বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:৫৭ পূর্বাহ্ন

শিরোনাম :
কসবায় সবুজ সংঘের শিক্ষাবৃত্তি ও মানবিক সহায়তা প্রদান বাংলাদেশের জনগণ কারও দাদাগিরি একদম পছন্দ করে না: গোলাম পরওয়ার ভারতের গণমাধ্যমগুলো যে ভূমিকা নিয়েছে তা দুদেশের মধ্যে স্বাভাবিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠায় সহায়ক নয় -পররাষ্ট্র উপদেষ্টা কসবা প্রেসক্লাব কার্যালয়ের জানালার গ্রীল ভেঙে দিয়েছে দুবৃত্তরা, প্রকৃত রহস্য উদঘাটনের দাবি সাংবাদিকদের ইমাম প্রি-ক্যাডেট স্কুলের ১৪০ শিক্ষার্থীর পবিত্র কুরআন সবক গ্রহণ কসবায় জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আহত ও শহিদদের স্মরণে স্মরণসভা খালেদা জিয়াকে আনতে পেরে আমরা গর্বিত-ড. ইউনূস আজ আল্লামা গোলাম সারোয়ার সাঈদী (র) এর ৫ম ওফাত দিবস কসবায় ১০ হাজার ৬শ ৫০জন প্রান্তিক কৃষকের মাঝে বীজ ও সার বিতরণ শিশু মুনতাহার মরদেহ মিলল পুকুরে
প্রকৃতির মানুষ তথা প্রকৃত মানুষ

প্রকৃতির মানুষ তথা প্রকৃত মানুষ

মোহাম্মদ ইকবাল হোসাইন

সৌরজগতের আবিস্কৃত গ্রহগুলোর মধ্যে এখনো পর্যন্ত পৃথিবী নামক গ্রহে জীবের অস্তিত্ব পাওয়া গিয়েছে। বিজ্ঞানীদের মতে পৃথিবী নামক গ্রহের সৃষ্ঠি আজ থেকে প্রায় ৪.৫৪+ ০.০৫ বিলিয়ন বছর, উক্ত গ্রহে প্রানের উদ্ভব প্রায় ৩.৫৫ বিলিয়ন বছর এবং মানুষ নামক প্রানীর সঞ্চার মাত্র আজ থেকে মাত্র ২,০০০০০ বছর আগে। যাকে বিজ্ঞানীরা আধুনিক মানুষ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। পৃথিবীতে জানা অজানা, আবিস্কৃত-অনাবিষ্কৃত, গনিত-অগনিত, নামধারী-বেনামধারী, পরিচিত-অপরিচিত, শান্ত-হিংস্র, বন্য-পোষ্য, উপকারী-অপকারী, জলে স্থলে আকাশে বিদ্যমান বিচিত্র লক্ষকোটি জীবের মধ্যে একমাত্র জীব মানুষকে করা হয়েছে শ্রেষ্ঠ গুনাবলী সম্পন্ন, বোধশক্তি সম্পন্ন, চেতনাশক্তি সম্পন্ন,আবেগ অনুভুতিকে ভাষায় প্রকাশ করতে সক্ষম জীব যাকে ইসলামের ভাষায় বলা হয়ে থাকে আশরাফুল মাখলুকাত।

আরবীতে ইনসান, ইংরেজিতে human, ফ্রান্স ভাষায় humaine, গ্রীক ভাষায় ανθρώπινη জার্মান ভাষায় menschlichen এবং বাংলা ভাষায় মানুষ। পৃথিবীতে মানুষ নিয়ে গবেষনা করছে নানা বিজ্ঞান তন্মধ্যে সাধারন বিজ্ঞান, ধর্মতত্ব (theolog), সমাজবিজ্ঞান (sociolog), জনসংখাতত্ব (demographic), মনোবিজ্ঞান (psychology), নরবিজ্ঞান(anthropology), সহ বিজ্ঞানের আরো অনেক অনেক শাখা রয়েছে। মানুষকে সর্বত্র সকল ভাষায়, সকল ধর্মে, সকল তত্বে এক নামে পরিচিত করার সুবিধার্থে তাকে বৈজ্ঞানিক নামকরন করা হয়েছে Homo sepiens নামে। সুইডিস বিজ্ঞানী কেরোলাসলিনিয়াসমানুষ (human being) কে animalia রাজ্য, chordata বর্গ, mamalia শ্রেনী, primates ক্রম, hominidac পরিবারে অন্তর্ভুক্ত করে homo জাত এবং sepiens প্রজাতি হিসেবে নামকরন করেছেন।

