শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ০১:৫০ অপরাহ্ন

শিরোনাম :
কসবায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে দুজনের মৃত্যু কসবায় কালবেলা সাংবাদিকের ওপর হামলা, মোবাইল ও ক্যামেরা ভাংচুরের অভিযোগ কসবায় বাস ট্রাক মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত-২ সৌদি আরবের সড়ক দুর্ঘটনায় কসবার ইসহাক নিহত কসবায় ঈদ পুনর্মিলন নবীন বরণ ও কৃতি শিক্ষার্থী সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত হয়েছে কসবায় ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ঢাকায় আহত ২জন পেলেন সরকারী আর্থিক অনুদান হাসিনার মত এত বড় দুর্ধর্ষ এত জুলুমকারী হতে পারবে না – হাসনাত আবদুল্লাহ দেশ বরেণ্য আলেম আল্লামা মুফতি অধ্যক্ষ মো. আবদুল মতিন (র) এর ইন্তেকাল স্বদেশ কাঁপানো প্রমত্ত হুংকারে কসবায় বিজিবি’র খাদলা বিওপির অপারেশনাল কার্যক্রম শুরু

কাকজোছনা ছায়ায়

রুদ্র মোস্তফা

ইথিকা শিবলী সাদিককে ফোন করল । ফোন রিসিভ করেছে শিবলী ।
-বাসর রাতে তাহলে এই অধমকে মনে হল ?
– অধমকে যে সব সময় মনে করি, অধম কি তা জানে ? শিবলী, আমি বড় ধরণের এক্সিডেন্ট করেছি । সাকাতকে খুন করেছি ।
-খুন করেছিস! খুন তো করবিই। আজ তো আবার তোদের খোনাখুনির রাত । তা তুই নিজে খুন হসনি ?
ইথিকা যান্ত্রিক কণ্ঠে বলল, আই অ্যাম সিরিয়াস শিবলী ।
– তুই যে সিরিয়াস সে তো বুঝতেই পারছি । মরবিড জাতীয় কথা বাদ দে । কী দরকার এত ভনিতার । সাকাতকে দে ।
বিন্দু বিন্দু ঘাম জমছে ইথিকার নাকে । ফোন কানে রেখেই সে এখন নির্বাক । দু পাশে চলছে তোলপাড় হৃদয়ের নীরবতা । খানিক পর নীরবতা ভেঙে ইথিকা কথা বলল ।
– কবিতা শুনবি ? তোর প্রিয় কবির কবিতা ।
“এখানে দিনের জীবনের স্পষ্ট বড় আলো নেই ,
ধ্যানের সনির্বন্ধ অন্ধকার এখনও আসেনি ;
চারিদিকে ভোরের কী বিকেলের কাক জ্যোৎস্না ছায়ার ভিতর আহত নগরীগুলো
কোন এক মৃত পৃথিবীর ভেতরের চিহ্ন বলে মনে হয়;
তবু মৃত্যু এক শেষ শান্ত দীন পবিত্রতা ; আমাদের আজকের পৃথিবীর
মানুষ-নগরগুলো সেরকম আন্তরিকভাবে মৃত নয় ।“
– এ জাতীয় কবিতা আমাকে শোনাচ্ছিস কেন ? তোর স্বামীকে কবিতা শোনা । গদগদ করে প্রেমের কবিতা বল । তোর কি ধারণা আমি এখনও তোর প্রেমে হাবু-ডুবু খাচ্ছি ? তোর বাসর রাত, সেই শোকে মদ-ফদ গিলছি ! দেবদাস-ফেবদাস হয়ে গেছি ? এ জাতীয় কিছু কি মনে হচ্ছে ? মনে হলে বল ?
ইথিকা ছোট্ট একটা শ্বাস ফেলল । সে নিজের কথায় বিভোর ছিলো বলে বুঝতে পারলো না শিবলীর কণ্ঠ কতটা নেশাগ্রস্ত ।
– শোন ইথি, আমাকে বিরহ-ফিরহের কবিতা শোনাতে হবে না । আমি মোটেই বিরহিত নই । তোর স্বামীকে রোম্যান্টিক কবিতা শোনা । সে মুগ্ধ হবে । এখন তাকে মুগ্ধ করা তোর প্রয়োজন । আমাকে মুগ্ধ-ফুগ্ধ না করলেও চলবে । তোর সাথে বকবক করতে ইচ্ছে করছে না । রাখি । সেই সাথে এই দোয়াটুকুও করিস এ রাত যেন আমার জীবনে না আসে । বাই ।

