বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪, ১১:৩২ অপরাহ্ন

শিরোনাম :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ (কসবা-আখাউড়া) আসনে আইন মন্ত্রী আনিসুল হক বে-সরকারি ভাবে নির্বাচিত কসবায় ভোট দিয়ে বাড়ি ফেরার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ১ আহত-৪ কসবায় এলজিইডি’র শ্রেষ্ঠ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান আগরতলায় স্রোত আয়োজিত লোকসংস্কৃতি উৎসব কসবা প্রেসক্লাব সভাপতি’র উপর হামলার প্রতিবাদে মানবন্ধন ও প্রতিবাদ সভা কসবায় চকচন্দ্রপুর হাফেজিয়া মাদ্রাসার বার্ষিক ফলাফল ঘোষণা, পুরস্কার বিতরণ ও ছবক প্রদান শ্রী অরবিন্দ কলেজের প্রথম নবীনবরণ অনুষ্ঠান আজ বছরের দীর্ঘতম রাত, আকাশে থাকবে চাঁদ বিএনপি-জামাত বিদেশীদের সাথে আঁতাত করেছে-কসবায় আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ১৩ দিনের জন্য ভোটের মাঠে নামছে সশস্ত্র বাহিনী
বলিহার রাজবাড়ি, নওগাঁ সদর, নওগাঁ

বলিহার রাজবাড়ি, নওগাঁ সদর, নওগাঁ

ড. মোহাম্মদ শামসুল আলম।।

নওগাঁ সদর উপজেলার অধীন একটি ঐতিহ্যবাহী গ্রাম বলিহার। নওগাঁ শহর হতে প্রায় ১৫ কিলোমিটার পশ্চিমে এটির অবস্থান। রাজশাহী-নওগাঁ মহাসড়কের বলিহার কলেজ মোড় বা বাবলাতলির মোড় থেকে পশ্চিম-উত্তর দিকে এক কিলোমিটার দূরত্বে রাজবাড়িটি অবস্থিত। আবার নওগাঁ-মহাদেবপুর মহাসড়কের সরস্বতীপুর বাজারের পশ্চিমে কদমতলীর মোড় থেকে দক্ষিণ দিকে প্রায় চার কিলোমিটার দূরত্বে এটির অবস্থান। এটির অপর নাম পাওয়া যায় কুড়মুড়ি বা কুড়মইল হিসেবে। স্থানটি পুকুর ও দিঘির জন্য প্রসিদ্ধ। স্থানীয় জনসাধারণের মতে প্রায় ছোটোবড়ো মিলে ৩৬৫টি পুকুর বা দিঘি আছে। বর্তমানে এই রাজবাড়িকে কেন্দ্র করে এখানে ছোটো বাজার গড়ে উঠেছে। জানা যায় সপ্তদশ শতাব্দীতে মোগল আমলে এই জমিদারির উদ্ভব ঘঠেছিল। এই বংশের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন নৃসিংহ চক্রবর্তী নামক একজন ব্রাহ্মণ। তাঁর আদি নিবাস ছিল ঢাকা জেলার বিক্রমপুরে। তিনি বিক্রমপুর হতে নওগাঁ জেলার বলিহারে এসে খাঁ জমিদারিতে চাকরি নেন। চাকুরিতে প্রবেশ করার পর ক্রমান্বয়ে তিনি উচ্চপদে অধিষ্ঠিত হন। এক পর্যায়ে তিনি খাঁ জমিদার পরিবারের এক দুহিতাকে বিয়ে করে শ্বশুরের কাছ থেকে একটি তালুক লাভ করেন। তালুক লাভ করার পর এর আয়তন বৃদ্ধি করে বলিহারে বসতি স্থাপন করেন। পরবর্তীতে তালুকের আয়তন বৃদ্ধি পেয়ে বিশাল জমিদারিতে পরিণত হয়।

