শনিবার, ২৭ Jul ২০২৪, ১১:৫২ পূর্বাহ্ন

শিরোনাম :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ (কসবা-আখাউড়া) আসনে আইন মন্ত্রী আনিসুল হক বে-সরকারি ভাবে নির্বাচিত কসবায় ভোট দিয়ে বাড়ি ফেরার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ১ আহত-৪ কসবায় এলজিইডি’র শ্রেষ্ঠ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান আগরতলায় স্রোত আয়োজিত লোকসংস্কৃতি উৎসব কসবা প্রেসক্লাব সভাপতি’র উপর হামলার প্রতিবাদে মানবন্ধন ও প্রতিবাদ সভা কসবায় চকচন্দ্রপুর হাফেজিয়া মাদ্রাসার বার্ষিক ফলাফল ঘোষণা, পুরস্কার বিতরণ ও ছবক প্রদান শ্রী অরবিন্দ কলেজের প্রথম নবীনবরণ অনুষ্ঠান আজ বছরের দীর্ঘতম রাত, আকাশে থাকবে চাঁদ বিএনপি-জামাত বিদেশীদের সাথে আঁতাত করেছে-কসবায় আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ১৩ দিনের জন্য ভোটের মাঠে নামছে সশস্ত্র বাহিনী
বটগোহালী বা গোয়ালভিটা, বদলগাছী, নওগাঁ

বটগোহালী বা গোয়ালভিটা, বদলগাছী, নওগাঁ

ড. মোহাম্মদ শামসুল আলম।।

ঐতিহাসিক সোমপুর মহাবিহার থেকে আনুমানিক তিন কিলোমিটার পশ্চিম-উত্তর দিকে অবস্থিত প্রাচীন একটি গ্রামের নাম বটগোহালী। যা আধুনিককালে গোয়ালভিটা নামে পরিচিত। এই বটগোহালী বা গোয়ালভিটায় ছিল একটি জৈনবিহার। এটির আকৃতিপ্রকৃতি ও ভূমিনকশা কেমন ছিল সে বিষয় আজও সম্পূর্ণ তথ্য অনুদ্ঘাটিত। অষ্টম ও নবম শতকে বাংলাদেশে বৌদ্ধধর্ম মহাযান ধর্মে নতুনভাবে তান্ত্রিকতা লাভ করে। ফলে বৌদ্ধদের মধ্যে তখন বিরাজমান হীনযান ধর্মপদ্ধতি লুপ্ত হয়ে নতুন তান্ত্রিক ধ্যানধারণার দিকে ধাবিত হয়। ফলশ্রুতিতে এদেশে ধর্ম, সমাজ, রাজনীতি ও শিল্পকলার ক্ষেত্রে সূচিত হয় যুগসন্ধিক্ষণ। তখন জনমানসের মধ্যে তন্ত্রমন্ত্র ও দুর্বোধ্য দর্শনের প্রাধান্য ছিল। পাক-ভারতের পূর্বাঞ্চলে বৌদ্ধধর্মের এমন রূপান্তর অষ্টম-নবম শতকে ছিল ক্রিয়াশীল। এ ধরনের সংস্কার ও সংস্কৃতির প্রবাহ বাংলাদেশেও প্রবেশ করে। ফলে উত্তরবঙ্গ তথা বটগোহালী বা গোয়ালভিটায় এ সময় জৈনধর্ম গুরুত্ব লাভ করে। এমন কথার প্রমাণ মেলে পাহাড়পুরে প্রাপ্ত মহারাজা বুধগুপ্তের রাজত্বকালে গুপ্তাব্দ ১৫৯ বা ৪৭৯ খ্রিষ্টাব্দের একটি তাম্রশাসনের মধ্য দিয়ে। এ বিষয়ে প্রত্নবিষারদ এ. কে. এম. শামসুল আলম বলেন, গুপ্ত আমলে এ অঞ্চল জৈন সম্প্রদায়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এক স্থান হিসেবে বিখ্যাত ছিল। এ সময়ে জৈন সভ্যতা যে বিশেষ আবেদন নিয়ে ক্রিয়াশীল ছিল তার প্রমাণও উপস্থাপিত হয়। আরও প্রমাণ উপস্থাপিত হয় প্রত্নতাত্ত্বিক খননে আবিষ্কৃত পাহাড়পুরে প্রাপ্ত তাম্রলিপির মধ্য দিয়ে। এই লিপির মাধ্যমে জানা যায় জনৈক ব্রাহ্মণ নাথ শ্রমণ ও তাঁর স্ত্রী রামী কর্তৃক বটগোহালীতে অবস্থিত জৈনবিহারের ‘অইত’ (Artat)-এর পূজা ও একটি বিশ্রামাগারের জন্য একখণ্ড ভূমি ক্রয় করে তা দান করেন। ড. সুকুমার সেন জানান, ব্রাহ্মণ নাথশর্মা ও তাঁর স্ত্রী রামী, স্বগ্রাম বটগোহালীতে অবস্থিত জৈনবিহারে ভগবান অর্হৎদের উদ্দেশে গন্ধ-ধূপ-পুষ্প-দীপ ইত্যাদি পূজাপ্রচার ও ‘তলবাট’ (অর্থাৎ তৈলবট, বা দক্ষিণা) নিমিত্ত দেড় বিঘা (কুল্যবাপ) ভূমি দান করেছিলেন। মোটকথা বিহারে অর্হৎদেব-এর নিত্যপূজা, ফুল, চন্দন ও ধূপ ব্যয় নির্বাহের জন্য ছিল উল্লিখিত ভূমিদান। এই বিহারে জৈন গুরু হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন গুহনন্দী। তাঁর ছিল যেমন অসংখ্য অনুসারী ও ভক্ত, তেমনি ছিল অসংখ্য শিষ্য ও ভক্ত। বটগোহালীতে অবস্থিত এই জৈন বিহারটি গুরুত্বপূর্ণ এক প্রতিষ্ঠান হিসেবে তৎকালে ছিল প্রসিদ্ধ।

