মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:৫১ পূর্বাহ্ন

শিরোনাম :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ (কসবা-আখাউড়া) আসনে আইন মন্ত্রী আনিসুল হক বে-সরকারি ভাবে নির্বাচিত কসবায় ভোট দিয়ে বাড়ি ফেরার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ১ আহত-৪ কসবায় এলজিইডি’র শ্রেষ্ঠ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান আগরতলায় স্রোত আয়োজিত লোকসংস্কৃতি উৎসব কসবা প্রেসক্লাব সভাপতি’র উপর হামলার প্রতিবাদে মানবন্ধন ও প্রতিবাদ সভা কসবায় চকচন্দ্রপুর হাফেজিয়া মাদ্রাসার বার্ষিক ফলাফল ঘোষণা, পুরস্কার বিতরণ ও ছবক প্রদান শ্রী অরবিন্দ কলেজের প্রথম নবীনবরণ অনুষ্ঠান আজ বছরের দীর্ঘতম রাত, আকাশে থাকবে চাঁদ বিএনপি-জামাত বিদেশীদের সাথে আঁতাত করেছে-কসবায় আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ১৩ দিনের জন্য ভোটের মাঠে নামছে সশস্ত্র বাহিনী
ক্ষয় হচ্ছে সামাজিক মূল্যবোধ

ক্ষয় হচ্ছে সামাজিক মূল্যবোধ

লোকমান হোসেন পলা

মানুষের নৈতিকতার যখন চরম অধঃপতন ঘটে, তখনই তারা ধর্ষণের মতো জঘন্য অপরাধ করে। সাম্প্রতিককালে কয়েকটি ধর্ষণের ঘটনা বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে। প্রতিনিয়িতই ঘটছে ধর্ষণের মতো জঘন্যতম অপরাধ। থামছেই না এ বর্বরতা। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে এ রকম কয়েকটি ঘটনায় চরম উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। হতভম্ব হচ্ছেন বিবেকবান মানুষ। চলন্ত গাড়ি, কর্মস্থল, বাসাবাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতালসহ বিভিন্ন স্থানে প্রায় প্রতিদিনই ঘটছে এসব ঘটনা। ধর্ষণের শিকার হচ্ছেন শিশু থেকে পঞ্চাশোর্ধ্ব নারী। বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার প্রতিবেদন বলছে, আগের মাসগুলোর তুলনায় চলতি মাসে ধর্ষণ আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। এ ব্যাপারে জরুরি ও অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া না হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।

সামাজিক মূল্যবোধের অভাব, নৈতিক অবক্ষয়, পারিবারিক অনুশাসনের অনুপস্থিতিসহ নানা কারণে ধর্ষণ বাড়ছে বলে সমাজ বিশ্লেষকরা মনে করেন। বিশেষ করে এ ধরনের ঘটনায় অপরাধীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়ায় দিনদিন বেড়েই চলেছে। আমি মনে করি, তাদের এই যুক্তির পক্ষে অবশ্যই সত্যতা রয়েছে। কারণ শিশু থেকে বৃদ্ধারা যখন এ নরপশুদের হাত থেকে রেহায় পায় না, তখন আমাদের আর বুঝতে বাকি থাকে না যে, সমাজ এখন কোথায় দাঁড়িয়ে আছে। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছে যে, পত্রিকা বা অনলাইন দেখব আর ধর্ষণের খবর পড়ব না তা কি হয়? গত দুই সপ্তাহে এনটিভি অনলাইনের সংবাদ ছিল এমন ‘বিয়েতে রাজি না হওয়ায় কিশোরীকে ধর্ষণ’, ‘রাজধানীতে কলেজছাত্রীকে ধর্ষণ, চিত্র ধারণ’, ‘প্রেমের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় কিশোরীকে ধর্ষণ’, ‘স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের চেষ্টা, লাখ টাকায় রফা’, ‘নেত্রকোনায় স্কুলছাত্রী ধর্ষণের শিকার’, ‘গাংনীতে স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ, কলেজছাত্র আটক’, ‘ধর্ষণের পর কিশোরীর লাশ নদীতে!’, ‘গণধর্ষণের অভিযোগে ছাত্রলীগ-ছাত্রদল নেতাকে গণপিটুনি’, ‘বগুড়ায় মাদ্রাসাছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ’, ‘ঢাবিতে ধর্ষণের অভিযোগে ছাত্রলীগকর্মী গ্রেপ্তার’, ‘ত্রিপুরায় কিশোরীকে ধর্ষণের চেষ্টা, গাছে বেঁধে নির্যাতন’ ও ‘লক্ষ্মীপুরে দুই শিশু ধর্ষণের শিকার’ প্রভৃতি শিরোনাম বোধহয় লিখে শেষ করা যাবে না। এসব শিরোনাম যেন প্রতিটি গণমাধ্যমের একটি অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সর্বশেষ (৩০ সেপ্টেম্বর) বেসরকারি সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) থেকে প্রকাশিত এক তথ্যে জানা গেছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সারা দেশে ৫৯১ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। ধর্ষণচেষ্টার শিকার হয়েছেন ৭৬ জন। আর ঢাকা মহানগর পুলিশের হিসাব অনুযায়ী গত আগস্ট মাসেই ১৫৯ জন নারী-শিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছে। এর মধ্যে ধর্ষণ ও গণধর্ষণের শিকার হয়েছে অন্তত ৪৫ জন।

