বুধবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:২৭ পূর্বাহ্ন

শিরোনাম :
কসবায় সবুজ সংঘের শিক্ষাবৃত্তি ও মানবিক সহায়তা প্রদান বাংলাদেশের জনগণ কারও দাদাগিরি একদম পছন্দ করে না: গোলাম পরওয়ার ভারতের গণমাধ্যমগুলো যে ভূমিকা নিয়েছে তা দুদেশের মধ্যে স্বাভাবিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠায় সহায়ক নয় -পররাষ্ট্র উপদেষ্টা কসবা প্রেসক্লাব কার্যালয়ের জানালার গ্রীল ভেঙে দিয়েছে দুবৃত্তরা, প্রকৃত রহস্য উদঘাটনের দাবি সাংবাদিকদের ইমাম প্রি-ক্যাডেট স্কুলের ১৪০ শিক্ষার্থীর পবিত্র কুরআন সবক গ্রহণ কসবায় জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আহত ও শহিদদের স্মরণে স্মরণসভা খালেদা জিয়াকে আনতে পেরে আমরা গর্বিত-ড. ইউনূস আজ আল্লামা গোলাম সারোয়ার সাঈদী (র) এর ৫ম ওফাত দিবস কসবায় ১০ হাজার ৬শ ৫০জন প্রান্তিক কৃষকের মাঝে বীজ ও সার বিতরণ শিশু মুনতাহার মরদেহ মিলল পুকুরে

কাকজোছনা ছায়ায়

রুদ্র মোস্তফা

ইথিকা শিবলী সাদিককে ফোন করল । ফোন রিসিভ করেছে শিবলী ।
-বাসর রাতে তাহলে এই অধমকে মনে হল ?
– অধমকে যে সব সময় মনে করি, অধম কি তা জানে ? শিবলী, আমি বড় ধরণের এক্সিডেন্ট করেছি । সাকাতকে খুন করেছি ।
-খুন করেছিস! খুন তো করবিই। আজ তো আবার তোদের খোনাখুনির রাত । তা তুই নিজে খুন হসনি ?
ইথিকা যান্ত্রিক কণ্ঠে বলল, আই অ্যাম সিরিয়াস শিবলী ।
– তুই যে সিরিয়াস সে তো বুঝতেই পারছি । মরবিড জাতীয় কথা বাদ দে । কী দরকার এত ভনিতার । সাকাতকে দে ।
বিন্দু বিন্দু ঘাম জমছে ইথিকার নাকে । ফোন কানে রেখেই সে এখন নির্বাক । দু পাশে চলছে তোলপাড় হৃদয়ের নীরবতা । খানিক পর নীরবতা ভেঙে ইথিকা কথা বলল ।
– কবিতা শুনবি ? তোর প্রিয় কবির কবিতা ।
“এখানে দিনের জীবনের স্পষ্ট বড় আলো নেই ,
ধ্যানের সনির্বন্ধ অন্ধকার এখনও আসেনি ;
চারিদিকে ভোরের কী বিকেলের কাক জ্যোৎস্না ছায়ার ভিতর আহত নগরীগুলো
কোন এক মৃত পৃথিবীর ভেতরের চিহ্ন বলে মনে হয়;
তবু মৃত্যু এক শেষ শান্ত দীন পবিত্রতা ; আমাদের আজকের পৃথিবীর
মানুষ-নগরগুলো সেরকম আন্তরিকভাবে মৃত নয় ।“
– এ জাতীয় কবিতা আমাকে শোনাচ্ছিস কেন ? তোর স্বামীকে কবিতা শোনা । গদগদ করে প্রেমের কবিতা বল । তোর কি ধারণা আমি এখনও তোর প্রেমে হাবু-ডুবু খাচ্ছি ? তোর বাসর রাত, সেই শোকে মদ-ফদ গিলছি ! দেবদাস-ফেবদাস হয়ে গেছি ? এ জাতীয় কিছু কি মনে হচ্ছে ? মনে হলে বল ?
ইথিকা ছোট্ট একটা শ্বাস ফেলল । সে নিজের কথায় বিভোর ছিলো বলে বুঝতে পারলো না শিবলীর কণ্ঠ কতটা নেশাগ্রস্ত ।
– শোন ইথি, আমাকে বিরহ-ফিরহের কবিতা শোনাতে হবে না । আমি মোটেই বিরহিত নই । তোর স্বামীকে রোম্যান্টিক কবিতা শোনা । সে মুগ্ধ হবে । এখন তাকে মুগ্ধ করা তোর প্রয়োজন । আমাকে মুগ্ধ-ফুগ্ধ না করলেও চলবে । তোর সাথে বকবক করতে ইচ্ছে করছে না । রাখি । সেই সাথে এই দোয়াটুকুও করিস এ রাত যেন আমার জীবনে না আসে । বাই ।