মানুষকে এমনকিছু মনুষ্য গুনাবলী দ্বারা আবৃত করে রাখা হয়েছে যে গুনাবলী বা শর্তাবলী পশুপ্রানী থেকে মানুষকে স্বতন্ত্রভাবে প্রমান করবে যে সে মানুষ, প্রকাশ করবে মানুষের অস্তিত্ব । এমন কতগুলি বৈশিষ্ট মানুষ ধারন করবে যা উত্তরাধিকারীসুত্রে এক মানুষ থেকে অন্য মানুষ বহন করবে এবং লিঙ্গ, বর্ণ, ধর্ম, সংস্কৃতি, দ্বারা কোনপ্রকার পরিবর্তন হবে না। মানুষ আকাঙ্খা পোষন করবে এবং তা পূরনের চেষ্টা করবে। মানুষের মানসিক বৃদ্ধি ঘটবে, চেতনা থাকবে, বিচারজ্ঞান থাকবে, চিন্তাক্ষমতাসম্পন্ন হবে এবং তার মনের আবেগ অনুভুতিকে বোধগম্য করতে সুস্পষ্ট ভাষায় প্রকাশ করতে সক্ষম হবে। এই হলো পশুপ্রানি থেকে মানুষের কিছু মৌলিক পার্থক্য। মানুষ জন্মের পর থেকে সে তার একটি পরিচিতি পায়, তার একটি নাম থাকে, একজন বাবা থাকে, একজন মা থাকেন। সমাজে শিশুটি বেড়ে উঠার মাধ্যমে কিছু শিক্ষা গ্রহন করে থাকে। সমাজবদ্ধজীব হিসেবে মানুষের বৈশিষ্টগুলো ধারন করতে থাকে। যদি সে জঙ্গলে বেড়ে উঠে সে পশুপাখির ন্যায় চালচলন করতে শিখে যাকে আমরা টারজান বলে জানি।

সমাজের অভাবে টারজান তার মানসিক বৈশিষ্টাবলী থেকে বঞ্চিত হয়, বায়োলজিক্যালি মানুষ হয়ে ও প্রকৃত মানুষ হতে ব্যার্থ হয়। সমাজে যারা বড় হয়ে থাকে তারা এক পর্যায়ে কেউ লেখাপড়া শিখার জন্য নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়ে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা লাভ করে থাকে, নিজেকে প্রকৃত মানুষে রূপান্তরিত করার চেষ্ঠা করে থাকে। কেউবা কোনপ্রকার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছাড়াই বড়মাপের মানুষ হয়ে পৃথিবীতে সুনামধন্য হয়ে থাকেন, জগতে কীর্তিমান হয়ে মৃত্যুবরন করে থাকেন। তবে আমরা ধরেই নেই যে প্রকৃত মানুষ হিসেবে নিজেকে গড়ে তোলতে হলে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার প্রয়োজন। পারিবারিক এবং প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার মাধ্যমে নিজেকে আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ার ভিত্তি স্থাপন করে থাকি। পাশাপাশি মনকে গড়ে তুলতে নানাভাবে নানারুপে আশ্রয় নিয়ে থাকি ভিন্ন ভিন্ন বিষয়ের উপর। নিজেকে জড়িয়ে নেই নানা ধর্মের উপর, কেউ ধ্যান-জ্ঞান, কেউ বাদ্য-বাজনা, কেউ সাধু কেউ গায়ক কেউ বাউল কেউবা সন্নাসি হয়ে মনের প্রশান্তি আনয়নের চেষ্ঠা করে কাটিয়ে দেই সারাটি জীবন। শিক্ষা হলো, প্রশান্তি মিললো এখন দরকার তার বিস্তৃতি। নিজেকে বিস্তৃত করতে নানামুখি কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করে থাকি। ব্যতিক্রমধর্মী হিসেবে গড়ে তুলার জন্য নিজেকে সাধারন থেকে অসাধারন হওয়ার প্রয়াসে লিপ্ত হই।