শিবলী ফোন রেখে দিয়েছে । বুকের এপাশ-ওপাশ এফোঁড়-ওফোঁড় হয়ে যাচ্ছে । কত কথা মনে হচ্ছে তার । ইউনিভার্সিটির প্রথম দিন । বান্ধবীদের সাথে সে হাঁটছে । হঠাত পেছন থেকে এক সুদর্শন যুবকের কণ্ঠস্বর ।
-এক্সকিউজ মি আপা ? আপনি কি ফাইনাল ইয়ারে পড়েন ?
খানিকটা হকচকিয়ে গিয়েছিল ইথিকা । মনে মনে ভাবছিল বলে কী এ ছেলে ! ফাস্ট ইয়ারের মেয়েকে একেবারে ফাইনাল ইয়ার বলে চালিয়ে দেওয়া ! একে অপরের দিকে তাকিয়ে ছিল ওরা । খানিকটা হাসির ঝর্না । শিবলী একের পর এক কথার জালে বিভ্রান্ত করছিল তাদের । আসলে শিবলী কিছুটা বাউণ্ডুলে স্বভাবের । মানুষকে বিভ্রান্ত করা ওর অন্যতম সখ । প্রথম পরিচয়েই শিবলীকে তার ভাল লেগেছিল । সেই ভাল লাগা থেকেই বন্ধুত্ব ।
ইথিকা আবার ফোন করল । রিং বাজছে । ফোন রিসিভ করতে ইচ্ছে করছে না শিবলীর । রিং বেজেই চলছে । অনেকটা সময় পর ফোন রিসিভ করল শিবলী ।
– প্লিজ, ফোন রাখবি না । শিবলী, তোর সাথে জরুরি কথা আছে । তোর কী হয়েছে রে ? গলাটা ভারী লাগছে কেন ?
– কিছু হয়নি । অযথা ফোন করেছিস কেন ?
– তুই কোথায় ?
– রুমে।
– ঘরটাকে আর ঘর মনে হচ্ছে না । মৃত নগরী মনে হচ্ছে । প্লিজ একটু ছাদে যা । দেখ কী চমৎকার চাঁদ ওঠেছে । শিবলী, তুই না বলেছিলি গভীর ক্ষত নিয়ে আকাশের দিকে তাকালে মনের ক্ষত দূর হয়ে যায় । কতক্ষণ আকাশের দিকে তাকিয়ে আছি । মনের ক্ষত দূর হচ্ছে না কেন রে ? কেন ? কেন ?
– ইথি তোর কী হয়েছে ? অ্যাবসার্ড আরচরণ করছিস কেন ?
– তোর সাথে প্রথম দেখা হওয়া দিনটির কথা মনে আছে ? আমি জানি তুই বিরক্তি নিয়ে হাসছিস। প্রথম পরিচয়েই তোকে আমার ভাল লেগেছিল ।
– তুই বলেছিলি অনেক দিন পর ।
– বলেছিলাম তাতে কী । বারবার বলবো । শত শত বার বলব। প্রথম দেখাতেই তোকে ভালোবাসেছিলাম । অথচ দেখ, প্রকৃতির অদ্ভুত আচরণ । এমনটি তো হওয়ার কথা ছিল না । তোর সাথে দেখা হওয়ার আগেই আমি সাকাতের প্রণয়ে প্রণোদিতা ছিলাম । সত্য কথা কী তোর চেয়ে সাকাতকে বেশি ভালোবাসতাম । ভালোবাসি বলেই তো ওকে নিয়ে ঘর বেধেছি । শান্ত সুন্দর ঘর । আশ্চর্য সুন্দর ঘর । তোর সাথে পরিচয় হয়েছিল ফাজলামোর মাধ্যমে । সেই পরিচয় থেকে বন্ধুত্ব । তুই বন্ধুত্বের সীমানা ছাড়িয়ে আরেকটু এগোতে চাইলি । তোর মনে আছে শিবলী ?
শিবলী কাঠখট্টা জবাব দিলো ।
– এসব মনে থাকাথাকি আবার কী ! সিনক্রিয়েট করছিস কেন ? এসব শোনতে ভাল লাগছে না । ফোন রাখ । সাকাতকে সময় দে ।
