বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০৩ পূর্বাহ্ন

শিরোনাম :
কসবায় সবুজ সংঘের শিক্ষাবৃত্তি ও মানবিক সহায়তা প্রদান বাংলাদেশের জনগণ কারও দাদাগিরি একদম পছন্দ করে না: গোলাম পরওয়ার ভারতের গণমাধ্যমগুলো যে ভূমিকা নিয়েছে তা দুদেশের মধ্যে স্বাভাবিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠায় সহায়ক নয় -পররাষ্ট্র উপদেষ্টা কসবা প্রেসক্লাব কার্যালয়ের জানালার গ্রীল ভেঙে দিয়েছে দুবৃত্তরা, প্রকৃত রহস্য উদঘাটনের দাবি সাংবাদিকদের ইমাম প্রি-ক্যাডেট স্কুলের ১৪০ শিক্ষার্থীর পবিত্র কুরআন সবক গ্রহণ কসবায় জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আহত ও শহিদদের স্মরণে স্মরণসভা খালেদা জিয়াকে আনতে পেরে আমরা গর্বিত-ড. ইউনূস আজ আল্লামা গোলাম সারোয়ার সাঈদী (র) এর ৫ম ওফাত দিবস কসবায় ১০ হাজার ৬শ ৫০জন প্রান্তিক কৃষকের মাঝে বীজ ও সার বিতরণ শিশু মুনতাহার মরদেহ মিলল পুকুরে
চেনা শহরে অচেনা রঙ

