ফাইল ছবি।।
নিউজ ডেস্কঃ
ট্রাম্পের রক্ষণশীল নীতি থেকে বাইডেন সরে আসবেন বলে আগেই ঘোষণা দিয়েছেন। একইভাবে মুসলিম দেশগুলোর পক্ষেও বক্তব্য দিয়েছেন। ফলে এসব বাস্তবায়ন হলে রপ্তানি ও বিনিয়োগসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সুযোগ বাড়বে বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ ছাড়া জিএসপি সুবিধাসহ অন্য ইস্যুগুলো আদায়ের ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক কূটনীতি এখনই জোরদার করার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
আমেরিকান চেম্বার অব কমার্স ইন বাংলাদেশ (অ্যামচেম) প্রেসিডেন্ট সৈয়দ এরশাদ আহমেদ বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক মূলত বাণিজ্যিক। বিনিয়োগ ও রপ্তানিতে শীর্ষে আছে দেশটি। তিনি বলেন, ইতিমধ্যেই মার্কিন প্রশাসনে পরিবর্তন হয়েছে। ফলে এটি বাংলাদেশের জন্য একটি সুযোগ তৈরি হয়েছে।
এরশাদ আহমেদ বলেন, বর্তমানে তৈরি পোশাকের এক-পঞ্চমাংশ যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করছি। ভবিষ্যতে আরো বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ যেসব পণ্য রপ্তানি করে, সেগুলোর চাহিদা যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছে। এ ক্ষেত্রে চীনের রপ্তানি কমলে আমাদের বৃদ্ধির সম্ভাবনা বেশি। তৈরি পোশাকে আমাদের জিএসপি ছিল না। তবে জিএসপির জন্য বেশকিছু পণ্য রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হয়েছে। তাই বিনিয়োগ আনতে অর্থনৈতিক কূটনীতি জোরদার করতে হবে। তবে বিনিয়োগ ধরতে বেশকিছু জটিলতা আছে, সেগুলো দূর করতে হবে। রপ্তানিতেও ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে তিনি মনে করেন। অ্যামচেমের প্রেসিডেন্ট বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সরকার পরিবর্তন হলে উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের পরিবর্তন করা হয়। দেশটির বড় দু’টি এজেন্সি রয়েছে। এগুলো হলো- ইউএসটিআর (ইউনাইটেড স্টেড ট্রেড রিপ্রেজেনটেটিভ) এবং ইউএসটিডিএ (ইউনাইটেড স্টেড ট্রেড ডেভেলপমেন্ট এজেন্সি)। এই দু’টি সংগঠন তাদের বিজনেস ডেভেলপমেন্ট করে। আর বাংলাদেশের নেগোসিয়েশনগুলো হয় ইউএসটিডিএ-র সঙ্গে। এ ক্ষেত্রে এই সংস্থার নতুন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক বাড়াতে পারলে আমরা লাভবান হবো। তিনি বলেন, সবার আগে আমাদের বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। এ ক্ষেত্রে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা কমাতে পারলে বড় বিনিয়োগ আসবে।
