শুক্রবার, ০৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০১:৩১ অপরাহ্ন

শিরোনাম :
ঐতিহ্যবাহী আড়াইবাড়ী দরবার শরীফের ৮৬ তম ইছালে ছাওয়াব মাহফিল আজ কৃষক জনগোষ্ঠীকে সংগঠিত করার লক্ষ্যে কসবায় কৃষক সভা অনুষ্ঠিত রাজধানীতে ঐশী বাংলা জাতীয় সাহিত্য সম্মেলন-২০২৫ সম্পন্ন অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আবদুল মান্নান ভূইয়ার জানাযা ও দাফন সম্পন্ন কসবা ইমাম প্রি-ক্যাডেট স্কুলের নতুন ভর্তির মূল্যায়ন পরীক্ষা অনুষ্ঠিত আল্লামা মরহুম গোলাম সারোয়ার সাঈদী (র) এর দোয়া মাহফিল সম্পন্ন কসবায় সবুজ সংঘের শিক্ষাবৃত্তি ও মানবিক সহায়তা প্রদান বাংলাদেশের জনগণ কারও দাদাগিরি একদম পছন্দ করে না: গোলাম পরওয়ার ভারতের গণমাধ্যমগুলো যে ভূমিকা নিয়েছে তা দুদেশের মধ্যে স্বাভাবিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠায় সহায়ক নয় -পররাষ্ট্র উপদেষ্টা কসবা প্রেসক্লাব কার্যালয়ের জানালার গ্রীল ভেঙে দিয়েছে দুবৃত্তরা, প্রকৃত রহস্য উদঘাটনের দাবি সাংবাদিকদের