চেনা শহরে অচেনা রঙ

রোকেয়া ইসলাম
রুপন্তি খুব আহ্লাদী মেয়ে প্রপা বেশ চটপটে মেয়ে।সাত বছর আর সাড়ে পাঁচ বছর বয়স হলে কি হবে দুজনেই খুব বুদ্ধিবতী। সারাদিন নিজেরা বানিয়ে বানিয়ে কত রকমের খেলা খেলে তার ইয়াত্তা নেই।
সেদিন ওর দাদী জরুরি কাজে বাইরে যাবে ওরা বায়না ধরে ওরাও যাবে।
কি আর করা কাজের সময়টুকু দুবোন গাড়িতে থাকবে ফেরার পথে গাড়ি ঘুরিয়ে একটু বেড়িয়েও আসবে।
করোনাকালের আগে এমনি ঘোরাঘুরি মাঝেমাঝেই করেছে।
করোনায় স্কুল বন্ধ বাইরে যাওয়াও সীমিত।
গাড়ি চলছে রুপন্তি আর প্রপা দাদী নানীর গা ঘেষে বসে আছে।
রোকেয়া ইসলাম রুপন্তির দাদী আর প্রপার নানী।
প্রপাকে দেখাচ্ছে প্রপার মায়ের স্কুল। দেশের নামকরা স্কুল “মনিপুর স্কুল ”
গল্প করছে প্রপার কাছে।
এই স্কুলটা আগে একটা ভাড়া বাসায় ছিল এখন নিজস্ব জমিতে বিশাল জায়গায় বিশাল ভবন।
এই স্কুলেই পড়ছে রুপন্তি প্রপার দুই ভাই দীপ্র আর সৌর।
একটু এগিয়ে গিয়ে দেখতে পায় কামার্স কলেজ। এখানেও প্রপার মা ইন্টারমিডিয়েট পড়েছে।
চেনা শহরটা দ্রুত পালটে যাচ্ছে ওর সামনে দিয়ে।
মুগ্ধ হয়ে শুনছে রুপন্তি ও প্রপা।
ওদের দুই প্রজন্ম আগেরজনের মনে রাখা ওদের প্রিয় হয়ে ওঠা মিরপুরকে দেখছে ওরা।
রোকেয়া ইসলাম খুব কম দোতলা বাড়ি দেখছে আর এখন ছয়তলার ফাঁকফোকর দিয়ে একতলা খুঁজে পাওয়া দুস্কর। আগে ছিল সবুজ মিরপুর আর এখন ইট গ্রীল টাইলসের মিরপুর।
মার্কেটের শহর মসজিদ মন্দিরের শহর বললে ভুল হবে না আজকের মিরপুরকে। দেশ সেরা বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে ঘিরেই কি গড়ে উঠলো আধুনিক মিরপুর?
আলো ঝলমলে মিরপুরে তিন প্রজন্ম ধরে বসবাস করছে রোকেয়া ইসলাম।
নতুন তৈরি হওয়া ফুড এরিয়ায় খেতে গেছে নাতী নাতনি নিয়ে। বড় নাতী খাবার পছন্দ করা থেকে যাবতীয় সব ঠিকঠাক করছে।
নিজেরা খেয়ে পার্সেল নিয়ে হেঁটে হেঁটে আসছে দল বেঁধে ওরা।
আগের শান্ত দরিদ্র শহরটায় ধনী বিলাসীর ছাপ প্রকট হয়ে উঠছে রাতারাতি।
বদলে যাওয়া সুন্দরী শহরটা দামী হচ্ছে। আগারগাঁওতে লাগছে সরকারি ছাপ। সেই ছাপকে কেন্দ্র করেই বানিজ্যিক আবহাওয়া আধুনিক রুপ নিচ্ছে।
খাবারের গলিটা পার হতে হতে মনে হয় কারো কোন দুঃখ নেই অভাব নেই।
প্রতিটি পরিবার খুব সুখী। মানুষগুলো আনন্দময় জীবন যাপনে অভ্যস্ত।
রোকেয়া ইসলাম তার চেনা একটা অত্যাধুনিক বহুতল বিল্ডিংএর পাশে দাঁড়ায়।
ওরাও তিন প্রজন্ম ধরে বসবাস করছে মিরপুরে।
রোকেয়া ইসলামের পরিবার আর এই বহুতল বিল্ডিংএর মালিকের পরিবারের মধ্যে খুব ভাল বন্ধুত্ব ছিল। এখন দীর্ঘ অযোগাযোগ। দুটো পরিবারই কর্ম ব্যাস্ত।
কত বছর হলো দেখা নেই।
গেটের কাছে দাঁড়াতেই দারোয়ান এগিয়ে আসে। কত তলায় কার বাড়িতে যাবেন জিজ্ঞেস করতেই রোকেয়া ইসলামের চোখে ভাসে একতলা বাড়ির কালো কলাপসিবল গেটে দাঁড়িয়ে ডাক দিতেই বের হয়ে আসতো জোবেদা আপা।
বিছানায় গড়িয়ে বারান্দায় বসে মুড়ি ভর্তা আর দুধ চায়ের তুমুল আড্ডা বিকেল থেকে তরুন রাত গড়িয়ে হেঁটে হেঁটে বাসায় ফিরতো।
দারোয়ানের কাছ থেকে জেনে যায় জোবেদা আপা মারা গেছে বছর দশেক আগে তার স্বামীও তিন বছর আগে চলে গেছেন।
ছেলে মেয়েরা বাড়ি ভাগাভাগি করে নিয়েছে। কেউ এখানে থাকে না। সব ভাড়া দেয়া। মাসের দশ তারিখের মধ্যে একদিন ভাড়া নিতে আসে। বিলটিলগুলো দারোয়ান দিয়ে কাগজপত্র গুছিয়ে রাখে।
