ফিরোজ নামক মাদক ব্যবসায়ীরা। বিভিন্ন থানায় ও কোর্টে কয়েকটি মিথ্যা মামলা দিয়ে লতিফের পরিবারের সদস্যদের আর্থিক ও সামাজিকভাবে হেনস্তা করছে তারা।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, লতিফ ও তার পরিবারে সদস্যদের বিরুদ্ধে ফরিদ ও ফিরোজ গং ৯টি মামলা করেছে। অসহায় লতিফ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সহায়তার আশায় অঝোরে কাঁদলেন সাংবাদিকদের কাছে।
বিভিন্ন মামলা মোকাদ্দমা কাগজপত্র ও লতিফের বক্তব্য থেকে জানা যায়, ভূমিহীন লতিফ সালদা নদীর পানিতে পোনাচাষ করে জীবিকা চালায়। অনেক কষ্ট করে ফরিদ ও ফিরোজের কাছ থেকে নয়নপুর মৌজার ৮০৩/ ৮০৪ দাগে ৮ শতক ভূমি ক্রয় করে একটি টিনসেড তৈরি করে। আজো দলিল করে দেয়নি ফরিদ ও ফিরোজ গংরা। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এ জায়গাটিও সরকারের খাস খতিয়ানে রয়েছে। পাশেই সরকারের খাস সম্পত্তির ৬৩৭ দাগ থেকে ৬০ শতক ভূমি বন্দোবস্ত পায় লতিফ। কিন্তু ফরিদ ও ফিরোজ গংরা বিষয়টিকে ভালো চোখে দেখেনি। জোরপূর্বক বন্দোবস্তের জায়গা দখল করতে থাকে। এসব নিয়ে ফরিদ ও ফিরোজরা একাধিকবার লতিফ ও তার পরিবারের সদস্যদের বিভিন্ন সময় হামলা, মিথ্যা মামলা করে আসছে। ফরিদের ভাই ফিরোজ সরাসরি মাদক ব্যবসার সংগে জড়িত বলে জানায় এলাকাবাসী। ফলে ব্রাহ্মণপাড়া কসবা থানার কতিপয় অসৎ পুলিশ সদস্যদের সংগে তার দারুন সখ্যতা। সেই সুবাদে চলে মিথ্যা মামলা ও হামলার হিড়িক। ফরিদের স্ত্রী সাবেক ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য। তাই মিথ্যা মামলা করা তাদের নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে উঠেছে। গত ৩০ জুন, ২০২০ কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া থানায় একটি মিথ্যা মামলা দায়ের করে। মামলা নং ২২/১৩৩ তাং জুন, ২০২০। মামলাটি কুমিল্লা কোর্ট থেকে লতিফসহ মোট ৪জন জামিন গ্রহণ করে। কসবা ও ব্রাহ্মণপাড়া থানার অফিসারগণ তা তদন্ত করে মিথ্যা প্রমাণ পাওয়ায় চুড়ান্ত রিপোর্ট প্রদানের পর্যায়ে রয়েছে বলে ব্রাহ্মণপাড়া থানা সুত্রে জানা যায়।
ফরিদ ও ফিরোজ গংরা নিজেরা পুকুরের মাছ বিক্রী করে অবশিষ্ট মাছ ধরার জন্য নিজেরাই বিষ প্রয়োগ করে। সমান্য কিছু মরা মাছ দিয়ে লতিফের পরিবারের সদস্যদের দায়ী করে কসবা থানায় গত ১০ জুলাই মিথ্যা মামলা দায়ের করে। মামলা নং ২০/৩২৮ তাং ১০ জুলাই, ২০২০। এ বিষয়ে কসবা থানা ওসি জানান এটা মিথ্যা মামলা। তার চুড়ান্ত রিপোর্ট দেয়া হবে।
গত কিছুদিন পূর্বে ফিরোজ ও ফরিদ গংরা লতিফের ছেলের বিরুদ্ধে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সিএনজি চুরির মামলা সাজায়। যা পরে কসবা থানার মধ্যে দুই উপজেলার গণমান্য লোকজন মিলিত হয়ে প্রমাণিত হয় ঘটনাটি সাজানো। এতে লতিফের পুত্র এ ঘটনা থেকে রেহাই পান। স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সাথে যোগযোগ করে জানা যায় লতিফ নিরীহ মানুষ। অপরদিকে ফিরোজ ও ফরিদ গংরা ধূর্ত ও পরসম্পদলোভী। ফিরোজ নিজে মাদক ব্যবসার সংগে জড়িত। লতিফের সম্পদ আত্মসাৎ করার জন্য গত ১৫ মে লতিফকে অপহরণ করে জোরপূর্বক ৭/৮টি স্ট্যাম্পে টিপসই ও স্বাক্ষর রাখে। এ ব্যাপারে কসবা থানায় মামলা দায়ের করা হলেও আসামীরা জামিনে এসে পুনরায় নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে।
এ ব্যাপারে স্থানীয় সরদার-মাতব্বরগণ বৈঠক করলেও ফরিদ, ফিরোজ ও ফরিদের স্ত্রী সাবেক ইউপি সদস্য কোনো সালিশ দরবার মানেন না।
বায়েক ইউপি চেয়ারম্যান আল মামুন ভুইয়া জানান, ফরিদ ও ফিরোজ দু’জনই ভূমি দুস্যু ও প্রতারক। ফিরোজ মাদক ব্যবসার সংগে জড়িত। অন্যদিকে ফরিদ ও তার স্ত্রী দু’জনই প্রতারক।
গ্রামের নিরপেক্ষ লোকজন মনে করেন লতিফকে একের পর এক মামলা দিলে লতিফ এক সময় সব ছেড়ে চলে যাবেন। এমনটাই মনে করছে ফরিদ গংরা। এলাকার সর্বস্তরের মানুষ চায় লতিফের নায্য অধিকার প্রতিষ্ঠা হোক। এ বিষয়ে লতিফ নির্বাহী অফিসার ও কসবা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) এর নিকট পৃথক পৃথক দরখাস্ত পেশ করেছেন
বায়েক ইউনিয়নের নয়নপুর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি ফুল মিয়া জানান এ বিষয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান আমাকে আহŸায়ক করে শালিস করতে বলেছিলো। সালিশ ডাকলে ফরিদ ও ফিরোজ সালিশ সভাকে বয়কট করে চলে যায়। তিনি বলেন, ফিরোজ একজন চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী। তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে।
সহকারী কমিশনার (ভূমি) হাসিবা খান বলেন, বিষয়টি তিনি সহসাই তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেবেন।
Leave a Reply