পাভেল আমান।।
পরাধীনতার নাগপাশ শৃংখল থেকে ভারতমাতাকে যে কয়েকজন দেশাত্মবোধে উদ্বেলিত তরতাজা নিবেদিতপ্রাণ স্বাধীনতা সংগ্রামী বীর সৈনিক সাহসী যোদ্ধা জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত আপোষহীনভাবে দুর্বিনীত লড়াই-সংগ্রাম অদম্য মনোভাবে ভারতবর্ষকে স্বাধীন করতে চেয়েছিল তাদের মধ্যে অন্যতম বিপ্লবী সূর্যসেন। আমরা সকলেই অবগত ভারতের স্বাধীনতা একদিনে আসেনি , একভাবেও নয় । এর পেছনে আছে কত মানুষের ত্যাগ , প্রেরনা ও জীবনপন । পরাধীনতার নাগপাশ থেকে দেশকে মুক্ত করার ব্রত নিয়ে সারা ভারতে তখন আন্দোলন চলছে । চারিদিকেই ছড়িয়ে পড়েছে বিপ্লবের দাবানল । যেমন গান্ধীজীর অসহযােগ আন্দোলন জোরদার হয়ে উঠেছে , তেমনি বিপ্লবীদের হিংসাত্মক আন্দোলনও বেড়ে চলেছে । সেই মহেন্দ্রক্ষণে , আবির্ভূত হয়েছেন বিপ্লবী মহানায়ক মাস্টারদা সূর্য সেন ।মাস্টারদা সূর্য সেন উপমহাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের জন্য নিজের জীবনকে উৎসর্গ করে দিয়েছিলেন । বীর বিপ্লবী , সশস্ত্র সংগ্রামী , তৎকালীন ব্রিটিশ বিরােধী বিদ্রোহের চট্টগ্রাম অঞ্চলের সর্বাধিনায়ক ফাসিকাষ্ঠে ঝুলে প্রাণ দিয়ে স্বাধীনতার জয়গান গেয়ে গেছেন । তিনিই প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্বের জন্য এগিয়ে আসেন গড়ে তােলেন সশস্ত্র সংগ্রাম । চট্টগ্রামের বিভিন্ন অস্ত্রাগার লুণ্ঠন তার বুদ্ধি পরামর্শ নেতৃত্বেই সংঘটিত হয়েছিলাে । ব্রিটিশবিরোধী লড়াইয়ে চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের ঘটনার জন্য তিনি ইতিহাসে বিখ্যাত হয়ে আছেন। বিপ্লবী বীর মাস্টারদা সূর্যসেন জন্মেছিলেন ১৮৯৪ সালের ২২ মার্চ। চট্টগ্রামের জনসাধারণ বলত টাকা দিয়ে সূর্য সেনকে ধরা যায় না | তাই তো তাঁকে ধরিয়ে দেবার জন্যে ব্রিটিশরা হাজার হাজার টাকা পুরস্কার ঘোষণা করলেও কেউ তাঁকে ধরিয়ে দিতে চায়নি। দিনের পর দিন মাস্টারদা চট্টগ্রামে আত্মগোপন করে বিপ্লবী কর্মকান্ড পরিচালনা করে গিয়েছেন।সূর্যসেন বিপ্লবী কর্মকান্ড , দুঃসাহসী অভিযান , সঠিক নেতৃত্ব এই উপমহাদেশের মানুষকে স্বাধীনতার মন্ত্রে উজ্জীবিত করেছিলাে । দেশের তরুণ ও যুবশক্তি তার আত্মাহুতিতে উদ্বুদ্ধ হয়ে মরণপণ স্বাধীনতা সংগ্রামে দলে দলে ঝাপিয়ে পড়ে। ব্রিটিশ ভারত থেকে চট্টগ্রামকে চার দিন বিচ্ছিন্ন রেখে বুঝিয়ে দিয়েছিল বাংলার অকুতোভয় দামাল ছেলেরা চাইলে যেকোনো অসাধ্য কর্ম সাধন করতে পারে। দেশমাতৃকার মুক্তির জন্য অকাতরে প্রাণ দিতে পারে। জালালাবাদ যুদ্ধে ১২ জন বিপ্লবীর আত্মদানের মাধ্যমে সূর্য সেন প্রমাণ করলেন, বাঙালি বীরের জাতি, স্বাধীনতা অর্জনের জন্য মৃত্যুকে বরণ করতে সদা প্রস্তুত। তাদের নিবেদিতপ্রাণ দেশাত্মবোধ হার না মানা মানসিকত। লড়াকুু মনোভাবেই আসমুদ্র হিমাচল সৃষ্টি হয়েছিল তৎকালীন নিষ্ঠুর ব্রিটিশ শাসকের প্রতি বিক্ষোভ প্রতিবাদ । স্বাধীনতার মশাল ছড়িয়ে পড়েছিল সমস্ত ভারতবাসীর মনে। তারা যেন প্রত্যেকেই প্রস্তুত হয়েছিল ব্রিটিশ শাসক কে উৎখাত করতে পরাভূত করতে। যাার পথ শহীদ সূর্য সেন এর মত ছিল আরো অগণিত বিপ্লবী স্বাধীনতা সংগ্রামী নাম না জানা শহীদ দেশ প্রেমিক। জন্মদিবসে এই স্বাধীনতা সংগ্রামী ভারত মাতার যোগ্য সন্তান বীর বিপ্লবী অকুতোভয় শহীদ সূর্য সেনের জন্ম দিবসে রইল শতকোটি প্রণাম ও শ্রদ্ধা ভক্তিতি ভালোবাস। তার আত্মাহুতি আদর্শ জীবন দর্শন তখনই যথার্থথ অপ্রাসঙ্গিক হয়ে উঠবে যদি আমরাা নিজেদের সংকীর্ণতা স্বার্থকে পিছনে ফেলে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে ভারতবর্ষকে ভালবসতে পারি, দেশের জন্য কিছুু করতে পারি। বর্তমান সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্পে জর্জরিত, বিভাজন হিন্দুত্ববাদ রাজনীতি যখন ভারতে জুড়ে চাঁদ উঠেছে সংখ্যালঘুদের বেঁচে থাকার অধিকার খর্ব হচ্ছে ঠিক সেই মুহুর মুহূর্তে ভারতের গণতন্ত্র বহুত্ব সংহতি সৌজন্যে সম্প্রীতির মজবুত নজির গড়তে বিপ্লবী শহীদ সূর্যসেনের জীবন দর্শন আমাদের যথেষ্ট সহায়ক হয়ে উঠবে।
— হরিহার পাড়া- মুর্শিদাবাদ
Leave a Reply