বুধবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:৪০ পূর্বাহ্ন

শিরোনাম :
কসবায় সবুজ সংঘের শিক্ষাবৃত্তি ও মানবিক সহায়তা প্রদান বাংলাদেশের জনগণ কারও দাদাগিরি একদম পছন্দ করে না: গোলাম পরওয়ার ভারতের গণমাধ্যমগুলো যে ভূমিকা নিয়েছে তা দুদেশের মধ্যে স্বাভাবিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠায় সহায়ক নয় -পররাষ্ট্র উপদেষ্টা কসবা প্রেসক্লাব কার্যালয়ের জানালার গ্রীল ভেঙে দিয়েছে দুবৃত্তরা, প্রকৃত রহস্য উদঘাটনের দাবি সাংবাদিকদের ইমাম প্রি-ক্যাডেট স্কুলের ১৪০ শিক্ষার্থীর পবিত্র কুরআন সবক গ্রহণ কসবায় জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আহত ও শহিদদের স্মরণে স্মরণসভা খালেদা জিয়াকে আনতে পেরে আমরা গর্বিত-ড. ইউনূস আজ আল্লামা গোলাম সারোয়ার সাঈদী (র) এর ৫ম ওফাত দিবস কসবায় ১০ হাজার ৬শ ৫০জন প্রান্তিক কৃষকের মাঝে বীজ ও সার বিতরণ শিশু মুনতাহার মরদেহ মিলল পুকুরে
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ঃ বন্ধুরা ফিরে চল প্রাণের টানে ক্যাম্পাস প্রাঙ্গণে

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ঃ বন্ধুরা ফিরে চল প্রাণের টানে ক্যাম্পাস প্রাঙ্গণে

করোনাভাইরাস এখন এক গল্পের মতো। যদিও গৃহবন্দীর প্রায় সাড়ে সাত মাস কেটে গেলেও শিক্ষার্থীদের মনে স্বস্তির দেখা মেলেনি। সুদূর চীনের একটি ভাইরাস যে বাংলাদেশেও এত প্রকট আকারে আঘাত হানবে সবার কাছে তা অকল্পনীয় ছিল। হঠাৎ এই ভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে স্থগিত হলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। কোনো ব্যতিক্রম ঘটেনি পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়েও। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ রেখেছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষার্থীই নিজ নিজ বাড়িতে অবস্থান করে আসছেন।

বছরের শুরুতেই এমন একটা মহামারির সম্মুখীন হয়ে অনেকটা একঘেয়ে জীবন পার করছেন শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার পর যৌবনদীপ্ত তরুন-তরুনীরা পায় স্বাধীনতার স্বাদ, পায় বন্ধু নির্বাচনের একচেটিয়া অধিকার। সমমনাদের নিয়ে গঠিত হয় বন্ধুবৃত্ত। বন্ধুত্ব শব্দটায় গঠনগত জটিলতা যতখানি রয়েছে এর চেয়ে সম্পর্কটা আরও অনেক বেশি সহজ আর সুন্দর। বিশ্বাস, ভালোবাসা, স্নেহ এসব একসাথে নিয়ে গড়ে ওঠে বন্ধুত্ব। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে বন্ধুত্বটা কারো কাছে অনেক ভারী আর কারো কাছে ভরসার শব্দ। বন্ধু ছাড়া ক্যাম্পাস যেন মরুভূমি। প্রয়োজনে এরা অবতীর্ণ হয় মা, বাবা ভাইয়ের ভূমিকায়। ক্যাম্পাসের বন্ধুদের মধ্যে থাকে আত্মার অভিন্নতা। বন্ধু ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় জীবন কল্পনায়ও ভাবতেই পারে না অনেকে।

উচ্চশিক্ষার জন্য দেশের ভিন্ন-ভিন্ন জায়গা থেকে আসা, ভিন্ন মনমানসিকতা, ভিন্ন সংস্কৃতি আর ভিন্ন ভিন্ন ধর্মের মানুষ গুলো এক হয়ে যায় ক্যাম্পাসের বন্ধুত্বে। সম্ভবত এখানেই ক্যাম্পাসের বন্ধুত্বের সবচেয়ে বড় স্বার্থকতা। এই বন্ধুত্ব মানুষকে জাতি-ধর্ম-বর্ণের উর্দ্ধে উঠতে শেখায়, শেখায় সহিষ্ণুতা। ক্যাম্পাসে ক্লাস শেষে কিংবা অবসরে ক্যাম্পাসে আড্ডা দেওয়া একটুখানি মনে প্রশান্তি এনে দেয় সবার মাঝে। সারাদিনের পড়াশোনার পাশাপাশি বন্ধুদের নিয়ে আড্ডা জমে ওঠে ক্যাম্পাসের চায়ের দোকানগুলোতে। ক্যাম্পাসের এই বন্ধুগুলোর আড্ডা মিস করছেন সবাই। স্কুল-কলেজের বন্ধুদের গণ্ডি পেরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে বন্ধুত্বের দিনগুলো সব শিক্ষার্থীর কাছে অনেকটা রোমাঞ্চকর স্মৃতি বটে! তবে এ সুযোগটি পায়নি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া নবীন শিক্ষার্থীরা।

