খাদেমুল মোরসালিন শাকীর,নীলফামারী প্রতিনিধিঃ
নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলায় মিম আক্তার নামে ১৬ বছর বয়সী এক মেয়ের সাথে ৬২ বছরের এক বৃদ্ধের বাল্য বিয়ে নিয়ে এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। ৬২ বছরের ওই বরের নাম আবদুল্লাহ আল নাসের, তিনি হজ্ব ওমরাহ প্রশিক্ষন কেন্দ্র আল নাসের এভিয়েশন সার্ভিসের মালিক। বিয়েতে দেনমোহর ধার্য করা হয় একলাখ ২৫ হাজার টাকা।
সম্প্রতি ঘটনাটি জানা জানি হলে বর আবু আল নাসেরকে আটক করে এলাকাবাসী। পরে নিতাই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফারুকুজ্জামান ফারুক এবং স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে এক শালিস বৈঠকের মাধ্যমে ৬ লাখ টাকার বিনিময়ে বিষয়টি রফাদফা করে বরকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এ ঘটনায় স্থানীয় প্রিন্ট ও ইলেট্রনিক্স মিডিয়ার সাংবাদিকরা মেয়েটির বাড়িতে ঘটনার বিষয় জানতে গেলে প্রভাবশালী ব্যক্তিগন মেয়েটিকে লুকিয়ে রাখে।
এলাকাবাসী সুত্রে জানা গেছে, ঢাকা জেলার মিরপুর উত্তর পাইকপাড়ার মৃত সামসুল হকের ছেলে এবং আল নাসের এভিয়েশন সার্ভিসের মালিক আবদুল্লাহ আল নাসের (৬২) । হজ্বে লোক পাঠানোর সুবাধে নাসেরের সাথে পরিচয় হয় কিশোরগঞ্জ উপজেলার বড়ভিটা ইউনিয়নের বাসিন্দা আতিকুল ইসলামের সাথে। ৬২ বছরের বৃদ্ধ আল নাসের বিয়ে করার জন্য আতিককে মেয়ে খুঁজতে বলেন, আতিক নাসেরের মন যোগাতে এক ঘটকের মাধ্যমে নিতাই ইউনিয়নের খোলাহাটি গ্রামের আব্দুল মতিনের নাতনি ১৬ বছরের মিম আক্তারকে বিয়ে করার জন্য প্রস্তাব দেন। মেয়েটির নানা গরীব হওয়ার কারনে গত ২৭ শে অক্টোবর নগদ এক লক্ষ ২৫ হাজার টাকা দেনমোহর ধার্য করে ওই বৃদ্ধের সাথে মেয়েটির গোপনে বিয়ে দেন। ২৮ অক্টোবর ওই বৃদ্ধ প্রাইভেট কারে মেয়েটিকে নিয়ে নানা শশুর আব্দুল মতিনের বাড়ি খোলাহাটি গ্রামে আসলে কৌতুহলী লোকজন বৃদ্ধকে প্রাইভেট কারসহ আটকে রাখে। গাড়ীর নম্বর ঢাকা মেট্রোÑ গ- ৩৫-২৭৯০। পরে নিতাই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফারুকুজ্জামান ফারুক , একই গ্রামের মোবারক আলীর ছেলে সুরুজ মিয়া , একই গ্রামের প্রভাবশালী ব্যক্তি সেনা মিয়া, আবুল কালাম কালটু মিয়াসহ বেশকিছু প্রভাবশালী ব্যক্তিগন স্থানীয় সুরুজের বাড়িতে বৃদ্ধ আবু নাসেরকে আটকে রেখে রাতভর শালিস বৈঠকের মাধ্যমে বাল্য বিবাহ করার অজুহাতে নিতাই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফারুকুজ্জামান ফারুকের নামে স্টান্ডার্ড ব্যাংক লিমিেিটড নীলফামারী শাখার অনুকুলে ৬ লাখ টাকার চেক গ্রহন করে বৃদ্ধকে ছেড়ে দেন। যাহার ব্যাংক একাউন্ট নম্বর ৫০১১৩০০০০২০ চেক পাতা নম্বর সিএএ ০০০০৪৭৫।
খবর নিয়ে জানা গেছে, মিম আক্তার নিতাই ইউনিয়নের পাগলাটারী ফুলবাড়ি গ্রামের মহুবার মিয়া এবং লুনা বেগম দম্পত্তির কন্যা। মেয়েটির বাবা মা ঢাকার একটি পোশাক কারখানায় চাকুরী করার সুবাধে খোলাহাটি গ্রামে নানা আব্দুল মতিনের বাড়িতে থেকে পড়াশুনা করে। মেয়েটি কিশোরগঞ্জ বিজনেস ম্যানেজমেন্ট ইনস্টিটিউট কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্রী । জন্ম নিবন্ধন সনদ অনুযায়ী মেয়েটির জন্ম তারিখ ২২-১১-২০০৩ সাল। জন্ম নিবন্ধন নম্বর ২০০৩৭৩৮৪৫৬৯০৩৩৮২৩। জন্ম সনদ ইস্যুর তারিখ ১০-০৪-১৭ ইং।
এ বিষয়ে আল নাসের এভিয়েশন সার্ভিসের মালিক আবদুল্লাহ আল নাসেরের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, আমি ইসলামী শরিয়াহ মোতাবেক ওই মেয়েটিকে বিয়ে করেছি বলে বিয়ের কাবিন নামা দেখান। কাবিন নামায় বর কনে ও অন্যান্য স্বাক্ষীর স্বাক্ষর থাকলেও নিকাহ রেজিষ্টারের নাম ও স্বাক্ষর নেই।
নিতাই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফারুকুজ্জামান ফারুকের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, মেয়েটির নামে ৪ লক্ষ টাকা ব্যাংকে রাখা হবে। ২ লক্ষ টাকা খুলি খরচ বাবদ ব্যায় করা হয়েছে। মেয়েটির তালাক হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন- এখনো তালাক হয়নি। ৪ লক্ষ টাকা আমার কাছে গচ্ছিত আছে।
কিশোরগঞ্জ থানার ওসি আব্দুল আউয়াল বলেন, খবর পেয়ে আমি ঘঁটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু নিতাই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফারুকুজ্জামান ফারুক বিষয়টি সমাধান করে দিতে চাওয়ায় সেখান থেকে পুলিশ চলে আসে।
কিশোরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার রোকসানা বেগম বলেন,বিষয়টি আমাকে কেউ জানায়নি। কেউ অভিযোগ করলে খবর নিয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। # সাথে ছবি আছে।
Leave a Reply