খোলা দরজা

রোকেয়া ইসলাম
– হুজুর আর পারি না, ছাইড়া দেন।
রক্তপানি করা চাপা আর্তনাদ করে ওঠে দশ বছরের সাইফুল। আতরের ভুরভুরে গন্ধওয়ালা মেজ হুজুর সাইফুলের মুখ শক্তহাতে চেপে ধরে।
– অহন এট্টু সইয্যো কর। দেখবি পরকালে গোলেমান পাবি হুরপরী পাবি। গুইন্না গুইন্না সোত্তুরখান।
-হুজুর অহন তো মইরা যাইতাছি। পারতাছি না। ছাইড়া দেন। আপনের দুইড্ডা পায়ে পরি।
-এইতো অহন সাইরা ফালাইতাছি। চুপচাপ পইরা থাক।
– কাইল আমি বড় হুজুররে কইয়া দিমু।
-ব্যাত দেখছোস। ব্যাতাইয়া গুয়ার চামড়া তুইল্লা ফালামু।
প্রায় প্রতিরাতেই ছোট সাইফুলের উপর এই অসহনীয় অত্যাচার সহ্য করতেও পারে না। মানতেও পারে না।
ও ওর সহপাঠীদের সাথে বিষয়টা নিয়ে কথা বলে। জানতে পারে ওদের অবস্থা আরো ভয়াবহ।
দিনের বেলায় হুজুরদের ঘর পরিস্কার করা বালতি ভর্তি সাবান জলে ভেজানো কাপড় ধুয়ে শুকিয়ে ভাঁজ করে দেয়া। হাত পা টেপানো। সাথে প্রায় রাতেই বলাৎকার।
সাইফুল দুবার পালিয়ে বাড়ি গিয়েছে।
বাবা প্রথমে আদর করে কাছে বসিয়ে বুঝিয়ে বলে। সাইফুল কিছুতেই ফিরতে রাজি হয় না তখন বাবা মোটা লাঠি দিয়ে পিটিয়ে আধমরা করে হুজুরদের কাছে মাফ চেয়ে ফিরিয়ে দিয়ে যায়। এতে নিজের ছেলের সর্বনাশ করে মোল্লাদের পোয়াবারো করে দিয়ে যায়।
আবার পালিয়ে গেলে মা কাছে বসিয়ে জিজ্ঞেস করে কেন মাদ্রাসায় যেতে চায় না সাইফুল। ভয়ে লজ্জায় কুঁকড়ে বলতে পারে না।
মা ওকে কোলের কাছে বসিয়ে বলে
– বাবা তুমি যদি কোরানে হাফেজ হও তাইলে তুমার বাপের মানত পুরা হইব। সমাজে আমাগো মান কত বাইড়া যাইব সেইডা কি তুমি জানো।
তুমি মিলাদ পড়লেই ট্যাকা কুরবানি করলেই ট্যাকা। খতম পড়লেই ট্যাকা।
– মা আমি ল্যাহাপড়া কইরা চাকরি করুম ব্যাবসা করুম। তাইলে আমিই মাইনসেরে ট্যাকা দিতে পারুম।
-বাবা সুয়াবটা দেখবা না। তুমি মরলে সুজা বেহেশতে যাইবা। বেহেশতে কুনুকিছুর অভাব নাই। কত ফলমুল তুমি যতই খাও কিছুতেই ফুরাইব না। কত শান্তি।
-মা তুমি তো হাফেজ হও নাই। নামাজ পড় কোরান পড়। কেউরে কষ্ট দেও না। খালি হাফেজ হও নাই তাতে কি ক্ষতি হইছে।
-ক্ষতি তো হইছেই। পাক কালাম ভিতরে নাই।
– মা নানী তো হাফেজ আছিল না কোরান পড়তে জানতো না তাইলে হে কি দোজকে যাইব। তার কি গুনা হইছে।
মা কোন কথার উত্তর দিতে পারে না। চুপচাপ বসে থাকে।
-নানী কি খারাপ মানুষ আছিল।
– তওবা তওবা আমার মায়ে খারাপ থাকব ক্যা। কত ভাল মানুষ আছিল আমার মায়ে।
– মা নানীর মত ভাল মানুষ হমু।
– কি তুমার পোলা বুঝলোনি।
বাবা ঘরে ঢোকে পেছন দিয়ে।
-কাইল লইয়া যামু তুমার পোলারে। গুছাইয়া রাইখো।
বাবা চলে যায় বাইরে। সাইফুল মাকে জড়িয়ে ধরে বসে থাকে।
ঘুম ভেঙে দেখে বাবা বাইরে যাবার কাপড় চোপর পরে তৈরি হয়ে বসে আছে। মা নাশতা সাজিয়ে রেখেছে।
এবারও বাবা ছেলের পালিয়ে যাওয়ার জন্য হুজুরের কাছে মাফ চেয়ে সাইফুলকে দিয়ে আসে।
আসরের নামাজের জামাত শেষ হতেই সাইফুল সিদ্ধান্ত নেয় সে পালাবে।
মাদ্রাসার পেছনের দেয়াল দাঁড়িয়ে লাগোয়া সুপারি গাছ বেয়ে নেমে এক দৌড়ে বাড়ি পৌঁছে যায়।
দরজায় কড়া নাড়তে গিয়ে বাবার লাল লাল রাগী চোখের কথা মনে করে ভয়ে কুঁকড়ে থেমে যায়।
দরজার গা ঘেষে অন্ধকারে চুপটি করে বসে থাকে। হঠাৎ কারো পায়ের শব্দে একেবারে ছায়ার সাথে মিশেতে চায়। তবুও ছোট মামা চিনে ফেলে ওকে।
মামার স্পর্শ পেয়ে এতোক্ষণে অসহায়ত্ব এতোদিনের পুঞ্জিভূত যন্ত্রণায় কেঁদে ফেলে। মামা ওকে আদর করে সিঁড়িতে পাশাপাশি বসে।
মামার কাছে সব খুলে বলে।
মামা ওর হাত ধরে বাবার সামনে দাঁড়ায়।
-দুলাভাই আপনি ওকে কেন মাদ্রাসায় দিয়েছেন?
-হেই কথাও কি তুমার মত টেডি ডিস্কোর কাছে দেওন লাগব। আমার ভাল তো তুমাগো সইয্যো হইব না। আমার পুলা হাফেজ হইব। আমার মানত পুরা হইব এইডা কেমনে ভাল লাগব কও।
-দুলাভাই নিজের গোনার বোঝা ছেলের ঘাড়ে দিয়ে পুলসেরাতের পার হইতে চাইলেই পার হওয়া যায়।
– আমার পোলা হাফেজ হইবই।
-হোক হাফেজ। তবে এই মাদ্রাসায় না অন্য মাদ্রাসায় পাঠান ওকে। অন্যভাবে হাফেজিয়া শিক্ষা দিন। জীবনের জন্য শিক্ষা।
-আমার পোলা এই মাদ্রাসায়ই পড়ব। পাক্কা সিদ্ধান্ত।
মামা এতোক্ষণ ওর হাত ধরে রেখেছে এবার এক ঝটকায় হাতটা সরিয়ে নেয় সাইফুল।
– এই মাদ্রাসায় পড়ুম না গুয়ামারা খামু না।
বলেই খোলা দরজা দিয়ে দৌড়ে বের হয়ে যায়।
মা খোলা দরজার দুই তাকিয়ে সমস্যা সমাধানের পথ খুঁজতে থাকে….

এই সংবাদটি শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




raytahost-demo
© All rights reserved © 2019
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: Jp Host BD