বুধবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:৪১ পূর্বাহ্ন

আজ বি এন পির ৪২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী

আজ বি এন পির ৪২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী

নিডস নিউজ ডেক্সঃ

টানা তিন দফায় ক্ষমতার বাইরে থাকা দল বিএনপি অনেক দিন থেকেই কোণঠাসা। অনেকে বলছেন, বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে নিজেদের লক্ষ্য নির্ধারণ করে প্রয়োজনীয় কৌশল গ্রহণেও ব্যর্থ হচ্ছে দলটি। অবশ্য এ ‘দুরবস্থা’ থেকে ঘুরে দাঁড়াতে দলের হাইকমান্ড নানামুখী তৎপরতা চালালেও কোনো আশার আলো দেখছেন না নেতাকর্মীরা।

এ পরিস্থিতিতে দলের এবং নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন তারা। সংকট উত্তরণে কোন পথে যাবে বিএনপি- এই প্রশ্ন এখন ঘুরপাক খাচ্ছে সবার মনে।

কঠিন সংকটে বিএনপি। জামিনে মুক্ত থাকলেও সক্রিয় রাজনীতিতে নেই দলের সাজাপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডন থেকে ভার্চুয়াল মাধ্যমে পরিচালনা করছেন দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম। কর্মীরা মনে করছেন, দুই শীর্ষস্থানীয় নেতা রাজনীতির মাঠে সরাসরি না থাকায় বড় সংকট থেকে বেরিয়ে আসতে পারছে না দলটি।

আবার জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও জামায়াতে ইসলামীকে সঙ্গে নিয়ে পথ চলায়ও দলের মধ্যে বিরাজ করছে অস্বস্তি।

এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ৪২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ মঙ্গলবার। দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালনে এবার এক দিনের কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।

১৯৭৮ সালের এই দিনে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান দলটি প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৮১ সালে জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর তার বিধবা স্ত্রী খালেদা জিয়া গৃহবধূ থেকে রাজনীতিতে এসে দলটির হাল ধরেন। তার নেতৃত্বে নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে দু’বার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসীন হয় দলটি।

অবশ্য দলের সিনিয়র নেতা ও রাজনৈতিক বিশ্নেষকরা মনে করেন, বর্তমানে দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের আদর্শ থেকে সরে এসেছে বিএনপি। ঘুরে দাঁড়াতে দলটিকে আবার প্রতিষ্ঠাতার আদর্শে ফিরে যেতে হবে। সৎ, যোগ্য, ত্যাগী ও মেধাবী নেতাকর্মীদের খুঁজে নেতৃত্বের আসনে বসাতে হবে। দলমত নির্বিশেষে দেশের বিভিন্ন সেক্টরের জ্ঞানী ও গুণী ব্যক্তিদের পরামর্শ গ্রহণ এবং দলে টেনে গুরুত্বপূর্ণ কাজে লাগাতে হবে।

একই সঙ্গে নিজেদের ভুলত্রুটি চিহ্নিত করে তা থেকে শিক্ষা নিতে হবে। শুধু নিজেদের ‘অযোগ্য’ ও ‘অন্ধ’ সমর্থকদের দলের গুরুত্বপূর্ণ দায়দায়িত্ব দিয়ে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য অর্জন সুদূরপরাহত হবে বলে মনে করেন তারা।

বর্তমানে দলের বিশাল নেতৃত্বশূন্যতার পাশাপাশি সাজাপ্রাপ্ত খালেদা জিয়ার শারীরিক অসুস্থতা নিয়েও চিন্তিত দলের নেতাকর্মীরা। সাংগঠনিকভাবে দুর্বল দলটিকে কীভাবে আবার শক্তিশালী করা যায়- তা নিয়ে আলাপ আলোচনা করছেন শীর্ষ নেতারা। বিশ্নেষকরা বলছেন, বিএনপির সংকট উত্তরণে সবার আগে নেতৃত্ব ঠিক করা জরুরি।

বিভিন্ন সমস্যায় থাকা দলটি আগামী দিনে কীভাবে পথ চলবে- তা নিয়ে রয়েছে নানামুখী জল্পনা-কল্পনা। দলটি খালেদা জিয়ার মুক্তিকে প্রাধান্য দিলেও তা কতটুকু সফল হবে, তা নিয়ে সন্দিহান অনেকে। বিশেষ করে আড়াই বছর আন্দোলন ও আইনি লড়াই চালিয়ে কার্যকর তেমন কিছু হয়নি। এ পরিস্থিতিতে নতুন করে হিসাব-নিকাশ করছেন দলটির নীতিনির্ধারকরা।

মুখে বিএনপি নেতারা সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী দাবি করলেও বারবার উদ্যোগ নিয়ে তৃণমূল পর্যায়ে দল পুনর্গঠনের কাজও শেষ হয় না। ব্যক্তিস্বার্থে নেতাদের মধ্যেও রয়েছে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব-কোন্দল।

পারস্পরিক অবিশ্বাস ও সন্দেহ প্রবণতা। আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দু রাজধানী ঢাকায় দলের সাংগঠনিক অবস্থাও তেমন ভালো নয়।

বিশ্নেষকরা বলছেন, বিএনপিতে চরম ‘নেতৃত্বের সংকট’ বিরাজ করছে। দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সাজাপ্রাপ্ত হয়ে শর্তসাপেক্ষে জামিনে থাকলেও সক্রিয় রাজনীতিতে অংশ নিতে পারছেন না।
আবার গ্রেনেড হামলাসহ বেশ কয়েকটি মামলার সাজা মাথায় নিয়ে লন্ডনে অবস্থান করছেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। যদিও সেখান থেকে তিনি টেলিফোনে এবং স্কাইপিতে দলের স্থায়ী কমিটিসহ বিভিন্ন সভা-সেমিনারে বক্তব্য ও দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন।

সশরীরে উপস্থিত না থাকায় ওইসব সিদ্ধান্ত নিয়ে মাঝেমধ্যে ভুল এবং সঠিক হচ্ছে না বলেও প্রশ্ন তুলছেন খোদ দলের নীতিনির্ধারক নেতারাও। প্রকাশ্যে বাইরে না বললেও ঘরোয়াভাবে তারা ক্ষোভ প্রকাশ করছেন।

শীর্ষ নেতার অনুপস্থিতিতে সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যরা বৈঠকে বসে ভার্চুয়াল মাধ্যমে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন।

আবার উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় দলের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের আড়ালে রেখেও এককভাবে সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন তারেক রহমান। এ নিয়ে দলের ভেতর রয়েছে নানা ক্ষোভ ও অসন্তোষ।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে কয়েকজন নেতাকে ইঙ্গিত করে ভর্ৎসনা করেছেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। অনেক জেলায় বিএনপি ও অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর কমিটি গঠন নিয়ে চলছে ক্ষোভ। অবশ্য খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে তারেক রহমান তার পছন্দের নেতাদের কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন করে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছেন।
এ নিয়ে দলের ভেতরে সিনিয়র নেতাদের মধ্যে কিছুটা অস্বস্তি থাকলেও প্রকাশ্যে কেউ মুখ খুলছেন না।

এই সংবাদটি শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




raytahost-demo
© All rights reserved © 2019
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: Jp Host BD