কবি, সাহিত্যিক, দার্শনিক, শিল্পী, গীতিকার-নাট্যকার, কিংবা নিজেকে কোন বিষয়ে পারদর্শী করতে বিদ হওয়ার প্রানান্ত চেষ্ঠা করে আত্মপ্রকাশ করি অর্থনীতিবিদ, নৃতত্ববিদ, গণিতবিদ, প্রকৃতিবিদ, সমাজবিদ কিংবা রাজনীতিবিদ হয়ে স্বতন্ত্রভাবে প্রকাশ করার চেষ্ঠা করে থাকি। নিজেকে ব্যতিক্রমধর্মী করে গড়ে তুলার মূল উদ্দেশ্য নিজেকে অমর করে তুলা, নিজেকে কর্মের মাধ্যমে অন্যের মাঝে বাঁচিয়ে রাখা। নিজেকে নিজের গন্ডী থেকে বের করে সীমা ছাড়িয়ে অসীম করে রাখার প্রত্যয়। সুনাম, যশ, খ্যাতির গন্তব্য পাওয়া গেলেও আজও সুখের সীমা নির্ধারন করতে ব্যার্থ হয়েছি আমরা। নিজেকে সুখি করতে হবে। কিন্তু কতটুকু সুখী করতে হবে তা কেউ জানে না। সুখের সংজ্ঞা নির্ধারন করতে পারছি না কেউ। আমরা প্রত্যেকে প্রত্যেকের মতো করে সুখকে সঙ্ঘায়িত করে যাচ্ছি। নিজের অবস্থানকে প্রতিষ্ঠিত করতে মরিয়া উঠছি আমরা। জগতের মোহে এতোটাই অন্ধ হয়ে আছি যে অন্ধত্ব আমাকে আমার কৌলিক পরিচয় থেকে বিচ্ছিন্ন করে এক মানুষ থেকে অন্য মানুষে রুপান্তরিত করে ফেলছে। জীববিজ্ঞানের ভাষায় হাত পা, নাক, মুখ, নাক, কান, গলা, উদর সহ একটি সোজা খাড়া শারিরিক গঠন সম্পন্ন প্রানির চিন্তাশক্তি, বাকশক্তি, বোধশক্তি থাকলেই মানুষ homo sepiens. তাহলে আমরা কী শুধুই মানুষ নাকি প্রকৃতপক্ষে মানুষ তা যাচাই করা একান্ত প্রয়োজন। প্রয়োজন কিছু বিষয়ের সার্বজনীন সংজ্ঞা।

সুন্দর-অসুন্দর, সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা, ভালো-মন্দ, চাহিদা-অভাব, প্রাপ্তি-ঘাটতি, এসমস্ত গুনবাচক শব্দগুলোর নিরপেক্ষ ব্যাখ্যা দরকার, দরকার নিরপেক্ষ সংজ্ঞা। আমার কাছে যা অসুন্দর, দুঃখ, বেদনা, ঘাটতি, চাহিদা, তা অন্যের কাছে হতে পারে সুন্দর, সুখ, আনন্দ, প্রাপ্তি। পরিবেশ পরিস্থিতি সময়ের সাথে সাথে বিষয়গুলো রূপ বদলায়। আজ ফিলিস্থিনির কাছে যা বেদনা ইসরাইলের কাছে তা আনন্দ।।
মধ্যপ্রাচ্যের জন্য যা প্রাপ্তি এশিয়ার কাছে তা ঘাটতি। খুনির কাছে খুন যেমন তার উপার্জন তেমনি খুন হওয়া পরিবারের জন্য তা অপূরনীয় ক্ষতি। পিশাচের কাছে ধর্ষণ আনন্দের হলেও ধর্ষিতার জন্য তা সতিত্ব হারানোর আর্তনাদ। বিবেচ্য বিষয় বস্তু মনের এবং পরিবেশের অবস্থা। প্রকৃতপক্ষে সুখ, আনন্দ, ঘাটতি, চাহিদা, প্রাপ্তি, বেদনা, লাভ-ক্ষতিকে সার্বজনীন সংজ্ঞায়িত করতে গেলে প্রথমেই বিবেচনায় রাখা দরকার স্বার্থ ও উদ্দেশ্য। অন্যের সার্থে কোনপ্রকার বিচ্যুতি না ঘটিয়ে কোন প্রকার অসৎ অভিপ্রায় পোষন না করে সুখ-শান্তি-সমৃদ্ধি ঘটাতে পারলেই তবে তা হতে পারে সার্বজনীন। আজ প্রকৃত মানুষের বড়ই অভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। পৃথিবি এগিয়ে চলছে, দুরত্ব কমিয়ে ছোট করে হাতের মুঠোয় নিয়ে আসা হচ্ছে গোটা গ্রহকে, শারিরিক শ্রম কমিয়ে সহজসাধ্য করা হচ্ছে সকলপ্রকার কার্যক্রমকে, ক্যামেরা বন্দি করে ক্লোজ সার্কিটের আওতায় নিয়ে আসা হচ্ছে পুরো বিশ্বকে, ভারীকে করা হচ্ছে হালকা, দূরবর্তীকে করা হয়েছে নিকটস্থ, চোখের ইশারায় নিয়ন্ত্রিত করা হচ্ছে গোটা দুনিয়াকে। বারুদের স্থলে জীবাণু, ক্যাবলের স্থলে ব্যবহৃত হচ্ছে তরঙ্গ। কিন্তু পৃথিবী প্রকৃতপক্ষে কি পাচ্ছে, আমি তুমি আমরা কি পাচ্ছি? ঘৃণা, পাপ, অভিশাপ আর রক্তের হুলি খেলায় বলী হচ্ছি আমরা সবাই। প্রাতিষ্ঠানিক, পারিবারিক শিক্ষা কি আমাদেরকে এই শিখিয়ে আসছে যুগ থেকে যুগান্তর শতাব্দি থেকে শতাব্দি অব্দি? সকল আধুনিকতা, সকল সভ্যতার আশির্বাদে আমরা নিজেদের মৌলিক মুল্যবোধ থেকে ছিটকে ফেলে মানুষ থেকে পশুতে রুপান্তরিত করে ফেলছি মনের অজান্তে। পৃথিবীতে প্রায় চারহাজার দুইশত ধর্মের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। ভাষা রয়েছে প্রায় সাড়ে ছয় হাজারের ও উপর। সকল ধর্মের একই মন্ত্র, একই বাণী।