শিবলী ফোন রেখে দিয়েছে । বুকের এপাশ-ওপাশ এফোঁড়-ওফোঁড় হয়ে যাচ্ছে । কত কথা মনে হচ্ছে তার । ইউনিভার্সিটির প্রথম দিন । বান্ধবীদের সাথে সে হাঁটছে । হঠাত পেছন থেকে এক সুদর্শন যুবকের কণ্ঠস্বর ।
-এক্সকিউজ মি আপা ? আপনি কি ফাইনাল ইয়ারে পড়েন ?
খানিকটা হকচকিয়ে গিয়েছিল ইথিকা । মনে মনে ভাবছিল বলে কী এ ছেলে ! ফাস্ট ইয়ারের মেয়েকে একেবারে ফাইনাল ইয়ার বলে চালিয়ে দেওয়া ! একে অপরের দিকে তাকিয়ে ছিল ওরা । খানিকটা হাসির ঝর্না । শিবলী একের পর এক কথার জালে বিভ্রান্ত করছিল তাদের । আসলে শিবলী কিছুটা বাউণ্ডুলে স্বভাবের । মানুষকে বিভ্রান্ত করা ওর অন্যতম সখ । প্রথম পরিচয়েই শিবলীকে তার ভাল লেগেছিল । সেই ভাল লাগা থেকেই বন্ধুত্ব ।
ইথিকা আবার ফোন করল । রিং বাজছে । ফোন রিসিভ করতে ইচ্ছে করছে না শিবলীর । রিং বেজেই চলছে । অনেকটা সময় পর ফোন রিসিভ করল শিবলী ।
– প্লিজ, ফোন রাখবি না । শিবলী, তোর সাথে জরুরি কথা আছে । তোর কী হয়েছে রে ? গলাটা ভারী লাগছে কেন ?
– কিছু হয়নি । অযথা ফোন করেছিস কেন ?
– তুই কোথায় ?
– রুমে।
– ঘরটাকে আর ঘর মনে হচ্ছে না । মৃত নগরী মনে হচ্ছে । প্লিজ একটু ছাদে যা । দেখ কী চমৎকার চাঁদ ওঠেছে । শিবলী, তুই না বলেছিলি গভীর ক্ষত নিয়ে আকাশের দিকে তাকালে মনের ক্ষত দূর হয়ে যায় । কতক্ষণ আকাশের দিকে তাকিয়ে আছি । মনের ক্ষত দূর হচ্ছে না কেন রে ? কেন ? কেন ?
– ইথি তোর কী হয়েছে ? অ্যাবসার্ড আরচরণ করছিস কেন ?
– তোর সাথে প্রথম দেখা হওয়া দিনটির কথা মনে আছে ? আমি জানি তুই বিরক্তি নিয়ে হাসছিস। প্রথম পরিচয়েই তোকে আমার ভাল লেগেছিল ।
– তুই বলেছিলি অনেক দিন পর ।
– বলেছিলাম তাতে কী । বারবার বলবো । শত শত বার বলব। প্রথম দেখাতেই তোকে ভালোবাসেছিলাম । অথচ দেখ, প্রকৃতির অদ্ভুত আচরণ । এমনটি তো হওয়ার কথা ছিল না । তোর সাথে দেখা হওয়ার আগেই আমি সাকাতের প্রণয়ে প্রণোদিতা ছিলাম । সত্য কথা কী তোর চেয়ে সাকাতকে বেশি ভালোবাসতাম । ভালোবাসি বলেই তো ওকে নিয়ে ঘর বেধেছি । শান্ত সুন্দর ঘর । আশ্চর্য সুন্দর ঘর । তোর সাথে পরিচয় হয়েছিল ফাজলামোর মাধ্যমে । সেই পরিচয় থেকে বন্ধুত্ব । তুই বন্ধুত্বের সীমানা ছাড়িয়ে আরেকটু এগোতে চাইলি । তোর মনে আছে শিবলী ?
শিবলী কাঠখট্টা জবাব দিলো ।
– এসব মনে থাকাথাকি আবার কী ! সিনক্রিয়েট করছিস কেন ? এসব শোনতে ভাল লাগছে না । ফোন রাখ । সাকাতকে সময় দে ।
