শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ০৯:৫২ অপরাহ্ন

শিরোনাম :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ (কসবা-আখাউড়া) আসনে আইন মন্ত্রী আনিসুল হক বে-সরকারি ভাবে নির্বাচিত কসবায় ভোট দিয়ে বাড়ি ফেরার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ১ আহত-৪ কসবায় এলজিইডি’র শ্রেষ্ঠ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান আগরতলায় স্রোত আয়োজিত লোকসংস্কৃতি উৎসব কসবা প্রেসক্লাব সভাপতি’র উপর হামলার প্রতিবাদে মানবন্ধন ও প্রতিবাদ সভা কসবায় চকচন্দ্রপুর হাফেজিয়া মাদ্রাসার বার্ষিক ফলাফল ঘোষণা, পুরস্কার বিতরণ ও ছবক প্রদান শ্রী অরবিন্দ কলেজের প্রথম নবীনবরণ অনুষ্ঠান আজ বছরের দীর্ঘতম রাত, আকাশে থাকবে চাঁদ বিএনপি-জামাত বিদেশীদের সাথে আঁতাত করেছে-কসবায় আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ১৩ দিনের জন্য ভোটের মাঠে নামছে সশস্ত্র বাহিনী
বিশ্ব বাইসাইকেল দিবস: স্বাস্থ্য ও পরিবেশ বাঁচাতে ভরসা হোক দু-চাকা

বিশ্ব বাইসাইকেল দিবস: স্বাস্থ্য ও পরিবেশ বাঁচাতে ভরসা হোক দু-চাকা

– দীপক সাহা (পশ্চিমবঙ্গ)

আইজ্যাক আসিমভ বলেছিলেন, লোককে সাইকেল চালাতে দেখলে আমার পৃথিবীর ভবিষ্যৎ নিয়ে আশা জাগে। শুধু জনজীবন নয়, যান-জীবনটাও বদলে দিচ্ছে করোনা। করোনাকে সঙ্গে নিয়ে চলার যাবতীয় প্রস্তুতির মধ্যে সাইকেলের ব্যবহারকেও রেখেছেন অনেকে। করোনার হুমকিতে লকডাউন শুরু হতেই সাইকেল বিক্রি ঊর্ধ্বমুখি। পরিবেশবান্ধব যান সাইকেল কোন দূষণ সৃষ্টি করে না। আর গণপরিবহন এড়িয়ে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে, করোনা মোকাবিলায় সাইকেল সবচেয়ে নিরাপদ। করোনাকালে বহু দেশেই নতুন করে সাইকেলের ব্যবহার বাড়ানোর দিকে ঝোঁক দেখা দিচ্ছে। করোনা-জর্জরিত বিভিন্ন দেশে সাইকেল ক্রয়ের হার বিপুল পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে।

সাইকেল চালালে সেরোটিনি ও এন্ডরফিন হরমোন নিঃসৃত হয়। তাতে শরীর ও মন তরতাজা হয়ে ওঠে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। যা এ সময়ে একান্ত কাম্য। সচেতন নাগরিকদের উপলব্ধি, সামাজিক দূরত্ব ভুলে অটোয়-বাসে চেপে অতিরিক্ত ঝুঁকির যাত্রা থেকে অনেক কম ঝুঁকির বাহন সাইকেল। শহরের বড় রাস্তাগুলিতে সাইকেল লেন তৈরি করার দাবি জানিয়েছে অনেক সংগঠন। যেমন রয়েছে ভারতের ভোপাল ও রাঁচিতে। করোনার সঙ্গে লড়াইয়ে অন্যতম ঢাল হতে পারে সাইকেল।

করোনা-পরবর্তী অধ্যায়ে সাইকেলের গুরুত্ব বাড়তে বাধ্য। কারণ সংক্রমণে রূখতে গণপরিবহন এড়িয়ে চলাই বাঞ্ছনিয়। তাছাড়া, এসময়ে মানুষের অর্থনৈতিক সঞ্চয়ের জন্য সাইকেল এক জরুরি প্রেক্ষাপট রচনা করবে।

