মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ০২:৪১ অপরাহ্ন

শিরোনাম :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ (কসবা-আখাউড়া) আসনে আইন মন্ত্রী আনিসুল হক বে-সরকারি ভাবে নির্বাচিত কসবায় ভোট দিয়ে বাড়ি ফেরার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ১ আহত-৪ কসবায় এলজিইডি’র শ্রেষ্ঠ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান আগরতলায় স্রোত আয়োজিত লোকসংস্কৃতি উৎসব কসবা প্রেসক্লাব সভাপতি’র উপর হামলার প্রতিবাদে মানবন্ধন ও প্রতিবাদ সভা কসবায় চকচন্দ্রপুর হাফেজিয়া মাদ্রাসার বার্ষিক ফলাফল ঘোষণা, পুরস্কার বিতরণ ও ছবক প্রদান শ্রী অরবিন্দ কলেজের প্রথম নবীনবরণ অনুষ্ঠান আজ বছরের দীর্ঘতম রাত, আকাশে থাকবে চাঁদ বিএনপি-জামাত বিদেশীদের সাথে আঁতাত করেছে-কসবায় আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ১৩ দিনের জন্য ভোটের মাঠে নামছে সশস্ত্র বাহিনী
মোবাইলের কলরেট: উল্টোপথে বাংলাদেশ

