কলকাতা প্রতিনিধি
রাজশ্রী বন্দ্যোপাধ্যায়
ভারতে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির তৈরি করোনার ভ্যাকসিনের দু’টি ডোজের সর্বোচ্চ দাম পড়বে ১০০০ টাকা৷ সিরাম ইনস্টিটিউটের সিইও আদর পুনাওয়ালাই এ কথা জানিয়েছেন৷ আদর পুনাওয়ালার দাবি, ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যেই স্বাস্থ্যকর্মী এবং বয়স্কদের জন্য এই ভ্যাকসিন পাওয়া যাবে৷ আর আগামী এপ্রিল মাস থেকেই তা সবার জন্য দেশের বাজারে মিলবে৷ তবে সবটাই নির্ভর করছে চূড়ান্ত পর্বের ট্রায়ালের রিপোর্ট এবং সরকারি অনুমোদনের উপরে৷ হিন্দুস্তান টাইমস লিডারশিপ সামিটে বক্তব্য রাখতে গিয়ে আদর পুনাওয়ালা জানিয়েছেন, ২০২৪ সালের মধ্যেই প্রত্যেক ভারতীয়ের করোনার টিকাকরণ হয়ে যাওয়ার কথা৷ হিন্দুস্তান টাইমস লিডারশিপ সামিটে বক্তব্য রাখতে গিয়ে আদর পুনাওয়ালা জানিয়েছেন, ২০২৪ সালের মধ্যেই প্রত্যেক ভারতীয়ের করোনার টিকাকরণ হয়ে যাওয়ার কথা৷ পুনাওয়ালা জানিয়েছেন, এমনিতে বাজারে এই ভ্যাকসিনের প্রতিটি ডোজের দাম থাকবে ৫ থেকে ৬ মার্কিন ডলারের মধ্যে৷ সেই হিসেবে দু’টি ডোজের সর্বাধিক দাম পড়বে ১০০০ টাকা৷ তবে ভারত সরকার আরও কম দামে এই ভ্যাকসিন কিনবে৷ বাজারে অন্যান্য যে ভ্যাকসিনগুলি রয়েছে, তার তুলনায় অক্সফোর্ড ভ্যাকসিনের দাম কম রাখা হচ্ছে বলেই দাবি পুনাওয়ালার৷ তিনি আরও দাবি করেছেন, অক্সফোর্ড ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা যথেষ্ট ভাল এবং ট্রায়ালে তা বয়স্ক মানুষের শরীরেও খুব ভাল কাজ করেছে৷ পুনাওয়ালা জানিয়েছেন, এই ভ্যাকসিন প্রয়োগের পর শরীরে টি- সেল তৈরি হচ্ছে, যা করোনার বিরুদ্ধে দীর্ঘমেয়াদী প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলার ইঙ্গিত৷ কিন্তু বাস্তবে সত্যিই কতটা দীর্ঘ সময় ধরে করে কোনও ভ্যাকসিন মানবদেহে করোনার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা ধরে রাখবে, তা এখনই কারও পক্ষে বলা সম্ভব নয় বলে দাবি পুনাওয়ালার৷ ব্রিটেনের সরকারি কর্তৃপক্ষ এবং ইউরোপিয়ান মেডিসিনস ইভ্যালুয়েশন এজেন্সি জরুরি ভিত্তিতে অক্সফোর্ড ভ্যাকসিনের অনুমতি দিলেই ভারতেও এই ভ্যাকসিনের ইমার্জেন্সি ব্যবহারের জন্য ড্রাগ কন্ট্রোলারের কাছে সিরাম ইন্সস্টিটিউট আবেদন করবে বলে জানিয়েছেন পুনাওয়ালা৷ তবে জরুরি ভিত্তিতে অনুমোদন পেলেও শুধুমাত্র স্বাস্থ্যকর্মী, সামনের সারিতে থাকা করোনা যোদ্ধা এবং বয়স্কদের উপরেই এই ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হবে৷ তবে যতক্ষণ না এই ভ্যাকসিন মানুষের জন্য ১০০ শতাংশ নিরাপদ বলে প্রমাণিত হচ্ছে, ততদিন তা শিশুদের উপরে প্রয়োগ করা হবে না বলেই জানিয়েছেন পুনাওয়ালা৷ তবে শিশুদের ক্ষেত্রে করোনা খুব একটা প্রাণঘাতী বা ভয়ঙ্কর নয় বলেও আশ্বস্ত করেছেন তিনি৷ এখনও পর্যন্ত এই ভ্যাকসিন প্রয়োগের পর েসভাবে কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বা শারীরিক সমস্যা কারও মধ্যে দেখা যায়নি বলেই জানিয়েছেন পুনাওয়ালা৷ তবে তিনি জানিয়েছেন, ভারতে ট্রায়াল পর্বে এই ভ্যাকসিনের কার্যকরিতা এবং প্রতিরোধ ক্ষমতার চূড়ান্ত ফলাফল মাস দেড়েকের মধ্যে প্রকাশিত হবে৷ তখনই পুরো বিষয়টি স্পষ্ট হবে৷ ফেব্রুয়ারি মাস থেকেই ভারতে মাসে ভ্যাকসিনের ১০ কোটি ডোজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে সিরাম ইনস্টিটিউট৷ তবে তার মধ্যে কী পরিমাণ ভ্যাকসিন ভারত পাবে, সে বিষয়ে এখনও চুক্তি চূড়ান্ত হয়নি৷ ২ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার মধ্যে এই ভ্যাকসিন মজুত করে রাখা যাবে৷ ফলে ভারতের কোল্ড স্টোরেজগুলিতে এই ভ্যাকসিন রাখতে সমস্যা হবে না৷ সিরাম ইনস্টিটিউটের এই কর্তা জানিয়ে দিয়েছেন, এই মুহূর্তে ভারতে ভ্যাকসিনের চাহিদা মেটানোর উপরেই অগ্রাধিকার দিচ্ছেন তারা৷ সেই কারণে ভারত ছাড়া একমাত্র বাংলাদেশে অক্সফোর্ড ভ্যাকসিন সরবরাহ করবেন তারা৷
Leave a Reply