আবুল খায়ের স্বপন।।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় মুক্তিযোদ্ধা ভাতা বন্ধ হওয়ায় একটি কন্যা সন্তান নিয়ে মানবেতন জীবন কাটাচ্ছে এক মুক্তিযোদ্ধার পরিবার। ভাতা না পেলে ভিক্ষা করে খাওয়া ছাড়া পরিবারটিতে কোন বিকল্প নেই। মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে ওই মুক্তিযোদ্ধার পরিবারের ভাতা বন্ধ হয়ে যায়। প্রতিকার চেয়ে মুক্তিযোদ্ধার পরিবারটি আজ শনিবার দুপুরে তার নিজ বাড়ি কসবা উপজেলার খাড়েরা ইউনিয়নের দেলী গ্রামে এক জণার্কীণ সংবাদ সম্মেলন করেছেন। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মুক্তিযোদ্ধা ও বীর প্রতিক মনির আহাম্মদ খানের দ্বিতীয় স্ত্রী আকলিমা আক্তার এবং তার কন্যা মনিরা আক্তার।
সংবাদ সস্মেলনে আকলিমা আক্তার বলেন, তাঁর স্বামী মো. মনির আহাম্মদ খান সেনাবাহিনীতে চাকুরী করতেন। তিনি মুক্তিযোদ্ধা ও বীরপ্রতিক ছিলেন। তাঁর প্রথম স্ত্রী বেনুয়ারা বেগম ২০০৬ সালে মারা গেছেন। প্রথম স্ত্রীর ইমরান খান নামের একজন ছেলে সন্তান রয়েছে। তিনি ঢাকায় চাকুরী করেন। ২০০৮ সনের ১০এপ্রিল মনিব আহাম্মদ খান সামাজিক ভাবে তাকে বিয়ে করেছেন। বিয়ের পর থেকে তাদের পৈত্রিক নিবাস কসবার খাড়েরা ইউনিয়নের দেলী গ্রামে বসবাস করেন। বিয়ের পর থেকে তাদের ঔরষে একটি কন্যা সন্তান জন্ম নেয়। ২০১৩ সনের মনিব আহাম্মদ খান মারা গেছেন। আকলিমা আক্তার তার স্বামীর মুক্তিযোদ্ধার ভাতার জন্য আবেদন করলে ২০১৬ সাল থেকে আকলিমা আক্তারের নামে মুক্তিযোদ্ধার ভাতা শুরু হয়। ওই ভাতা দিয়ে চলে সংসার। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে মনির আহাম্মদ খানের নামে খেতাব প্রাপ্ত বীরপ্রতিকের ভাতা পাওয়ার বিষয় নিয়ে আকলিমা আক্তারের ভাতা বন্ধ হয়ে যায়।
আকলিমা আক্তার মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টে খেতাব প্রাপ্ত ভাতা ও মুক্তিযোদ্ধার ভাতা পাওয়ার জন্য আবেদন করেন। মনির আহাম্মদ খানের প্রথম স্ত্রীর ছেলে ইমরান খান মুক্তিযোদ্ধা কল্যান টাস্ট্রের কিছু অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে আকলিমার ভাতা বন্ধ করে তঁার নিজ নামে ভাতা করিয়ে নেয়।
আকলিমা আক্তার বলেন, মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টে গত এক বছরে কমপক্ষ ২০ বার গিয়েছি। যে ধরনের কাগজের চাহিদা দেওয়া হয়, সেই ধরনের কাগজ জমা করি। কিন্তু ফাইল থেকে সেই কাগজ সরিয়ে নেওয়া হয়। তিনি বলেন, তঁার স্বামীর প্রথম স্ত্রী ছেলে ইমরান খান মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের কিছু অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে তাকে হয়রানী করে ভাতা বন্ধ করে দিয়েছে।
আকলিমা বলেন, তিনি এ ভাতার টাকা দিয়ে সংসার চালাতেন। তিনি তার স্বামীর বাড়িতে একমাত্র মেয়েকে নিয়ে বসবাস করেন। তার মেয়েটি বর্তমানে স্থানীয় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণীতে পড়াশুনা করে। আকলিমা আরো বলেন, তাঁার স্বামীর ঢাকায় একটি বাড়ি রয়েছে। ওই বাড়িতে ইমরান খান বসবাস করেন। ওই বাড়ির দাবী করলে তাকে ও তার মেয়েকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছেন ইমরান খান। তিনি এ বিষয়ে থানায় একটি সাধারণ ডাইরী করেছেন।
তিনি আরো বলেন, এখন ভাতা না পেলে তাকে এখন ভিক্ষা করে খাওয়া ছাড়া আর কোন রাস্তা নেই। আকলিমা আক্তারের মেয়ে মনিরা আক্তার বলেন, আমি পড়াশুনা করতে চাই। টাকার অভাবে পড়াশুনা করতে পারছিনা। আমি প্রধান মন্ত্রীর সহযোগীতা চাই।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন দেলী গ্রামের যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা মো. সিরাজুল ইসলাম খান, মুক্তিযোদ্ধা আবুল বাশার খাড়েরা ইউনিয়নের এক নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য দেলী গ্রামের বাসিন্দা মো. খোকন মিয়াসহ গ্রামের স্থানীয় লোকজন।
খাড়েরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও দেলী গ্রামের বাসিন্দা মো. কবির আহাম্মদ খান, দেলী গ্রামের যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা মো. সিরাজুল ইসলাম খান, মুক্তিযোদ্ধা আবুল বাশার ও খাড়েরা ইউনিয়নের এক নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য দেলী গ্রামের বাসিন্দা মো. খোকন মিয়া বলেন, মুক্তিযোদ্ধা মনির আহাম্মদ খানের দ্বিতীয় স্ত্রী আকলিমা আক্তার। তাকে নিয়ে বসবাস করতে তিনি। তার একটি কন্যা সন্তানও আছে। স্বামীর বাড়িতেই বসবাস করে। আকলিমা আক্তার ভাতাও পেতেন। তার ভাতা বন্ধ হয়ে গেছে। অন্যায় ভাবে তার ভাতা বন্ধ করা হয়েছে।
মুক্তিযোদ্ধা ও বীর প্রতিক মনির আহাম্মদ খানের ছেলে ইমরান খান বলেন, আমার বাবা অসুস্থ্য ছিলেন। তিনি দ্বিতীয় বিয়ে করেছেন বলে আমার জানা নেই। আমি আমার বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান। আমি হয়তো দুই একবার গ্রামের বাড়িতে গিয়েছি। তিনি বলেন, আমি কসবা থেকে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট থেকে কোন ধরনের ভাতা পায়নি। ক্যান্টম্যান্ট থেকে ভাতা পাই। তিনি দাবী করে বলেন, আমার বিরুদ্ধে এটি একটি ষড়যন্ত্র।
Leave a Reply