গোয়ালভিটায় পঞ্চম শতকের দিকে একটি জৈনবিহার ছিল এমন কথার প্রমাণ মেলে। নীহাররঞ্জন রায় বলেন, খ্রিষ্টপূর্ব চতুর্থ-তৃতীয় শতকে পুণ্ড্রবর্ধন বা উত্তরবঙ্গে জৈনধর্মের যথেষ্ট প্রসার ঘটেছিল। বৌদ্ধদের চেয়ে জৈনরা যে বাংলাদেশ সম্বন্ধে বেশি খবরাখবর রাখতেন তা জৈন ভগবতী সূত্রের সাক্ষ্যে প্রমাণিত। এ বিষয়ে আবুল কালাম মোহাম্মদ যাকারিয়া বলেন, খুব সম্ভব পাহাড়পুর তাম্রলিপিতে উল্লিখিত জৈন বিহারটি বর্তমান গোয়ালভিটাতেই ছিল। এছাড়াও গোয়ালভিটার আশপাশ যে সমৃদ্ধ একটি নগরী বা জনপদ ছিল সে কথাও জানিয়েছেন প্রত্নগবেষক এ. কে. এম. শামসুল আলম। কারণ হিসেবে উল্লেখ্য যে, এই গ্রামের প্রায় সর্বত্র মাটির নিচে ঢাকাপড়া প্রাচীন ইমারতের ধ্বংস বিশেষ ও বহু পুরাতন ইট প্রমাণ স্বরূপ গৃহীত হয়। এমন কথার সমর্থনও জানান কানিংহাম। তিনি বলেন পাহাড়পুর মন্দিরের অদূরে ছিল বটগোহলী। গুপ্ত সাম্রাজ্যের পতনের পর ষষ্ঠ শতাব্দীর শেষ পর্বে শশাঙ্ক কর্তৃক একটি শক্তিশালী হিন্দু সাম্রাজ্য স্থাপিত হয়। গুপ্ত আমলে বাংলায় বিশেষ করে বরেন্দ্র অঞ্চলের রাষ্ট্রীয়, সামাজিক, ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক জীবনে রচিত হয়েছিল এক উজ্জ্বল অধ্যায়। ষষ্ঠ শতাব্দীর প্রথমভাগ থেকে গুপ্ত সাম্রাজ্যের ক্রমাবসানে বরেন্দ্র অঞ্চলে নেমে আসে অস্থিরতা ও স্থবিরতা। শশাঙ্ক ছিলেন শৈবধর্মাবলম্বী মতবাদে বিশ্বাসী একজন মানুষ। হিউয়েন সাং বৌদ্ধবিদ্বেষ ও বৌদ্ধদের উপর অত্যাচারের নানা গল্প লিপিবদ্ধ করেছেন। শৈব ধর্মাবলম্বী শশাঙ্ক স্বভাবতই শৈবধর্মের পৃষ্ঠপোষকতা দিতেন। ফলে বৌদ্ধধর্মের প্রসার কিছুটা রোধ হয়। শশাঙ্ক ক্ষমতা গ্রহণের পর গৌড়রাজ্য অধিকারে নেন। এর পর বাংলার উত্তর ও উত্তর পশ্চিমাংশ অধিকার করে গুপ্ত শাসনের অবসান ঘটিয়ে তিনি রাজ্যসীমানা বিস্তার করেন। ফলশ্রুতিতে ব্রাহ্মণ্য ধর্মের সমৃদ্ধি ঘটে। এ সময় ধর্মভিত্তিক শিল্প ও ভাস্কর্যের প্রসার ঘটে। স্মর্তব্য যে, পাহাড়পুর কেন্দ্রীয় মন্দিরের দেয়াল গাত্রে প্রযুক্ত গুপ্ত ভাস্কর্যের অনুকরণে পাথরে নির্মিত হিন্দু দেবদেবীর মূর্তিসমূহ শশাঙ্কের শাসনামলে নির্মিত হয়। পরবর্তীকালে এসব মূর্তি বৌদ্ধমন্দির গাত্রে স্থাপন হয়েছে এমনটি মনে করা হয়। যার নিদর্শন পাহাড়পুর মহাবিহারের ধ্বংসাবশেষ স্থাপত্যে আজও বিরাজমান।
