ভ্রমণ_কাহিণী
পর্ব২
সোনিয়া তাসনিম খান
————————————————
পেয়ে গেলাম ভিসা। নিয়মানুযায়ী আমার কর্তার অফিসে ইনফর্ম করার পর ওরা আমাকে একদিনের সময় দিল প্রিপারেশান নেবার। এই একদিন টুকটাক কিছু শপিং, দৌড়াদৌড়ি এসবেই কেটে গেল। আগের দিন রাতে ওর সাথে ফোনে কথা হলো। বুঝে নিলাম কোথায় কখন কিভাবে কি করতে হবে। আর এই আগের দিন রাতেই আমার খুব নার্ভাস ফিল হতে লাগল। কেমন যেন অজানা একরাশ ভয় পেয়ে বসল। মনে কেবল একটা প্রশ্ন ঘুরতে লাগল, শেষ পর্যন্ত ঠিকঠাক মত পৌঁছাতে পারব তো? রাত কাটলো কোনমতে। সকালে উঠে রেডি হয়ে রওয়ানা দিলাম প্রথমে ওর অফিসে। আমার হাসব্যান্ড তখন “ঈগাল মেরিটাইমে” ছিল। এটার ম্যানিং এজেন্ট করে আমাদের দেশে “হক এন্ড সন্স”। প্রথমে ওদের “হক এন্ড সন্স” এর উত্তরা অফিসে গেলাম। ওখানে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পেপারস এন্ড ডকুমেন্টস বুঝে নেয়ার পর এবার এয়ারপোর্টে র দিকে যাব। আমাকে সী অফ করতে আব্বা মা সাথে গেছে। মা মনে হয় সারা রাত ঘুমায় নি। আব্বা বার বার শিওর হচ্ছিলেন আমার সিকিউরিটি এবং সেফটির ব্যাপারে। বলাবাহুল্য, আমি আগেই বলেছি আমি আমার ভার্সিটি লাইফ পর্যন্ত কখনও মোহাম্মদপুর থেকে ধানমন্ডি পর্যন্ত একা যাওয়া আসা করি নি। তাই ওনারা আমাকে নিয়ে ভীষণ উদ্বিগ্ন ছিলেন। কেন যেন তখন আমার নিজেরও অনেক ভয় হচ্ছিল। ওদের কাদেরী স্যার। যিনি ওখানকার একজন ইনচার্জ অফিসার বার বার আমাদের আশ্বস্ত করছিলেন, নাথিং টু ওরি অ্যাট অল। সো গেট, সেট এন্ড গো। গন্তব্য এবার জিয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর (এখনকার হযরত শাহাজালাল ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট)।
এয়ারপোর্ট পৌঁছে ভেতরে প্রবেশ করে লাগেজ স্ক্যানিং করে এগুলাম বোর্ডিং পাস কালেক্ট করে ইমিগ্রেশান ক্লিয়ার করার উদ্দেশ্যে। এখানে এক বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পরলাম।অন ডিউটি কাস্টমস অফিসার আমার হাসব্যান্ডের পাসপোর্ট ফটোকপি চাইলেন। আমার কাছে সেটা তখন ছিল না। জলদি অফিসে ইনফর্ম করে সেটার কপি নিয়ে আসার ব্যবস্থা করলাম। হলো এবার ইমিগ্রেশান কমপ্লিট। বোর্ডিং পাসটা হাতে নিয়ে অপেক্ষা করছি। আর ভাবছি লং ওয়ে টু গো নাউ। এর মাঝে কয়েক দফা ওর সাথে কথা হলো। ভালো কথা, আমার রুট ছিল ঢাকা টু ব্যাংকক, ব্যাংকক টু আর্মস্টাডাম। যা হোক, বসে আছি আমার ফ্লাইট নং ছিল TG 322। আমি বোর্ডিং পাস অনুযায়ী গেইট D5 এ র কাছে বসে ছিলাম। অবশেষে অ্যানাউন্স হলো ফ্লাইটে ওঠার কথা। উঠে দাড়ালাম জানালার বাইরেই TG 322 দাড়িয়ে। গ্যাংওয়ে অতিক্রম করে ফ্লাইটে উঠলাম। মিষ্টি হেসে থাই এয়ার হোস্টসরা আমাকে আমার সীট 49(A)খুজে পেতে সাহায্য করল। পাসের সীটের এক ভদ্রলোকের সাথে আলাপ হলো উনি জাপান যাচ্ছেন সার্ভিস ট্রেইনিং অ্যাটেন্ড করতে। আলাপে আলাপে সময় এগুচ্ছে। এর মাঝে বাবা মায়ের সাথে ফোনে কয়েকবার কথা হলো। আব্বা বার বার বলে দিল ব্যাংকক পৌছে যেন বাসায় কল করি। সীট বেল্ট লক করলাম। বিমানে সেফটি ইন্সট্রকশান দেয়া হচ্ছে, হাসি হাসি চেহারার একজন এয়ার হোস্টেস হাত নেড়ে নেড়ে তা বুঝিয়ে দিচ্ছেন। যাত্রীরা কেউ বা গল্পে ব্যস্ত কেউ ব ফোনে মাঝের সারিতে একদঙ্গল জাপানি বসেছে। আল্লাহ জানে কি দুর্বোধ্য কথা বলছে আর হাসাহাসি করছে। হঠাৎ করে বাসার জন্য কান্না পেতে লাগল। এরই মাঝে স্পীকারে বলা হলো
: প্লিজ সুইচ অফ দ্য ইলেকট্রনিক্স ডিভাইসেস।
এরপরেই ঘোষিত হলো
: রেডী টু টেক অফ।
আমার পক্ষে ঐ মুহুর্তটার সেই অনুভূতিটা আসলে বোঝানো কঠিন। আসলে ঐ যে বলে না, কিছু জিনিষ না যায় বলা। শুধু যায় অনুভব করা।
চলবে…
Leave a Reply