এস এম শাহনূর
ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে, আঠারবাড়ি জমিদার বাড়ির পুকুরঘাটে বসে রবীন্দ্রসংগীতের এই চরণগুলো, কবিগুরু লিখেছিলেন বলে জানা যায়-
‘যখন পড়বেনা মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে/
আমি বাইবনা মোর খেয়াতরী এই ঘাটে/
চুকিয়ে দেব বেচাকেনা/
মিটিয়ে দেব গো, মিটিয়ে দেব লেনাদেনা/
বন্ধ হবে আনাগোনা এই হাটে’।।
তৎকালীন আঠারবাড়ির জমিদার প্রমোদ চন্দ্ররায় চৌধুরীর আমন্ত্রণে ১৯২৬ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি সকালে তিনি ময়মনসিংহ থেকে ট্রেনে করে আঠারবাড়ি রেলস্টেশনে পৌঁছান। ভ্রমণকালে কবির সঙ্গে ছিলেন, কবি পুত্র রথীন্দ্রনাথ, পুত্রবধূ প্রতিমা দেবী প্রমুখ। উল্লেখ্য, ১৯২৬ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় আসেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। ১৫ ফেব্রুয়ারি আসেন ময়মনসিংহে।
জমিদার প্রমোদ চন্দ্ররায় চৌধুরী শান্তি নিকেতনের শিক্ষার্থী ছিলেন। কবিগুরু ছিলেন তাঁর শিক্ষক। বিশ্বকবি তাঁর এই ছাত্রের আমন্ত্রণ রক্ষার্থেই আঠারবাড়ি এসেছিলেন।
সেদিন তাঁকে এক পলক দেখার জন্য ঈশ্বরগঞ্জ ও গৌরীপুরের হাজারো মানুষ ঈশ্বরগঞ্জ সদরে চলন্ত ট্রেন থামিয়ে দেয়। এরপর আঠারবাড়ি রেলস্টেশনে ট্রেন থেকে নামার পর, কবিকে হাতির পিঠে চড়িয়ে, ঢাক-ঢোল পিটিয়ে অভিবাদন জানানো হয়।
হাজারো মানুষের জয়ধ্বনিতে জমিদার বাড়ির মূল ফটকের সামনে কবিকে সোনার চাবি উপহার দেন জমিদার প্রমোদ চন্দ্ররায় চৌধুরী। ওই চাবি দিয়ে রবীন্দ্রনাথ কাছারি ঘরের মূল ফটক খোলেন। মধ্যাহ্নভোজের পর কবির সম্মানে সেদিন বাউল ও জারি-সারি গানের আয়োজন করা হয়েছিল।
অনেক ইতিহাস ঐতিহ্য ও কালের সাক্ষী আঠারবাড়ি জমিদার বাড়িটি আজ জরাজীর্ণ। এক সময়ে যার বাহিরের সৌন্দর্যরূপে উদ্ভাসিত থাকতো চারপাশ, এখন দিনের আলোতেও সেটির ভেতর থাকে অন্ধকার! সোনার চাবি দিয়ে কবির হাতে খোলা সেই কাছারি ঘরটির অবস্থাও খুবই নাজুক।
১৯৬৮ সালে জমিদার বাড়িটিকে আঠারবাড়ি ডিগ্রি কলেজ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হয়।
➤লেখক: এস. এম. শাহনূর
কবি ও আঞ্চলিক ইতিহাস গবেষক
➤তথ্য ঋণ:
[১ ]ময়মনসিংহে রবীন্দ্রনাথ’।।আহমদ রফিক
[২] রবীন্দ্রজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে রবীন্দ্র পর্ষদের উদ্যোগে প্রকাশিত
একদশক পূর্তি স্মারক-১৪১৫
[৩] কবির আগমনে মেতেছিল তিন নগর
দৈনিক জনকণ্ঠ
প্রকাশিতঃ মে ২১, ২০১৬।
[৪] ভুঁইয়া ইকবাল সম্পাদিত।।বাংলাদেশে রবীন্দ্র সংবর্ধনা।
(বাংলা একাডেমী থেকে প্রকাশিত)
Leave a Reply