শশাঙ্কের মৃত্যু হয় ৬৩৭ খ্রিষ্টাব্দের পূর্বে। মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তিনি নিজরাজ্যে ছিলেন অধিষ্ঠিত। তবে তাঁর রাজত্বের অবসানের পর প্রায় শতাধিককাল ব্যাপী বরেন্দ্র অঞ্চল তথা বটগোহালীতে জৈনধর্মের গুরুত্ব অক্ষুন্ন ছিল এমনটি মনে করা হয়। সম্ভবত এ কারণে দ্বিতীয় পাল সম্রাট ধর্মপাল এ অঞ্চলে বৌদ্ধবিহার স্থাপনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন এবং বটগোহালী সংলগ্ন দক্ষিণে সোমপুরে মহাবিহার নির্মাণ করেন। মি. বুকানন হ্যামিলটন ১৮০৭ খ্রিষ্টাব্দে যখন পাহাড়পুর ধ্বংসাবশেষ দেখতে আসেন তখন তিনি গোয়ালভিটাকে পাহাড়পুর বলে অভিহিত করেছিলেন। এ বিষয়ে আলেকজান্ডার কানিংহাম বলেন, উত্তর-পশ্চিম দিকে অবস্থিত গোয়ালভিটা নামক গ্রামকে বুকানন ভুল করে ‘গোপাল চিতার পাহাড়’ বলে মুদ্রিত করেন। কাজী মোহাম্মদ মিছের জানান, সম্ভবত অষ্টম শতকের মাঝামাঝি বটগোহালীর জৈন মন্দিরের সন্নিকট বা জৈন বিহারের উপর বৌদ্ধবিহার প্রতিষ্ঠিত হয়ে জৈন মন্দিরটির অস্তিত্ব বিলোপ হয়েছে। এমন কথার মধ্য দিয়ে যেন একটি নতুন তথ্যের প্রবাহ প্রতিভাত হয়ে ওঠে।
সাধারণত ‘পাহাড়’ ও ‘ভিটা’ নামক স্থানকে নিদের্শ করতে উঁচু কোনো স্থান বা এমন স্থানের অস্তিত্বকে বোঝানো হয়। সচরাচর এ স্থানগুলো নির্দেশ করলে ঢিবি বা বুরুজ নামে পরিচিতি পায়। যদি এমন কথাকে গ্রহণ করা হয়, তাহলে প্রশ্ন এসে পড়ে এই ঢিবির আয়তন ও উচ্চতা নিয়ে। এছাড়াও আরও নানাপ্রসঙ্গ এসে পড়ে। প্রশ্ন আসতে পারে ঢিবিতে প্রাপ্ত প্রাচীন ইট-পাথরের অস্তিত্ব নিয়েও। এখানকার ইট স্বতন্ত্র, না-কি নিকটস্থ পাহাড়পুর মহাবিহারের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ আরও ইত্যাদি কথা। সে সম্পর্কে কোনো বর্ণনা বা তথ্যাদি সম্পূর্ণ অনুপস্থিত। বুকানন কর্তৃক ‘পাহাড়’ শব্দের উচ্চারণ থেকে গোয়ালভিটার অস্তিত্বের কথা অনুমেয়। তবে স্থানটিতে উঁচু ঢিবির অস্তিত্ব যদিও বা নেই, তবুও বলতে হয় এখানকার ধ্বংসপ্রাপ্ত নিদর্শন সমূহের কথা। প্রাচীন ইমারতের ধ্বংসবিশেষ স্মৃতি হিসেবে গোয়ালভিটার অস্তিত্ব জানান দেয়। এটির উদ্ভব ঘটেছিল গুপ্ত পর্বের আগে। যেখানে চর্চিত হতো জৈনধর্ম। এই জৈনধর্মই হলো বাংলার আদিতম আর্যধর্ম। ধর্মটি বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গ তথা এতদ্ অঞ্চলে বিশেষভাবে প্রসার ও প্রতিষ্ঠা লাভ করেছিল। বটগোহালীর অধিবাসী ও অধিকর্তা হিসেবে দায়িত্বপালন করতেন বারাণসীর পঞ্চস্তূপীয় শাখার নির্গ্রস্থনাথ আচার্য গৃহনন্দীর শিষ্য ও শিষ্যানুশিষ্যবর্গ। তাঁরা প্রতিবাসী এক ব্রাহ্মণ দম্পতির নিকট থেকে কিছু ভূমিদান লাভ করেন। যার ফলে ঐতিহাসিক এই স্থানটির প্রাচীনত্ব অধুনা বিলুপ্ত হলেও ইতিহাসে এটির আবেদন নির্দেশিত হয়। কারণবশত যদি কোনো বিষয় বা স্থানের অস্তিত্ব বিলিন হয়ে যায় এর পরেও থেকে যায় তার ক্ষত, সেই ক্ষত জায়গা করে নেয় ইতিহাসের পাতায়। গোয়াভিটার ক্ষেত্রেও এমনটি হয়েছে কথাটি বলা অসংগত নয়। স্থানীয় লোকজন বলে থাকেন এখানে প্রয়োজনীয় কাজে মাটি খনন করতে গেলে মাটির নীচে অযাচিত আবেদনে প্রাচীন যুগের ইট-পাথরের নিদর্শনসমূহ পাওয়া যায়।
