লিয়াকত মাসুদ ব্রাহ্মণবাড়িয়া।।
কসবায় জাহাঙ্গীর হত্যা মামলার বাদিনী ও তার স্বাক্ষীদের মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানী করছে আসামী পক্ষের লোকজন। ফলে আকবপুর গ্রামের প্রায় ২০টি পরিবারের পুরুষ সদস্যরা পালিয়ে বেড়াচ্ছে।
প্রকাশ গত ২৭ জুলাই রাত আনুমানিক সাড়ে ৮ টায় জাহাঙ্গীরকে পাশ্ববর্তী ইসমাইল নামক এক ব্যক্তি বাড়ি থেকে ডেকে নিলে জাহাঙ্গীর আর বাড়ী ফিরে আসেনি। জাহাঙ্গীরের স্ত্রী রাজিয়া এ বিষয়ে থানায় সাধারণ ডাইরি করেন। পরে ২৯ জুলাই তার মৃত লাশ আদ্রা-অনন্তপুর বিলে খোঁজে পাওয়া যায়। এবিষয়ে থানায় মামলা দায়ের পর লেখা-পড়া না জানা বাদিনী রাজিয়া বেগম, কসবা থানা ওসি এবং স্থানীয় এক সাবেক কাউন্সিলরের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তারা তার স্বামীর খুনীদের নাম না লিখে অজ্ঞাত আসামী দিয়ে মামলা চালিয়ে দিতে চেয়েছিলো। পরে রাজিয়া বেগম সংক্ষুব্দ হয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া আদালতে একটি সম্পুরক মামলা দায়ের করেন।
নিহতের স্ত্রীর আবেদনের প্রেক্ষিতে জানা যায়, মামলাটি তদন্তের জন্য জেলা পুলিশ সুপার সিআইডির প্রধান কার্যালয়ে সুপারিশপত্র পাঠিয়েছেন।
মামলার বাদিনী রাজিয়া খাতুন জানান; মামলা সিআইডিতে পাঠানোর আবেদন করার পর কসবা থানা ওসি বিরাগভাজন হয়ে কোনো তদন্ত ছাড়াই আসামী পক্ষের লোক দ্বারা দুটি মিথ্যা মামলা রেকর্ড করেছেন এবং একজনকে গ্রেফতার করেছেন। ফলে তার ভাসুর, দেবর ও শ্বশুরবাড়ীর জ্ঞাতিগোষ্ঠি আসামী হয়ে গ্রাম ছাড়া। অন্যদিকে হত্যামামলার আসামীরা প্রকাশ্যে ঘোরাঘুরি করলেও পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করছেনা।
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়; সাবেক কাউন্সিলর আবু তাহেরের পুকুরে কিছু মাছ গ্যাসজনিত কারণে মারা গেলে এ ঘটনাকে পুঁজি করে আসামী পক্ষ দ্বারা প্রভাবিত হয়ে পুকুরের ইজারাদার মিজানুর রহমানকে দিয়ে মিথ্যা মামলা দায়ের করেন আসামী পক্ষ। ওই মামলায় বলা হয় নিহত জাহাঙ্গীরের বড় ভাইয়ের সেফটি ট্রাংকির পানির বিষক্রিয়ায় পুকুরের মাছ মারা গেছে।
ওই সময়ে উপজেলায় আরো প্রায় ১০/১২টি পুকুরে গ্যাস হয়ে মাছ মারা যায়। পুকুরের পাশ্ববর্তী রুক্কু মিয়া (৭০) বলেন’ অতিরিক্ত খাবার ও পুকুরে গ্যাস তৈরি হওয়ার কারণে মাছ মারা গেছে। তবে ২/৩ মন মাছ মারা গেছে বলে অনুমান করা গেছে। বিষ দ্বারা মাছ মারা হলে কোনো মাছই অবশিষ্ট থাকতোনা। তিনি বলেন ঘটনাটি পুরোটাই সাজানো। পুকুর ভরা মাছ আছে।
গ্রামের শহিদ মিয়া (২৫) জানান; জাহাঙ্গীর হত্যা মামলাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে জাহাঙ্গীর হত্যার আসামী গ্রেফতারকৃত রহিমের মা ফিরুজা বেগম (৬৫) কে বাদী করে হাত ভাঙ্গার মামলা করে থানায়। গ্রামের লোকজন জানায়, কোনো মারামারির ঘটনা ঘটেনি। রহিমের মা ফিরোজা বেগম বিছানার খাট থেকে পড়ে হাত মচকালে এ ঘটনাকে মরামারি সাজিয়ে মামলা করেছে। একটি হত্যা মামলার পর এমন সাজানো মিথ্যা মামলা করতে পারে পুলিশ আমাদের মাথায় আসছেনা। জাহাঙ্গীর হত্যা মামলায় শুধু আবুদর রহিমকেই গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। অন্য আসামীরা প্রায়ই গ্রামে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে বলে অভিযোগ গ্রামবাসীর।
কসবা সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, জাহাঙ্গীর হত্যার বাদী পক্ষের লোকজন আমার কাছে এসেছিলো। তাদের বিরোদ্ধে সাজানো মামলা করা হয়েছে অভিযোগ দিলে আমি ঘটনাস্থলে যাই। গ্রামবাসীর সাথে কথা বলে জানতে পারি জাহাঙ্গীর হত্যার বাদী পক্ষকে হয়রানী করার জন্য এসমস্ত মামলাগুলো করা হয়েছে। সেফটি ট্রাঙ্কির বিষক্রিয়ায় মাছ মরে গেছে বিষয়টিও অবান্তর।
কসবা থানা ওসি মোহাম্মদ লোকমান হোসেন এ প্রতিবেদককে বলেন; একজন সরকারী কর্মকর্তা হিসেবে কারো প্রতি রাগ বিরাগ হয়ে মামলা গ্রহন করার সুযোগ নেই। আমি উপরের চাপে মামলা নিয়েছি।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত সাবেক কাউন্সিলর আবু তাহের তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ অস্বীকার করেন।
Leave a Reply