সুজান মিঠি
মেয়েটির প্রথম পুরুষ কালো চশমার ভিতর থেকে
ভালোবাসি বলেছিল।
তারপর মেয়েটা যখন সেই
চশমার কালোকে কাজল করে পরলো চোখে,
ঠিক তখন মেয়েটির প্রথম পুরুষ বিদেশে
ভেসে গেল প্রতিপত্তি আর বিদেশিনী নিয়ে।
মেয়েটির দ্বিতীয় পুরুষ তার বিবাহিত স্বামী।
এক পুত্রের জন্মের পরেও তাকে
জড়িয়ে ধরতো কারণে অকারণে। স্বপ্নের কাজল
পরিয়ে দিত নিজে, খোঁপায় গুঁজে দিত বেল, জুঁই।
একদিন মেয়েটার খোঁপা খুলে ঝরে গেল সব
শুভ্রতা। মেয়েটার চোখের কাজল ফ্যাকাশে হয়ে
কেমোথেরাপির শেষ আশায় নিভে গেল।
ইলেকট্রিক চুল্লিতে ছাই হয়ে গেল মেয়েটির
দ্বিতীয় পুরুষ।
মেয়েটার বিছানায় স্থান পেল তার তৃতীয় পুরুষ।
দরজা বন্ধ করে মেয়েটা খোঁপায় জুঁই গুঁজলো।
খিলখিল করে হেসে উঠে গান ধরলো,
এই সুরে কাছে দূরে…
দরজায় কান পাতলো পুত্রবধূ,
তারপর একমাত্র পুত্র..
একদিন দুদিন তিনদিন…
দরজা ভেঙে ভিতরে ঢুকে মেয়েটাকে চেপে ধরলো
পুত্র, বলো কে এসেছিল ঘরে?
ব্যালকনি দিয়ে পালিয়ে গেলো বুঝি?
মেয়েটা চোখে কাজল লাগিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল
রাস্তায়।
আকাশে পেঁজা মেঘ আর পুজোর রোদ্দুর!
মেয়েটার খোঁপায় সতেজ জুঁই।
গলিতে গলিতে গুঞ্জন…এত বয়স, তাও নিশ্চয়ই…
বুঝেছো তো!
নইলে এমন সাজ, পোশাক…!
মণ্ডপের সামনে মাইক হাতে ঘোষণা করছিল ছেলেটা…
আসুন দশভূজার সামনে আমরা আমাদের কথা
বলি। স্বীকৃতি দিই নিজের, আত্মার।
আজ এই হোক আমাদের উৎসব।
মেয়েটা মাইক হাতে নিয়ে চোয়াল শক্ত করে বললো
আছে, আছে। আমার তৃতীয় পুরুষ!
সব গলি চুপ হয়ে গেলো।
জানলা দিয়ে ছুটে আসা শব্দেরা মেয়েটার পুত্র আর
পুত্রবধূর কানে প্রবেশ করলো।
বিষ্ময়ে নির্বাক তাকিয়ে দেখলো, মেয়েটা নিজের ঘরে ঢুকে
দরজা বন্ধ করলো।
বিছানার উপর শুয়ে রবীন্দ্রনাথ বুকে জড়িয়ে নিয়ে
বললো, কী গো! তৃতীয় পুরুষ! ভালোবাসো তো,
আমায়?
Leave a Reply