পাল রাজার সাথে কৈবর্ত বিদ্রোহের ইতিহাস আজ অবিদিত নয়। এক সময় কৈবর্তরা যে জৈনধর্মের অনুসারী ছিলেন ইতিহাসে তারও প্রমাণ মেলে। সুদূর অতীতকালে কৈবর্তরা কোন ধর্মের অনুসারী ছিল সেটি যদিও এ পর্বের বিচার্য বিষয় নয়, তবুও সংগত কারণে বলতে হয় কৈবর্তগণ বৈদিকধর্মকে নিজেদের ধর্ম হিসেবে গ্রহণ করেন। তবে তাঁরা যে একসময় জৈনধর্মের অনুসারী ছিল ইতিহাসে তারও দৃষ্টান্ত মেলে। উল্লেখ্য যে, কৈবর্তরা কোনোকালেই বৌদ্ধধর্মের অনুসারী ছিলেন না। জৈনধর্মের পণ্ডিত ও গুরু হিসেবে ‘ভদ্রবাহু’ নামের একজন মনীষীর কথা জানা যায়। তিনি ছিলেন চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের সমসাময়িক একজন মানুষ। তাঁর রচিত ‘কল্পসূত্র’ নামক গ্রন্থে পুণ্ড্রনগরের কথা উল্লেখ আছে। এই পণ্ডিতের মৃত্যুর পর গৌড়, বরেন্দ্র ও পুণ্ড্রনগরের জৈনরা নানা ধর্মে বিভক্ত হয়ে পড়ে। এ সময় বৌদ্ধধর্মের অনুসারী সম্রাট অশোক রাজক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থাকার পরেও জৈনধর্মের প্রভাব ছিল উল্লেখ করার মতো। আরও জানা যায় বটগোহালীতে অবস্থিত জৈনমন্দিরটি কালের আবর্তে জৈনদের হাতছাড়া হয়ে যায়। ফলশ্রুতিতে পালরাজা ধর্মপাল সোমপুর মহাবিহারের সম্পূর্ণ ভূমি জৈনদের নিকট থেকে হুকুম দখল করে সেখানে বিশাল এক বৌদ্ধবিহার প্রতিষ্ঠা করেন। পাহাড়পুর পট্টোলীতে (৪৭৮ খ্রি.) উল্লেখ করা হয়েছে যে, গোয়ালভিটায় অবস্থিত জৈনবিহারের ধ্বংসস্তূপের মধ্যে ছোটো অবয়বের একটি জিন-প্রতিমা পাওয়া যায়। আবিষ্কৃত প্রতিমাটি পাহাড়পুরের প্রত্নশলায় সংরক্ষিত ছিল এমন কথাও জানা যায়। তবে বর্তমানে এই জিন-প্রতিমাটি অন্তর্হিত। নীহাররঞ্জ রায় পঞ্চম-ষষ্ঠ শতকের পূর্বে গুপ্তপর্বে জিন-প্রতিমাটি আবিষ্কৃত হয়েছে এমন অভিমত ব্যক্ত করেছেন তাঁর ‘বাঙ্গালীর ইতিহাস আদিপর্ব’ গ্রন্থে। তিনি আবিষ্কৃত প্রতিমাটিকে প্রাচীন বাংলার আদিতম জৈন-প্রতিমা হিসেবেও উল্লেখ করেছেন। গুপ্ত রাজত্বের শেষ পর্বে এসে বরেন্দ্র অঞ্চলে পাথরের পাশাপাশি ব্রোঞ্জ এবং পোড়ামাটির ভাস্কর্যশিল্প প্রচলিত ছিল এমন নিদর্শন পাওয়া যায়। এই একটি মাত্র প্রতিমা ছাড়া বটগোহালীতে আর অপর কোনো প্রত্নকীর্তির নিদর্শন আবিষ্কৃত নয়।

