শনিবার, ২৭ Jul ২০২৪, ০৭:৫৬ পূর্বাহ্ন

শিরোনাম :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ (কসবা-আখাউড়া) আসনে আইন মন্ত্রী আনিসুল হক বে-সরকারি ভাবে নির্বাচিত কসবায় ভোট দিয়ে বাড়ি ফেরার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ১ আহত-৪ কসবায় এলজিইডি’র শ্রেষ্ঠ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান আগরতলায় স্রোত আয়োজিত লোকসংস্কৃতি উৎসব কসবা প্রেসক্লাব সভাপতি’র উপর হামলার প্রতিবাদে মানবন্ধন ও প্রতিবাদ সভা কসবায় চকচন্দ্রপুর হাফেজিয়া মাদ্রাসার বার্ষিক ফলাফল ঘোষণা, পুরস্কার বিতরণ ও ছবক প্রদান শ্রী অরবিন্দ কলেজের প্রথম নবীনবরণ অনুষ্ঠান আজ বছরের দীর্ঘতম রাত, আকাশে থাকবে চাঁদ বিএনপি-জামাত বিদেশীদের সাথে আঁতাত করেছে-কসবায় আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ১৩ দিনের জন্য ভোটের মাঠে নামছে সশস্ত্র বাহিনী
শুক্লা দ্বাদশীর জোছনাখেকো চারটি কুকুর

