শনিবার, ২৭ Jul ২০২৪, ১১:৪২ পূর্বাহ্ন

শিরোনাম :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ (কসবা-আখাউড়া) আসনে আইন মন্ত্রী আনিসুল হক বে-সরকারি ভাবে নির্বাচিত কসবায় ভোট দিয়ে বাড়ি ফেরার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ১ আহত-৪ কসবায় এলজিইডি’র শ্রেষ্ঠ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান আগরতলায় স্রোত আয়োজিত লোকসংস্কৃতি উৎসব কসবা প্রেসক্লাব সভাপতি’র উপর হামলার প্রতিবাদে মানবন্ধন ও প্রতিবাদ সভা কসবায় চকচন্দ্রপুর হাফেজিয়া মাদ্রাসার বার্ষিক ফলাফল ঘোষণা, পুরস্কার বিতরণ ও ছবক প্রদান শ্রী অরবিন্দ কলেজের প্রথম নবীনবরণ অনুষ্ঠান আজ বছরের দীর্ঘতম রাত, আকাশে থাকবে চাঁদ বিএনপি-জামাত বিদেশীদের সাথে আঁতাত করেছে-কসবায় আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ১৩ দিনের জন্য ভোটের মাঠে নামছে সশস্ত্র বাহিনী
স্মরণে করি বাংলা সাহিত্যে কবি যতীন্দ্রমোহন বাগচীর কাব্য ভাবনা

স্মরণে করি বাংলা সাহিত্যে কবি যতীন্দ্রমোহন বাগচীর কাব্য ভাবনা

পাভেল আমান

একটা জাতি, সম্প্রদায় তখনই সাংস্কৃতিক চেতনার পরাকাষ্ঠা উত্তীর্ণ হবে যখন সেই জাতি তার আবহমান সাহিত্য-সংস্কৃতিকে সযত্নে লালন পালন করবে।বাংলা সাহিত্যের রবীন্দ্র পরবর্তী যুগের অন্যতম প্রথিতযশা, খ্যাতিমান ও সৃজনশীল কাব্য সত্তার অধিকারী যতীন্দ্রমোহন বাগচী। তার সৃষ্ট কবিতা সম্ভার বাংলা কাব্য সাহিত্যেকে সমৃদ্ধির শিখরে পৌঁছে দিয়েছিল। যতীন্দ্রমোহন বাগচী নদীয়া জেলার জমশেরপুরে জমিদার পরিবারে (বর্তমান বাগচী জমশেরপুর)১৮৭৮ সালের ২৭ নভেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈতৃক নিবাস বলাগড় গ্রাম, হুগলী। তিনি কলকাতার ডাফ কলেজ (এখন স্কটিশ চার্চ কলেজ) থেকে তার প্রথম ডিগ্রি নিয়েছিলেন।কবিতা লেখার শুরু কিশোরকাল থেকে। একুশ বছর বয়স থেকে পত্র-পত্রিকায় নিয়মিত তাঁর রচনা প্রকাশিত হতে থাকে। প্রথম প্রকাশিত গ্রন্থ ‘লেখা’। এটি একটি কাব্যগ্রন্থ। রবীন্দ্রনাথ ও যুগসাহিত্য’ নামে একটি স্মৃতিকথা এবং ‘সাথী’ নামে একটি উপন্যাসও রয়েছে তাঁর।পল্লীপ্রকৃতি, পল্লীর সহজ-সরল মানবজীবন, মানুষের দুঃখ-কষ্ট, নারীর নীরব বেদনাবোধ যতীন্দ্রমোহন বাগচীর রচনার প্রধান বিষয়বস্তু। কখনো কখনো নাগরিক জীবনের সাথে সরল ও সাধারণ গ্রামীণ জীবনের তুলনাও ফুটে উঠেছে নিপুণভাবে। বিষয়বস্তুর স্পষ্টতা, সহজ কিন্তু প্রাঞ্জল ভাষা আর ছন্দের কারুকার্য তাঁর কবিতাকে দিয়েছে বিশিষ্টতা। ‘মানসী’ ও ‘যমুনা’ পত্রিকার যুগ্ম সম্পাদক এবং ‘পূর্বাচল’ পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক ছিলেন তিনি। তাঁর কাব্যের বিষয়বস্তু পল্লীজীবন থেকে সংগৃহিত | পল্লীপ্রকৃতির সৌন্দর্য, নাগরিক জীবনের তুলনায় তার সরলতা ও স্বাভাবিকতা, রোম্যান্টিক আদর্শবাদ, মানুষের দুঃখ-দৈন্যের জন্য, বিশেষ করে পীড়িতা নারীর জন্য ব্যথা তাঁর কাব্যের মূল প্রেরণা | “আধুনিক” কবিসমাজের সঙ্গে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গির ঐক্য না থাকলেও, তাঁর প্রকাশভঙ্গির ক্ষেত্রে যে সজীবতা ও নতুনত্ব সৃষ্টি করেছিলেন সেখানে তিনি “আধুনিক” কবিদের নিকটবর্তী |