প্রতিবছর জুন মাসের ৩ তারিখে সমগ্র বিশ্বজুড়ে পালন করা হয়। ২০১৮ সালের এপ্রিল মাসে রাষ্ট্রসংঘর সাধারণ সভা ৩ জুন তারিখটিকে বিশ্ব সাইকেল দিবস হিসাবে উদযাপন করতে প্রস্তাব গ্রহণ করেছিলেন।প্রায় দুই শতক কাল এর সাধারণ, কম খরচ, বিশ্বাসযোগ্যতা, এবং পরিবেশের জন্য উপযুক্ত যান-বাহনের মাধ্যম হিসাবে সাইকেলের উল্লেখ করা হয়েছিল। সাইকেল ব্যবহারের সুফলের বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করার জন্য মূলতঃ এই দিবস উদযাপন করা হয়।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রর অধ্যাপক লেসজেক সিবিলস্কি তৃণ-মূল পর্যায়ে বিশ্ব সাইকেল দিবসের রাষ্ট্রসংঘর স্বীকৃতির জন্য এক অভিযানের সূচনা করেছিলেন। পরে তার এই অভিযান তুর্কমেনিস্তানকে নিয়ে ৫৬ টি দেশের সমর্থন লাভ করে। রাষ্ট্রপুঞ্জের ওয়েবসাইট বলছে, বিশ্বের ‘সব চেয়ে পরিবেশবান্ধব’ যান সাইকেল। সে কথা মাথায় রেখেই ২০১৮ সালের ৩ জুন দিনটিকে প্রথম ‘বিশ্ব সাইকেল দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করেছে রাষ্ট্রপুঞ্জ। সাইকেল মানবতাকে এগিয়ে নিয়ে যায়; এই হল এর মূল উদ্দেশ্য। সাইকেল মানব সভ্যতার ক্রমবিকাশের এক প্রতীক। ইহা সহনশীলতা, পারস্পরিক বোঝাবুঝি এবং শ্রদ্ধা বৃদ্ধি করার সঙ্গে সামাজিক সমাবেশ এবং সাংস্কৃতিক শান্তি প্রদান করে।

ডাক নামে কেউ কেউ বলত ‘শখ-ঘোড়া’।আজ থেকে প্রায় দুই শতাব্দী আগে আজকের সাইকেলকেই ডাকা হত শখ-ঘোড়া নামে। সে এক মর্মান্তিক ঘটনা। হঠাৎ আগ্নেয়গিরির কবলে গোটা মাঠের ফসল তো পুড়ে গেলই সেই সঙ্গে বেশ কিছু ঘোড়াও আগ্নেয়গিরির আগুনে মারা গেল। সেই দিন থেকেই শুরু। ফসলের মাঠের বিস্তীর্ণ এলাকায় এক স্থান থেকে অন্য স্থানে দ্রুত যাবার ভাবনাচিন্তা শুরু জার্মানির এক সিভিল সার্জন এর মাথা থেকে বেরোল এক নতুন ধরনের যান। কখনো দু চাকা কখনো তিন চাকা প্রভৃতি রূপ পাল্টে ছড়িয়ে পড়ল জার্মানি ফ্রান্স প্রভৃতি দেশে। লন্ডনের ডেনিস জনসন নামক এক উৎসাহী ১৮১৮ সালে তৈরি করলেন আরেক ধরনের যান। যা দুচাকায় চলে। ক্রমশ এই যানটি বিভিন্ন প্রান্তে শুধু উৎসাহ নয় প্রবল উদ্দীপনায় জনপ্রিয় হয়ে উঠতে লাগল কাজের সুবিধার্থে। একদিকে জনপ্রিয়তা অন্যদিকে তার রূপ পরিবর্তন হয়ে কী করে আরও সহজ স্বাভাবিক হয়ে উঠতে পারে সেই ভাবনা। আমরা বর্তমান যুগের আধুনিক সাইকেল এর দিকে তাকালে দেখতে পাবো দুশো বছরে তার অবয়ব বা রূপ পরিবর্তন হয়েছে বহুবার। এক অর্থে ১৮৬০ সাল থেকে ১৮৮০ সাল ছিল বাইসাইকেলের বিবর্তনের গতি। দুচাকার পিঠে ভর করে করে দ্রুত এক স্থান থেকে আরেক স্থানে কাজ-কর্মে চলে যাওয়া যায়। শুধু পুরুষের উপযোগী? নারীদের উপযোগী সাইকেলও বেরিয়ে গেল। মেয়েদের সাইকেল নিয়ে আলোড়ন পড়ে গেল গোটা দুনিয়ায়। ফেমিনিজম অ্যান্ড সাইকেল। মাঠের ফসল দেখাশোনার থেকে যুদ্ধের কাজেও সাইকেল এক অনন্য ভূমিকা নিয়েছিল। এই সাইকেলের উন্মাদনাতেই সেদিন ফ্রান্সের প্রসিডেন্ট এলিযাবেথ উইলিয়ার্ড লিখেছিলেন ‘A woman rides on a wheel ‘। নারীশক্তির বহিঃপ্রকাশ সেদিন ছিল সাইকেল। বিজ্ঞানী জগদীশচন্দ্র বসু, বিজ্ঞানী প্রফুল্লচন্দ্র রায় এবং স্বামী বিবেকানব্দ – এই তিন পৃথিবী বিখ্যাত বাঙালি ইংল্যান্ডের পথে সাইকেল চালানোয় হাত পাকিয়েছিলেন। জগদীশচন্দ্র চন্দননগর ছেড়ে কলকাতায় মেছুয়ায় থাকাকালীন খুব ভোরে উঠে সাইকেল নিয়ে চলে যেতেন গড়ের মাঠে। সঙ্গে থাকত ভগ্নিপতি আনন্দমোহন বসুর ভাতুষ্পুত্র হেমেন্দ্রমোহন বসু। এই হেমেন্দ্রমোহনই প্রথম কলকাতায় সাইকেলের ব্যবসা শুরু করে ছিলেন।

