ফাতেমা সাইফুল বীনু
একটানা সাতদিন সবুজের সাথে কোন কথাই বলেনি সুপ্তি।সবুজের মুখের দিকেও তাকায়নি।অভিমান জমে জমে ক্ষোভ সৃষ্টিহচ্ছে। দু’চোখ মরুভূমি।কিছুতেই স্বাভাবিক হতে পারছে না।
মাত্র আট বছর ওরা সংসার করছে।অভাব আছে সুখও আছে।কথা কাটাকাটি হয়, মিটেও যায়।কখনো অসম্মানের কথা মনেহয়নি।
দিন যায় রাত হয়। রাত যায় দিন আসে। কসংসার চলছে।এতটা কষ্ট সুপ্তি কখনও পায়নি।নিজের অপমানের চাইতে পরিবারেরঅসম্মান বেশী মনে হচ্ছে।ভাল লাগছেনা।যত সময় যাচ্ছে মন বেশী খারাপ হচ্ছে। কিছুতেই ভুলতে পারছেনা
সুপ্তি জানে,সংসারে এমন ভুল বুঝাবুঝি হতেই পারে।কিন্তু নিজের ভুলটা স্বীকার করবে না? বার বার পরিবারের সবার কথা মনেপড়ছে।নিজেকে খুব অসহায় লাগছে।
আর কখনও এমন অবস্থায় পড়েনি।সবুজ কখনো এমন মেজাজ করেনি।কখনো এত দীর্ঘ সময় কথা না বলে থাকেনি ওরা।
সবুজ সবসময় সুপ্তির হাসিখুসি স্বভাব পছন্দ করে।ও প্রায়ই বলতো,
-তুমি এত সোজা সাপটা কেন?
সুপ্তি হাসে।
-এত হাসি কোথায় পাও ?
-তুমিও হাস।
-তোমার মত পারব না।
-তাই?
-হুম।
সবুজের মুগ্ধ দৃষ্টিতে সুপ্তি আড়ষ্ট হোত।
সেদিন হঠাৎ করেই ক্ষেপে গেল।কিছু বুঝে ওঠার আগেই গরগর করে বলে গেল। সুপ্তি হতভম্ব।
এখন পর্যন্ত সবুজের দিক থেকে কোনরকম অনুতাপের কোন লক্ষন দেখেনি সুপ্তি।
সবুজ কিছুই বুঝতে পারছে না।এর শেষ কোথায়? তবেকি ওদের মধ্যে আর কোন ভালবাসা নেই?তাহলে কি ওদের ছাড়াছাড়ি হয়েযাবে?
সবুজ জানেনা কিভাবে মিলবে আবার?
সুপ্তি ভাবতেই পারে না দু’জন আলাদা হতে পারে।
সবুজ কি ভাবছে সুপ্তি জানেনা।সব ভুলে নিজে এগিয়ে যাবে সেটাও পারছে না।কিকরে সবুজ বলতে পারলো-
-তোমরা পুরো পরিবারটাই এমন।কিছুই সহজভাবে নিতে পারনা।
-কি?
-তোমরা বাঁকা পথে হাঁট।
-কি?
-সবকিছুর ভিতর রহস্য খুঁজ।
-আর তুমি?
-মানে?
-নিজেকে চিনতে পেরেছ ?
-তুমি আমাকে শাসন করতে চাইছো?
-না। রুচিতে বাঁধে।
-কি বললে?
-তোমার সাথে একটা কথাও বলতে চাইনা। তুমি আমার পরিবার নিয়ে কথা বলেছো।আমি আর কিচ্ছু শুনতে চাইনা।
ব্যস।সব চুপচাপ ।
সবুজও চুপচাপ। একটু যেন দিশেহারা।সময় পেরিয়ে যাচ্ছে।সবুজ বুঝেছে পরিবার তুলে কথা বলা ঠিক হয়নি।নিজের অপরাধস্বীকার করতে চায় কিন্তু নিজেকে ছোট করতে চায় না।
এক, দুই, তিন করে দিন পেরিয়ে যায়।
সারাদিন কাজকর্মে সময় কেটে যায়। সন্ধ্যায় থমথমে সবকিছু।
একটু আগে সবুজ ফিরেছে।কিছু না বলে আবার বেরিয়ে গেছে।
হঠাৎ টেলিফোন।
-ছাদে আসবে?
-কেন?
-এমনি।
টেলিফোন কেটে গেল।
সুপ্তি কি করবে? বুঝতে পারলো না। কখন যে পায়ে পায়ে ছাদে উঠে এসেছে নিজেও জানেনা।ছাদে ঢুকেই ধাক্কা খেল যেন।ফকফকা জোৎস্না। টবের গাছে ফুলগুলি হাসছে।সবুজ হাত বাড়ালো।তারপর হাতেহাত রেখে কতক্ষন ছাদে ছিল ওরা জানেনা।কোন কথা হোল না।শুধু জোৎস্নায় ডুবে থাকা।
Leave a Reply