রাজবাড়ির পূর্বমুখী দ্বিতল প্রবেশ তোরণটি এখানকার আভিজাত্য আজও ধারণ করে আছে। প্রবেশপথের সম্মুখে দুটি বহির্গত বারান্দা ও দুধারে কতগুলো কক্ষের সমন্বয়ে তোরণটি নির্মিত। স্থানীয় জনসাধারণের মতে প্রবেশ তোরণের দ্বিতলে অবস্থিত কক্ষগুলো অতিথিশালা হিসেবে ব্যবহৃত হতো। এই জমিদারির প্রতিষ্ঠাতা নৃসিংহ চক্রবর্তীর পুত্রের নাম গোপাল। গোপালের পুত্র রামকান্ত ছিলেন একজন খ্যাতিমান জমিদার। তিনি নিজের কৃতকর্মের পুরস্কার স্বরূপ রায় উপাধি লাভ করেন। রামকান্তের মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র ও প্রপৌত্রগণ জমিদারির কলেবর বৃদ্ধি করেন। রামকান্তের ছিল চারজন পুত্রসন্তান। তাঁরা হলেন-কৃষ্ণদাস বা কৃষ্ণদেব, রামরাম, প্রাণকৃষ্ণ ও বিষ্ণুরাম। বড়ো ছেলে কৃষ্ণদাস রংপুরের বাহিরবন্দ, ভিতরবন্দ ও স্বরূপপুর পরগনার জমিদার রানী সত্যবতীর বোনকে বিয়ে করেন। বিবাহের কারণে যৌতুক স্বরূপ পরগনার লক্ষণপুরের জমিদারিটি লাভ করেন। এই বিয়ের কারণে অপর দুটি ভ্রাতা রামরাম ও প্রাণকৃষ্ণ রানী সত্যবতীর জমিদারিতে গুরুত্বপূর্ণ পদে চাকরি পান। পরবর্তীতে তাঁরা ১৭৩৩ বা ১৭৩৫ খ্রিষ্টাব্দে রানী সত্যবতীর রংপুরের ভিতরবন্দ পরগনার জমিদারিটি লাভ করেন। অবশ্য এমন বক্তব্য নিয়ে মতান্তর আছে। কেউ বলেছেন দখল করে নিয়েছেন, আবার কেউ বলেছেন ভ্রাতাদ্বয়ের কাজে সন্তুষ্ট হয়ে রানী দান করেছেন। এভাবে রংপুর ও দিনাজপুরে এই বলিহার এস্টেটের সম্প্রসারণ ঘটে। পরবর্তীতে পরগনাটি আবার দুটি ভাগে ভাগ হয়।

জমিদারি দুভাগে ভাগ হবার পর রামরাম পান জমিদারি সাড়ে আটআনির অংশ এবং প্রাণকৃষ্ণ পান সাড়ে সাতআনির অংশ। আবার অন্যমত পাওয়া যায়-রামরামের ভাগে পড়ে পৌনে নয় আনা (আট আনা পনের গণ্ডা) এবং প্রাণকৃষ্ণের ভাগে পড়ে সোয়া সাত আনা (সাতআনা পাঁচগণ্ডা) অংশ। সর্বসাধারণের কাছে রামরামের বংশধরের ছিল নয়আনির জমিদারি। আর প্রাণকৃষ্ণের বংশধরের ছিল সাত আনির জমিদারি। রামরামের বংশধরগণ রংপুরের ভিতরবন্দে এবং প্রাণকৃষ্ণের বংশধরগণ বলিহারে বসতি স্থাপন করেন। সে কারণে বলিহারের জমিদারি বলতে সাতআনির জমিদার প্রাণকৃষ্ণের বংশধরদের বোঝানো হয়। প্রাণকৃষ্ণের দুজন পুত্রসন্তান ছিল। তাঁরা হলেন-রামচন্দ্র ও জ্ঞাননাথ। উত্তরাধিকারী প্রাপ্ত হয়েছিলেন রামচন্দ্র। তিনি নবাব সুজাউদ্দৌলার কাছ থেকে রায়চৌধুরী খেতাব পেয়েছিলেন। রামচন্দ্রের পুত্র ছিলেন নীলকণ্ঠ। আর নীলকণ্ঠের পুত্র ছিলেন রাজেন্দ্র রায়। তিনি নাটোরের মহারানী ভবানীর পুত্র রামকৃষ্ণের (মৃত্যু ১৭৯৫) কন্যা কাশীশ্বরীকে বিবাহ করে যৌতুক হিসেবে প্রচুর সম্পত্তি বা তালুক লাভ করেন। এই তালুকগুলো হলো-বগুড়া জেলার ডিহি দারিগাছা ও চুপিনগর, রাজশাহীর ডিহি চন্দননগর ও সপুরা, মুর্শিদাবাদের খালগোলা, ডোমকল ও মৃদাৎপুর এবং পাবনার খিদিরপুর। তালুকসমূহ লাভের পর রাজেন্দ্র রায়ের বলিহার জমিদারির শ্রীবৃদ্ধি ও ঐশ্বর্য বহুগুণে বেড়ে যায়।

