শেখ সায়মন পারভেজ হিমেল।।
হাসিখুশি দম্পতি সোহানা ও হাসনাত ঠাস বুনটের শহর ঢাকার এক কোণে সাজাতে শুরু করেছিল আপন ভূবন৷ এক দারুণ অনুভূতিতে বিভোর ছিল ওরা। নতুন বাড়ি, নতুন পরিবেশ, নতুন করে সংসার গোছানোর রোমাঞ্চ! নতুন প্রতিবেশি, নতুন কিছু সম্পর্ক। নতুন মানেই তো অভিনবত্ব। তবে সব সময়ে কী তাই হয়? বাঁধ সাধে “ফোর্থ ফ্লোর” এর মুনির নামের অভদ্র লোকটা। কেমন অসহ্যকর ওর উপস্থিতি। অচেনা এই লোকটার ওপর সোহানার মনে জমে ওঠে বিতৃষ্ণা। এমনটা হবার কারণ? কারণটাও অজানা। ঐ যে কথায় আছে না, “যারে দেখতে নাহি তার চলন বাঁকা।” এখানে ব্যাপারটা অনেকটা সেরকমই। সোহানার ছেলেমানুষিতে মজা পায় হাসনাত। ভাসিয়ে নিতে চায় ওকে অনন্য আবেগে। আজব সেই তিক্ততার স্বাদে মিলে যেতে থাকে ওদের পরিণয়ের ছন্দ। আর এভাবেই সব বিস্বাদ একপাশে সরিয়ে যখন ওদের রঙিন পৃথিবীর অচেনা আকাশে রঙধনু রঙের ছটা তখন লাগবে লাগবে তো এর মাঝেই শুরু বিপত্তি। হাসিখুশি সোহানার আচরণে দেখা দেয় অস্বাভাবিকতা৷ এটা কী নিছক গর্ভকালীন মানসিক অস্থিরতা নাকি অন্য কিছু? গোটাটাই কি ভ্রম না আড়ালে লুকোন ছিল অন্যকিছু৷ সেই রহস্যই দেখানো হয়েছে “ফোর্থ ফ্লোর” উপন্যাসে৷
বস্তুত আমরা প্রত্যেকেই নিজস্ব কিছু চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। এটাতো ধ্রুব সত্য। কেউ বা হাসিখুশি কেউ বা গম্ভীর। কেউ বা চঞ্চল তো কেউ বা রাশভারী। তবে এই আমরাই কিন্তু নিজেদের অজান্তে এমন কিছু বৈশিষ্ট্য লালন করে থাকি যা আমাদের নিজেদেরই অজানা। আর সেই অজানা কারণগুলো নিজের নিজের সবচেয়ে প্রিয় মানুষের এমনকি আমার পাশে থাকা অচেনা লোকটির জীবনেও কী পরিমাণ ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে তা বর্ণনাতীত। এই ভয়ংকর টুইস্টকেই লেখক সোনিয়া তাসনিম আপু তার এই বইয়ে তুলে এনেছেন খুব সূক্ষ ভাবে। বইটি পড়তে গিয়ে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত তীব্র আকর্ষণ ও টানটান উত্তেজনা অনুভব করেছি দারুণ ভাবে। ৮৮ টি পৃষ্ঠার ছোট্ট এই বইয়ের কাহিনী নিঃসন্দেহে পাঠক হিসেবে আমার মনোযোগ কেড়ে নিতে সক্ষম হয়েছে শতভাগ। সিজোফ্রেনিয়া নামক ভয়াল মানসিক ক্যান্সার ব্যাধির ভয়াবহতা সত্যি অন্তরাত্মা কাঁপিয়ে তুলেছে জব্বর ভাবে। সাইকো থ্রিলার জনরার উপন্যাসগুলোকে মূলত বলা হয় মস্তিষ্কের খেলা। আর সোনিয়া আপু তার লেখনীর জাদুতে সেই খেলা খেলে গিয়েছেন সাবলীলভাবে। এখন মনেই হতে পারে শেষ অবধি আসলে কী ঘটে? এই ভয়ংকর মানসিক ব্যাধি সিজোফ্রেনিয়ায় আসলে কে ধরাশায়ী? সোহানা না মুনির? তা এদের যেই এই ঘটনার নেপথ্যে থাকুক না কেন কী পরিণতি ঘটে তাদের শেষ পর্যন্ত? এই প্রশ্নগুলোর জবাব তো শুধুমাত্র পড়বার পরই পাঠক জানতে পারবে৷ অনেক শুভকামনা লেখক সোনিয়া তাসনিম আপুর জন্য। শব্দের শক্ত গাঁথুনি আর সাবলীল কাহিনী প্রবাহকে বিনি সুঁতোয় ফের গেঁথে নেবার জন্য।
বইটি যেহেতু এখন চলমান তাই পুরো রহস্য এখানে উন্মোচন করাটা সমীচীন মনে করিনি৷ তাই পাঠকদের জন্য কিছু রহস্য রেখে গতানুগতিকতার বাইরে একটি রিভিউ দেবার চেষ্টা করলাম। আশা করব পর্যালোচনাটির মাধ্যমে অনেক পাঠকই বইটির প্রতি আগ্রহী হবেন।
পরিশেষে, চমৎকার প্রচ্ছদ, নির্ভুল সম্পাদনা আর নানন্দিক প্রোডাকশনের জন্য “অবসর” প্রকাশনীকে জানাই ধন্যবাদ।
উপন্যাসঃ
লেখকঃ সোনিয়া তাসনিম
জনরাঃ সাইকো থ্রিলার
প্রকাশনীঃ অবসর
মলাটমূল্যঃ ২২০ টাকা
Leave a Reply