শুক্লা দ্বাদশীর জোছনাখেকো চারটি কুকুর

ঝর্না রহমান

নদীর চরায় একটা মানুষ পড়ে আছে। আধা মানুষ। নড়াচড়া নেই। মেয়ে মানুষ। দম নেই। তাই থম মেরে আছে। নইলে মেয়েটি কথা বলতে দম ফেলতো না! এক দমে বলে যেত হাজার কথা। থম মেরে আছে নদীও। অদূরে একটা বুড়ো ব্রিজ। চরের দিকে চেয়ে ওর মাথা ঝুলে পড়েছে। ওটার ঠিক তালুর ওপরে একপাশ ভেঙে যাওয়া কাচের জারের মত শুক্লা দ্বাদশীর চাঁদ। একটু আগে মেয়েমানুষটাকে চরের ঝোপের কাছে পড়তে দেখেছে। মেয়েটা কাঁদছিল। চারজন পুরুষের হাতেপায়ে ধরছিল। কাকুতিমনতি করছিল। চারজন পুরুষ ওকে চরের মাটির ওপরে কাঁচা চারার মত উপড়ে ফেলে। ওর হাত পা ধরে ফড়ফড় করে শরীরটা ছিলে জামাকাপড় মাথার ওপর দিয়ে উড়িয়ে দূরে ছুঁড়ে ফেলেছিল। ভয় পেয়ে তুমুল কেঁপে উঠেছিল চাঁদ। জারের ভেতর থেকে গলগল করে পড়ে গেল তাবৎ জোছনা। চর ভেসে গেল আলোয়। চারজন ডাকাত তখন অষ্টাদশী জোড়া চাঁদ চটকে চিপে জোছনা লুট করতে থাকে। স্বর্ণের খনিতে ওদের শাবল ঘাই মারতে থাকে। এপাশে ওপাশে উল্টেপাল্টে সোনালি মধুভরা চাক শুষে নিতে থাকে। দুটি মাত্র হাত দিয়ে মেয়েটি লুট থামাতে পারে না। মেয়েটি চেঁচায়। চরাচরে সে শব্দ ধ্বনিত প্রতিধ্বনিত হতে থাকে। ওর মাথা ঢাকা ছিল রেশমি হিজাবে। সেটি দলা পাকিয়ে মুখের ভেতর ঠেসে দিলে চেঁচানি থামে। মেয়েটির গুচ্ছ গুচ্ছ কালোজাম চুল নেমে আসে কপালে। চোখে মুখে নাকে। নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে। চোখের মণি বড় হয়ে আগুনের বলের মত ছুটে বেরুতে চায়।
চারজনের কেউ বিরক্ত হয়ে চোখ দুটো গালিয়ে দেয়। বেশি জ্বলে ! চোখের আগুন দরকার নেই! জোছনায় দাউ দাউ করে জ্বলে নগ্ন দেহ। দু পাশে নিথর পড়ে-থাকা হাত, ছড়িয়ে-থাকা রক্তমাখা উরু, বোঁটা-ছেঁড়া দুমড়ানো স্তন, এসব এত দাউ দাউ জ্বলে কেন! পেট্রোল বা কেরোসিন হলে হত! কিন্তু আগুনের শিখায় লোকজানাজানি হয়ে পড়বে দ্রæত। তার চেয়ে জোছনার ফালিগুলো এদিক সেদিক ছুঁড়ে মারলেই হল। কলার থোড়ের মত নরম আর রেশমি মসৃণ হাতপা। ফালি হতে সময় লাগে না। চারজন চারটা টুকরো নিয়ে দূরে কোথাও পুঁতে আসে। আধা দেহটা ঝোপের ভেতরে ঠেলে দেয়। মাথাটা ঝোপের বাইরে। গলিত চোখের ভেতর দু চামুচ জোছনা ছলছল করে। জোছনা-চোখ দিয়ে মাথাটা চিৎ হয়ে মধ্য রাতের আধভাঙা চাঁদ দেখে।
ওরা চলে গেলে ঝোপ থেকে দুটো ধেড়ে ইঁদুর বের হয়ে আসে। আধা মানুষটার বুকে চড়ে পুতপুত করে তাকিয়ে এদিক ওদিক দেখে আবার ছুটে পালায়। এরপর এলো একটা শেয়াল। সে পড়ে থাকা মেয়েমানুষটার উরু থেকে এক কামড় তরতাজা মাংস তুলে নিয়ে হেলেদুলে চলে যায়। চাঁদের আলোয় শেয়ালের মুখে মাংসের দলার ছায়া চর জুড়ে দুলতে থাকে।
চরের অদূরে ব্রিজটা বিড়বিড় করে। সাক্ষী আমি! আমি সাক্ষী!
বর্ষাকালে এই ব্রিজের নিচ দিয়ে কলকল স্রোতে নদী বয়ে যায়। চরের অনেকখানিই তখন ডুবে যায়। মেয়েটি চর দেখতে আসতো। ব্রিজের ওপর দাঁড়িয়ে নিচে নদীর বয়ে চলা দেখতে পছন্দ করতো। নদীর জলে নিজের ছায়া দেখতো। পূর্ণাঙ্গ ছায়া! পূর্ণ মেয়ে ছিল মেয়েটি। একটা নাম ছিল। চিনু মিনু রানু বা ঝুনু। অথবা অন্য কিছু। দু বা তিন বা চার অক্ষরের ভেতর দিয়ে পূর্ণাঙ্গ একটি মেয়ে নড়ে উঠতো। হাসতো। কথা বলতো। অনেক কথা। নদীর মতই কলকল করতো। ব্রিজের ওপর দিয়ে প্রতিদিন যাতায়াত করতো চিনু মিনু রানু বা ঝুনু। রোদের ভেতর দিয়ে, বাতাস আর ধুলোর ভেতর দিয়ে, আলো-চর-নদী-গাছপালা-মানুষজনের দৃশ্যের ভেতর দিয়ে প্রতিদিন বিদ্যালয়ে যেত মেয়েটি। চিনু বা মিনু বা রানু বা ঝুনুর গায়ে আরামে লেগে থাকতো সুন্দর সুন্দর সালোয়ার কামিজ। বুকের ঢেউয়ের ওপর নৌকোর রঙিন পালের মত দুলতো ঝলমলে ওড়না। মাথা ঢাকা থাকতো সিল্কের স্কার্ফে। চিনু বা মিনু, রানু বা ঝুনু টের পায় না, ব্রিজের ওপরে উঠলে ও আর চিনু থাকে না। মিনু বা রানু বা ঝুনু থাকে না। ও তখন মিনিমাগনা মাল হয়ে ওঠে। ওড়নার তলা থেকে উঁচু হয়ে ওঠা দুধ বের হয়ে আসে। কামিজের ঝুল ফেড়ে গোল গোল পাছা নাচতে থাকে। সালোয়ারে দুই পায়ের সেলাই যেখানে মিলেছে সেখানকার মৌচাকে মধু পিছলে যেতে থাকে। ব্রিজ থেকে নেমে যেতে যেতে চিনু বা মিনু, রানু বা ঝুনুর চামড়াতে ছটাং ছটাং নোলা এসে পড়ে। পিচ্ছিল! খসখসে! কুকুরের বেগুনি নোলা! চটচটে লালায় জামাকাপড় ভিজে যেতে থাকে। চিনু বা মিনু, রানু বা ঝুনু এসব টের পায় না।
নদীর চরায় পড়ে থাকা আধখানা দেহ পুলিশ খুঁজে পেয়েছে। বাকি ফালিগুলো সহজে খুঁজে বের করার জন্য প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত চারটি কুকুর ছেড়ে দেয়া হয়েছে। কুকুরগুলো দ্রুত চরের চার প্রান্তে ছুটে যায়। ডোমেরা ঝোপের ভেতর থেকে আধখানা দেহ টেনে বের করে একটা ভিসেরা ব্যাগে ঢুকিয়ে চেন টেনে দিয়েছে। বাঁশের ফালি পুঁতে হলুদ রঙের ‘ডোন্ট ক্রস’ সিকিউরিটি টেপ দিয়ে ঘিরে দেয়া হয়েছে অকুস্থল। ব্যাগের ভেতরে নিরাপদে শুয়ে থাকে আধখানা চিনু বা মিনু, রানু বা ঝুনু। সিকিউরিটির ব্যপারে পুলিশ খুব তৎপর। কেউ লাশের কাছে যেতে পারবে না। এমন কি লাশের মা কিংবা বাবা কিংবা আপনজনেরাও না। আগে তদন্ত। তারপর চিনু বা মিনু, রানু বা ঝুনু। তারও পরে অন্য কিছু।
এর মধ্যে চারটি কুকুর চিনু বা মিনু, রানু বা ঝুনুর চারটি ফালি মুখে করে নিয়ে আসে।
দুটি কুকুরের মুখে ডান হাত বাম হাত। হাতের আঙুলে সোনালি নেলপলিশ।
দুটি কুকুরের মুখে ডান পা বাম পা। পায়ের পাতায় ক্রস বেল্ট স্যান্ডেলের সাদা ছায়াচিত্র।
অনুসন্ধানকারী পুলিশ কর্মকর্তা কুকুরদের মাথায় হাত বুলান। সাবাশ! গ্রেট জব!
চারটি কুকুর খুশিতে অট্টহাসি হেসে ওঠে। হেউ হেউ হেউ হেউ!

এই সংবাদটি শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




raytahost-demo
© All rights reserved © 2019
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: Jp Host BD