অর্পিতা ঘোষ
টিনটিন আর জিকো দুজনে সময় পেলে এদিক সেদিক বাইক নিয়ে ঘুরে বেড়ায়। কলেজে ভর্তি হয়ে বাইক কেনার পর থেকে এটা ওদের নেশায় পরিণত হয়েছে। এখন অবশ্য খুব একটা সময় পাইনা, একবছর হলো কমাস আগে পরে দুজনে দুটো কম্পানিতে চাকরি পেয়েছে। টিনটিনদের পৈত্রিক বড় ব্যবসা আছে, ওর বাড়ির কারোর ইচ্ছে ছিলোনা ছেলে চাকরি করুক। টিনটিনের এক কথা– বাবা, জ্যাঠা যতদিন দেখছে ততদিন চাকরি করি, ভালো না লাগলে তখন দেখা যাবে। জিকোর বাবা সরকারী চাকরি করে।
আজ রবিবার, তাই টিনটিন আর জিকো সকালে টিফিন খেয়ে বাইক নিয়ে বেরিয়েছে। আজ ওদের প্রকৃতির মাঝে নতুনকে জানতে ইচ্ছে করছিল, তাই অজানাকে জানতে পাড়ি দেয়। পথ চলতি মানুষকে জিজ্ঞাসা করে স্থানীয় মন্দির ও দ্রষ্টব্য স্থানগুলো দেখতে দেখতে যাচ্ছিল। কখনো আবার নদীর ওপর বাঁশের সাঁকোয় বাইক হাঁটিয়ে নিয়ে ওপারের পুরোনো মন্দির দেখে আপ্লুত।
দেখতে দেখতে কখন পশ্চিম আকাশে সূর্য ঢলে পড়েছে ওরা খেয়াল করেনি। শুনশান রাতে আঁধার ঢালা পথ দিয়ে যখন বাড়ি ফিরছে তখন জিকো বললো– টিনটিন, এবার কিন্তু পেটে ছুচোয় ডন দিচ্ছে, সারাদিন বিস্কুট ছাড়া কিছু খাওয়া হয়নি।
বাইক চালাতে চালাতে টিনটিন বললো– আমারও তাই, একটা খাবারের দোকান আজ কোথাও পাওয়া গেলনা। এরকম পরিস্থিতি আগে কোনোদিন হয়নি। বাড়ি পৌঁছতে এখনো দু-ঘন্টার ওপর লাগবে। কিছুক্ষণ যাবার পর বললো– সামনে একটা গ্রাম আসছে মনে হচ্ছে, কোনো হোটেল পেলে দাঁড়াস।
দুর্ভাগ্য ওদের, কোনো হোটেল পাওয়া গেলনা। কিছুটা গিয়ে দ্যাখে–বিয়ে বাড়ির সামনে বাস থেকে বরযাত্রীরা নামছে। বরযাত্রীদের দেখে গ্রাম্য বলে মনে হলোনা।
বরযাত্রীদের গাড়ি পাড় হয়ে রাস্তার পাশে বাইক দাঁড় করালো টিনটিন।
জিকো– এখানে আবার দাঁড়ালি কেন?
টিনটিন– খাওয়ার ব্যাবস্থা করতে
– এই বিয়ে বাড়িতে খাবি নাকি?
– দেখছিস না–একটা বাস, তিনটে বোলেরো, বরের গাড়ি, তারমানে অনেক বরযাত্রী এসেছে।
–তুই কি ভাবছিস এবার বুঝতে পেরেছি
–তাহলে স্মার্টলি চল, এগোয়
ওরা দুজনে এগিয়ে গিয়ে লাইটে সাজানো গেটের পাশে দাঁড়ালো, যেন দুজনে গল্প করছে…
কিছুক্ষণ পর একটা ছেলে এসে বললো– আপনারা এখানে দাঁড়িয়ে আছেন, ভেতরে খাবেন চলুন
ওরা দুজন ছেলেটার পিছু পিছু ভেতরে গেল, এদিক সেদিক ঘোরাঘুরি করে দেখতে থাকলো। বেশ বড়লোকের মেয়ের বিয়ে বলে মনে হচ্ছে। কিছু বরযাত্রী দেখলো খেতে যাচ্ছে, সেখানে স্থানীয় লোকও আছে। তাদের মধ্যে দুজন মিশে গেল।
বেশ তাড়িয়ে তাড়িয়ে নানারকম খাবার খেলো দুজনে। সিগারেটের প্যাকেট হাতে নিয়ে স্মোক করার আছিলায় ধীরে ধীরে রাস্তায় এলো।
বাইকে স্টার্ট দিয়ে দুজনে হো-হো করে হাসতে হাসতে বাড়ির পথে এগোলো
জিকো– রবাহুত অতিথিদের খাওয়াটা কিন্তু ভালোই হয়েছে
টিনটিন– ভালো মানে, ব্যাপক।
Leave a Reply