মোবাইলের কলরেট: উল্টোপথে বাংলাদেশ

•মো.এরফান আলী, পরিচালক মৌসুমী সংস্থা, নওগাঁ।

ডিজিটাল বাংলাদেশে কমিউনিকেশন সহজলভ্য করতে মোবাইলের কলরেট যৌক্তিক হবে সেটিই স্বাভাবিক কিন্তু আমাদের দেশের চিত্র উল্টো। ২০১৮ সালের মাঝামাঝি তৎকালীন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী এ্যাডভোকেট তারানা হালিম ঘোষণা দিয়েছিলেন মোবাইলের কলরেট কমানো হবে। তাঁর ঘোষণায় আমরা আশান্বিত হয়েছিলাম যে, সত্যিকার অর্থেই আমরা উন্নয়নের মহাসড়কে
অগ্রসরমান। পার্শ্ববর্তী দেশের মত আমরাও স্বল্প মূল্যে ভয়েস ও ডেটা সুবিধা পাব। আমাদের
আশায় গুঁড়েবালি হতে অবশ্য খুব বেশি সময়ের প্রয়োজন হয়নি। মাত্র ২/৩ মাস পরেই ১৪ আগস্ট ২০১৮ হতে মোবাইলের কলরেট হ্রাসকরণের পরিবর্তে প্রায় দ্বিগুণ বৃদ্ধি করা হয়েছে।
ডাটা ভিত্তিক সেবা চালুর পর ভয়েস কলের মূল্য কমে যায়। টেলিযোগাযোগ সেবার ক্ষেত্রে এটাই আন্তর্জাতিক চর্চা। বাংলাদেশের থ্রিজি, ফোরজি সেবা চালুর পর ভয়েস কলের ট্যারিফ কমবে বলে ধারণা ছিল সবার। কিন্তু বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) সর্বনিম্ন ট্যারিফ ২৫ পয়সা হতে বৃদ্ধি করে ৪৫ পয়সা নির্ধারণ করেছেন। বর্তমান সরকারের অন্যতম ম্যানডেট ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণ করা। এক্ষেত্রে যথেষ্ঠ অগ্রগতিও পরিলক্ষিত হয়েছে। সরকারি প্রায় সকল সেবাই অনলাইনের মাধ্যমে পাওয়া যাচ্ছে। জন্ম- মৃত্যুর নিবন্ধন, পাসপোর্ট, ভিসা যাচাই, জমির রেজিস্ট্রেশন তথ্য প্রাপ্তি প্রভৃতি সেবা অন-লাইনে প্রাপ্তি নিঃসন্দেহে সরকারের অগ্রগতি হিসেবেই বিবেচিত। পক্ষান্তরে ডিজিটাল বাংলাদেশের অন্যতম একটি খুঁটি হলো যোগাযোগ (communication) কে সহজীকরণ ও সহজলভ্যকরণ। যোগাযোগ সহজলভ্য করার কলরেট হ্রাসের পরিতর্তে বৃদ্ধিকরণের ফলে সাধারণ মানুষের নিকট বাড়তি ব্যয়ের
বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে যা নিঃসন্দেহে ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের অন্তরায়। দেশে থ্রিজি, ফোরজি চালু হওয়ার ফলে ভয়েস থেকে ডাটায় রূপান্তরের প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হয়েছে। সচেতন গ্রাহকরা ভয়েস কলের পরিবর্তে অ্যাপস্ ভিত্তিক বিভিন্ন সেবা যেমন: ইমো, হোয়াটস অ্যাপস্, মেসেঞ্জার, ভাইবার প্রভৃতি ব্যবহার করে কথা বলার প্রয়াজন মেটাচ্ছেন। এসব অ্যাপস্ থাকা সত্ত্বেও প্রান্তিক জনগোষ্ঠী কিন্তু ভয়েস কলের উপরই নির্ভরশীল। বেসরকারি ও স্বকর্মসংস্থান খাতে নিয়োজিত দেশের মোট শ্রম শক্তির ৯৮%। তাদের পেশাগত দায়িত্ব পালনের
জন্য ভয়েস কলের মাধ্যমে যোগাযোগ করা অপরিহার্য। প্রান্তিক জনগোষ্ঠী এবং এই শ্রেণীর বিশাল একটি জনগোষ্ঠীর প্রধান নির্ভরশীলতা ভয়েস কলের উপর যারা অর্থনীতির চাকাকে সচল রেখেছেন তাদের উপর বাড়তি ব্যয়ের বোঝা চাপিয়ে দেওয়া কতটা যৌক্তিক তা বোধগম্য নয়। টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান লার্ন এশিয়ার তথ্য মতে ভয়েস কলের সর্বনিম্ন সীমা বেঁধে দেওয়ার এখতিয়ার নেই নিয়ন্ত্রক সংস্থার। প্রতিযোগিতা নিয়মের মধ্যে হচ্ছে কি-না সেটা তদারকির জন্য তারা কাজ করবে । প্রতিবেশী দেশ ভারতে ও আমরা সেই অনুশীলনই দেখতে পাই। ভারতে কোন কোন অপারেটর বিনামূল্যে ভয়েস কলের সুবিধা দিচ্ছে। এটা শুরু হয়েছে ২০১৬ সালে ‘জিও