– তুই তখন আমার বন্ধু ছিলি । অথচ ভেতরে কী গভীর ভালোবাসা নিয়ে তোর জন্য অপেক্ষায় থেকেছি । তোকে বুঝতে দেইনি । তোর ভালোবাসার অফার পাওয়ার পর আমার খুশিতে লাফানো উচিত ছিল । কিন্তু আমি লাফাইনি। উল্টো তোর সাথে কথা বলা ছেড়ে দিয়েছিলাম। টানা তিন মাস কথা বলিনি । কারণ ততদিনে নিজেকে সামলে নিচ্ছিলাম । আশ্চর্য হলাম নিজেকে পাকা অভিনয় করতে দেখে । নিজের সাথে প্রতিনিয়ত প্রতারণা করে যাচ্ছিলাম আমি । তার পর আবার বন্ধুত্ব । তুই প্রায় বলতি,তোর বাসর হবে একটা খোলা জায়গায় । আকাশে খোলা চাঁদ । দুজনের পরনেই জোছনা রঙের পোশাক । জোছনার রং আর পোশাকের রং মিলেমিশে একাকার হয়ে যাচ্ছে । এইসব কত কথা তুই নির্বিবাদে বলতি।
– ইথি কী হয়েছে তোর, সাকাত কোথায় ?
– ও বিছানায় গভীর ঘুমে মগ্ন । যে ঘুম কখনও ভাঙে না ।
– তার মানে ! কী হয়েছে ওর ?
– আমি ওকে খুন করেছি ।
– কী বলছিস তুই!
– হ্যাঁ। ঠিকই বলছি ।
– কেন খুন করলি ওকে ?
– ও যতই কাছে আসছিল ঠক ততই যেন দূরে সরে যাচ্ছিলাম । আমি যেন আহত পাখি । ওর বাহু-বন্ধনে ডানা ঝাপটাচ্ছি । উড়াল দেওয়ার অবকাশ নেই । হঠাত চোখের সামনে ভেসে উঠল একটা ভরা চাঁদ । বিস্তির্ণ ফাঁকা জায়গা ও একজন মানুষ । আমার কেবলই মনে হচ্ছিল কেউ একজন আমাকে একটি খোলা মাঠ থেকে তুলে এনেছে । স্বপ্নের ভেতর থেকে স্বপ্ন ভাঙার যন্ত্রণায় যান্ত্রিক হয়ে গিয়েছিলাম। হাতের কাছেই ফুলদানি ছিল । সবটুকু শক্তি দিয়ে আঘাত করলাম । ব্যাস । ও কপোকাত । আর আমি মুক্তি পেলাম বাসর রাতের ধূসর যন্ত্রণা থেকে ।
ইথিকা হাউমাউ করে কেঁদে উঠল ।
– একদিন তুই প্রশ্ন করেছিলি কাকজোছনা কী । আমি উত্তর দিতে পারিনি । আজ উত্তরটা জানি । কাকজোছনা হচ্ছে সেই জোছনা, যা দিনের মত স্বচ্ছ । যে জোছনায় কাক তার সবটুকু আলো অকৃপণ ভাবে ছড়িয়ে দেয় । কাকেরা ভুলে যায় রাত-দিনের পার্থক্য । মনের আনন্দে ভ্রান্তি বিলাসে মেতে থাকে । চেয়ে দেখ, চারপাশে আজ কাকজোছনার ছড়াছড়ি । চল না , আজ আমরা ভ্রান্তি বিলাসে মেতে উঠি । কাকদের মত ঘর ছাড়া হয়ে যাই ! জন্ম-জন্মান্তর ডুবে থাকি কাকজোছনা ছায়ায় ।
– তুই অপেক্ষা কর । আমি আসছি । এখনই আসছি ।
ফোন রেখে শিবলী ছুটছে ইথিকার আলো ঝলমলে এপার্টমেন্টের দিকে । ইথিটা বড় বেশি অভিমানী । কখন কী করে বসে তার ঠিক নেই । দ্রুত ইথিকার কাছে তার পৌঁছাতে হবে । দ্রুত। সে ছুটছে । ছুটতে ছুটতে তার মনে হলো সে আসলে নিজের ভেতরই চক্রাকারে ঘুরছে। তাকে গিলে খাচ্ছে বিভ্রমের তীব্র জোছনা । আশ্চর্য সুন্দর কাকজোছনা !

এই সংবাদটি শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




raytahost-demo
© All rights reserved © 2019
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: Jp Host BD