যতীন্দ্রমোহন অল্প বয়স থেকেই কাব্যচর্চা শুরু করেন। ভারতী, সাহিত্য প্রভৃতি বিখ্যাত পত্রিকায় তাঁর কবিতা প্রকাশিত হলে তিনি কবি হিসেবে প্রসিদ্ধি লাভ করেন। পরবর্তীকালে তিনি মানসী পত্রিকার সম্পাদক (১৯০৯-১৯১৩), যমুনা পত্রিকার যুগ্ম-সম্পাদক (১৯২১-১৯২২) এবং পূর্বাচল পত্রিকার সম্পাদক ও স্বত্বাধিকারী (১৯৪৭-১৯৪৮) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।যতীন্দ্রমোহন ছিলেন রবীন্দ্রোত্তর যুগের শক্তিমান কবিদের অন্যতম। পল্লিপ্রকৃতির সৌন্দর্য ও পল্লিজীবনের সুখ-দুঃখের কথা তিনি দক্ষতার সঙ্গে প্রকাশ করেন। ভাগ্যবিড়ম্বিত ও নিপীড়িত নারীদের কথা তিনি বিশেষ দরদের সঙ্গে প্রকাশ করেছেন। ‘কাজলাদিদি’ ও ‘অন্ধবন্ধু’ তাঁর এ ধরনের দুটি বিখ্যাত কবিতা।। তিনি বহু সাহিত্যিক পত্রিকায় গঠনমূলক কাজে অবদান রেখেছেন। মানসী, বঙ্গদর্শন, সাহিত্য, ভারতী, প্রবাসী, সাধনা, সবুজপত্র, মর্মবাণী, পূর্বাচল, যমুনা ইত্যাদি পত্রিকায় বিভিন্ন সময়ে তিনি লিখতেন। যুক্ত ছিলেন বিভিন্ন পত্রিকার সঙ্গে। ১৯০৯ থেকে ১৯১৩ পর্যন্ত মানসী পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন। ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দে মর্মবাণী পত্রিকায়। ১৯২১-১৯২২ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত যমুনা পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন। প্রথম সংখ্যা থেকে আমৃত্যু পূর্বাচল পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন তিনি। তার প্রথম প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ ‘লেখা’ ১৯০৬। অন্যান্য কাব্যগ্রন্থের মধ্যে আছে ‘রেখা’ ১৯১০, ‘অপরাজিতা’ (১৯১৩), ‘নাগকেশর’ (১৯১৭), ‘বন্ধুর দান’ (১৯১৭), ‘জাগরণী’ (১৯২২), ‘নীহারিকা’ (১৯২৭), ‘মহাভারতী’ (১৯৩৬) প্রভৃতি। এ ছাড়া রচনা করেন ‘পথের সাথী’ নামক উপন্যাস এবং ‘রবীন্দ্রনাথ ও যুগসাহিত্য’ (১৯৪৭) নামে একটি স্মৃতিগ্রন্থ।বাংলা ও বাঙালি কবি যতীন্দ্রমোহনকে কতটা মনে রেখেছে— এ প্রশ্ন এড়িয়ে গিয়ে বলা যায়, নদিয়া জেলার বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী যমশেরপুর গ্রামের কবিকে নিয়ে বৃহত্তর এলাকার মানুষের মধ্যে গড়ে উঠেছে সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার এবং পবিত্র শ্লাঘা। তাঁর এই সারস্বত সাধনার আহ্বানে যমশেরপুর গ্রামের মাটিকে এক দিন ধন্য করেছিলেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বিদ্রোহী কবি নজরুল ইসলাম। ১৯৭৮ সালে কবির জন্মশতবর্ষ পালিত হয় কবির জন্মভিটায়। তিন দিনের অনুষ্ঠান প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছিল কবি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, প্রমথনাথ ঘোষ, গজেন্দ্রকুমার মিত্র, সংবাদভাষ্যকার দেবদুলাল বন্দ্যোপাধ্যায়, নাট্যকার বিভাস চক্রবর্তী প্রমুখ নক্ষত্রের সমাবেশের উপস্থিতিতে। কিন্তু খুবই পরিতাপের বিষয় বর্তমান প্রজন্ম এই বরেণ্য কবি সম্পর্কে একেবারেই অজ্ঞাত। প্রতিবছরই কবির জন্মদিন নীরবে-নিভৃতে কেটে যায় বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃত জগতের ব্যক্তিত্বদের খুব একটা এই কবিকে নিয়ে আলাপ-আলোচনা, চর্চা, বিশ্লেষণ দেখতে পাই না। তার জন্মদিন থেকে যাই একেবারে আড়ালে ও অনালোচিত অবস্থায়। একজন সাহিত্যপ্রেমী হিসাবে আপামর বাঙালিকে কবি যতীন্দ্রমোহন বাগচীর জীবন দর্শন কাব্য সরকার সম্পর্কে চর্চার বিশেষ প্রয়োজন। এর পাশাপাশি কবির আদর্শ, চেতনা ধ্যান, কাব্য ভাবনা সম্পর্কে বাঙালি পাঠকদের , শিক্ষানুরাগী, শিক্ষানবিশ প্রত্যেকের জানার সমূহ প্রয়োজন।

পাভেল আমান- শিক্ষক ও প্রাবন্ধিক -হরিহরপাড়া- মুর্শিদাবাদ-পশ্চিমবঙ্গ-

এই সংবাদটি শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




raytahost-demo
© All rights reserved © 2019
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: Jp Host BD