স্বপন কুমার রায়, খুলনা ব্যুরো প্রধানঃ
কেরু,র ডিস্ট্রিলারীর অধীন সারা দেশে ১৩ টি পণ্যাগার আছে। আর এই পণ্যাগারের দায়িত্ব পাওয়া মানেই সোনার হরিণ পাওয়া। একজন পণ্যাগার এজেন্ট অর্থাৎ করণীক পদ মর্যাদার ব্যক্তিটি খুব অল্প সময়েই কোটি টাকার মালিক হওয়ার সৌভাগ্য অর্জনে সক্ষম হন। কেরু চিনিকলের অন্যান্য বিভাগে কর্মরতরাও অনেকেই এজেন্ট হওয়ার স্বপ্ন দেখে। আর এ স্বপ্ন পূরনের জন্য এক সময় গুনতে হতো লক্ষ লক্ষ টাকা, আর সে টাকা নিতেন কোন শ্রমিক নেতা কিংবা বড় কোন কর্মকর্তা।জনশ্রুতি আছে প্রায় ২ বছর আগে ৩/৪ জনের ভাগ্যে স্বপ্ন বাস্তবায়ন হয়েছিল তবে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে। তাদের সকলেই ছিল ইক্ষু বিভাগের কর্মচারী। অবশেষে ভাগ্যদেবতা তাদের সে স্বপ্ন ভঙ্গ করে দিয়ে সেই পুরানো কর্মস্থলে ফিরিয়ে এনেছে। কিন্তু তাদের দেয়া টাকা আজো ফেরৎ পায় নি। আজ ০৫/০১/২০২১। নতুন দুজন সহকারী এজেন্ট পদে অধিষ্ঠিত হলো। তবে কোন্ হাতের পরশে সোনার হরিণ তাদের ভাগ্য পরিবর্তনে সহায়ক হলো তা নিয়ে কেরু ক্যাম্পাস সরগরম। তবে কেউ কেউ মন্তব্য করতে গিয়ে বলেছেন সয়ং মন্ত্রী দেবতার আর্শীবাদে নাকি তাদের ভাগ্যের দুয়ারের দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। তবে এক্ষেত্রে কোন সেলামীর প্রয়োজন হয়েছে কি না সেটা জানা যায় নি। একজনকে সান্তাহার এবং অপর জনকে ঢাকা পণ্যাগারে সহকারী এজেন্ট হিসাবে পোষ্টিং দেয়া হয়েছে। একজন ছিল ইক্ষু উন্নয়ন বিভাগের পিয়ন আর অপর জন কেরু বানিজ্যিক খামারের ভারপ্রাপ্ত ইনচার্জ।
প্রশ্ন হলো ইতিপূর্বে যারা হয়েছিল তাদের অপরাধ কি ছিলো? তারা তো আর্থিকভাবে অনেক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। বিষয়টি জিওগ্রাফি চ্যানেলের বাঘের শিকার ধরার মতই অবস্থা। বাঘ শিকারের গলা কামড়ে ধরে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করছে আর এ সময়টিতে হায়েনার দল এসে শিকারের পশ্চাৎদিক থেকে অর্ধেকটা ভক্ষন করা সারা। বাঘ বেচারা যা পায় তাতে তার পেটে ক্ষুধা থেকেই যায়।পণ্যাগার এজেন্ট একটি লোভনীয় পদ। পদটি একজন করণীক পদ মর্যাদার হলেও তার যা উপার্জন তা প্রতিষ্ঠান প্রধানের বেতনের চাইতেও কয়েক গুন বেশি। যে কারনে ২০/৩০ বছর আগে যারা শ্রমিক নেতৃত্ব দিয়ে আসছিলেন তাদের সন্তান বা নিকটাত্নীয়দের কেউ না কেউ এই পদে রেখে গেছেন। এখনও সে ধারা অব্যাহত আছে। এছাড়া কেরু সিবিএ নির্বাচনে নেতাদের যে ব্যয় হয় অন্য কোন চিনিকলে সিবিএ নির্বাচনে তার চার ভাগের এক ভাগও হয় না। কেরু সিবিএ নির্বাচনে যে অর্থ ব্যয় হয় তার সিংহভাগ যোগান আসে এসব পণ্যাগার থেকে। সিবিএ নেতাদের সংগঠন চালানোর ব্যয় বহন মূলত তারাই করে থাকে। এভাবেই চলে আসছে যুগ যুগ ধরে।কিভাবে এই অবৈধ অর্থ উপার্জন? কেরু ডিষ্ট্রিলারী থেকে র’ এ্যালকোহল ড্রামে ভরে কেরুর নিজস্ব পরিবহনে পণ্যাগার গুলিতে পাঠানো হয়। আর এসব পণ্যাগারে বিশেষভাবে নির্মিত মূল্যবান কাঠ দিয়ে তৈরী বিশাল বিশাল ভ্যাট থাকে। ড্রামের র’ এ্যালকোহল সেই ভ্যাটে ঢেলে সেখানে নিদৃষ্ট পরিমান পানি মিশিয়ে খাওয়ার উপযোগী করে লাইসেন্সধারীদের কাছে বিক্রয় করা হয়। এক্ষেত্রে পানির পরিমান বেশি মিশিয়ে ডায়লেশন করা হয় আর অতিরিক্ত মেশানো পানি মদের দামেই বিক্রি হয় সেটাই এজেন্টদের অবৈধ আয়। তাদের সম্পদের কোন হিসাব অদ্যাবধি কোন সংস্থা নেয়নি। তাদের চলাফেরা রাজকীয়। অনেকে ঢাকায় জমি বা ফ্লাটের মালিক বা চাকরির পাশাপাশি কারও কারও ব্যবসাও আছে, কেউবা তাদের সন্তানদের প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াচ্ছে। বিত্য বৈভবে তাদের জীবন চলে। এ তো গেল এজেন্টদের কাহিনী। সহকারী এজেন্ট রা সাধারণত কর্মস্থলে থাকে না, নিজ বাড়ি বা ব্যক্তিগত কাজেই তাদের দিন কাটলেও প্রতি মাসে একটা মোটা অংকের ভাগ এজেন্টরা তাদের কাছে পাঠিয়ে দেয়। মদ ভ্যাটে ডায়লেশনের জন্য আছে ওয়ার্কার। এদেরকেউ বাড়তি টাকা দিয়ে খুশি রাখতে হয়।
দুর্ণীতি দমন বিভাগ এসব এজেন্টদের অবৈধ আয়ের কোন তথ্য জানে বলে মনে হয় না। যে কারনে তাদের প্রকৃত সম্পদের খোঁজ তারা রাখে না বা অদ্যাবধি শোনা যায় নি কোন এজেন্টকে দুর্ণীতি দমন বিভাগের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়েছে কখনও।
Leave a Reply