সাইকেল নিরাপদ ও স্বাধীনযান। বিলেতের অক্সফোর্ড, ইউরোপের আমস্টারডাম ও লাতিন আমেরিকার বোগোটায় (কলম্বিয়ার রাজধানী) ইতিমধ্যেই সাইকেল আন্দোলন বিপ্লবের জায়গায় পৌঁছেছে। এই সমস্ত শহরে মেয়র-প্রেসিডেন্টদেরও সাইকেল চড়ে দফতরে যেতে দেখা যায়। প্রতিটি জায়গাতেই সাইকেলবান্ধব পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে।

সাইকেল মোটামুটি সবাই চালাতে পারে। ব্যালেন্স রেখে বসতে পারলেই হল সিটে। সাইকেল না গণ-পরিবহণ, না রাজকীয়-পরিবহণ। গণ-পরিবহণ নয়, কারণ সাইকেল একসাথে অনেককে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নিয়ে যায় না। পৃথিবীতে সিংহভাগ সাইকেল চলে এক-সওয়ারিতে। আবার সাইকেল রাজকীয় পরিবহণও নয়। কখনও অদৃশ্য হয় আবার ফিরে আসে। আমাদের শহর কলকাতায় গত শতাব্দীর শেষ দশকে অদৃশ্য হয়ে গেল সব সাইকেল, লোকে মোটরগাড়ি মোটরবাইক স্কুটি কিনে ফেলল। কারণ লোকে মনে করল, সাইকেল গরীবী। অতএব গরীবী হটাও। সাইকেল ছেড়ে মোটরবাইক স্কুটি আরোহন হয়ে দাঁড়ালো এমপাওয়ারমেন্ট। ফের কয়েক বছর আগে থেকে সাইকেল ফিরতে শুরু করেছে কলকাতায় — রঙিন রঙিন ও দেখতে সুন্দর হয়ে।

একথা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই, বাস্তবতঃ সাইকেল গরীবের যান। সাইকেল চালকের মধ্যে গরীবের যাবতীয় সীমাবদ্ধতার মূর্ত মানবরূপ। প্রশাসনিক ক্ষমতা সরকারের উদাসীনতা আর বিচারের অন্ধত্বের ত্রিফলার সামনে সাইকেল চালক মোটেই প্রতিবাদী নয়, পলায়নপর। রাজপথ যতটা সম্ভব এড়িয়ে সে রচনা করে এক গলিরাস্তার নেটওয়র্ক, শহর জুড়ে। শহরের মধ্যে যেন সুরঙ্গপথ। কেননা তার যাতায়াত অদৃশ্য। যে সাইকেল চালায় না, সে প্রাইভেট মোটরগাড়ি ব্যবহার করুক বা গণ-পরিবহণ, তার কাছে রাজপথই রাস্তা। সাইকেল সেখানে প্রায় অদৃশ্য। সে ভাববেই, উপমহাদেশে বড়ো শহরে সাইকেল চালানোর পরিকাঠামো নেই। শহরের সাইকেল চালক গরীব। তাই সে সীমাবদ্ধ।

সাইকেল সহজ সাশ্রয়ী পরিবেশবান্ধব যান হিসেবে আজ সর্বজনস্বীকৃতি আদায় করে নিয়েছে। এক কথায়, সাইকেল, বর্তমানে অতিমারির প্রকোপে মানব জাতির অগ্রগতির প্রতীক ।

এই সংবাদটি শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




raytahost-demo
© All rights reserved © 2019
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: Jp Host BD