কে কোনতলা নিয়েছে বা পেয়েছে জিজ্ঞেস করতেই রোকেয়া ইসলাম ভূমিকম্পের উপর বসেছে এমন চমকে ওঠে।
ভাগাভাগি আত্মীয় স্বজন পাড়া প্রতিবেশী শেষ হয়ে আদালত অবধি গড়িয়েছে।
জোবেদা আপার সুন্দর গোছানো নিপাট সংসার। লক্ষীমন্ত মেধাবী ছেলেমেয়ে।
এক টেবিলে বসিয়ে এক পাতিলের রান্না করা ভাত বেড়ে খাইয়েছে।
বড় কোনটার জামা কাপড় ছোট হয়ে গেলে সেলাই করে ছোটটাকে পড়িয়েছে।
আপা আর তার স্বামী আপ্রাণ সংগ্রাম করে চারটা সন্তানকে লেখাপড়া করিয়েছে।
বড়টার এস এস সির ফলাফলে আপার স্বামী অনেক মিষ্টি এনে বন্ধুদের বাড়িতে বাড়িতে বিলিয়েছে।
আপা তার বড় ছেলেটিকে দেখিয়ে বলতো ও আছে আমি আমার অন্য সন্তানদের জন্য চিন্তা করি না। ওর যা দায়িত্ববোধ ভাইবোনদের প্রতি।
ছেলেমেয়েগুলো লেখাপড়া শেষ করে ভাল ভাল চাকুরী করে। মানুষ হয়েছে সবাই।
“মানুষ হয়েছে” চিন্তা করে থেমে যায় রোকেয়া ইসলাম। সত্যি কি মানুষ হয়েছে ওরা!
বড় ছেলেটা ভাইবোনদের ঠকানোর চেষ্টা করেছিল!!
দারোয়ানের কাছে জানতে পারে।
দাঁড়িয়ে থাকে রোকেয়া ইসলাম আলো পিছলে যাওয়া সফেদ টাইলসে মোড়া কালো মিশেল খয়েরী গেটের সামনে। প্রতিটি ফ্ল্যাট আলো জ্বলছে।
বাড়িটা থেকে যেন সুখের সুর উপচে পড়ছে।
হঠাৎ –রেড ওয়াইন-রঙের একটা এ্যালিয়ন এসে থামে গেটের কাছে। পেছনের দুপাশের দরজা খুলে সদ্য কিশোরে পা দেয়া দুজন ফুলপরী ছটফট করে নামে। জোছনা মাখা কিশোরী দুজন খাবারের দোকানের দিকে ছোটে। ড্রাইভিং সিট থেকে নেমে আসে যে যুবকটি তার মুখে জোবেদা আপার স্বামীর মুখ বসানো।বয়স মিলিয়ে চিনতে পারে তাকে রোকেয়া ইসলাম । জোবেদা আপার ছোট ছেলে!!
ও কি চিনতে পারবে? মনে মনে হিসাব মেলায় কতদিন পর দেখলো ওকে। ওর কৈশোর তারুণ্য যৌবন প্রাপ্তির স্তরগুলো রোকেয়া ইসলামের চোখের আড়ালেই হয়েছে।
টলোমলো পায়ে হাঁটতে শেখা শিশুটির কাছে নিজের পরিচয় দিয়ে চেনানোর জন্য এগুতেই দেখতে পায় যুবকটি দারোয়ানকে জিজ্ঞেস করছে
– লাট বাহাদূর এসেছিল? গ্যাসের সমস্যার সমাধান করেছে না ভাড়ার টাকা নিয়ে চম্পট দিয়েছে।
– না সে বিষয়ে তো কিছু কয় নাই।
-হারামজাদা খালি সমস্যা বাঁধায়? ঠিক আছে তুমি হিসাব ঠিক কর আমি আসছি। ও তুমি তো আবার তার লোক। বেতন তো আমিও দেই নাকি।
দারোয়ান মুখ নিচু করে থাকে। যুবকটি এগুতে থাকে।
রোকেয়া ইসলামের কাছে দারোয়ান এগিয়ে আসে।
– দুই ভাইয়ের একেবারে মিল নেই। কেউ কাউরে দেখতে পারে না। আমার হইছে জ্বালা হে কয় আমি তার লোক তায় কয় আমি এর লোক। মাইয়াগুলান আরো দজ্জাল। আমার শান্তি নাই এমুন চাকরির কপালে ঝাড়ু।
রোকেয়া ইসলাম দেয়ালের টাইলসে হাত রাখে ঐশ্বর্যে পিছলে যায় হাত।
শান্তি সুখের ভূমিতে ঐশ্বর্য অনৈক্য আর অসুখী ভবন ছেড়ে পথে নামে।
রঙিন আলোতে ঝকমকে পথ আনন্দে মুখরিত হয়ে আছে। প্রত্যেকের মুখ হাসিখুশি।
মরিচ বাতির রঙিন পথ ছেড়ে এগিয়ে আসে একটু। আকাশে তাকায়। কুয়াশার আকাশে চাঁদ আছে তারাও আছে আশেপ

এই সংবাদটি শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




raytahost-demo
© All rights reserved © 2019
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: Jp Host BD