সদা সত্য কথা বলিবে, জীব হত্যা মহাপাপ, গুরুজনে শ্রদ্ধা করো, এতিমে দয়া করো, পাপকর্ম থেকে বিরত থাকো সকল ধর্মেই প্রচলিত। একইভাবে সকল ভাষারও রয়েছে একই উদ্দেশ্য- সঠিক যোগাযোগ, মনের ভাব অনুভুতি আবেগ প্রকাশ করাই হচ্ছে ভাষার মূল কাজ। দেশ জাতি ধর্ম বর্ন সংস্কৃতি অনুযায়ী শব্দের উৎপত্তির তারতম্য রয়েছে বটে। বাংলা ভাষায় ঢেঁকি শব্দের প্রচলন থাকলেও ফরাসি ভাষায় এর প্রচলন পরিলক্ষিত হয় না। তবে সুন্দর, ভালো, নীতিকর, গর্হিত, ন্যায়-অন্যায়, সত্য-মিথ্যা, পাপ-পূন্য শব্দগুলোর পরিশব্দ সকল ভাষাতেই পাওয়া যাবে। সকল ভাষাভাষী জনগোস্টিই এই জাতীয় শব্দগুলোর ব্যবহার করে থাকে। যদি সকল ধর্মে, সকল বর্নে, সকল ভাষার মাঝে এই বিষয়সমূহের অস্তিত্ব বিদ্যমান থাকে তবে কেন আমাদের মাঝে মানুষে মানুষে এত ভেদাভেদ, প্রকৃত ভালো মানুষ হতে কিসে এতো বাধা, কেন এত সংকট। সকল সমাজ, সকল রাষ্ট্র, সকল ধর্ম, বর্ন, গোত্র, সকল গ্রন্থ, সকল বিধান-সংবিধানে, সকল স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়, গবেষনাগার, সকল মন্দির, মসজিদ, গির্জা, প্যাগোডার উদ্দেশ্য যদি একই হয়ে থাকে নিজেকে, অন্যকে, পরস্পরকে প্রকৃত ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা, তবে কেনো আমরা এতো বর্বর, কেন এতো পৈশাচিক, কেনো এতো নির্মম-নিষ্ঠুর, কেন এতো হিংশ্র-নৃশংস-রক্তপিপাসু।