জানা গেছে, টানা সাড়ে ৮ বছর পর্যন্ত ঝুলে আছে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের রপ্তানি সুবিধা। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের ২৪৩টি পণ্যের জিএসপি সুবিধা ছিল। মোটা দাগে খাতগুলো হলো- প্লাস্টিক, সিরামিক, গলফ খেলার উপকরণ, কার্পেট, চশমা, পতাকা এবং চুরুট ইত্যাদি। যদিও ওই তালিকায় তৈরি পোশাক ছিল না। কিন্তু ২০১৩ সালের এপ্রিলে রানা প্লাজা ধসে সহস্রাধিক শ্রমিক নিহত হওয়ায় বিশ্বব্যাপী নিন্দার ঝড় ওঠে। এর জের ধরে ওই বছরের জুনে যুক্তরাষ্ট্র সরকার জিএসপি স্থগিত করে। আর ১লা সেপ্টেম্বর থেকে তা কার্যকর হয়। জিএসপি স্থগিত হওয়ার মানে হলো- যেসব পণ্য যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শুল্কমুক্ত বা শুল্কছাড় সুবিধা পেত, সেগুলো আর পাচ্ছে না। ফলে এসব পণ্য রপ্তানিতে প্রচলিত হারে শুল্ক দিতে হচ্ছে। এতে পণ্যভেদে শুল্কহার ১২-২০ শতাংশ পর্যন্ত হয়ে থাকে। এই হারে শুল্ক দিয়ে রপ্তানি করায় দেশটির বাজারে পণ্যের দাম বেড়েছে। এতে প্রতিযোগিতা সক্ষমতায় পিছিয়ে পড়েছে বাংলাদেশ।
অ্যামচেমের ভাইস প্রেসিডেন্ট সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সরকার পরিবর্তন হলেও নীতির তেমন পরিবর্তন হয় না। খুব বেশিকিছু আশা করি না। তবে একটি সম্ভাবনা রয়েছে। সরকার টু সরকার। বিজনেস কমিউনিটি টু বিজনেস কমিউনিটির আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে অবশ্যই ভালো কিছু আশা করা যায়। আমরা যদি অ্যামচেমের পক্ষ থেকে দর কষাকষির মাধ্যমে ভালো কিছু আনতে পারি সেটা হবে বাংলাদেশের জন্য ইতিবাচক দিক। অ্যামচেমের ভাইস প্রেসিডেন্ট বলেন, অ্যামচেম চেষ্টা করছে যেসব আমেরিকান কোম্পানি এখনো বাংলাদেশে আসেনি তাদেরকে দেশে বিনিয়োগে আগ্রহী করে তোলা। ইতিমধ্যেই যারা দেশে বিনিয়োগ করেছে তারা আরো বিনিয়োগ করবে সেই চেষ্টা করবে অ্যামচেম।
অ্যামচেমের সাবেক প্রেসিডেন্ট আফতাবুল ইসলাম বলেন, বাইডেন প্রথম যে বক্তব্য দিয়েছিল সেটা ছিল মুসলিমদের পক্ষে। ইতিবাচক বক্তব্য। তাতে মনে হচ্ছে বাইডেনের বিদেশ-নীতি ইউজার ফ্রেন্ডলি হবে। অন্যদিকে ডনাল ট্রাম্প অনেক বৈদেশিক বাণিজ্য-নীতি বন্ধ করে দিয়েছিল। আশা করছি সেগুলো আবার চালু হবে। আফতাবুল ইসলাম বলেন, আমাদের জিএসপি বন্ধ রয়েছে। কীভাবে জিএসপি পুনরুদ্ধার করা যায় তা পলিটিক্যাল ডিপ্লোম্যাসির মাধ্যমে চেষ্টা করতে হবে বলে মনে করে তিনি।
বাংলাদেশ ব্যাংক ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য মতে, ২০১৯ সালে দেশটির সঙ্গে বাংলাদেশের ৯.২ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য হয়েছে, যা বাংলাদেশের মোট বাণিজ্যের ৯ শতাংশ। এরমধ্যে ৬ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। বিনিয়োগের দিক থেকে রয়েছে দেশটির শক্তিশালী অবস্থান। সর্বশেষ বছরে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি বিনিয়োগ ছিল ১৭.৪০ কোটি ডলার। এ হিসাবে বাংলাদেশ চতুর্থ বড় বিনিয়োগকারী দেশ। এদিকে বাংলাদেশের রেমিট্যান্স আয়েও তৃতীয় যুক্তরাষ্ট্র। ২০১৯-২০ অর্থবছরে দেশটি থেকে রেমিট্যান্সের পরিমাণ ২৪১ কোটি ডলার।
Leave a Reply