খাদেমুল মোরসালিন শাকীর,নীলফামারী প্রতিনিধি ॥
পাঁচ দিনের টানা বর্ষনে নীলফামারীর সৈয়দপুর শহরের প্রায় ২০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। শহরের মিস্ত্রিপাড়া, নীচুকলোনী, হাতিখানা, মাছুয়াপাড়া, কয়ানিজপাড়া, বাঁশবাড়ি ও কুন্দল এলাকায় বাসা-বাড়িতে পানি উঠেছে। পানিতে থৈ থৈ করছে খাদ্যগুদাম, ১০০ শয্যা হাসপাতাল, বিমানবন্দর সড়ক, ফায়ার সার্ভিস স্টেশন, মাতৃ সদন হাসপাতাল, বিসিক শিল্পনগরী, বিএডিসি’র বাফার গুদাম, সৈয়দপুর সরকারি বিজ্ঞান কলেজের ক্লাস রুম ও আবাসিক এলাকায়।
ইউনিয়ন পর্যায়েও অধিকাংশ এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে নি¤œাঞ্চলগুলোর ফসলের ক্ষেত, মাছের পুকুর তলিয়ে গেছে। খাতামধুপুর ইউনিয়নের বিস্তির্ণ এলাকা পানির নিচে। বোতলাগাড়ী ইউনিয়নের শ্বাষকান্দর ও খোর্দ বোতলাগাড়ী, কামারপুকুর ইউনিয়নের আইসঢাল, ব্রহ্মোত্তর, বাকডোকরা এলাকায় এবং কাশিরাম বেলপুকুর ইউনিয়নের সাতপাই, হাজারীহাট এলাকায় অনেক পরিবার পানিবন্দি অবস্থায় নিপতিত হয়েছে।
শহরের পানিবন্দি পরিবারগুলোর অনেকেই এলাকার সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে আশ্রয় নিয়েছে। পৌর মেয়র অধ্যক্ষ মোঃ আমজাদ হোসেন সরকার সৈয়দপুরের বাইরে অবস্থান করলেও সার্বিক খোজ খবর নিয়ে তিনি পানিবন্দি মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছেন। প্রায় প্রতিটি ওয়ার্ডে কাউন্সিলররা রান্না করা খিচুড়ি ও শুকনা খাবার বিতরণ করছেন।
শহরের অনেকে বিকল্প উপায় হিসেবে স্যালো মেশিন দিয়ে বাড়ির আঙ্গিনা ও ঘরের পানি সেচে বের করার চেষ্টা করছেন। এই স্যালো মেশিন প্রতিঘন্টায় ১ হাজার ৫ শ’ টাকা খরচ হচ্ছে। কিন্তু ড্রেনগুলো ভরাট হয়ে যাওয়ায় পানি নিঃসারিত হচ্ছে অনেক ধীরগতিতে। শহরের রেলওয়ের ডোবাগুলো ভরাট করে স্থাপনা নির্মাণ ও অপরিকল্পিতভাবে যত্রতত্র বাসাবাড়ি নির্মাণ করার কারণে পানি নিষ্কাশনের ক্ষেত্রে অচলাবস্থার সৃষ্টি হওয়ায় এ পরিস্তিতির শিকার হয়েছেন পৌরবাসী।
সৈয়দপুর আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, গত ২৪ ঘন্টায় এ অঞ্চলে ২০২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে। যা এ বছরে এ অঞ্চলের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত। গত পাঁচ দিন থেকে দিন রাত ব্যাপক বৃষ্টিপাত হওয়ায় নি¤œাঞ্চলগুলো অনেক আগেই জলমগ্ন হয়ে যায়। উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নেরই বেশিরভাগ ধানী জমিতে পানি জমে গেছে। রাতের বৃষ্টিপাতের ফলে আরও বেশি জমি পানিতে ডুবে গেছে।
উপজেলা কৃষি অফিসার মোছাঃ শাহিনা বেগম জানান, চলতি মৌসুমে উপজেলায় প্রায় ৮ হাজার ২১০ হেক্টর জমিতে ধান আবাদ করা হয়েছে। এর মধ্যে অতিবর্ষনে প্রায় ৩ হাজার হেক্টর জমির ধান নিমজ্জিত হয়েছে। আশাকরি পানি দ্রুত নেমে যাবে এবং এতে ধানের তেমন কোন ক্ষতি হবেনা। আমরা জরিপ করছি। কাজ শেষে জানা যাবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমান কতটা হয়েছে।
পানি উন্নয়ণ বোর্ড কর্তৃপক্ষ বলছে, সৈয়দপুর শহরের পাশ দিয়ে বয়ে চলা খড়খড়িয়া নদীর পানি বিপদসীমার ৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। যা এ বছরের রেকর্ড ছাড়িয়েছে। ফলে হুমকির মুখে পড়েছে সৈয়দপুর শহর রক্ষা বাঁধ। বাঁধ রক্ষার্থে ইতিমধ্যে দূর্বল স্থানে ১০০ জিও ব্যাগ বসানো হয়েছে।
পৌরসভা মেয়র হিসেবে দায়িত্বরত প্যানেল মেয়র জিয়াউল হক জিয়া জানান, এ শহরের ৮০ ভাগ বসতবাড়ি রেলওয়ের। এ রেলের জায়গায় অপরিকল্পিত ভাবে বাসা-বাড়ি নির্মান করায় পানি নিষ্কাষনের ড্রেনগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।
ঢাকায় চিকিৎসারত অবস্থায় মুঠোফোনে পৌর মেয়র অধ্যক্ষ মোঃ আমজাদ হোসেন সরকার জানান, অতিবৃষ্টি ও ভারতের উজানের পানিতে প্লাবিত হয়েছে সৈয়দপুর সহ কিশোরগঞ্জ অঞ্চল। এ পানি বন্দি মানুষের পাশে সাধ্যমত দাঁড়ানোর চেস্টা করছি। প্লাবিত এলাকার দূর্ভোগে পড়া মানুষের জন্য ঘরে ঘরে রান্না করা খিচুরি ও শুকনা খাবার বিতরণ করা হচ্ছে।
এবারের বৃষ্টিপাত জনিত পানিবদ্ধতা সাড়াদেশেই দূর্ভোগ সৃষ্টি করেছে। রাজধানী ঢাকাসহ বড় বড় শহরগুলোও পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। সৈয়দপুরের ঘটনা কোন বিচ্ছিন্ন ব্যাপার নয়। আশা করি দু’একদিনের মধ্যেই পানিবদ্ধতার অবসান হবে। ক্ষতিগ্রস্থদের সহায়তা অব্যাহত থাকবে পৌর পরিষদের পক্ষ থেকে।
সৈয়দপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ নাসিম আহমেদ জানান, উপজেলায় কত মানুষ অতিবৃষ্টির কারণে সৃষ্ট পানিবদ্ধতায় পড়েছে তা এখনও নিরুপন করা সম্ভব হয়নি। আমরা খোজখরব রাখছি এবং তালিকা প্রণয়নের কাজ চলছে। তালিকা শেষ হলেই সঠিক তথ্য জানানো হবে।
Leave a Reply