ঘুম থেকে ওঠেই ক্লাস, টিএসসিতেতে বন্ধুদের সাথে চা-আড্ডা আর লালবাসে বন্ধুরা মিলে গলা ফাটিয়ে বেসুরা গলায় গান এ সব কিছুই যেন কেমন অতীত স্মৃতি হয়ে গেল। ক্লাসের অসমাপ্ত লেকচার, টিউটোরিয়াল, এসাইনমেন্ট, বন্ধু ও প্রিয়জনকে দেয়া প্রতিশ্রুতি সবকিছুই স্থবির হয়ে গেল এক অদৃশ্য শক্তির ভয়াল থাবায়। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন পয়েন্ট যেমন শান্ত চত্বর, টিএসসি, বিজ্ঞান অনুষদ চত্বর, কলা অনুষদ চত্বর, কাঁঠালতলা, বিশ্ববিদ্যালয়ের মূলগেইটের বাহিরে, বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় গেইটের সামনে, বিশ্ববিদ্যালয় বাসের ভেতরে, ক্যান্টিনে, ভাষাশহীদ রফিক ভবনের সামনে, অবকাশ ভবনে, শহীদ মিনারের সামনে, বিভিন্ন একাডেমিক ভবনে ও বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীদের আড্ডা এবং খোশগল্পে ভরপুর থাকতো একসাথে দলবেঁধে বন্ধুদের আড্ডা হয়না। আড্ডা হচ্ছে ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের মিলনমেলা, আনন্দ আর উল্লাসের উৎস। বৃষ্টি হোক আর রোদ হোক থেমে থাকবে না বন্ধুদের ক্যাম্পাস আড্ডা। হিংসা আর বিদ্বেষ ভুলে গিয়ে আড্ডা গড়বে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন। আর এই বন্ধুত্ব-গল্প-আড্ডার চির ধরেছে করোনায়।

ক্যাম্পাস চলাকালে জন্মদিনের কেক কাটার জন্য বার্থডে চত্ত্বর, টিএসসি, শহীদ মিনার, সায়েন্স ফ্যাকাল্টির কোনায়, পোগোজ স্কুল মাঠে সিরিয়াল যেখানে ভীড় পড়ে যেতো করোনা সেই আনন্দটুকুও সবার কাছ থেকে কেড়ে নিয়েছে। প্রথম বর্ষের শুরু থেকে করোনায় ক্যাম্পাস বন্ধ হওয়ার আগে পর্যন্ত মনে অনেক স্মৃতি জড়িয়ে রয়েছে সবার। বন্ধুত্বের বন্ধন যে কতটা প্রকট করোনাকালীন সময়ে তা অনুভব করছে সবাই। দীর্ঘদিন দিন দেখা না হওয়ার কারণে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একে-অপরের খোঁজ-খবর নিচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। করোনার এই সময়ে বন্ধী জীবনে ডিপ্রেশন কাটানোর একমাত্র উত্তম সঙ্গী হিসেবে ছিলেন বন্ধুরা। খাতা-কলম নিয়ে ছুটে চলার যে কর্মব্যস্ততা তা যেন এখন শুধু কল্পনাতে রয়েছে। ছাত্র-ছাত্রীদের পদচারণায় আবার কবে ক্যাম্পাস মুখর হয়ে উঠবে, বন্ধুরা সবাই একসাথে মিলে আড্ডা দিতে পারবো। বাসায় বসে এখন এই অপেক্ষার প্রহর গুনতে হচ্ছে সবাইকে।

করোনার এই মহামারিতে চারদিকে যেমন নিস্তব্ধতা, মানুষের চোখে ঘন কালোর ছায়া আর শিক্ষার্থীদের সারাদিন ধরে ক্লাস, ল্যাব, এসাইনমেন্ট, অনুষ্ঠান নিয়ে ব্যস্ত থাকা ক্যাম্পাসগুলো এখন যেন প্রাণহীন, স্থবির। ফেসবুকের আলাদা জগতে এখন আড্ডা দেওয়া, বন্ধু বানানো খুব সহজতর প্রক্রিয়া হলেও তাতে মন ভরে কারো। তাই তো প্রতিদিন শুনা যায় ক্যাম্পাসে ফেরার সবার আকুতি, আর্তনাদ। প্রতিদিনই ফেসবুকের নিউজ ফিডে দেখা যায় অসংখ্য স্ট্যাটাস আর পোস্ট। তবে ফেসবুকে লাইভ প্রোগ্রাম করেও সময় কাটাচ্ছেন অনেকে। সবারই ক্যাম্পাসে ফেরার প্রত্যাশা।

সবাই অপেক্ষা করছে কবে এই মহামারী শেষ হবে, কবে আবার সবাই ক্যাম্পাসে দাপিয়ে বেড়াবে। এই ছুটিতে সবাই একে অপরের জন্য দোয়া কামনা করে, সবাই যেনো আবার একসাথে মিলিত হতে পারে সেই প্রত্যাশা সবার। বন্ধুরা মিলে প্রাণের টানে আবার ক্যাম্পাস প্রাঙ্গণে ফিরে যাবে। মুখরিত করে তুলবে প্রিয় ক্যাম্পাস। সেই দিনের অপেক্ষায়। কবে আসবে সেই দিন যেদিন শিক্ষার্থীদের আনাগোনায় প্রাণচঞ্চল হয়ে উঠবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়!

মেহেরাবুল ইসলাম সৌদিপ
শিক্ষার্থী ও ক্যাম্পাস সাংবাদিক
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।

এই সংবাদটি শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




raytahost-demo
© All rights reserved © 2019
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: Jp Host BD