নিল হাসান ঃ
চন্দন বাঙ্গাল বাংলা শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতির একটি অন্যতম আলোচিত নাম। তিনি একদিকে যেমন পাণ্ডিত্যে স্থির, তেমনি আবার আবেগে অস্থির। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের ছাত্র চন্দন, বাংলা কবিতার উপর অত্যন্ত অল্প বয়সে ডক্টরেট ডিগ্রী লাভ করেই তিনি থেমে থাকেননি। অত্যন্ত অল্প বয়সে তিনি পশ্চিমবঙ্গের বঁাকুড়া বিষ্ণুপুরের রামানন্দ কলেজে অধ্যাপক হিসেবে কর্মজীবনে প্রবেশ করেন।
বর্তমানে তঁার কাব্য গ্রন্থের সংখ্যা চারটি- বৃষ্টি মেঘ এসেছিল একা একা, সতেরো মিনিটের স্মিতা মণ্ডল, মধুবাতা ঋতায়তে…, জেরুজালেম টু জেরিকো। ২০১৩ সালে ‘সতেরো মিনিটের স্মিতা মণ্ডল’ কাব্য গ্রন্থের জন্য সুতরাং সাহিত্য সম্মান লাভ করেছেন। বিশেষ কবিতা কৃতির জন্য ওহফড়-টহরাবৎংব ঠড়রপব ড়ভ চড়বঃৎু- সম্মাননার জন্য কবি চন্দন বাঙ্গাল নির্বাচিত হয়েছেন। তঁার নির্বাচিত কবিতা ঞযব খধংঃ এষরসঢ়ংব নামে অনুদিত হয়ে, প্রকাশিত হয়েছে ইউনাইটেড স্টেটস অব আমেরিকা থেকে।
বছর একত্রিশের চন্দনের কবিতার মতোই তঁার প্রবন্ধও বাংলা সাহিত্যে বিশেষ জায়গা করে নিয়েছে। আবহমান চিন্তা ভাবনাকে দুমড়ে-মুচড়ে দিয়ে আলোচিত ড. বাঙ্গাল অনেক নতুন তথ্য ও সত্য প্রতিষ্ঠা করেছেন, অনেক বিতর্ক অনেক সমস্যার সমাধানও ঘটিয়েছেন তঁার ক্ষুরধার, যুক্তিনিষ্ঠ, মেধাবী লেখনির সাহায্যে। সম্রাট অশোকের শিলালিপি ঘেঁটে, সুকুমার সেন, রমেশচন্দ্র মজুমদার, নীহাররঞ্জন রায় প্রমুখের প্রচলিত ধারনাকে নস্যাৎ করে ড. চন্দন বাঙ্গাল টুসু বিষয়ক সমস্যার সমাধান ঘটিয়েছেন। তিনি ঐতেরীয় আরণ্যকের শ্লোকে বর্ণিত তিনটি জাতির মধ্যে অমীমাংসিত ‘চেরপাদ’-এর উত্তরাধিকারীদের চিহ্নিত করেছেন। ভাষা, নৃতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য ইত্যাদি সুক্ষ্মভাবে বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছেন, এই চেরপাদ জাতি আসলে অস্ট্রেলিয়ার মাওরি উপজাতি। এছাড়াও আঞ্চলিক ইতিহাস, সাহিত্যের লুপ্তপ্রায় উপাদান ইত্যাদি বিষয় নিয়েও চন্দন সমানভাবে আগ্রহী। বিষ্ণুপুরের ইতিহাস, বিষ্ণুপুরী রামায়ণ এসব বিষয়েও চন্দনের বেশ কিছু গবেষণাধর্মী প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে।
নিজের কবিতা, নিজের প্রবন্ধ ছাড়াও বাংলা শিল্প সাহিত্য, সংস্কৃতির এই পুজারি খুঁজে বের করে এনেছেন বাংলা কবিতার বিশিষ্টজনদের। তঁাদের কাব্য গ্রন্থও তিনি সম্পাদনা করেছেন। তঁার সম্পাদিত দু-দুটি কবিতার বই পুরস্কৃতও হয়েছে।
নাটক বা কথা সাহিত্য নিয়েও তরুণ এই যুবক নানা সময়ে নানা কাজ করে গেছেন। নাটক বিষয়ে তিনি সম্পাদনাও করেছেন।
ডক্টরেট চন্দন বাঙ্গালের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজ, জেলা ভিত্তিক কবিতা সংকলন (১৯৪৭-২০১৭) সম্পাদনা ও বাংলা কবিতাকে বেশ কয়েকটি ভাষায় অনুবাদের প্রচেষ্টা। এরই মধ্যে দক্ষিন চব্বিশ পরগনা, মুর্শিদাবাদ, রায়গঞ্জ এই তিনটি জেলাভিত্তিক কবিতা সংগ্রহ প্রকাশিত হয়েছে। নির্বাচিত বেশ কিছু কবিতার হিন্দি অনুবাদের কাজটিও তঁার নেতৃত্বে সুসম্পন্ন হয়েছে।
চন্দন বাঙ্গাল সম্পাদিত ভিস্ পত্রিকা শুধু পশ্চিমবঙ্গে নয়, ভারত, বাংলাদেশ, অস্ট্রেলিয়া, ইউনাইটেড কিংডম প্রভৃতি দেশের কবি ও গবেষক মহলে যথেষ্ট জনপ্রিয়।
পশ্চিম বঙ্গের বঁাকুড়ার এক প্রত্যন্ত গ্রামের সন্তান ড. চন্দন বাঙ্গাল হাসনাইন সাজ্জাদী প্রবর্তিত বিজ্ঞান কবিতা নিয়ে কাজকর্ম করেও যথেষ্ট প্রগতিশীল মানসিকতার পরিচয় দিয়েছেন। বিজ্ঞান কবিতার সাফল্য ও সম্ভাবনা নিয়েও তিনি একাধিক টেলিভিশন সাক্ষাৎকার ও কলেজের সেমিনারে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রেখেছেন। আয়োজন করেছেন ভারত সরকারের আর্থিক সহায়তায় (ইউজিসি) বেশ কিছু সেমিনারের।
বর্তমানে ড. বাঙ্গালের মোট গ্রন্থ সংখ্যা দশটি। তিনি বাংলা ভাষায় প্রথম পূর্ণাঙ্গ ইতিহাসটিও রচনা করেছেন-বাংলা বানানের ইতি গতি ও সম্প্রতি। লকডাউনের পরেই এটি কলকাতার একটি সম্ভ্রান্ত প্রকাশনা থেকে প্রকাশিত হবে।
ধন্যবাদ অনেক অনেক