– তুই তখন আমার বন্ধু ছিলি । অথচ ভেতরে কী গভীর ভালোবাসা নিয়ে তোর জন্য অপেক্ষায় থেকেছি । তোকে বুঝতে দেইনি । তোর ভালোবাসার অফার পাওয়ার পর আমার খুশিতে লাফানো উচিত ছিল । কিন্তু আমি লাফাইনি। উল্টো তোর সাথে কথা বলা ছেড়ে দিয়েছিলাম। টানা তিন মাস কথা বলিনি । কারণ ততদিনে নিজেকে সামলে নিচ্ছিলাম । আশ্চর্য হলাম নিজেকে পাকা অভিনয় করতে দেখে । নিজের সাথে প্রতিনিয়ত প্রতারণা করে যাচ্ছিলাম আমি । তার পর আবার বন্ধুত্ব । তুই প্রায় বলতি,তোর বাসর হবে একটা খোলা জায়গায় । আকাশে খোলা চাঁদ । দুজনের পরনেই জোছনা রঙের পোশাক । জোছনার রং আর পোশাকের রং মিলেমিশে একাকার হয়ে যাচ্ছে । এইসব কত কথা তুই নির্বিবাদে বলতি।
– ইথি কী হয়েছে তোর, সাকাত কোথায় ?
– ও বিছানায় গভীর ঘুমে মগ্ন । যে ঘুম কখনও ভাঙে না ।
– তার মানে ! কী হয়েছে ওর ?
– আমি ওকে খুন করেছি ।
– কী বলছিস তুই!
– হ্যাঁ। ঠিকই বলছি ।
– কেন খুন করলি ওকে ?
– ও যতই কাছে আসছিল ঠক ততই যেন দূরে সরে যাচ্ছিলাম । আমি যেন আহত পাখি । ওর বাহু-বন্ধনে ডানা ঝাপটাচ্ছি । উড়াল দেওয়ার অবকাশ নেই । হঠাত চোখের সামনে ভেসে উঠল একটা ভরা চাঁদ । বিস্তির্ণ ফাঁকা জায়গা ও একজন মানুষ । আমার কেবলই মনে হচ্ছিল কেউ একজন আমাকে একটি খোলা মাঠ থেকে তুলে এনেছে । স্বপ্নের ভেতর থেকে স্বপ্ন ভাঙার যন্ত্রণায় যান্ত্রিক হয়ে গিয়েছিলাম। হাতের কাছেই ফুলদানি ছিল । সবটুকু শক্তি দিয়ে আঘাত করলাম । ব্যাস । ও কপোকাত । আর আমি মুক্তি পেলাম বাসর রাতের ধূসর যন্ত্রণা থেকে ।
ইথিকা হাউমাউ করে কেঁদে উঠল ।
– একদিন তুই প্রশ্ন করেছিলি কাকজোছনা কী । আমি উত্তর দিতে পারিনি । আজ উত্তরটা জানি । কাকজোছনা হচ্ছে সেই জোছনা, যা দিনের মত স্বচ্ছ । যে জোছনায় কাক তার সবটুকু আলো অকৃপণ ভাবে ছড়িয়ে দেয় । কাকেরা ভুলে যায় রাত-দিনের পার্থক্য । মনের আনন্দে ভ্রান্তি বিলাসে মেতে থাকে । চেয়ে দেখ, চারপাশে আজ কাকজোছনার ছড়াছড়ি । চল না , আজ আমরা ভ্রান্তি বিলাসে মেতে উঠি । কাকদের মত ঘর ছাড়া হয়ে যাই ! জন্ম-জন্মান্তর ডুবে থাকি কাকজোছনা ছায়ায় ।
– তুই অপেক্ষা কর । আমি আসছি । এখনই আসছি ।
ফোন রেখে শিবলী ছুটছে ইথিকার আলো ঝলমলে এপার্টমেন্টের দিকে । ইথিটা বড় বেশি অভিমানী । কখন কী করে বসে তার ঠিক নেই । দ্রুত ইথিকার কাছে তার পৌঁছাতে হবে । দ্রুত। সে ছুটছে । ছুটতে ছুটতে তার মনে হলো সে আসলে নিজের ভেতরই চক্রাকারে ঘুরছে। তাকে গিলে খাচ্ছে বিভ্রমের তীব্র জোছনা । আশ্চর্য সুন্দর কাকজোছনা !

এই সংবাদটি শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




raytahost-demo
© All rights reserved © 2019
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: Jp Host BD