নিউজ ডেস্কঃ
ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানী আগরতলা শহরে ভূগর্ভস্থ কোনো বর্জ্য ব্যবস্থাপনা না থাকায় গত কয়েক দশক ধরে সেখানকার হাসপাতাল, শিল্প-কারখানা, গৃহস্থালীর বর্জ্য ও নর্দমার দূষিত পানি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া দিয়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করছে। এর ফলে জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের পাশাপাশি সীমান্তবর্তী ১৫ গ্রামের মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকির সৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া অত্র অঞ্চলের জমির উর্বরতা শক্তিও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
জানা গেছে, আগরতলার ইন্দিরা গান্ধী মেমোরিয়াল হাসপাতাল, ডাইং কারখানা, চামড়া কারখানা, মেলামাইন কারখানা ও বাসাবাড়ির স্যুয়ারেজ লাইনসহ বিভিন্ন বর্জ্য মিশে সেখানকার পানি বিষাক্ত হয়ে গেছে এবং এগুলো কুচকুচে কালো আর উৎকট গন্ধযুক্ত। সেখানে কোনো বর্জ্য ব্যবস্থাপনা না থাকায় এগুলো সেনারবাদি খাল এবং কালিকাপুর গ্রামের জাজি নদী দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে।
এ বিষয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিদর্শক মমিনুল ইসলাম জানান, ভারত থেকে নেমে আসা এই পানিতে বিষাক্ত কেমিক্যাল বর্জ্য, স্যুয়ারেজ বর্জ্য, পলিথিন ও বিভিন্ন খাবারজাত প্যাকেট, পরিত্যক্ত প্লাস্টিক ও কাঁচের বোতল এবং অন্যান্য পচনশীল দ্রব্য রয়েছে। এ ছাড়া পানি পরীক্ষা করে দেখা গেছে, এতে সীসা, সালফার, দস্তা, ম্যাঙ্গানিজ, ক্যাডমিয়াম, ক্রোমিয়াম ও আয়রনের মতো ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে।
আখাউড়া দক্ষিণ ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মো. শাহনেওয়াজ জানান, বিষাক্ত কালো পানির প্রভাবে সীমান্তবর্তী এলাকার মানুষ নানা রকম চর্মরোগ ও শ্বাসকষ্টজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। সেনারবাদি খালটি এখন মশা, মাছি এবং অন্যান্য পোকামাকড়ের প্রজনন ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। ফলে সেখানে আর মাছ পাওয়া যায় না। এ ছাড়া তীব্র দুর্গন্ধের কারণে স্থানীয় কৃষকরা জমিতে কাজ করতে পারেন না।
আখাউড়া দক্ষিণ ইউনিয়নে কর্মরত উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. জিয়াউর রহমান জানান, ভারতের পানি নেমে আসায় বর্তমানে খালের পানিতে নাইট্রোজেনের মাত্রা অতিরিক্ত। ফলে এই পানি ব্যবহার করলে কৃষকদের ধানগাছে পচন ধরে।
আখাউড়া স্থলবন্দরের আমদানি-রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম জানান, দীর্ঘদিন ধরেই সমস্যাটি সমাধানের জন্য দাবি জানিয়ে আসছে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামগুলোর বাসিন্দারা। কিন্তু বার বার আশ্বাস দেয়া হলেও এ ব্যাপারে এখন কোনো সমাধান করা হয়নি।
Leave a Reply