কোম্পানির হাত ধরে। ভারতের শীর্ষ ধনী মুকেশ আম্বানীর মালিকানাধীন ‘জিও’ নামক মোবাইল কোম্পানী গ্রাহক আকর্ষণ করতে ফ্রি ভয়েস কল অফার করলে অন্যান্য কোম্পানীও ফ্রি ভয়েস কল দিতে বাধ্য হয় যা অদ্যাবধি কার্যকর রয়েছে। ভারতের টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থাও একে টেলিকম আইন বহির্ভূত ও পরিপন্থী নয় বলে মনে করছেন। গত বছর কয়েকটি অপারেটর ভয়েস কলের সর্বনিম্ন মূল্য নির্ধারণ করে দেওয়ার আবেদন করলে তা নাকচ করে দেন নিয়ন্ত্রক সংস্থা।
বিটিআরসির মতে- সেল ফোন অপারেটরদের অননেট ও অফনেট এতদিন ভিন্ন হারে ট্যারিফ ছিল। এতে অফনেট গ্রাহকদের খরচ বেশি হত তাই গ্রাহকদের খরচ কমানোর জন্য অননেট অফনেট বাতিল
করে একই মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়াও মোবাইল নম্বর অপরিবর্তিত রেখে (মোবাইল নাম্বার পোর্টেবিলিটি-এমএনপি) সেবা চালু করা হয়েছে; যার ফলে কোন একক অপারেটরের আধিপত্য হ্রাস পাবে এবং ছোট অপারেটর সমূহও প্রতিযোগীতায় টিকে থাকতে পারবে। নিঃসন্দেহে এটি একটি ভাল উদ্যোগ কিন্তু এক্ষেত্রে সর্বনিম্ন কলরেট ২৫ পয়সা রেখেও তা বাস্তবায়ন করা যেত। তাছাড়া ৫টি কোম্পানীর স্বার্থ কি ১৪ কোটি মানুষের স্বার্থের চেয়ে বড়? ডিজিটাল বাংলাদেশের আর একটি অন্যতম অনুষঙ্গ ছিল অবাধ তথ্য প্রবাহ। এক্ষেত্রে অনলাইনে
সাধারণ মানুষের অভিগম্যতা বৃদ্ধি করা আবশ্যক। সাধারণ মানুষকে অনলাইনে টানার জন্য
ইন্টারনেটের মূল্য কমানো আবশ্যক । পাশ্ববর্তী দেশে ৩০দিন মেয়াদে ৯৯ টাকায় ৫ জিবি ফোরজি ইন্টারনেট পাওয়া যায়। আমাদের দেশে এমন সেবা পেতে গ্রাহককে গুনতে হয় প্রায় ৬০০ টাকা।
এক্ষেত্রে মোবাইল ফোন অপারেটরদের খোঁড়া যুক্তি তারা বেশি টাকায় থ্রিজি লাইসেন্স ক্রয় করেছে। এ’ধরনের আপত্তি তাদের নতুন নয় সব কিছুতেই যেন তাদের আপত্তির অন্ত নেই। ভ্যাট কেন দিব, টুজি লাইসেন্স ফি বেশি দিব না, থ্রিজি ফ্রিকোয়েন্সির এত মূল্য কেন, যেখানে মার্কেট নেই সেখানে থ্রিজি চালু করতে বাধ্য করা যাবে না প্রভৃতি। কম দামে লাইসেন্স ক্রয় করলে কম দামে গ্রাহক থ্রিজি/ফোরজি সুবিধা পাবে মোবাইল অপারেটরদের অতীত ইতিহাস কিন্তু তা বলে না। একটু পেছনের ইতিহাস দেখলে দেখা যায়, ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশের মানুষের কাছে যখন মোবাইল ফোন দুষ্প্রাপ্য বিষয় ছিল তখন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্যোগ নিলেন মোবাইল ফোনকে সহজলভ্য করে জনগণের নিকট দ্রুত সহজলভ্য করার। আগ্রহী দুটি নতুন কোম্পানী ও আগের একটি সিডিএমএ কোম্পানীর সাথে তিনি মতবিনিময়ও করেছিলেন। সর্বশেষ থ্রিজি লাইসেন্স নিয়ে যেমন বৈঠক হয়েছে তখন টুজি নিয়ে বৈঠক হয়েছিল বেশ কয়েকটি। অপারেটর’রা এখনকার মতই তখন প্রধানমন্ত্রীকে বুঝিয়েছিলেন, টুজি লাইসেন্সের ফি কম রাখার জন্য। এতে তারা কম খরচে অবকাঠামো সহ নেটওয়ার্ক স্থাপন করে সুলভে গ্রাহকদের মোবাইল ফোন সেবা দিতে পারবেন। অপারেটরদের স্বপ্নের বেড়াজাল ভরা আশার বাণী শুনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আশ্বস্ত হয়েছিলেন। জনগন সুলভে মোবাইল সেবা পাবে।

এই সংবাদটি শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




raytahost-demo
© All rights reserved © 2019
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: Jp Host BD