চিরশ্রী দেবনাথ
ত্রিপুরা।।
“রোজ সকালের ডাকে
রোদ্দুরের চিঠি পাই
আমি বেঁচে আছি।
হাজারো মৃত্যুর তির
হেলমেটে ঝনঝন বাজে,
বলে যায় আমি বেঁচে আছি। ”
আপনি বেঁচে থাকবেন নিশ্চয়ই আমাদের মাঝে, কবিতার
এই ক্ষয়হীন চরাচরে।
কবি অপরাজিতা রায়ের জন্ম ১৯২৯ সালে।
এই সময় ত্রিপুরার খুব কম মেয়েরাই কবিতা লিখতেন। সেই সময়কার আধুনিক বাংলা কবিতার সঙ্গে ভৌগলিক কারণেই হয়তো বা তেমন কোন সাক্ষাৎ হয়নি ত্রিপুরার কবিদের, বিশেষ করে মহিলারা তো আরো অন্ধকারে। এরমধ্যে কবি অপরাজিতা রায় দৃপ্ত কবিতার জন্ম দিয়েছেন, যা অবাক করে। কবিতায় তিনি আধুনিক ভাষার প্রয়োগ করেছেন, সেইসময়কার বাংলা কবিতার ভূমিতে দাঁড়িয়ে। কবিতার চিরাচরিত ছন্দভাবকে তিনি বহুক্ষেত্রেই বর্জন করেছিলেন এবং মন থেকে উঠে আসা বাক্যবন্ধের মতো ভাষাকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন। অনঙ্গমোহিনী দেবীর পর পঞ্চাশের দশকের শেষদিকে
ত্রিপুরার বাংলা কবিতায় যে সমস্ত মহিলা কবিদের মাধ্যমে কবিতার নতুন ভাষ্য রচিত হয়, তার মধ্যে কবি অপরাজিতা রায় অন্যতমা।
“কখনো অলৌকিক কোনো কিছু চাইনি তো আমি
শাশ্বত বা চিরন্তন নিত্যসত্য কোনো।
আমি তো চাইনি হতে
কালোত্তীর্ণ অসম্ভব এক।
বৈকালী মেঘের রং অনেক উঁচুতে
অথবা আকাশ নীল
কোনখানে যাব
তরল কঠিন কোনও অস্তিত্ব নেই। ”
অপরাজিতা রায়ের বইগুলো, “বাইরে বাউল “,এটি একটি ছড়ার বই। তারপর, “ঝড়ো হাওয়ায় ঝাপটা “,”নির্বাচিত ছড়া, দুইহাজার সালে প্রথম কবিতার বই “দ্বিতীয় শরীর “। এতে ১৯৬১ থেকে ১৯৯৯ সালের মধ্যে লেখা ৬৭ টি কবিতা রয়েছে।
কবিতার সৌন্দর্য কবিকে বাঁচিয়ে রাখে। সেই সৌন্দর্যের ভাস্কর্য কিন্তু অলৌকিক, আলো আঁধারির আবছায়া
জগতে কবিদের অস্তিত্ব কুয়াশার মতো মিশে থাকে। তাঁকে ইচ্ছে করলেই উত্তর প্রজন্ম ছুঁতে পারেন তার সৃষ্টির মধ্য দিয়ে। কবি হয়ে মৃত্যুকে পেছনে রেখে হেঁটে যান এক চির পথিক। তাঁকে নমস্কার রইল।
কবি অপরাজিতা রায়।
৯৮ বছর। প্রায় শতাব্দীবয়সিনী এই মহীয়সী কবির মহাপ্রয়াণ আমাদেরকে শোকাহত করে। আমরা বিহ্বলচিত্তে শুধু অনুভব করি তাঁর গমন। চরণ ছুঁয়ে প্রণাম করতে পারবোনা। কেননা কোরোনা এক অভিসপ্ত মারি। সে যাঁকে ছুঁয়ে যায় তাঁকে স্পর্শ করার স্পর্ধা থাকেনা করো।
Leave a Reply