শনিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৪, ০৭:৩০ অপরাহ্ন

ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সোহেলী শারমিনের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ

ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সোহেলী শারমিনের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ

বিশেষ প্রতিনিধি।।

সরকারি বরাদ্দের দেড় কোটি টাকা অনিয়ম করাসহ নানা অভিযোগে অভিযুক্ত ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সোহেলী শারমিন এখনো বহাল তবিয়তেই আছেন। তার খুঁটির জোড় নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এদিকে, স্থানীয় প্রশাসন তার নানা অনিয়মের অভিযোগ খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিলেও জেলা সিভিল সার্জনের কাছ থেকে কোনোধরণের সাড়া পাওয়া যায়নি। সরকারি বরাদ্দের দেড় কোটি টাকা অনিয়ম করাসহ নানা অভিযোগে অভিযুক্ত ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সোহেলী শারমিন। তিনি চলতি বছরের ১২ মার্চ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন। যোগদানের পরপরই হাসপাতালের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সাথে অসদাচরণ করার অভিযোগ উঠে তার বিরুদ্ধে। তার অসদাচরণে অতিষ্ঠ হয়ে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করাসহ লিখিত অভিযোগ করেন হাসপাতালের স্টাফরা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এর কিছুদিন পর উপজেলা স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা কমিটি তার বিরুদ্ধে সরকারি বরাদ্দের দেড় কোটি টাকা অনিয়ম করার অভিযোগ তুলে। এই অনিয়ম খতিয়ে দেখতে গত জুলাই মাসে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে ৫ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কিন্তু দু’মাস পেরিয়ে গেলেও আজো তদন্ত কমিটি তার কাছ থেকে দেড় কোটি টাকার হিসাব নিতে পারেনি।

এছাড়া আর্থিক অনিয়মের পাশাপাশি হাসপাতালের প্রসূতি ও অন্যান্য রোগীদের প্রাইভেট হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। হাসপাতালে সিজারিয়ান অপারেশন বন্ধ রেখে প্রাইভেট হাসপাতালে সিজারিয়ান অপারেশন করে তিনি প্রতিদিন হাতিয়ে নিচ্ছেন মোটা অংকের টাকা। সরকারী গাড়ী ব্যবহার করে প্রতিদিন প্রাইভেট প্র্যাকটিস করেন তিনি। তিনি নিজের পছন্দের ঠিকাদার নিয়োগ করে নিম্ন মানের খাবার সরবরাহ করে কমিশন খায়, হাসপাতালের বাবুর্চিকে নিজের বাসায় ব্যবহার করেন ডা. সোহেলী শারমিন। কর্মচারীদেরকে নিজের ব্যক্তিগত কাজে লাগানো, ক্ষমতার অপব্যবহার করে ৩ জনের কোয়ার্টারের রুম একাই ব্যবহার করাসহ নানা অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

গোপন সূত্রে জানা যায়, হাসপাতালের কর্মকর্তা, কর্মচারীদের সাথে অসদাচরণ, বেতন আটকে রাখা, বদলি করা, কাজ বন্টনে স্বজনপ্রীতি, টিএ বিল প্রদানের ক্ষেত্রেও নানা অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এসব অনিয়মের ফলে হাসপাতালের স্টাফদের মাঝে একধরণের চাপা অসন্তোষ বিরাজ করছে। এভাবে স্বাস্থ্য কর্মকর্তার সাথে স্টাফদের রেষারেষির কারণে হাসপাতালে ব্যাহত হচ্ছে স্বাস্থ্যসেবা।

আরো জানা যায়, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারী সবাই একত্রে ডা. সোহেলী শারমিনের অসদাচরণে অতিষ্ঠ হয়ে তার প্রত্যাহার চেয়ে মানববন্ধন করেছিলেন। এছাড়াও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বরাবর ভালুকার সংসদ সদস্য, স্বাস্থ্য বিভাগের বিভাগীয় পরিচালক, সিভিল সার্জন ও উপজেলা চেয়ারম্যানের কাছে অনুলিপি পাঠানো হয়েছিল। সেই থেকেই এই ডাক্তারের ভয়ে অনেকের শরীর ঘামে। এত অভিযোগের পরেও এখনো বহাল তবিয়তেই আছেন এই স্বাস্থ্য কর্মকর্তা। তার খুঁটির জোড় নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

এসব অভিযোগের সত্যতা যাচাই করতে গিয়ে অনুসন্ধান বেড়িয়ে এসেছে আরও অজানা অনেক তথ্য। রবিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১২ টার দিকে গিয়ে দেখা যায়, এসএ টিভির সাংবাদিক আওলাদ হোসেন রুবেল ও সাথে ভালুকার স্থানীয় এক সহযোগী হাসপাতালে প্রবেশ করা মাত্রই অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। তখন ক্যামেরা বন্ধ ছিল, তবুও তিনি ক্যামেরা কেড়ে নিয়ে ভেঙে ফেলার চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে ডা. সোহেলী শারমিন স্থানীয় ঐ ব্যক্তির সাথে হাতাহাতি শুরু করেন। হাসপাতালে এমন ঘটনা দেখে সেবা নিতে আসা অনেকে নিরাশ হয়েছিলেন। স্থানীয় সাংবাদিক মহল এ ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে ডা. সোহেলী শারমিন জাগো নিউজকে বলেন, আমি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসার পর থেকেই একটি মহল আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। আমি কোনো দুর্নীতি করিনি। আমার বিরুদ্ধে যেই মানববন্ধন করা হয়েছে তারও কোনো ভিত্তি নেই।

সাংবাদিকদের কেন লাঞ্ছিত করেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি প্রথমে চিনতে পারিনি। হাসপাতালের একজন আমাকে আমাকে বলছে কে যেন ক্যামেরা নিয়ে আসছে। তাই ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।

আপনার কক্ষে সাংবাদিক ডুকেনি, আপনার অনুমতি না নিয়ে ক্যামেরা চালু করা হয়নি তবুও ক্ষিপ্ত হয়েছিলেেন কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি দেখতে ভালোনা। তাই ক্যামেরার সামনে আসিনা। পরে সিভিল সার্জন স্যারের সাথে কথা বলে নিশ্চিত হয়েছি তারা গণমাধ্যম কর্মী ছিলেন। পরে ক্যামেরার সামনে সাক্ষাৎকারে বলেছি যে সকল বিরুদ্ধে অভিযোগ মিথ্যা।

স্বাস্থ্যখাতের নানা অনিয়ম দুর্নীতি বন্ধ করতে সরকারকে বিশেষ টাস্কফোর্স গঠনের আহ্বান জানিয়েছেন ময়মনসিংহ জনউদ্যোগের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম চুন্নু।

এ বিষয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ জাগো নিউজকে বলেন, বর্তমান
সরকার উন্নয়নের সরকার। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দুর্নীতির সাথে স্বাস্থ্য কর্মকর্তা জড়িত থাকলে অবশ্যই যথাযথ কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন। আমরাও কোনো অপরাধীকে ছাড় দেবোনা।

তবে ময়মনসিংহের সিভিল সার্জন ডা. এবিএম মসিউল আলম উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগের ব্যাপারে ফোনে অথবা ক্যামেরার সামনে কোনো কথা বলতে রাজী হয়নি।

স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সোহেলী শারমিনের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়গুলো খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন ভালুকার সংসদ সদস্য কাজিম উদ্দিন আহম্মেদ ধনু।

এই সংবাদটি শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




raytahost-demo
© All rights reserved © 2019
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: Jp Host BD