নিঃসন্তান রাজেন্দ্র রায় ১৮২৩ খ্রিষ্টাব্দে মারা যান। তাঁর মৃত্যুর পর স্ত্রী আনন্দময়ী দেবী অত্যন্ত দক্ষতার সাথে জমিদারির দায়িত্ব পালন করেন। স্বামীর ইচ্ছানুয়ায়ী আনন্দময়ী দেবী শিবপ্রসাদ রায়কে দত্তক গ্রহণ করেন। শিবপ্রসাদ ছিলেন নিঃসন্তান। তবে অকালেই মৃত্যু হয়েছিল শিবপ্রসাদ রায়ের। ফলে আনন্দময়ী দেবীকে ঊনত্রিশ বছর জমিদারি পরিচালনা করতে হয়েছে। আনন্দময়ীর উদ্যোগে শিবপ্রসাদের দ্বিতীয় স্ত্রী হরসুন্দরী দেবী দত্তকপুত্র হিসেবে কৃষ্ণেন্দ্র রায়কে গ্রহণ করেছিলেন। রাজা কৃষ্ণেন্দ্র রায় ছিলেন বলিহার জমিদার বংশের একজন খ্যাতিমান ও ঐতিহ্যবাহী জমিদার। সাহিত্যসম্রাট বঙ্কিমচন্দ্রের সমকালীন ছিলেন বলিহারের মহারাজা কৃষ্ণেন্দ্র রায় বাহাদুর (১৮৩৪-১৮৯৮)।
তিনি উত্তরবঙ্গের সাহিত্য সাধকদের মধ্যে ছিলেন প্রতিভাধর সাহিত্যিক ব্যক্তিত্ব। প্রজাবৎসল জমিদার, মানব হিতৈষী, সমাজ-সংস্কারক, কবি, নাট্যকার এবং সমাজসচেতন সাহিত্যিক হিসেবেও পরিচিত ছিলেন। তিনি একান্ত নিভৃতে সাহিত্যচর্চা করতেন। সৃষ্টির বৈচিত্র্যে, চৈতন্য গভীরতায় এবং কলাকুশলতায় তাঁর সাহিত্যকীর্তি অসাধারণ কিছু না হলেও তাঁর বাণীভঙ্গি বঙ্কিমযুগের মানসিকতা ও পরিবৃত্তকে স্পর্শ করে আছে। কৃষ্ণেন্দ্র রায় জন্মগ্রহণ করেন ১৮৩৪ খ্রিষ্টাব্দে নাটোর জেলার খাজুরা গ্রামে বরেন্দ্রি ব্রাহ্মণ পরিবারে। তাঁর পিতার নাম ছিল শিবচন্দ্র লাহিড়ী। পিতা শিবচন্দ্র লাহিড়ী ছিলেন সেকালের উচ্চমর্যদা সম্পন্ন বিরল এক ব্যক্তিত্ব। ১১ বছর বয়সে কৃষ্ণেন্দ্র রায় দত্তকপুত্র হিসেবে আসীন হন বলিহার রাজপরিবারে। রানী হরসুন্দরী দেবীর স্বামী রাজা শিবপ্রসাদ রায় প্রীতিপূর্ণ মর্যাদায় তাঁকে লালন পালন করেন। তিনি ১৮৫৪ খ্রিষ্টাব্দে ২১ বছর বয়সে জমিদারি পরিচালনার দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। তাঁর আমলে জমিদারির শ্রীবৃদ্ধি ঘটে।

