ছবি: সংগৃহীত
নিউজ ডেস্কঃ
ভারতের অনুরোধে কমছে ট্রানজিটের ফি। চট্টগ্রাম, মোংলা সমুদ্রবন্দর হয়ে ভারতের উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলোয় পণ্য পরিবহনে প্রতি টনে প্রতি কিলোমিটারে দুই টাকা ফি নির্ধারণ করে বাংলাদেশ। যদিও নীতিমালা অনুযায়ী ২ টাকা ১০ পয়সা টোল হওয়ার কথা। ভারতের অনুরোধে তা কমে ১ টাকা ৮৫ পয়সা হতে পারে।
আজ সোমবার সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ এ সংক্রান্ত পর্যালোচনাসভা করবে।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, সভায় টোল কমতে যাচ্ছে। ১ টাকা ৮৫ হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। এর কম হবে না। এ হিসাবে ভারত কিলোমিটারে ১৫ পয়সা ছাড় পাচ্ছে। তবে এ বিষয়ে সড়ক পরিবহন সচিব নজরুল ইসলামের বক্তব্য জানা যায়নি।
গত ২৯ ডিসেম্বর সড়ক পরিবহন সচিব নজরুল ইসলামের সঙ্গে তার কার্যালয়ে বৈঠকে ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় উপহাইকমিশনার বিশ^™^ীপ দে’র নেতৃত্বে প্রতিনিধি দল সড়ক ব্যবহারের ফি (টোল) কমাতে অনুরোধ করে। মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, এতে সাড়া দিয়ে টোল কমাতে যাচ্ছে সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগ।
এর আগে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ) মতামত দিয়েছিল, ভারতীয় পণ্য পরিবহনে রাস্তার ক্ষতি ও পরিবেশ দূষণ বাড়বে। তাই কিলোমিটারে প্রতি টন পণ্যের জন্য ২ টাকা টোল দিতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর একজন উপদেষ্টাও ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের কারণে টোল কমাতে অনুরোধ করেছিলেন।
২০১৮ সালের অক্টোবরে সই হওয়া চুক্তিতে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহারের সুবিধা পেয়েছে ভারত। পরীক্ষামূলক যাত্রা হিসেবে গত জুলাইয়ে কলকাতা বন্দর থেকে ডাল ও টিনবাহী জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে আসে। পণ্য খালাসের পর তা ট্রাকে বাংলাদেশের সড়কপথে আখাউড়া বন্দর হয়ে ভারতের ত্রিপুরায় পাঠানো হয়। পরীক্ষামূলক ট্রানজিটের পর ছয় মাসে কোনো পণ্য পরিবহন হয়নি।
চুক্তি অনুযায়ী, ভারতের মূল ভূখ- থেকে পাঠানো পণ্য চট্টগ্রাম ও মোংলায় খালাসের পর বাংলাদেশের নির্ধারিত আটটি সড়কপথ ব্যবহার করে
স্থলবন্দর হয়ে আসাম, ত্রিপুরায় যাবে। গত বছরের ডিসেম্বরে দুই দেশে নৌ সচিব পর্যায়ের ‘আন্তঃসরকার কমিটি’র (আইজিসি) বৈঠকে সড়ক ব্যবহারের ফি নির্ধারণে আলোচনা হয়। বাংলাদেশ প্রতি টন পণ্য পরিবহনে কিলোমিটারে দুই টাকা ফি নির্ধারণের প্রস্তাব করে।
এ হিসাবে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ফেনী-কুমিল্লা হয়ে আখাউড়া বন্দর পর্যন্ত ২৩০ কিলোমিটার পথে ১৫ টনের মাঝারি ট্রাক পণ্য পরিবহনে ভারতকে ৬ হাজার ৫৬০ টাকা ফি দিতে হবে। ১৫ পয়সা কমলে ভারতীয় পণ্যবাহী ১৫ ট্রনের ট্রাককে এ পথের জন্য ৬ হাজার ৭০ টাকা টোল দিতে হবে। ট্রাকপ্রতি ৪৯০ টাকা টোল কমবে।
২ টাকা হিসাবে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে কুমিল্লা-ব্রাহ্মণবাড়িয়া হয়ে সিলেটের শেওলা স্থলবন্দর দিয়ে ভারতের আসামে পণ্য পরিবহনে ৪২৭ কিলোমিটার পথে ১৫ টনের ট্রাককে ১০ হাজার ৩৬০ টাকা মাসুল দিতে হবে। ভারতের অনুরোধে টোল কমলে ৯ হাজার ৫৯০ টাকা দিতে হবে। বাকি ছয় পথেও একই হারে টোল কমবে।
সড়ক ব্যবহারের ফি ছাড়াও পণ্য পরিবহনে ডকুমেন্ট চার্জ ৩০ টাকা, প্রতি মেট্রিক টনে ট্রান্সশিপমেন্ট চার্জ ২০ টাকা, প্রতি মেট্রিক টনে সিকিউরিটি চার্জ ১০০ টাকা, প্রতি মেট্রিক টনে এসকর্ট চার্জ ৫০ টাকা, প্রতি মেট্রিক টনে প্রশাসনিক চার্জ ১০০ টাকা, প্রতি কন্টেইনারে স্ক্যানিং ফি ২৫৪ টাকা নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশের রাজস্ব বোর্ড। এ ছাড়াও ইলেক্ট্রিক লক ও সিল বাবদ প্রতি মেট্রিক টনে প্রথম ৪৮ ঘণ্টায় ৬০০ টাকা এবং পরবর্তী প্রতি ঘণ্টার জন্য ৫০ টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে।
সড়ক ব্যবহারের মাসুল ছাড়াও ‘ইলেকট্রিকাল লক ও সিল’ ফি নিয়েও আপত্তি তুলেছে ভারত। চট্টগ্রাম বন্দরে অন্য দেশের জাহাজে আসা পণ্যের টনপ্রতি ডকুমেন্ট ফি ১০ টাকা। ভারতীয় পণ্যের জন্য তা টনপ্রতি ৩০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। সিকিউরিটি ফি ১০০ টাকা নির্ধারণ নিয়ে আপত্তি তোলা হয়েছে।
বন্দরে এক দফা মাসুল দেওয়ার পর সড়কে ‘উচ্চ’ টোল নিয়ে ভারত আপত্তি জানালেও সওজ তাতে একমত নয়। সংস্থাটি চিঠিতে জানিয়েছে, দুই দেশের চুক্তির ৮ ধারা অনুযায়ী সড়ক ফি আদায়ের সুযোগ রয়েছে। ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ২০১৪ সালের টোল নীতিমালা অনুযায়ী। অর্থনৈতিক ও গাণিতিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে ১৫ টনের ট্রাকে প্রতি কিলোমিটারে ১ টাকা ৮৫ পয়সা টোল নির্ধারণ করা হয়েছে। এর সঙ্গে পরিবেশ ও শব্দদূষণ মাসুল যোগ করে তা ২ টাকা হওয়া উচিত।
Leave a Reply