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের হিসাবে গত জুলাই মাসে ৮৩টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে গণধর্ষণের শিকার হন ১৫ জন। ধর্ষণের পর হত্যা করা হয় নয়জনকে। এ ছাড়া ধর্ষণের চেষ্টা করা হয় ১৯ জনের ওপর। এ ছাড়া শ্লীলতাহানির শিকার হন ১০ জন। আইন ও সালিস কেন্দ্রের হিসাবে গত ছয় মাসে (জানুয়ারি-জুন, ২০১৫) ধর্ষিত নারীর সংখ্যা ৩২৬। ধর্ষণের পর খুন হয়েছে ২৯ জন। মানবাধিকার সংস্থা ‘অধিকার’-এর হিসাবে গত ১৫ বছরে (২০০১-২০১৫) দেশে ১০ হাজার ৮৩২টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে মহিলা পাঁচ হাজার ৭০৫ জন, শিশু পাঁচ হাজার ২০, গণধর্ষণ এক হাজার ৭৩৬টি, ধর্ষণের পর হত্যা এক হাজার ৩১২টি, ধর্ষণের পর আত্মহত্যা ১৩৭টি। এসব প্রতিবেদনের তথ্য দেখে আমরা হতবাক হই। এ ধরনের পরিসংখ্যানই বলে দেয়, বর্তমান সময়ে ‘ধর্ষণ’ নামক বিভীষিকা আমাদের জীবনে কতটা চেপে বসেছে। কোনো কিছু থেকেই এ জঘন্য অপরাধের মুক্তি মিলছে না।

এখন প্রশ্ন উঠেছে, আমরা কি পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের মতো ধর্ষণে এগিয়ে চলছি? যে দেশকে নিয়ে পশ্চিমা সমাজ রেন্ডিয়া (রেপ+ইন্ডিয়া) বলে অবহিত করে। ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরোর (এনসিআরবি) তথ্য অনুযায়ী, ভারতে প্রতিদিন ৯২ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়। ২০১৩ সালেই এ সংখ্যা ছিল ৩৩ হাজার ৭০৭। ভারতে এ ধরনের ধর্ষণের ঘটনা ঘটলেও বিশ্বে ধর্ষণের ক্ষেত্রে শীর্ষস্থানীয় দেশ কিন্তু ভারত নয়। ওই স্থানটি দখল করে রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র। তারপর পর্যায়ক্রমে দক্ষিণ আফ্রিকা, সুইডেন, ভারত, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ফ্রান্স, কানাডা, শ্রীলঙ্কা ও ইথিওপিয়া। আমাদের সৌভাগ্য যে, ধর্ষণে বিশ্বের শীর্ষ ১০ দেশের মধ্যে বাংলাদেশ নেই। তবে অবস্থান যাই হোক না কেন, যা চলছে, যেভাবে চলছে এটা আমাদের জন্য সুখকর নয়।

সাম্প্রতিক সময়ে প্রতিদিন যেভাবে ধর্ষণের চিত্র ফুটে উঠছে, তাতে শীর্ষ দশে উঠতে হয়তো আর বেশি সময় লাগবে না।

যে বিচার আমার পায়নি
“১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও তাদের সহযোগী বাহিনীর সদস্যরা দুই থেকে চার লক্ষ বাঙালি নারীকে ধর্ষণ করে। গবেষকদের মতে, সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালি মুসলিম এবং সংখ্যালঘু হিন্দু উভয় সম্প্রদায়কে ভীতসন্ত্রস্ত করতে এই ধর্ষণ চালানো হয়েছিল। এর ফলে হাজার হাজার নারী গর্ভধারণ করেন, যুদ্ধশিশুর জন্ম হয় এবং গর্ভপাত, আত্মহত্যা ইত্যাদি সমস্যার সূত্রপাত হয়। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের সহযোগী বাহিনীর আত্মসমর্পণের মাধ্যমে এই যুদ্ধাপরাধের সমাপ্তি ঘটে।”

বর্তমান সময়ের আলোচিত এক বিষয় ধর্ষণ, যা নিয়ে উদ্বিগ্ন সমাজের সকল স্তরের মানুষ। অভিভাবকরা প্রতিনিয়তই তাদের আদরের কন্যাশিশুদের নিয়ে ভীষণ আতঙ্কিত ও চিন্তিত। মেয়েরা আজ কোথাও নিরাপদ নয়। ঘরে-বাইরে, বাসে, লঞ্চে, ট্রেনে, স্কুল, কলেজ, কর্মক্ষেত্রসহ সর্বক্ষেত্রে তারা আজ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।

যেখানে একজন পুরুষ তার স্বাভাবিক জীবন-যাপনে কোন বাধার সম্মুখীন হতে হয় না, সেখানে একজন নারীকে প্রতিনিয়ত বাধার সামনে পড়তে হচ্ছে। ধর্ষণ একটি সামাজিক ব্যধী, যার মুল কারন হচ্ছে আমাদের আজকের এই তালমাটাল সামাজব্যবস্থা। যেখানে আমরা একে-অপরের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পরছি, ক্রমান্বয়ে দুরে সরে যাচ্ছি আন্তরিক বন্ধন থেকে। ক্ষয় হচ্ছে সামাজিক মূল্যবোধ।

ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় যুদ্ধে জয় পরাজয়ে ধর্ষণ
বীরত্বের একটা দিক । যুদ্ধে জেতার পর তাই অসহায় বা বন্দি নারী ধর্ষিত হয়। যুদ্ধে জেতা বীর কিংবা তাদের অনুসারীরাই এসব করে। আমাদের দেশে এমন কি যুদ্ধো হলো যে নারী পরাজয় করেছে আর ঘরে বাহিরে ধর্ষণের শিকার হচ্ছে,,,,!

এই সংবাদটি শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




raytahost-demo
© All rights reserved © 2019
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: Jp Host BD