১৮৭৬ খ্রিষ্টাব্দে এই এস্টেটের সম্পত্তির পরিমাণ ছিল ১৮০১৩ একর বা ২৮.১৫ বর্গ মাইল। আর পরগণার এস্টেট সংখ্যা ছিআল ৮টি। বলিহারের রাজপরিবার জনহিতকর ও প্রজাহিতৈষী কার্যাবলি সম্পাদনে তিনি প্রচুর অর্থ ব্যয় করেন। তাঁর জমিদারির সময়কালে নানাদিক দিয়ে উন্নয়ন সাধিত হয়। প্রজাহিতকর ও বহুমুখী কল্যাণ কাজের সাথে তিনি সরাসরি যুক্ত ছিলেন। বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা, চিকিৎসালয় নির্মাণ, রাস্তাঘাট তৈরি ও বৃক্ষ রোপন, পুকুর খনন, অতিথিশালা স্থাপন প্রভৃতি ছিল কেবল প্রজাদের কল্যাণের জন্য। তিনি ধর্মপালনের ক্ষেত্রেও ছিলেন একজন অনুরাগী মানুষ। ধর্মীয় কাজে ব্যয় করতে কখনো কৃপণতা প্রদর্শন করতেন না।

১৮৮৯ খ্রিষ্টাব্দে (১২৯৬ বঙ্গাব্দ) রাজবাড়িতে একটি সমতল ছাদ বিশিষ্ট কালীমন্দির স্থাপিত হয়। এই রাজবাড়িতে জমিদার আমলের তিনটি মন্দির রয়েছে। তিনটি মন্দিরের মধ্যে রাজা কৃষ্ণেন্দ্র রায়ের কৃষ্ণকালি মন্দির। শিবপ্রসাদ রায়ের শিবমন্দির এবং রাজা শরবিন্দু রায়ের রাজরাজেশ্বরী দেবীর মন্দির (১৮২৩ খ্রিস্টাব্দ)। মন্দিরের সম্মুখে স্থাপিত রঙ্গমঞ্চে নাটক ও যাত্রাপালা অভিনীত হতো। অন্যদিকে রাজ প্রাসাদের পূজা-অর্চনার সময় সাধারণের বিনোদনের জন্য নাট্যশালা এবং অস্থায়ী যাত্রামঞ্চের ব্যবস্থা থাকতো। বিদ্যানুরাগীদের জন্য ছিল সমৃদ্ধ পাঠাগার। মুসলমান প্রজাদের জন্য ছিল সংস্কার-সংস্কৃতি ও ধর্মবিশ্বাসের অনুকূল ব্যবস্থাবলির প্রয়োজনীয় অর্থের যোগান। এরূপ একটি উদারনৈতিক রাজ পরিবারের দত্তক হিসেবে গৃহীত হওয়ার কারণে রাজা কৃষ্ণেন্দ্র রায়ের চিত্তলোকের সৌকর্য ও মানবতাবাদ স্বাভাবিকভাবেই সমন্বিত হয়েছিল। তাঁর চরিত্রে অসংখ্য সৎগুণের সমাবেশ ঘটে।

প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পরিবর্তে তিনি রাজপরিবারে অবস্থিত আদর্শ ও গৃহশিক্ষকের পরিচর্যার মধ্যদিয়ে শিক্ষা লাভ করেন। বাংলা ভাষার পাশাপাশি সংস্কৃত-ফারসি ভাষাতেও যথেষ্ট দক্ষ ছিলেন। যুগপত প্রয়োজনে ইংরেজি ভাষাতেও তিনি জ্ঞান লাভ করেন। কৃষ্ণেন্দ্র রায় জমিদারির দায়িত্ব গ্রহণ করে রাজ পরিবারের ঐতিহ্যকে অধিকতর সমৃদ্ধ করেন। শিক্ষা-সংস্কৃতির পরিবেশ সৃষ্টি ও সমাজ থেকে কুপ্রথার বিলোপ সাধনে উদ্যোগ গ্রহণ করেন। কুলীনপ্রথার নিবর্তনে, কন্যাদায়গ্রস্থের বিপদ উত্তরণে, আপৎকালীন বিশেষ করে দুর্ভিক্ষ, বন্যা, মহামারী ইত্যাদি দুর্বিপাকে যথাসাধ্যভাবে অকাতরে আর্তদের সহযোগিতা করতেন। এই মহৎপ্রাণ জমিদারের রাজবংশ গৌরবতিলক হিসেবে সেকালে বিবেচিত ছিল।