নবম থেকে একাদশ শতকের মধ্যে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের অন্তর্গত বর্ধমান, বাঁকুড়া, বীরভূম, পুরুলিয়া অঞ্চলে জৈনধর্মের ব্যাপক চর্চা ও অনুশীলন হতো। মানুষ এই ধর্মকে তখন মেনে চলতো। তাই জৈনধর্মের সমর্থনে প্রচুর প্রতিমাও গড়ে ওঠে। উপরে বর্ণিত ভারতবর্ষের এই কয়েকটি জেলার বিভিন্ন স্থানে প্রচুর জৈন-প্রতিমা পাওয়া যায়। বিশেষত পুরুলিয়া জেলার পাকবিড়রা গ্রামের প্রাচীন ধ্বংসাবশেষ থেকে প্রাপ্ত প্রতিমাগুলোই তার প্রমাণ। স্মর্তব্য যে, পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে জৈনধর্ম হলো বাংলার আদিতম আর্যধর্ম। এই ধর্মের একটি অন্যতম প্রত্নপীঠ হিসেবে গোয়ালভিটার অবস্থান। যা উত্তরবঙ্গের প্রাণকেন্দ্র সদৃশ বরেন্দ্র অঞ্চলের অন্তর্গত বদলগাছী উপজেলার ঐতিহাসিক পাহাড়পুরের সন্নিকটে অবস্থিত।

ড. মোহাম্মদ শামসুল আলম
গবেষক, প্রাবন্ধিক, ইতিহাসজ্ঞ

সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, বাংলা বিভাগ, নওগাঁ সরকারি কলেজ, নওগাঁ

এই সংবাদটি শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




raytahost-demo
© All rights reserved © 2019
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: Jp Host BD