আমরা নিজেদেরকে কেন এতো নির্দয়, অসভ্য, অসংস্কৃত, পাপাচারি, দূষিত, কলুষিত করে ফেলি, কেন হয়ে যাই এতো পাশবিক-ক্রুর। কেন পারি না মানুষ থেকে প্রকৃত ভালো মানুষ হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে। পৃথিবীতে বিদ্যমান প্রায় সকল কিছুকেই পরিমাপের জন্য আবিস্কার করা হয়েছে নানা মাপক বা মানদন্ড। যা দিয়ে খুব সহজেই আমরা দৈনন্দিন জীবনে প্রায় সকল কিছুর মাত্রা বা দক্ষতা পরিমাপ করে থাকি। পরীক্ষা পদ্ধতির মাধ্যমে আমরা শিক্ষা অর্জনের পর পাশ-ফেল নির্ধারণ করে থাকি তেমনি দরিদ্রসীমা দিয়ে ধনী-গরীব, জিডিপি দিয়ে জীবনযাত্রার মান, ব্রেথালাইজার দিয়ে অ্যালকোহল আসক্তি, অয়েট স্কেল দিয়ে শরীরের ওজন, থার্মোমিটার দিয়ে তাপমাত্রা, স্টেথোস্কোপ দিয়ে হৃদস্পন্দন কিংবা স্ফিংগমোম্যানোমিটার দিয়ে যদি ব্লাড প্রেসার মাপার ব্যবস্থা থাকে তবে সমাজে ভালো মানুষ যাচাইয়ের জন্য আমরা কি মিটার আবিস্কার করেছি। কি দিয়ে পরিমাপ করবো আমরা কতটুকু প্রকৃত ভালো মানুষ। একগুচ্ছ দোষ-গুন, দৃষ্টিভঙ্গি, চালচলন, বাচন-ভঙ্গি আর আচার-আচরণকে সূচক ধরে আপাতদৃষ্টিতে অতি সাধারণ ভাষায় আপেক্ষিকভাবে বিচার করে থাকি।

তাই সর্বাগ্রে প্রাধান্য দিয়ে জাতি ধর্ম বর্ন গোত্র রাষ্ট্র সরকার দেশ মহাদেশ কৃষ্ণাঙ্গ-স্বেতাঙ্গ সকল ভেদাভেদ ভুলে নতুন এক অস্তিত্বের সার্বজনীন রুপে রুপায়িত করে নিজেকে গড়ে তুলতে হবে একজন ভালো মানুষ হিসেবে। নিজেকে প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে হলে কিছু বিষয় আমাদের প্রতিনিয়ত চর্চার প্রয়োজন, প্রয়োজন কিছু গুনাবলী অর্জনের।

সবসময় পজিটিব ভাবুন- নেতিবাচক চিন্তাগুলো মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে সর্বদা ইতিবাচক ভাবনা ভাবুন। অসম্ভব বলতে কিছু নেই, চেষ্টা করলে সকল কিছু করা সম্ভব, দরকার শুধু আপনার ইচ্ছা শক্তি, উদ্যম আর পরিকল্পনা।

নিজের নেতিবাচক বৈশিষ্ঠগুলো বিবেচনায় রেখে কাজ করুন। প্রথমত নিজের দূর্বল দিকসমুহ যেমন আত্মকেন্দ্রিক মনোভাব, স্বার্থপরতা, শুদ্ধতা, জটিলতা, রুক্ষতা, রুঢ়তা, কুমন্ত্রনা, চিহ্নিত করুন এবং ধীরে ধীরে একটি একটি করে পরিহার করুন। একদিন আপনিও হয়ে যাবেন একজন শুদ্ধ সাচা খাটি মানুষ। ভালো গুনাবলী সম্পন্ন একজন আদর্শ ব্যাক্তিকে চিহ্নিত করুন, অনুসরন করতে থাকুন। তা হতে পারেন আমাদের প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ), নিজের মনের ভিতরে এমন একজন আদর্শ ব্যাক্তির ছবি একে ফেলুন, ধরে নিন তিনি আপনার আদর্শ, এবার আপনি তাকে অনুসরন করতে থাকুন।

বেশী করে হাসুন, নিজের মনকে সবসময় প্রফুল্ল রাখার চেষ্ঠা করুন, হাসি মুখে কথা বলুন-হতে পারে সহকর্মী হতে পারে অপরচিত, হতে পারে রাস্তায় দেখা কোন আগন্তুক।

নিজেকে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে গড়ে তুলুন। প্রতিদিন স্বপ্রনোদিত হয়ে কমপক্ষে কিছুটা সময় স্বেচ্ছায় অন্যেও কাজে লাগান।একদিন উপভোগ করবেন স্বেচছাশ্রমের আনন্দ কতো মধুর। দাতা হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলুন। কি দান করলেন তা বড় বিষয় নয়। খাদ্য, বস্ত্র, অর্থ কিছুই সম্ভব না হলে কিছুটা ভালো সময় হলেও দান করুন যা অন্যকে কোন না কোন ভাবে সাহায্য করতে পারে। অন্যের জন্য কি করলেন তা নিয়ে ভাবুন।

লেখকঃ মোহাম্মদ ইকবাল হোসাইন
অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার, ডিএমপি, ঢাকা।

এই সংবাদটি শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




raytahost-demo
© All rights reserved © 2019
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: Jp Host BD