শিক্ষাবিস্তারে জন্য রাজশাহী কলেজের প্রতিষ্ঠালগ্নে (১৮৭৩) তিনি মোটা অংকের অর্থ দিয়েছিলেন। ১৮৭৪ খ্রিষ্টাদের দুর্ভিক্ষে দুঃস্থদের সাহায্য করার পাশাপাশি সরকারি তহবিলে অর্থ দিতেন। রাজশাহী এসোসিয়েশন প্রতিষ্ঠার (২১/৭/১৮৭২) সূচনাকালে তাঁর যে অবদান তা মনে রাখার মতো। এই এসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন দিঘাপাতিয়ার রাজা প্রমথনাথ রায়বাহাদুর। পরের বছর তিনি হন রাজশাহী এসোসিয়েশনের দ্বিতীয় সভাপতি। তাঁর প্রজাহিতকর ও কল্যাণমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য ব্রিটিশ সরকার তাঁকে ১৮৮০ খ্রিষ্টাব্দে রাজা এবং ১৮৮৭ খ্রিষ্টাব্দে রাজাবাহাদুর উপাধিতে ভূষিত করেন। এই মহৎপ্রাণ রাজাবাহাদুর ১৮৯৮ খ্রিষ্টাব্দে পরলোকগমন করেন। সাহিত্যিক হিসেবে তিনি যথেষ্ট সুনাম অর্জন করেন। প্রায় ২০ বছর তিনি সাহিত্য সাধনা করেছেন। তিনি ছিলেন একাধারে কবি, নাট্যকার, প্রাবন্ধিক ও গীতিকার। বলিহার রাজবাড়িতে একটি মুদ্রণযন্ত্রও প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। জমিদারির কাগজপত্র, নিজের লেখা বই এবং দুঃস্থ সাহিত্যিকদের বইপত্র তাঁর স্থাপিত প্রেসেই ছাপানো হতো। তাঁর দত্তক পুত্র শরবিন্দর নামে প্রেসটির নামকরণ করা হয়েছিল।

তিনি দীর্ঘ ৪৪ বছর (১৮৫৪-১৮৯৮) জমিদারির তদারকি ও দায়িত্ব পালন করেছেন। বলিহারের নয় চাকার রথ এতদ্ অঞ্চলের মধ্যে প্রসিদ্ধ ছিল। বাৎসরিকভাবে এই রথের মেলা এখনো অনুষ্ঠিত হয়। জমিদার রাজেন্দ্র রায় এই রথের মেলার প্রবর্তন করেন। রাজা কৃষ্ণেন্দ্র ছিলেন নিঃসন্তান সেজন্য দত্তক হিসেবে নিয়েছিলেন শরবিন্দকে। তাঁর পুত্র হলেন কুমার বিমলেন্দ রায়। তিনি এই বংশের শেষ জমিদার। বিমলেন্দ রায়ের স্ত্রী ছিলেন নাটোর জেলার চৌগ্রাম রাজবংশের জমিদার রজনীকান্তের বড় কন্যা ইন্দুপ্রভা। ১৯৫০ খ্রিষ্টাব্দে জমিদারি প্রথা বিলুপ্তি হলে রাজবাড়িটি জনশূন্য হয়। বর্তমনে বলিহার রাজবাড়ির মূল ভবনে ১৯৬৭ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠা করা হয় বলিহার হাইস্কুল এবং ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠা করা হয় প্রাথমিক বিদ্যালয়।

ড. মোহাম্মদ শামসুল আলম
গবেষক, প্রাবন্ধিক, ইতিহাসজ্ঞ
সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, বাংলা বিভাগ, নওগাঁ সরকারি কলেজ, নওগাঁ

এই সংবাদটি শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




raytahost-demo
© All rights reserved © 2019
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: Jp Host BD